ঢাকা, শনিবার ০৫ এপ্রিল ২০২৫
২২ চৈত্র ১৪৩১, ০৫ শাওয়াল ১৪৪৬

ঢাকা, শনিবার ০৫ এপ্রিল ২০২৫
২২ চৈত্র ১৪৩১, ০৫ শাওয়াল ১৪৪৬

বৈশাখের টানে আদিবাসী গ্রামে

সালেক খোকন
সালেক খোকন
শেয়ার
বৈশাখের টানে  আদিবাসী গ্রামে
বৈশাখের আনন্দে সুর ওঠে মুণ্ডা পাহানদের ঢোল-মাদলে
গত বছরের কথা। বন্ধু কাজিম থাকেন দিনাজপুরে। সে ভরসায়ই পা রাখি সেখানে। রাত পোহালেই পহেলা বৈশাখ।
আমরা পৌঁছি ঠিক সন্ধ্যার দিকে। 
রাতের খাবারের গন্তব্য ছিল রুস্তম হোটেল। পেঁয়াজের সালাদে গরু ভুনা, আহা! এরপর মালেকের দোকানের মালাইয়ের চা। এখনো যেন মুখে লেগে আছে! 
আদিবাসী গ্রামগুলোর বৈশাখের গ্রাম্য মেলায় ঘুরে বেড়াব।
পরিকল্পনা আগেরই, আয়োজন সব কাজিমেরই। পরদিন সকাল ৭টা। কাজিমের মোটরসাইকেল ছুটে চলে বিরল উপজেলার বহবলদীঘির দিকে। আমাদের পথ চিনিয়ে নেন চারণকবি ও স্থানীয় সাংবাদিক কুদ্দুস।
 
