<p>দিন দিন কলকাতার চেয়ে বাংলাদেশের ছবিতে বাড়ছে তাঁর ব্যস্ততা। জন্ম ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুরে। তবে তাঁর শ্বশুরবাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়ায়। স্ত্রীর কথা মাথায় রেখেই বাংলাদেশের মেয়ে গানটি করেছেন? মুখে লাজুকতা ছড়িয়ে বললেন, ‘কিছুটা প্রভাব তো আছেই। তবে এই গানটি হিট করার পর অনেকে আমাকে বাংলাদেশি ভাবতে শুরু করেছে। আমারও ভালো লাগে বিষয়টা। এক কনসার্টে তো মাইকে ঘোষণাই দিয়ে দিল এখন মঞ্চে আসবেন কলকাতার জনপ্রিয় সংগীত পরিচালক বাংলাদেশের আকাশ সেন। এখনো অনেকে জিজ্ঞেস করেন বাংলাদেশের কোথায় আপনার বাড়ি?’</p> <p>বাংলাদেশ নিয়ে তাঁর গর্বের শেষ নেই। এ দেশের গানের কথা উঠতেই বলেন, ‘আর ডি বর্মণ দিয়েই আমার শুরু। তালিকায় আছে বাংলাদেশের জেমস, এলআরবিও। তাদের গান আমার খুবই প্রিয়!’</p> <p>হাতে-কলমে তাঁর গানের পাঠ একেবারে ছোটবেলায়, মা ঝর্ণা দাসের কাছে। শিখেছেন গৌরগোপাল বৈশ্যর কাছেও। ক্লাসিক্যাল মিউজিকে বেড়ে ওঠা আকাশ কলেজে উঠে হারমোনিয়াম ছেড়ে গিটার হাতে ব্যান্ড গড়েন ২০০৩ সালে। ২০০৪ সালে ‘এক পশলা বৃষ্টি’ নামের অ্যালবাম করেন। এরপর ‘সুইটি’ অ্যালবামের টাইটেল গানটি তাঁকে আলোচনায় নিয়ে আসে। ২০০৫ সালে টি সিরিজ থেকে পর পর তাঁর ‘ভেজাল মিক্সড’ ও ‘বসন্ত’ নামের দুটি অ্যালবাম আসে। গান গেয়ে এই প্রথম উপার্জন। এর ভেতর চলছে ওষুধ কম্পানির ম্যানেজারের চাকরি। একদিন হুট করে চাকরি ছেড়ে পাড়ি জমান মুম্বাই। টিকতে পারলেন না বেশি দিন। আবার কলকাতা। সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন একটা সফটওয়্যার কম্পানিতে। চলতে থাকে গানও। ২০০৮ সালে শতাব্দী রায় তাঁকে ফোন করে ‘ফ্রেন্ড’ ছবিতে সংগীত পরিচালনা করতে বলেন। সেই শুরু।</p> <p>২০১০ সালে জয়শংকরের ‘তোর নাম’ ছবির জন্য পান সেরা মিউজিক ডিরেক্টরের তকমা। ‘ফিরে এলাম জবাব দিতে’, ‘এক টুকরো তারা’, ‘জোকার’, ‘গোলেমালে পিরিত করো না’, ‘ককটেল’সহ কলকাতার অনেক ছবির সংগীত পরিচালনা করেছেন।</p> <p>বাংলাদেশে শুরু ২০১২ সালে ‘মোস্ট ওয়েলকাম’ ছবিতে কৈলাশ খেরের গাওয়া ‘কে কাহার’ দিয়ে। এরপর ‘নিঃস্বার্থ ভালোবাসা’য় করেন ‘ঢাকার পোলা’, ‘হোয়াট ইজ লাভ’ এবং ‘সাজনা ভালোবাসা ভোলা যায় না’। গানগুলো শ্রোতারা দারুণভাবে গ্রহণ করে। ‘স্বপ্ন যে তুই’ ছবির আলোচিত গান ‘তোর চোখেতে চেয়ে’সহ তিনটি গান তাঁর করা। ‘মোস্ট ওয়েলকাম-টু’ ছবিতেও সমানসংখ্যক গান। এর মধ্যে আলোচিত ‘চিকেন তন্দুরি’। কলকাতা-বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’-এ করা ‘বাংলাদেশের মেয়ে’ বেশ জনপ্রিয়। মাহি ও অঙ্কুশ অভিনীত ‘রোমিও বনাম জুলিয়েট’ ছবিতে আকাশের করা ‘ফেসবুকের ফটো দেখে প্রেমে পড়েছি’ ও ‘সোহাগ চাঁদ’ গান দুটিও শ্রোতারা গ্রহণ করে। ‘অগ্নি-২’ ছবিতে ছিল চারটি—‘একখান চুমু’, ‘আল্লাহ জানে জানে’, ‘বাঞ্জারা’ ও ‘তোরে খুঁজি আকাশে’। ‘অঙ্গার’ ছবিতে করা ‘কতবার বোঝাবো বল’ ও ‘আতা গাছে তোতা পাখি’ও প্রশংসা কুড়িয়েছে। মুক্তির অপেক্ষায় থাকা ‘মেন্টাল’ ছবিতে রয়েছে ‘আমার মতো কে আছে বলো’। গানটিতে কণ্ঠও দিয়েছেন আকাশ। গানটির অডিও এরই মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে ইউটিউবে।</p> <p>আকাশ বলেন, ‘কলকাতা ও বাংলাদেশের বাংলার মধ্যে খানিক পার্থক্য রয়েছে। বাংলাদেশের বাংলাটা অনেক মিষ্টি। ‘অগ্নি-২’-তে ‘আল্লাহ জানে’ গানে ‘তুই আমার ল্যায়লা’ বলেছি। ইউটিউবে দেখলাম বাংলাদেশে লায়লা বলে—তাই অনেকে কমেন্ট করছে লায়লা হলে ভালো হতো। সামনে এসব শব্দ ঠিক করব।’</p> <p>বর্তমানে বাংলাদেশের ‘অস্তিত্ব’ ছবির জন্য গান বানাচ্ছেন। হাতে আছে আরো বেশ কিছু ছবির কাজ। কিছুদিনের মধ্যেই আসবে তাঁর করা কণার গাওয়া ‘রেশমি চুড়ি’র মিউজিক ভিডিও।</p> <p>আকাশ বলেন, ‘চিতায় ওঠার আগ পর্যন্ত কাজ করে যেতে চাই।’ আকাশের মুগ্ধ শ্রোতাদেরও হয়তো এমনই প্রত্যাশা।</p>