ঢাকা, শনিবার ২৯ মার্চ ২০২৫
১৫ চৈত্র ১৪৩১, ২৮ রমজান ১৪৪৬

ঢাকা, শনিবার ২৯ মার্চ ২০২৫
১৫ চৈত্র ১৪৩১, ২৮ রমজান ১৪৪৬
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

গবেষণা অন্তপ্রাণ এক শিক্ষক

  • তাঁর লেখা ৫০টিরও বেশি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক জার্নালে। ছিলেন নোবেল পুরস্কার প্রদান কমিটির নমিনেটর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্বিক পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. গোলাম মোহাম্মদ ভূঁঞা এ বছর সম্মানিত হয়েছের 'ডিনস অ্যাওয়ার্ড'-এ
ক্যাম্পাস প্রতিবেদক
ক্যাম্পাস প্রতিবেদক
শেয়ার
গবেষণা অন্তপ্রাণ এক শিক্ষক
ড. গোলাম মোহাম্মদ ভূঁঞা। ছবি : কামরুল হাসান

ইন্টারমিডিয়েটে পড়তে গিয়ে খুব ভালো লেগে গেল পদার্থবিজ্ঞান। ফল বেরোনোর পরে সিদ্ধান্ত নিলেন, ভর্তি হবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৭৮-৭৯ সেশনে ভর্তি হলেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে। তবে বন্ধুরা ব্যাপারটি মেনে নিতে পারলেন না।

তাঁদের প্রায় সবাই ভর্তি হয়েছেন বুয়েট কিংবা মেডিক্যালে। আর গোলাম মোহাম্মদ কিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে! একসময় খেপানো শুরু করলেন। দেখলেই বলতেন, 'ওই যে আমাদের মন্টু ডক্টর!'

ব্যাপারটি মোটেও পছন্দ হতো না। মনে মনে জেদ চেপে গেল- 'ডক্টর হয়ে দেখিয়ে দেব তোদের।

' শুরু হলো আটঘাট বেঁধে পড়াশোনা। প্রথম বর্ষেই বিভাগে প্রথম হলেন। তবে দ্বিতীয় বর্ষে অসুখে পড়লেন। ফাইনাল পরীক্ষাই দিতে পারলেন না।
পরের ব্যাচের সঙ্গে নতুন করে শুরু করতে হলো। তাতে অবশ্য ফলাফলের হেরফের হলো না। গোলাম মোহাম্মদের সবচেয়ে বড় চমকটা ছিল অনার্স ফাইনালের পর। ফল বেরোল। দেখা গেল, 'রাজা কালীনারায়ণ বৃত্তি' পেয়েছেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগ, অনুষদ ও অধিভুক্ত কলেজের সব ছাত্রছাত্রীর মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বরধরীকে দেওয়া হয় এই বৃত্তি। ১৯৮৩ সালে এই কীর্তিটাই করেছিলেন গোলাম মোহাম্মদ। আরো পেলেন 'ইউজিসি স্কলারশিপ' ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের 'ডায়মন্ড জুবলি স্কলারশিপ'। ১৯৮৮ সালে শিক্ষকতা শুরু করলেন পদার্থবিজ্ঞানে। এখন তিনি তাত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের একজন অধ্যাপক।

শিক্ষক গোলাম মোহাম্মদ ভূঁঞার জীবনও সাফল্যমণ্ডিত। শিক্ষকতার শুরু থেকেই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত। ৫০টিরও বেশি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণাপত্রে। এখন কাজ করছেন 'কনডেনসড ম্যাটার অব ফিজিক্স' নিয়ে। এ ছাড়া প্রখ্যাত বাঙালি বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর সংখ্যাতত্ত্ব, বোসন কণার ধর্ম, ম্যাসিভ বোসন কনডেনসেশন; তরল ধাতু নিয়েও গবেষণা চলছে।

গবেষণাকর্মের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন অনেক পুরস্কার- 'কমনওয়েলথ বৃত্তি (১৯৯০-৯৩), বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্স গোল্ডমেডেল (১৯৯৬), জার্মানির আলেকজান্ডার ভন হামবোল্ট ফেলোশিপ (১৯৯৮-৯৯)। পরপর তিনবার পেয়েছেন স্পেনের ভেলাদলিদ বিশ্ববিদ্যালয় ফেলোশিপ (২০০৯-১১)। সর্বশেষ লাভ করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের 'ইরাসমাস মুন্ডাস বৃত্তি' (২০১৩)।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠানেও চাকরি করেছেন। ১৯৯৯ থেকে ১০০৪ সাল- এ ছয় বছর ছিলেন ইতালির আবদুস সালাম ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর থিওরিটিক্যাল ফিজিক্সে। পদ ছিল 'রেগুলার অ্যাসোসিয়েট মেম্বার'। ২০০২ সালে ওমানের সুলতান কাবুস ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞানের 'ভিজিটিং কনসালট্যান্ট'; ২০০৩-০৪ সালে নোবেল পুরস্কার প্রদান কমিটির একজন নমিনেটর হিসেবে কাজ করেছেন। এ বছর নির্বাচিত হয়েছেন ভারতের নন-অলিম্পিক ইউনিভার্সিটির অনারারি অধ্যাপক।

তাত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের এ অধ্যাপক তিনটি পাঠ্যপুস্তক লিখেছেন। সর্বশেষ ২০১৩ সালে প্রকাশিত হয়েছে 'সলিড স্টেট ফিজিক্স'। সেটির জন্যই ২৬ আগস্ট পেয়েছেন বিজ্ঞান অনুষদ 'ডিনস অ্যাওয়ার্ড'। সে পুরস্কারের পর অনুভূতি জানাতে গিয়ে বলেন, 'এত দিন ধরে গবেষণার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরে খুবই আনন্দিত। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন শিক্ষকদের গবেষণা দুর্লভ ব্যাপার। প্রায় ৯০ শতাংশ শিক্ষকেরই আন্তর্জাতিক মানের তেমন কোনো প্রকাশনা নেই। আমার এ অর্জন যদি কাউকে গবেষণায় অনুপ্রাণিত করতে পারে, সেটাই আমার বড় আনন্দ হবে।'

 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