পথে পথে প্রকৃতির সবুজ আলিঙ্গন। রাস্তার পাশেই নানা সাজপোশাকে মানুষের জটলা। দু-একটি জায়গায় বসেছে বৈশাখী মেলা। মুড়ি-মুড়কি আর নানা জিনিসের পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকানিরা।
ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই পৌঁছে যাই বহবলদীঘিতে, ভুনজারদের আদিবাসী পাড়াটিতে।
গোত্রপ্রধান বাতাসু ভুনজার। তাঁর বাড়িতে ঢুকেই থ হয়ে যাই! তুলসীতলায় সত্তরোর্ধ্ব এক নারী ভক্তি দিচ্ছেন। চারপাশে অন্য নারীরা। মাটিতে বেশ কয়েকটি সিঁদুর ফোঁটা। আশপাশের মেঝেতে এলোমেলোভাবে পড়ে আছে অনেক ফুল। 
ভক্তিপর্ব শেষ হতেই মাদলে টুং টাং শব্দ। ছোট্ট দুটি ছেলে কাঁধে তুলে নিয়েছে মাদল আর ঢোল। বাজানোর আপ্রাণ চেষ্টা তাদের। তাল না উঠলেও তাদের আনন্দটুকুই আমাদের মনকে ছুঁয়ে যায়।
বাতাসুর ভুনজার জানালেন, বৈশাখ উদ্‌যাপনের অংশ হিসেবেই ভুনজারদের একটি দল তীর-ধনুক নিয়ে নাকি বেরিয়ে পড়েছে শিকারে। এটাই তাদের আদি রীতি। শুনেই আফসোস হয়। ইস, যদি আরেকটু আগে আসতে পারতাম! শিকারের সঙ্গী হতে পারতাম। 
চৈত্র মাসের শেষ দিন আর বৈশাখ মাসের প্রথম দিনকে ভুনজাররা পালন করে বিশেষ আচারের মাধ্যমে। তাদের ভাষায়, এটি ‘চৈত-বিসিমা উৎসব’। এ উৎসবের অংশ হিসেবে এরা চৈত্র মাসের শেষ সন্ধ্যায় ‘বাসন্তী পূজা’ করে। কেন এ পূজা? মুচকি হেসে বাতাসু বলেন, একসময় আদিবাসী গ্রামগুলোতে চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল না। তখন ডায়রিয়া আর বসন্তে মারা যেত শত শত লোক। এ রোগ দুটি থেকে মুক্তি পেতেই ভুনজাররা মাটির ঘটিতে আমপাতা, কলা, নারিকেল, ধূপ আর চার ফোঁটা সিঁদুর দিয়ে ঠাকুরের পূজা করে। বসন্ত রোগ থেকে মুক্তির পূজা বলেই এর নাম হয়েছে বাসন্তী পূজা। কেউ কেউ এ দিনেই বলি দেয় মানতের হাঁস-মুরগি কিংবা পাঁঠা। এর আগে চৈত্রের শেষ শুক্রবার এরা উপোস থাকে। উদ্দেশ্য ঠাকুরের সন্তুষ্টি ও রুজি বৃদ্ধি। উপোস অবস্থায় খাওয়া যায় শুধুই ফলমূল আর দুধ। 
বাসন্তী পূজা শেষে ভুনজাররা কালাইসহ নানা ধরনের ছাতু-গুড় খেয়ে আনন্দ-ফুর্তিতে মেতে ওঠে। তাই গত রাত থেকে চলছে ঝুমুর নাচ। হঠাৎ বাতাসুর ছেলে রবি ভুনজারে কণ্ঠে সুর ওঠে। সবার দৃষ্টি পড়ে তাতে- 
‘পানের ডেলা পানে রইল
সুপারিতে ঘুনো লাগি গেল, মা 
সুপারিতে ঘুনো লাগি গেল
হে সেবেল, সেবেল, ওয়াহাগলে, ওহাগলে, হে...’ 
গানের তালে নাচ শুরু করে একদল নারী। দলবেঁধে হাত ধরাধরি করে নাচছে তারা। মুগ্ধ হয়ে আমরা তখন ব্যস্ত হই ছবি তোলায়। 
বৈশাখের প্রথম প্রহরে ভুনজাররা কাঁচা মরিচ আর পেঁয়াজ দিয়ে সেরে নেয় পান্তা খাওয়া। তাদের বিশ্বাস, পান্তা খেলে সারা বছর গায়ে রোদ লাগলেও তারা কষ্ট পাবে না। পান্তার পানি বছরজুড়ে শরীরকে ঠাণ্ডা রাখবে। শিকার থেকে ফিরে ওই দিন বিকেলেই শিকারগুলো দিয়ে এরা খিচুড়ি রান্না করে খায়। রাতভর চলে নাচ-গান আর প্রিয় পানীয় ‘হাঁড়িয়া’ খাওয়া। সে অনুষ্ঠানে বাতাসু আমাদের নিমন্ত্রণ করে। মনের ভেতর আফসোস পুষে হাসিমুখে আমরা বিদায় নিই। রওনা হই কালিয়াগঞ্জের পথ ধরে। 
আঁকাবাঁকা মেঠোপথ। অতঃপর সীমান্তবর্তী বিশাল শালবন। লাল মাটির পথ পেরিয়ে পৌঁছে যাই শালবনের গহিনে। চারপাশে গা ছমছমে পরিবেশ। বাতাসে শালপাতার শব্দে আমরাও আন্দোলিত হই।
বনের ভেতরেই খুঁজে পাই মুণ্ডা পাহানদের একটি আদিবাসী পাড়া। তাদের ঘরগুলো মাটি আর ছনে ছাওয়া। একটি বাড়ির মাদুর বেছানো মেঝেতে জায়গা হয় আমাদের। চৈত্র-বৈশাখের উৎসব নিয়ে কথা চলে সবুজ পাহানের সঙ্গে।
বৈশাখের প্রথম দিনে আদি রীতি অনুসারে মুণ্ডা পাহানদের ভাতের সঙ্গে খেতে হয় বারো ভাজা অর্থাৎ ১২ পদের তরকারি। ওই দিন সকালে এরাও পান্তা খায়। সন্ধ্যায় ঠাকুরকে ভক্তি দিয়ে চলে নাচ-গানের আসর। 
সবুজকে প্রশ্ন করি, ‘কেন পান্তা খান?’ প্রশ্নের উত্তর আসে গানে সুরে-
‘হামে লাগে প্রথমে আদিবাসীই
পন্তা ভাত ভালোবাসি...’
গানে আমরা বেশ মজে যাই। 
বৈশাখের মতো চৈত্রের শেষ দিনেও মুণ্ডা পাহানরা আয়োজন করে নানা আচারের। ওই দিন তারা বাড়িঘর পরিষ্কার করে একে অপরের গায়ে কাদা আর রং ছিটায়। পূর্বপুরুষদের রীতি অনুসারে যার গায়ে কাদা বা রং দেওয়া হয়, তাকেই খেতে দিতে হয় ‘হাঁড়িয়া’। এদের বিশ্বাস, এতে বন্ধুত্ব আরো সুদৃঢ় হয়। চৈত্রের শেষ দিন এবং বৈশাখের প্রথম দিনের এ উৎসবকে এরা বলে ‘সিরুয়া বিসুয়া। 
দুপুর গড়িয়ে তখন বিকেল। হাঁড়িয়া খেতে খেতে মুণ্ডারা শুরু করে নাচ-গানের পর্বটি। বৈশাখের আনন্দে সুর ওঠে আদিবাসীদের ঢোল-মাদলে। শালবনের নীরবতা ভাঙে আদিবাসী কণ্ঠে। 
বিদায় নিয়ে অন্য গ্রামের পথ ধরি। গন্তব্য এবার লোহাডাঙ্গায়। তুরিদের আদিবাসী পাড়ায়। যখন পৌঁছেছি তখন সন্ধ্যা হলো বলে। কীর্তন চলছে গোটা পাড়ায়। জটলা ঠেলে ভেতরে যেতেই দেখা হয় গোত্রপ্রধান লবানু সিংয়ের। তিনি জানালেন, চৈত্র মাসের শেষ পাঁচ দিন তুরিরা পালন করে চৈতাবালির অনুষ্ঠান। শুরুর দিন এরা ছাতুগুড় খেয়ে নাচ-গান করে। চৈত্রের শেষ দিন এরা সাত পদ দিয়ে ভোজ সেরে চৈত্রকে বিদায় জানায়। চলে নাচ-গান ও হাঁড়িয়া খাওয়াও। বৈশাখ শুরু হতেই তুরিদের মাছ-মাংস খাওয়া বন্ধ থাকে। পুরো এক মাস এরা নিরামিষ খায়। এ সময় প্রতি রাতেই চলে কীর্তন। বৈশাখের শেষের দিকে এরা প্রতি বাড়ি থেকে চাল তুলে একত্রে খিচুড়ি রান্না করে। রাতভর চলে আনন্দ-নৃত্য।
তুরিপাড়ার কীর্তন তখনো চলছে। জোনাকির আলো ভেঙে আমরা শহরের পথ ধরি। দূর থেকে ভেসে আসে আদিবাসী কণ্ঠগুলো।
 
