<p>শিশুর জন্ম দেওয়া ও তাকে সুন্দর ও সুযোগ্য করে গড়ে তোলা—দুটি একেবারেই আলাদা ব্যাপার। তাদের সুন্দর ও সুশৃঙ্খল জীবন গড়ে তোলার পেছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো শিশুমনস্তত্ত্ব বুঝে শিশুদের ছোট থেকেই বড় করে তোলা। শিশুকে সঠিক শিক্ষা দিয়ে বড় করার পরামর্শ দিয়েছেন লেখক ও গবেষক <strong>মেরিনা চৌধুরী</strong></p> <p> </p> <p>কোনো মা-বাবাই চান না তাঁর সন্তান বিপথে যাক; অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি হোক। কিন্তু কখনো কখনো তাঁদের অজান্তেই কিছু ভুলভ্রান্তি থেকে যায়। তাত্ক্ষণিক এই ভুল যদি শুধরে নেওয়া না যায়, তবে হয়তো শিশুদের ভবিষ্যৎ জীবন কষ্টদায়ক হয়ে উঠবে। সন্তানস্নেহ মা-বাবার স্বাভাবিক ও সহজাত প্রবৃত্তি। কিন্তু প্রশ্রয়যুক্ত স্নেহ-ভালোবাসা শিশুদের মানসিক বিকাশ রুদ্ধ করে ও চিরদিনের জন্য পরমুখাপেক্ষী ও চারিত্রিক দিক দিয়ে পঙ্গু করে দেয়। মা-বাবা যদি চান তাঁদের সন্তান বড় হয়ে সুসংহত আচার-আচরণে, ব্যবহারে সভ্য সমাজে সুনাগরিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করুক, তবে ছোট থেকেই তার বেড়ে ওঠার প্রতিটি স্তরে সতর্ক ও সচেতনভাবে দৃষ্টি রাখা অত্যন্ত আবশ্যক। মনে রাখা উচিত, শিশুর মন অত্যন্ত কোমল ও সংবেদনশীল। ছোট থেকে তাদের চারপাশে যা দেখে বা শোনে তার প্রভাব শিশুমনে দারুণ রেখাপাত করে। শিশুর বয়স বছর দুই পেরোতে না পেরোতেই নিয়ম-শৃঙ্খলা, ভালো-মন্দ, জিনিস নষ্ট না করা, কোনটা করা উচিত, কোনটা করা উচিত নয়—সেসব বোঝার ক্ষমতা আসে। তাই প্রথম পদক্ষেপ হবে বাড়ির ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ যেন ভালো হয়, এদিকে মা-বাবার লক্ষ রাখা। প্রতিদিনের ঝগড়া ও অশ্লীল কথাবার্তা শিশুর মনকে প্রভাবিত করে। সুতরাং তাদের সামনে কোনো আলাপ-আলোচনা ও পরিবারের সদস্যদের প্রতি অসম্মানজনক আচরণ করা উচিত নয়।</p> <p>ছোট থেকে তাদের শিষ্টাচার শেখানো উচিত, যা ভবিষ্যতে তাদের কাজে লাগবে। বিশেষ করে দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারিক শিষ্টাচারগুলো অবশ্যই তাদের শেখানো উচিত। ছোটবেলায় বাচ্চাদের উচ্ছৃঙ্খলতা ও অশিষ্ট আচরণ দেখেও যদি মা-বাবা বাচ্চা বলে বারবার ক্ষমা করে দেন এবং চোখ ফিরিয়ে নেন, তবে বড় হয়ে তারা কখনোই শোধরায় না; বরং আরা অশিষ্ট হয়ে ওঠে।</p> <p>বাচ্চারা ভুল করতেই পারে। তাদের কড়া শাসন না করে খুব সংযতভাবে ভুল ধরিয়ে দিতে হবে। তাদের কোমল হৃদয় অল্পেই ব্যথা পায়। অতি কঠোরতা বা অতি প্রশ্রয় তাদের ভবিষ্যতের আচার-আচরণে প্রভাব ফেলতে পারে। শাসন করুন, তবে কঠোরভাবে নয়। বেশির ভাগ বাচ্চা খাবার নিয়ে ঝামেলা করে। কখনো তারা খেতে চায় না, কখনো টেবিলময় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে খায়, যা অনেক সময় বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়; বিশেষত কর্মজীবী মায়েদের। এ ক্ষেত্রে যত্নবান ও ধৈর্যশীল হওয়া প্রয়োজন। মনে রাখবেন, মা-বাবাই বাচ্চাদের প্রাথমিক শিক্ষক।</p> <p>ছোট থেকে নির্দিষ্ট সময়ে কিভাবে খেতে হয় তা শেখাতে হবে। খাওয়ার আগে ও পরে হাত ভালো করে ধুয়ে এক জায়গায় বসে খাওয়া উচিত। একটু বড় হলে বাচ্চাদের বাড়ির অন্য সদস্যদের সঙ্গে বসে খাবার অভ্যাস করানো উচিত। তাহলে তারা শিখবে কিভাবে খেতে হয়, বসতে হয়।</p> <p>আরো একটি দিক মা-বাবাকে খেয়াল রাখতে হবে, ছোটরা যখন কোনো কাজ করে তাদের সেই কাজের (স্কুল অথবা বাড়ি) প্রশংসা করা। এতে তারা পাবে উৎসাহ। ছোটরা সব সময় মা-বাবা ও স্কুলের শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রশংসা ও উৎসাহ পাওয়ার জন্য লালায়িত থাকে। দেখবেন, তারা নিজেদের কার্যকুশলতার প্রতি আরো বেশি মনোযোগী ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে। শাসন ও স্নেহচ্ছায়ায় এই শিশুদের ছোট থেকে এভাবে গড়ে তুললে আপনিই হবেন গর্বিত মা-বাবা। আর এটাই হলো গুড প্যারেন্টিং।</p> <p><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/Print- 2018/Feature/03 March/12-03-2018/A2Z-12-03-2018-23.jpg" /></p>