<p>দেশ কালের সীমানা পেরিয়ে জামদানি শাড়ির সুনাম বিশ্বব্যাপী। অপূর্ব নকশা, বাহারী রং আর সূক্ষ্ম বুননে এসব শাড়িতে রয়েছে ভিন্নতা। নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে প্রতিটি শাড়িই যেন সেরা। সৌন্দর্য্যে একটি অন্যটিকে ছাড়িয়ে গেছে। আভিজাত্য, ঐতিহ্য ও শ্রেষ্ঠত্বের দিক থেকে এদেশের জামদানির তুলনা আর কিছুর সঙ্গে হয় না বললেই চলে। </p> <p>৩৫টি জামদানি শাড়ি ও বস্ত্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের তৈরি এমনি অসাধারণ, অতুলনীয় সব জামদানি শাড়ি নিয়ে গতকাল থেকে ১০ দিন রাজধানীর বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে জামদানি প্রদর্শনী-২০১৮ শুরু হয়েছে। প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) এবং বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর যৌথভাবে এ প্রদর্শনী আয়োজন করে। বিসিক চেয়ারম্যান মুশতাক হাসান মুহা. ইফতিখারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক) এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. এনামুল হক বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী।</p> <p>সরেজমিনে প্রদর্শনী প্রাঙ্গন ঘুরে দেখা যায়, জামদানি শাড়ির জমিনে তোলা ভিন্ন ভিন্ন নকশার রয়েছে সুন্দর সব নাম। এসব নকশার নামেই শাড়ির পরিচিতি। সবুজ জমিনে লাল সুতা আর সোনালী জরির সূক্ষ্ম কাজের জামদানি শাড়ির নাম “শাপলা ফুল”। দাম ৭ হাজার ৫০০ টাকা। কালো জমিনে লাল, সাদা আর রুপালী কাজের জামদানির দাম ১১ হাজার ৩০০ টাকা, নাম “আঙ্গুরলতা”। এভাবে বিভিন্ন নামের জামদানি শাড়ি ২ হাজার ৫০০, ৩ হাজার টাকা থেকে ৩০/৪০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঘন কাজের কিছু শাড়ি এক/দেড় লাখ টাকায়ও পাওয়া যাচ্ছে। তবে এসব শাড়ির ক্রেতা কম। সুতি, সিল্ক ও হাফ সিল্কের জামদানি শাড়ি তৈরি করা হয়। তেরছা, জলপাড়, পান্না হাজার, করোলা, দুবলাজাল, সাবুরগা, বলিহার, শাপলা ফুল, আঙ্গুরলতা, ময়ূরপ্যাচপাড়, বাঘনলি, কলমিলতা, চন্দ্রপাড়, ঝুমকা, বুটিদার, ঝালর, ময়ূরপাখা, পুইলতা, কল্কাপাড়, কচুপাতা, প্রজাপতি, জুঁইবুটি, হংসবলাকা, শবনম, ঝুমকা, জবাফুলসহ কত নামের যে জামদানি আছে।</p> <p>“জামদানি শিল্প এখন ইউনেস্কো ঘোষিত ওয়াল্ড হেরিটেজের অন্তর্ভুক্ত। এ অর্জন আমাদের গৌরবের। এখন জামদানির ঐতিহ্য ধরে রাখতে হলে গুণগতমান সম্পন্ন জামদানি উৎপাদনে সংশ্লিষ্ট সকলকে ভূমিকা রাখতে হবে”। অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এসব কথা বলেন। </p> <p>শিল্পমন্ত্রী আরো বলেন, “জামদানি একটি বংশানুক্রমিক কারুশিল্প। নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার বেশ কিছু গ্রাম এবং সিদ্ধিরগঞ্জ ও সোনারগাঁও উপজেলার কয়েকটি গ্রামে যুগ যুগ ধরে জামদানি তৈরি হয়ে আসছে। জামদানি বস্ত্র বেচা-কেনার জন্য এখানে একটি হাটকর্ণার স্থাপিত হয়েছে। এখানে প্রতি বৃহস্পতিবার তাঁত শিল্পীরা উৎপাদিত জামদানি বস্ত্র বিক্রির সুযোগ পাচ্ছেন।” </p> <p>শিল্পনগরীর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতে বিসিককে আরো তৎপর হওয়ার নির্দেশ দিয়ে শিল্পমন্ত্রী বলেন, জামদানির প্রসার ও গুণগত মানোন্নয়নে সব ধরনের সরকারি আশ্বাস দেন মন্ত্রী। </p> <p>বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের ঐতিহ্যবাহী মসলিনই আজকের জামদানি। বিশেষ অঞ্চলের লোকদের শিল্প চর্চা ও শিল্প ভাবনার ফলাফলই এই জামদানি শিল্প। </p> <p>শিল্প সচিব  বলেন, জামদানি প্রদর্শনী কারুশিল্পীদের পণ্য বিপণনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। এ ধরনের প্রদর্শনীর আয়োজন শুধু রাজধানী ও বন্দর নগরী চট্টগ্রামে সীমাবদ্ধ না রেখে দেশের অন্যান্য বড় শহরগুলোতেও করা যেতে পারে। আমাদের সাংস্কৃতির ধারক জামদানিকে টিকিয়ে রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।<br /> বিসিক চেয়ারম্যান বলেন, জামদানি শিল্প নগরী স্থাপনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য জামদানির ওপর প্রশিক্ষণ, গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা, বিক্রয় এবং প্রদর্শনী কেন্দ্র স্থাপনসহ একটি আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর জামদানি শিল্প নগরী গড়ে তোলার জন্য বিসিক কাজ করে যাচ্ছে।” </p> <p>ঈদ সামনে রেখে রাজধানীর বড় বড় শপিংমল থেকে শুরু করে বিচ্ছিন্নভাবে গড়ে উঠা বড়মাপের প্রায় সব শাড়ির দোকানেই হরেক রকম শাড়ির সঙ্গে জামদানিও বিক্রি হচ্ছে। মিরপুর বেনারসি পল্লীর প্রায় সব দোকানেই বিভিন্ন নকশার জামদানি বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা জাানান, প্রতি বছর ঈদে বিভিন্ন শাড়ির চাহিদা বাড়ে কমে তবে জামদানির চাহিদা সব সময় সবার ওপরে থাকে।</p>