 
কিভাবে যাবেন 
ঢাকার শ্যামলী থেকে শ্যামলী পরিবহন, নাবিল পরিবহনসহ আরো কিছু বাস সার্ভিস যায় দিনাজপুর। ভাড়া ৫৫০ টাকা। শহর থেকে বিরল উপজেলার দূরত্ব ১২ কিলোমিটার। তবে শহর থেকে আদিবাসী গ্রামগুলোর দূরত্ব ২০-২২ কিলোমিটার। অটোবাইকে করে সেখানে যাওয়া যাবে। ভাড়া জনপ্রতি ৫০ টাকা। আর এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রাম যাওয়ার জন্য আছে ভ্যান।
মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

মেহেদি রাঙানো ঈদ

    চাঁদরাতে মেহেদি পরার ধুম পড়ে যায়। মেহেদির রং-নকশায় জমে ওঠে ঈদ। কোন হাতে কেমন নকশা, হালকা নকশা নাকি ভরাট, কোনটিতে মানাবে কাকে, রং গাঢ় করার উপায় নিয়ে ডিজাইনারের সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন ফাতেমা ইয়াসমীন
শেয়ার
মেহেদি রাঙানো ঈদ
ঈদে একটু ভারী নকশার মেহেদি ভালো মানাবে। ছবি : সংগৃহীত

একসময় মেহেদি পাতা বেটে হাতে লাগানোর চল ছিল, যা ছিল সময়সাপেক্ষ এবং কিছুটা কষ্টসাধ্য। টিউব মেহেদির কল্যাণে এখন খুব সহজেই দৃষ্টিনন্দন নকশা আঁকা যায়।

নকশায় বৈচিত্র্য

সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে মেহেদির নকশায় এসেছে বৈচিত্র্য। ফুলেল, চরকা, পানপাতা, ময়ূর, জ্যামিতিক মোটিফের নকশাই বেশি জনপ্রিয়।

