<p>সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন এমন শক্তিশালী যে মুহূর্তেই বিশ্বের সব খবর মানুষের হাতের মুঠোয়। হলিউড, বলিউড—এমনকি কলকাতার ছবিও মুক্তি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখতে পারি। ফলে আমাদের দর্শকের রুচি বদলে যাচ্ছে। দর্শক চান বলিউড না হোক, অন্তত কলকাতার ছবির সঙ্গে যেন আমরা পাল্লা দিই। কিন্তু হয়ে উঠছে না। বাজার ছোট, হলের পরিবেশও ভালো নয়। তবু ঈদের সময় অনেকে হলে যাওয়ার চেষ্টা করেন। আমাদের উচিত তাঁদের আনন্দ দেওয়া। ৫০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে যে দর্শক হলে যাচ্ছেন, তাঁকে অন্তত ১০০ টাকার বিনোদন দিতে হবে। এবার ঈদে তিনটি ছবি মুক্তি পেয়েছে—রাজু চৌধুরীর ‘শ্যুটার’, ওয়াজেদ আলী সুমনের ‘রক্ত’ এবং শামীম আহমেদ রনির ‘বসগিরি’। তিন পরিচালকই আমার সহকর্মী। তাঁদের কাজকে আমি মূল্যায়ন করি, সম্মান করি। তবে আজ পরিচালক নয়, দর্শক হয়ে লিখতে হচ্ছে। শুরুতে এই তিনজনের মধ্যে সিনিয়র রাজু চৌধুরীর ‘শ্যুটার’ ছবি নিয়ে লিখছি।</p> <p> </p> <p><strong><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2016/Feature -2016/September/22-09-2016/kk-22-09-16-097-F-6.jpg" style="float:left; height:392px; margin:8px; width:400px" />শ্যুটার :</strong> আন্ডারওয়ার্ল্ডের গল্প। নানা শাহ ডন। তার হয়ে কাজ করে শাকিব খান। নানার ছেলে শাহরিয়াজ। অসৎ। বাবার নাম ভাঙিয়ে চাঁদা তোলে। কথাটা নানা শাহর কানে দেয় শাকিব। শুরু হয় বাবা-ছেলের দ্বন্দ্ব। ডন হলেও নানা আদর্শবাদী। শাকিবের হাতে সাম্রাজ্য তুলে দিতে চায়। কিন্তু সেটা সম্রাট আর শাহরিয়াজ হতে দিতে চায় না। ছবির গল্প আমার পছন্দ হয়েছে। সাধারণত কোরবানির ঈদে দর্শক এমন মারদাঙ্গা ছবিই আশা করেন। কিন্তু পরিচালক কি সঠিকভাবে পর্দায় তাঁর ভাবনা তুলে আনতে পেরেছেন? আমার মনে হয়েছে, সময়স্বল্পতা পরিচালককে খুব অস্থির করেছে। ছবির দ্বিতীয়ার্ধে শাকিব খানের দৃশ্য চার-পাঁচটি। এটা দর্শক মানতে পারেননি। যত দূর জানি, এই ঈদে একমাত্র ‘শ্যুটার’ ছবির প্রযোজক লগ্নীকৃত অর্থের পুরোটাই ঘরে তুলেছেন। কিন্তু শুধু টাকা ফেরত পেলেই কি দায়বদ্ধতা থেকে দূরে সরে যাওয়া যায়? প্রযোজক চান তাঁর লগ্নীকৃত অর্থ ফেরত পেতে, পরিচালক চান তাঁর ছবি সবাই দেখুক, হল মালিক চান দর্শক হলে আসুক আর দর্শক চান ৫০ টাকায় পরিপূর্ণ বিনোদন পেতে। আমি জানি না তাঁদের কে কতটুকু পেয়েছেন। আশা করি, এই টিমের পরের ছবি আরো ভালো হবে।