<p>অসুস্থ হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন হাসপাতালে। দীর্ঘ চিকিৎসার পর এখন সুস্থ ‘ইত্যাদি’ খ্যাত সংগীতশিল্পী <strong>আকবর</strong>। সম্প্রতি কণ্ঠ দিয়েছেন নতুন দুটি গানে। লিখেছেন <strong>আতিফ আতাউর</strong>। ছবি তুলেছেন <strong>মোহাম্মদ আসাদ</strong></p> <p> </p> <p>বেশ ভালোই চলছিল সংগীতশিল্পী আকবরের জীবন।   স্ত্রী-কন্যা আর সংগীত ঘিরে কাটছিল সময়। স্টেজ শোতেও নিয়মিত গাইছিলেন। ছকে বাঁধা ছন্দময় জীবন। গত কোরবানির ঈদে সেই জীবনে হঠাৎ ছন্দপতন। অসুস্থতা নিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলেন। জানা যায়, জন্ডিস, টিউবারকুলোসিস, কিডনি জটিলতা, রক্তে সংক্রমণের পাশাপাশি ডায়াবেটিসেও আক্রান্ত আকবর। চিকিৎসাপত্রের সঙ্গে নিয়মিত বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দিলেন চিকিৎসক। সঙ্গে আরেকটা শর্ত, ছয় মাস গান গাওয়া যাবে না। অসুখের চেয়ে এই শর্তই যেন বেশি শাস্তি দিল আকবরকে! ‘যে গান গেয়ে আমি আজকের আকবর হয়েছি, মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, ছয় মাস সেই গান গাইতে পারব না। বিষয়টা মেনে নেওয়া আমার জন্য খুবই কষ্টকর ছিল। অসুখে আমি যতটা কষ্ট ভোগ করেছি, তার চেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছি গান গাইতে না পেরে।’—বললেন আকবর। যার মাধ্যমে রিকশাওয়ালার জীবন ছেড়ে খ্যাতির সঙ্গে অর্থবিত্তের জীবন শুরু সেই হানিফ সংকেতই বিপদের দিনে আকবরের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ‘শুরুতে টেকনিক্যালে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম। সেখানেই বেশ কিছুদিন চিকিৎসা নিই। এরপর হানিফ সংকেত স্যার অসুস্থতার খবর পান। তিনি তখন বিদেশে। সেখান থেকেই ইত্যাদির কর্মীদের বঙ্গবন্ধু হাসপাতালে আমাকে ভর্তি করার ব্যবস্থা করতে বলে দেন। চিকিৎসার যাবতীয় খরচও তিনিই দিয়েছেন।’—বললেন আকবর। হানিফ সংকেতের প্রতি এ জন্য কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। মিরপুর-৬-এ হানিফ সংকেতের বাসার পাশে বাসা নিয়েছিলেন, যাতে তাঁর কাছাকাছি থাকতে পারেন। তবে মেয়ের পড়াশোনার স্বার্থে সম্প্রতি নতুন আবাস গড়তে হয়েছে মিরপুর-১৩ নম্বরে। একমাত্র মেয়ে সেখানে এসওএস হারম্যান মেইনার স্কুল অ্যান্ড কলেজে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে।</p> <p>নতুন গানে ফেরার গল্প জানতে চাইলে আকবর বলেন, ‘প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আই মিডিয়ার প্রিন্স ভাই ফেসবুকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আমাকে দিয়ে দুটি গান করতে চান। গান দুটির কথা ভালো লাগল। তারপরই কণ্ঠ দিই।’ ‘কানামাছি’ ও ‘মাটির পরী’ শিরোনামের গান দুটির কথা লিখেছেন মাহফুজ ইমরান, সংগীতায়োজনে নাজমুল হক। আসছে রোজার ঈদে গান দুটির ভিডিও প্রকাশিত হবে। ভিডিওতে থাকবেন আকবরও। প্রায় এক বছর পর গানে ফিরলেন। কেমন ছিল অভিজ্ঞতা? ‘সত্যি বলতে গান গাওয়ার জন্য মনটা ছটফট করছিল। কিন্তু ডাক্তারের কথামতো চলতে গিয়ে মনকে বারণ করতে হয়েছে। কয়েক মাস আগে একটি ঘরোয়া পার্টিতে গান করলাম। শুনে সবাই বললেন, অসুখ আকবরের শরীরের ক্ষতি করতে পারলেও কণ্ঠের কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। সরাসরি শ্রোতাদের কাছে এমন সাড়া পেয়ে সাহস পেয়েছি। এর ফলেই গানে ফেরা সম্ভব হয়েছে।’ রেকর্ডিংয়ের সময় সবাই তাঁকে বাংলাদেশের কিশোর কুমার বলেও নাকি প্রশংসা করেছেন। সর্বশেষ ‘বাবার জন্য যুদ্ধ’ ও ‘কঠিন পুরুষ’ ছবিতে প্লেব্যাক করেছিলেন আকবর। তারপর আর তাঁকে প্লেব্যাকে দেখা যায়নি। সম্প্রতি সেই বিরতিও কেটে গেছে। গোলাম আলী জিন্নাহর ‘চাঁদ কথা’ নামের একটি ছবিতে গেয়েছেন। ‘কেমনে ভুলিব আমি তোমারে’ গানটির কথা লিখেছেন ও সুর করেছেন এম আর খান। গানটিতে আকবরের কণ্ঠ শুনে দারুণ খুশি পরিচালক। যার জন্য পরবর্তী ছবি ‘কন্যারে’তে প্লেব্যাকের জন্য আকবরকে চুক্তিবদ্ধ করেছেন। এ ছাড়া আরো তিনটি ছবিতে প্লেব্যাক করার বিষয়ে কথাবার্তা চলছে বলে জানান তিনি।</p> <p>অসুখটা বাদ দিলে এখন বেশ সুখের জীবন আকবরের। তার পরও মাটিতে পা রাখতে ভুল করেন না। ‘চাঁদপুরে একটি স্টেজ শোতে গাওয়ার জন্য কথা দিয়েছিলাম। এর মধ্যে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হই। চিকিৎসক কিছুতেই ছাড়পত্র দেবেন না। তাঁর যুক্তি, জীবন আগে নাকি গান? আমি তাঁকে বুঝিয়েছিলাম, ভক্তদের জন্যই আমি আজকের আকবর হয়েছি। তাদের সামনে গাইতে গাইতে মারা যেতেও আমার কোনো আপত্তি নেই। এরপর জরুরি রিলিজ নিয়ে চাঁদপুরে গিয়েছিলাম।’</p> <p> </p> <p> </p>