কারো পছন্দ হালকা ডিজাইন, আবার কেউ চায় হাত ভরা নকশা। ফিউশন ডিজাইনে কালো মেহেদি দিয়ে আউটলাইন করে লাল মেহেদি দিয়ে ভেতরের অংশ পূরণ করাও বেশ জনপ্রিয় এখন। হাতের গড়ন কেমন তার ওপর ভিত্তি করেও মেহেদির ডিজাইনের তারতম্য করতে হয়। যাদের হাত বড় তাদের হাতে ভরাট ও বড় আকৃতির নকশা মানানসই।
যাদের হাত ছোট তাদের হাতে লম্বালম্বি ডিজাইন ভালো দেখায়।

পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে মেহেদি ডিজাইন

পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে মেহেদির ডিজাইন করলে সাজ পায় পূর্ণতা। শাড়ির সঙ্গে দুই হাত ভরে নকশা করলে ভালো লাগবে। সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে হাতের তালুতে বেশি নকশা রেখে ওপরটা হালকা রাখুন।

লম্বা কামিজের সঙ্গে কনুই পর্যন্ত মেহেদি না পরাই ভালো। হাতকাটা পোশাকের সঙ্গে বাহুতে বাজুবন্ধের মতো নকশা দেবে ভিন্ন মাত্রা।

মেহেদির রং গাঢ় করার উপায়

মেহেদি লাগানোর আগে হাত ভালো করে ধুয়ে, শুকিয়ে নিন। মেহেদি শুকিয়ে গেলে ঝেড়ে ফেলুন, পানি দেবেন না। চায়ের লিকার ও লেবুর রস ব্যবহার করলে রং আরো গাঢ় হয়।

সরিষার তেল মাখলে রং দীর্ঘস্থায়ী হয়। যারা তাত্ক্ষণিক মেহেদি পরার কথা ভাবছেন তাঁরা মেহেদি দেওয়ার পর অবশ্যই ভালোভাবে ঘষে হাত পরিষ্কার করে নেবেন, যেন মেহেদিতে থাকা রাসায়নিক হাতে লেগে না থাকে। যাঁরা তাড়াতাড়ি রং উঠিয়ে ফেলতে চান, হাতের ওই অংশটুকুতে পেস্ট লাগিয়ে শুকানোর পর ঘষে তুলে ফেলুন। সঙ্গে লেবু বা কাঁচা হলুদ দিয়েও ঘষে দেখতে পারেন।

মেহেদি লাগানোর সহজ কৌশল

ডিজাইনের জন্য আগে থেকে কিছু মোটিফ দেখে নিন। টিস্যু পেপার, টুথপিক বা আলপিন সঙ্গে রাখুন। মেহেদি দেওয়ার সময় নড়াচড়া কম করুন। এতে নকশা নষ্ট হবে না। জামা-কাপড়েও লাগবে না। যাঁরা বাসায় মেহেদি পরতে অভ্যস্ত নন তাঁরা ঈদের আগের দিন পার্লার থেকে মেহেদি নকশা করিয়ে আনতে পারেন।

খরচ

পার্লারভেদে মেহেদি লাগানোর খরচ ভিন্ন হয়ে থাকে। দুই হাত ভরে ঘন নকশার খরচ ২০০০ থেকে ৪০০০ টাকা। হালকা নকশার খরচ ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। হাতের মাঝখানে ডিজাইনে খরচ পড়বে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা। কনুই পর্যন্ত নকশা করতে খরচ পড়বে ১০০০ থেকে ১৬০০ টাকা। শিশুদের মেহেদি করাতে খরচ পড়বে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা। বেশির ভাগ পার্লারে এই খরচের মধ্যেই আপনার পছন্দমতো নকশা করিয়ে নিতে পারবেন।

 

 

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

ঈদের আগে চুল ও ত্বকের যত্ন

    ঈদের আগে পার্লারে যাওয়ার ফুরসত পাচ্ছেন না অনেকে। তাঁরা ঘরে বসেই সেরে নিতে পারেন ত্বক ও কেশচর্চা। সহজলভ্য উপাদান দিয়েই করতে পারেন চুল ও ত্বকের যত্ন। জানাচ্ছেন বিন্দিয়া বিউটি পার্লারের স্বত্বাধিকারী ও রূপ বিশেষজ্ঞ শারমিন কচি
শেয়ার
ঈদের আগে চুল ও ত্বকের যত্ন
ঘরোয়া উপাদানেই মিলবে লাবণ্যময় ত্বক। মডেল : রিভা