</p> <p> </p> <p><strong><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2016/Feature -2016/September/22-09-2016/kk-22-09-16-097-F-7.jpg" style="float:right; height:251px; margin:8px; width:400px" />রক্ত : </strong>সার্ক সম্মেলনে সাতটি দেশের মন্ত্রী অংশ নেবেন। তাঁরা একটি ব্রিজের ওপর দিয়ে সম্মেলনে পৌঁছবেন। একদল সন্ত্রাসী চায় মন্ত্রীরা যাওয়ার সময় ব্রিজটি উড়িয়ে দিতে। এই পরিকল্পনাকারীর মূল হোতা অমিত হাসানের বউ ব্যাপারটি শুনে ফেলে। অমিত তাকে হত্যা করে। একমাত্র মেয়েকেও হত্যা করতে চায় সে। অমিতের শালি পরী। বাচ্চা মেয়েটিকে বাঁচায় সে-ই। শুরু হয় সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পরীর বাঁচামরার লড়াই। অল্প কথায় এটিই ছবির গল্প। আমাদের দেশে অনেক লেডি অ্যাকশন ছবি নির্মিত হয়েছে। বেশির ভাগ ছবিই ব্যবসাসফল। বিশেষ করে ‘রক্ত’র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ এর আগে ‘অগ্নি’ বানিয়েও দর্শকদের মনোরঞ্জন করেছিল। আমি ‘অগ্নি’র সঙ্গে তুলনা করব না। ছবি দেখে মনে হয়েছে, পরী ও সুমনের চেষ্টার ত্রুটি ছিল না। ঝামেলা যা বেধেছে সেটা স্ক্রিপ্ট নিয়ে। কিছু কিছু জায়গায় গল্পটা ঠিকমতো পরিষ্কার হয়নি। ছবির কালার কারেকশন এবং ব্যয়বহুল আয়োজন চোখের আরাম দেয়। আইটেম গানটি বেশ উপভোগ করেছেন দর্শক। অ্যাকশন দৃশ্যগুলোও চোখে পড়ার মতো। ছবির সবচেয়ে খারাপ দিক এর দৈর্ঘ্য। বড়জোর ২ ঘণ্টা ৫ মিনিট হবে। এতে দর্শক মনে করেন, তাঁদের ঠকানো হচ্ছে। আরেকটি দিক, দৃশ্যগুলো বড় বড়। মাঝে মাঝে মনে হয়, কখন শেষ হবে? এই ছবি দেখেও মনে হয়েছে, প্রযোজক নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়েছেন পরিচালককে। ছবি শুরু হওয়ার আগেই মুক্তির তারিখ ঘোষণা করলে পরিচালকের মাথায় চাপ পড়ে যায়। তখন সুস্থভাবে কাজ করা যায় না।</p> <p> </p> <p><strong>বসগিরি :</strong> রনির ‘মেন্টাল’ ছবি দেখে হতাশ হয়েছিলাম। তবে অনেককে বলেছিলাম, পরের ছবিতে সে ঘুরে দাঁড়াবে। হয়েছেও   তা-ই। ঈদের তিন ছবির প্রথম অবস্থান ‘বসগিরি’র। ছবির গল্প ঢাকাই ছেলেকে নিয়ে। সে সত্যের জন্য লড়ে। দুর্নীতিবাজদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে গরিবদের পাশে দাঁড়ায়। একসময় বুবলির প্রেমে পড়ে মাস্তান ছেলেটা সহজ-সরল হয়ে যায়। গল্পটা সাদামাটা। তবে কমেডি ছবিটিকে টেনে নিয়ে গেছে। গান ভালো। লোকেশন চোখে লেগেছে। ছবির গ্রহণযোগ্যতা আরো বাড়ত, যদি গত বছরের হিট ছবি ‘লাভ ম্যারেজ’-এর ছায়া না থাকত! পরিচালক জেনেশুনে করেছেন কি না জানি না, শাকিবের সংলাপ, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক অনেকখানিই ‘লাভ ম্যারেজ’-এর সঙ্গে মিলে যায়। বুবলি নতুন হিসেবে বেশ ভালো করেছেন। মনোযোগ থাকলে তাঁর ভবিষ্যৎ ভালো। রনি এখনো নতুন। তাঁর ভুল ধরা উচিত নয়, বরং তাঁকে উৎসাহ দেওয়াটাই উচিত বলে মনে করি। রনির ভালো যে দিকগুলো তাঁর মধ্যে অন্যতম টিম ম্যানেজমেন্ট। তাঁর টিমের সবাই তরুণ। চেষ্টা করেছে ভালো ছবি উপহার দেওয়ার। সফলও হয়েছে তারা।</p> <p> </p>