হেয়ার স্পা

নারকেল, জলপাই ও কাঠবাদামের তেল সমান অনুপাতে নিয়ে হালকা গরম করুন। আঙুলের ডগায় তেল লাগিয়ে চুলের নিচ থেকে ওপরে ম্যাসাজ করুন। পুরো মাথায় ম্যাসাজ হয়ে গেলে চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত তেল লাগান। ১০ মিনিট অপেক্ষা করে একটা তোয়ালে গরম পানিতে ভিজিয়ে চুলসহ পুরো মাথায় কিছুক্ষণ পেঁচিয়ে রাখুন।

এভাবে তিনবার চুলে গরম পানির ভাপ দিন। এবার হেয়ার প্যাক লাগোনোর পালা। আধাকাপ টক দই অথবা তরল দুধ, একটা পাকা কলা, দুই টেবিল চামচ মধু নিন। প্রথমে টক দই, কলা ও অ্যালোভেরার শাঁস ভালো করে মিশিয়ে মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন।
মধু মেশান। রুক্ষ ও স্বাভাবিক চুলের জন্য এই প্যাক কার্যকর। তৈলাক্ত চুলে এই প্যাকে মধুর সঙ্গে ১ টেবিল চামচ আপেল সিডর ভিনেগার মিশিয়ে নিন। এই প্যাক চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত ভালো করে লাগিয়ে শাওয়ার ক্যাপ পরে নিন।
এক ঘণ্টা পর প্রথমে পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিয়ে শ্যাম্পু করুন। শ্যাম্পুর পর চুল মুছে কন্ডিশনার লাগান। দুই মিনিট অপেক্ষা করে পরিষ্কার পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিন এবং ঈদের এক দিন আগে করুন হেয়ার স্পা।

 

ঘরোয়া উপাদানেই মিলবে লাবণ্যময় ত্বক। মডেল : রিভা
ত্বক ও চুলের যত্নে বিভিন্ন ফলের প্যাকে উপকার পাবেন।
মডেল : ইতি।ছবি : মনজু আলম

ফেসিয়াল

আঁটসাঁট করে চুল বেঁধে তুলার বলে অলিভ অয়েল লাগিয়ে মুখমণ্ডলে বুলিয়ে নিন। ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। এবার স্ক্রাবিংয়ের জন্য ১ টেবিল চামচ চালের গুঁড়ার সঙ্গে আধা টেবিল চামচ মসুর ডালের গুঁড়া এবং ১ টেবিল চামচ টক দই মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন। হালকাভাবে সার্কুলার মুভমেন্টে ম্যাসাজ করুন। শেষ হলে কুসুম গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে মুখ মুছে ফেলুন। মাঝারি আকৃতির হাঁড়িতে ফুটন্ত গরম পানি ঢালুন। চাইলে পছন্দের এসেনশিয়াল অয়েল যোগ করতে পারেন। চোখ বন্ধ করে বড় তোয়ালে দিয়ে মাথা ঢেকে ওই হাঁড়ির পানির ভাপ নিন। এভাবে ৫ মিনিট ভাপ নিয়ে আলতো করে মুখ মুছে খুব সাবধানে রিমুভার স্টিক দিয়ে ব্ল্যাক ও হোয়াইট হেডস বের করুন। ব্ল্যাক ও হোয়াইট হেডস রিমুভ হয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানির ঝাপটা দিন। এবার ত্বকের ধরন অনুযায়ী বিউটি মাস্ক লাগিয়ে নিন।

মাস্ক লাগানো হয়ে গেলে শসা গ্রেট করে দুই চোখের ওপর দিয়ে ২০ মিনিট চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকুন। সব শেষে মুখ ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার লাগান। ফেসিয়াল করার জন্য রাতে ঘুমানোর আগের সময়টি বেছে নিন।

 

পেডিকিউর-ম্যানিকিউর

পছন্দমতো আকৃতিতে হাত ও পায়ের নখ কেটে নিন। ফাইলার দিয়ে ফাইল করুন। হালকা গরম পানিতে ১ টেবিল চামচ লেবুর রস, ১ চা চামচ লবণ ও সামান্য মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে হাত ৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। ব্রাশ দিয়ে ঘষে ঘষে আঙুলের নখ, নখের চারপাশ, কনুইসহ পুরো হাত পরিষ্কার করুন। কিউটিক্যাল কাটার দিয়ে নখের পাশের কিউটিক্যাল ফেলে দিন। হাত ধুয়ে মুছে নিন। এক টেবিল চামচ অলিভ অয়েল বা আমন্ড অয়েলের সঙ্গে এক টেবিল চামচ চালের গুঁড়া, এক টেবিল চামচ বেসন ও দুই টেবিল চামচ টক দই মিশিয়ে স্ক্রাবার বানিয়ে হাতের নিচ থেকে ওপরে হালকাভাবে ম্যাসাজ করুন। ৫ মিনিট ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। একই পদ্ধতিতে পায়েও ক্লিনজিং ও স্ক্রাবিং করুন। পামস্টোন দিয়ে ঘষে পায়ের ময়লা ও মরা কোষ পরিষ্কার করুন। এবার হাত ও পায়ে লাগানোর জন্য মুলতানি মাটি, চন্দন পাউডার, গোলাপজল, মধু ও অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে নিন। অথবা পাতিলেবু, হলুদ, চন্দন, মধু, অ্যালোভেরা, শসা, টক দই ইত্যাদি দিয়ে নিজের ত্বক অনুযায়ী বানিয়ে নিন ইচ্ছামতো প্যাক। ব্রাশের সাহায্যে হাত ও পায়ে লাগান। ২০ মিনিট রেখে ভেজা হাতে ঘষে ঘষে তুলে ফেলুন। স্বাভাবিক পানি দিয়ে হাত ও পা ধুয়ে মুছে ময়েশ্চারাইজার লাগান। ব্যাস ঈদের আগেই ঘরে বসে সারা হয়ে গেল ম্যানিকিউর ও পেডিকিউর।

 

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য

ঈদের দুপুর রাতে

    রোস্ট, বিরিয়ানি না হলে উত্সব ঠিক জমে না। ঈদের দিন দুপুর ও রাতে মাংসের সঙ্গে রাখতে পারেন মাছও। তিনটি রেসিপি দিয়েছেন রন্ধনশিল্পী নাজিয়া ফারহানা
শেয়ার
ঈদের দুপুর রাতে

মুরগির আচারি রোস্ট

 

উপকরণ

 

মুরগি একটি, পাঁচফোড়ন ২ চা চামচ, শুকনা মরিচ কুচি, মিষ্টি দই ৩ টেবিল চামচ, আদা বাটা ১ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ২ চা চামচ, পেঁয়াজ বাটা ২ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ কুচি সিকি কাপ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, ঘি ৩ টেবিল চামচ, জিরার গুঁড়া, ধনিয়া গুঁড়া, কিশমিশ, বেরেশতা বাটা, গুড় ১ টেবিল চামচ করে, গরম মসলা গুঁড়া ১ চা চামচ, লবণ ও চিনি স্বাদমতো।

 

রোস্ট, বিরিয়ানি না হলে উত্সব ঠিক জমে না।

যেভাবে তৈরি করবেন

 

১.   মুরগি কাঁটাচামচ দিয়ে ভালো করে কেচে অল্প তেল ও ঘিয়ের মধ্যে হালকা সোনালি করে ভেজে তুলে রাখুন।

২.   বাকি তেল ও ঘিয়ে পাঁচফোড়ন ও শুকনা মরিচের ফোড়ন দিয়ে পেঁয়াজ কুচি হালকা নেড়ে সব বাটা ও গুঁড়া মসলা দিয়ে কষিয়ে নিন।

৩.   এবার ভেজে রাখা মুরগি দিয়ে কষিয়ে ২৫ মিনিট ঢেকে রান্না করুন। বেরেশতা বাটা ও গুঁড় দিয়ে আরো কিছুক্ষণ রান্না করে পোলাও, বিরিয়ানি অথবা খিচুড়ির সঙ্গে পরিবেশন করুন।

 

 

মাটন লেগ রোস্ট

উপকরণ

খাসির রানের মাংস ১ কেজি, টক দই ২০০ গ্রাম, গরম মসলা ১ টেবিল চামচ, কাশ্মীরি লাল মরিচের গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, ধনে গুঁড়া ২ টেবিল চামচ, ভাজা জিরা গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, আদাবাটা দেড় টেবিল চামচ, রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ, জায়ফল বাটা ১টি, জয়ত্রি বাটা ১ টেবিল চামচ, মৌরি ১ টেবিল চামচ, মালাই ৪ টেবিল চামচ, মাওয়া আধাকাপ, আস্ত কাঁচা মরিচ ৭-৮টি, ঘি আধাকাপ, চিনি ১ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো, ধনেপাতার কুচি সামান্য।

" height="483" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/Magazine 2023/24-03-2025/k019.jpg" width="800" />

যেভাবে তৈরি করবেন

১.   মাংস ভালো করে ধুয়ে কাঁটাচামচ দিয়ে একটু খুঁচিয়ে নিতে হবে। এরপর পানি, মৌরি, ঘি বাদে বাকি সব উপকরণ দিয়ে ভালো করে সারা রাত ফ্রিজে রেখে দিতে হবে ম্যারিনেশনের জন্য।

২.   এরপর ফ্রিজ থেকে প্যানে ঘি গরম করে তাতে মৌরির ফোড়ন দিন। এবার ম্যারিনেট করা খাসির রান দিয়ে দিন।

অল্প আঁচে কষিয়ে নিন।

৩.   মাংস থেকে পানি বের হতে শুরু করলে সামান্য গরম পানি দিন। এরপর অল্প আঁচে ২-৩ ঘণ্টা মাংসের দুই পিঠ উল্টেপাল্টে রান্না করুন। এখন এতে মৌরি ও ঘি দিয়ে দিন।

৪.   মাংস সিদ্ধ হয়ে ঝোল শুকিয়ে এলে আরেকটি পাত্রে নিয়ে পরিবেশন করুন মাটন রোস্ট।

 

প্যান গ্রিল কোরাল

উপকরণ

কোরাল মাছের ফিলে ৭০০  গ্রাম, লেবুর রস আধাকাপ, সি সল্ট ও কালো গোলমরিচের গুঁড়া দেড় চা চামচ করে, মাখন ৫০ গ্রাম, ফুল ক্রিম দেড় টেবিল চামচ, রসুন কুচি ২ টেবিল চামচ, ঘি আধা চা চামচ, জলপাই তেল ২ টেবিল চামচ, কয়লা এক টুকরা, জাফরান ৮ থেকে ১০টি।

রোস্ট, বিরিয়ানি না হলে উত্সব ঠিক জমে না।

যেভাবে তৈরি করবেন

১.   মাছের ফিলে ধুয়ে কিচেন টাওয়েল দিয়ে পানি মুছে নিন। ফিলে দুটি ৬ টুকরা করে একটি ছড়ানো পাত্রে নিয়ে লেবুর রস, সি সল্ট ও গোলমরিচের গুঁড়া মেখে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে দিন।

২.   গ্যাসের চুলায় কয়লা গরম হতে দিন। একটি পাত্রে ৩০ গ্রাম গলানো মাখন নিয়ে তাতে জাফরান ও বাকি লেবুর রস ও ফুল ক্রিম দিয়ে মিনিট দুয়েক চুলায় জ্বাল দিন।

৩.   চুলায় গ্রিল প্যান দিন। প্যান গরম হলে তাতে জলপাই তেল দিন। মাখন ২০ গ্রাম যোগ করুন। মাখন গলে এলে রসুন দিন। খানিকটা সতে নিন।

৪.   এবার ম্যারিনেট করে রাখা মাছগুলো সাবধানে প্যানে রসুনের ওপর বসিয়ে দিন। চুলার আঁচ চড়া থাকবে এ সময়। এক পাশ গ্রিল হলে সাবধানে উল্টে দিন। দুই পাশে সমানভাবে রান্না হলে ছোট একটু ফয়েল পেপার গোল করে নিয়ে তার ওপর কয়লা রেখে ওপরে আধা চা চামচ ঘি দিন।

৫.      ধোঁয়া বের হলে চুলার আঁচ বন্ধ করে প্যানের ওপর ঢাকনা লাগিয়ে রাখুন মিনিট পাঁচেক। এরপর ঢাকনা খুলে পাত্রে সাজিয়ে লেবুর রস আর জাফরানের সস দিয়ে পরিবেশন করুন।

 

 

 

 

 

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

ঈদের সকালে মিষ্টি মুখ

শেয়ার
ঈদের সকালে মিষ্টি মুখ

ঈদের সকালে পাতে মিষ্টি থাকেই। রাখতে পারেন চেনা-অচেনা নানা পদ। পাঁচটি রেসিপি দিয়েছেন রন্ধনশিল্পী লিপি ইসমাইল

 

তরমুজের নেকলেস সন্দেশ

 

উপকরণ

 

এক কাপ গ্রেট করা তরমুজ, এক কাপ সুজি, হাফ টিন কনডেন্সড মিল্ক, হাফ কাপ গুঁড়া দুধ, হাফ কাপ কাজুবাদাম পেস্ট, দুই টেবিল চামচ ঘি, ডেকোরেশনের জন্য ড্রাই ফুট এবং তরমুজের জেলো প্রয়োজনমতো।

ঈদের সকালে মিষ্টি মুখ

যেভাবে তৈরি করবেন

 

১. একটি পাত্রে চুলার আঁচ কমিয়ে ঘি দিয়ে সুজি দিন এবং হালকা করে ভেজে নিন।

২. এরপর এতে একে একে সব উপকরণ দিয়ে ভালো করে নাড়ুন যেন নিচে না লেগে যায়।

৩. মিশ্রণটি ঘন ও পাত্র থেকে আলাদা হয়ে এলে চুলা থেকে নামিয়ে নিন। একটি ডিশে ঘি ব্রাশ করে এতে তরমুজের মিশ্রণ সমান করে রেখে ঠাণ্ডা হলে পছন্দসই আকারে কেটে বাদাম ও তরমুজের জেলো দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন। ব‍্যাস তৈরি হয়ে গেল মজাদার তরমুজের নেকলেস সন্দেশ।

 

ইনস্ট্যান্ট খেজুর সেমাই মিল্কি বাইটস

উপকরণ

 

সেমাই এক প‍্যাকেট, ঘি আধাকাপ, কনডেন্সড মিল্ক এক কাপ, নরম খেজুর কুচি এক কাপ (বীজ ছাড়ানো), গুঁড়া দুধ আধাকাপ, ড্রাই ফ্রুট

আধাকাপ।

ঈদের সকালে মিষ্টি মুখ

যেভাবে তৈরি করবেন

১.   অল্প আঁচে কড়াইয়ে ঘি গরম করে ছোট করে সেমাইগুলো ভেঙে ঘির মধ্যে দিয়ে ভালো করে নেড়ে খেজুর দিয়ে মিলিয়ে নিন।

২.   এবার এতে কনডেন্সড মিল্ক দিয়ে ভালো করে নেড়ে গুঁড়া দুধ ও ড্রাই ফুট দিয়ে সব উপকরণ ভালো করে মিলিয়ে নিন।

৩.   একটি ডিশে ঘি ব্রাশ করে খেজুর সেমাইয়ের মিশ্রণ সমান করে সেট করে নিন নরমাল টেম্পারেচারে।

৪.   ঠাণ্ডা হয়ে এলে পছন্দসই আকারে কেটে ওপরে বাদাম ও খেজুর দিয়ে পরিবেশন করুন চটজলদি চিনি ছাড়া মজাদার এই ঈদ স্পেশাল ডেজার্ট।

 

ছানার পায়েস

উপকরণ

১.৫ লিটার দুধ, আধাকাপ পোলাওর চাল, এক কাপ ছানা, দুটি এলাচ, আধাকাপ গুঁড়া দুধ, এক কাপ চিনি।

ঈদের সকালে মিষ্টি মুখ

যেভাবে তৈরি করবেন

১.   প্রথমে দুধ চুলায় বসিয়ে নিন এবং চাল আগে থেকে ভিজিয়ে রেখে আধাভাঙা করে নিন।

২.   এবার চাল দুধের সঙ্গে দিয়ে অনবরত নাড়তে থাকুন। এরপর এতে দুটি এলাচ দিন।

৩.   চাল সিদ্ধ হয়ে কিছুটা ঘন হয়ে এলে ছানা দিন। ছানা দিয়ে ভালো করে নাড়তে হবে। এরপর এতে গুঁড়া দুধ দিয়ে আবারও ভালো করে নাড়ুন।

৪.   এবার এতে চিনি দিয়ে আবারও ঘন ঘন নাড়তে হবে। চিনি গলে এলে এবং মিশ্রণটি ঘন হয়ে এলে নামিয়ে নিন। ব্যাস তৈরি হয়ে গেল মজাদার ছানার পায়েস।

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