<p>ফরিদপুরের সালথা উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. আব্দুর রশিদ। ঘুষ ছাড়া কোনো কাজই করেন না তিনি। তাঁর কাছে ভোটার হতে হলে প্রত্যেক নতুন ভোটারকে গুনতে হবে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। যারা টাকা দিতে পারেন না, মাসের পর মাস ঘুরেও ভোটার তালিকায় তাদের নাম ওঠে না। ফলে ভোটার হওয়া থেকে অনেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।</p> <p>জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল সংশোধন ও ভোটার হস্তান্তরসহ সব কাজই তিনি টাকার বিনিময়ে করেন। একটি ভিডিওতে নির্বাচন অফিসের প্রকাশ্যে ঘুষ লেনদেনের চিত্র দেখা গেছে। শুধু তাই নয়, নারী সেবাপ্রত্যাশীদের পেলে অসদাচরণ ও হেনস্থা করার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এর আগে নির্বাচন অফিসারের এসব ঘুষ বাণিজ্য নিয়ে মিডিয়ায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যে কারণে বর্তমানে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন তিনি।</p> <p>ভুক্তভোগীদের অভিযোগে ও নির্বাচন অফিস সুত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালে ১২ ফেব্রুয়ারি সালথায় যোগদান করেন নির্বাচন অফিসার মো. আব্দুল রশিদ। তিনি যোগদানের পর থেকে নির্বাচন অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মচারীদের একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেন। ওই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সেবাপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে নানা কৌশলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ৫ রোহিঙ্গাকে ভোটার বানাতে গিয়েছিলেন তিনি। পরে ইউএনওর হস্তক্ষেপে ওই পাঁচ রোহিঙ্গার ভোটার আবেদন বাতিল করা হয়।</p> <p>সম্প্রতি নির্বাচন অফিসে ভোটার হতে এসে হেনস্তার শিকার হন উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের সিংহপ্রতাপ গ্রামের আজিজ ব্যাপরীর মেয়ে আমেনা আক্তার। গত রবিবার (৩ মার্চ) সকালে তিনি কালের কণ্ঠকে অভিযোগ বলেন, আমি দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলাম। যে কারণে ভোটার হতে পারিনি। দেশে এসে গত পাঁচ মাস আগে ভোটার হওয়ার জন্য আমি নির্বাচন অফিসে আবেদন করি। কিন্তু অফিস থেকে বিভিন্ন অজুহাতে আমাকে শুধু ঘুরাতে থাকে।</p> <p>তিনি আরো বলেন, আমি বিষয়টি নির্বাচন অফিসারকে জানাতে গেলে তিনি প্রথমে আমাকে বলেন, বোরকা খুলে মুখ বের করেন। মুখ খোলার পর তিনি আমার চেহারার দিকে শুধু তাকিয়ে থাকেন। বলেন, মেয়েরা অনেক চালাক। আপনার কাগজপত্রে ঝামেলা আছে। কালকে আসেন। কালকে গেলে বলে পরদিন আসেন। আর আমি অফিসে গেলেই আজে-বাজে কথা বলতে থাকেন। একপর্যায়ে আমার কাছে ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। ওই টাকা আমি দিতে রাজি না হওয়ায়- আমাকে ভোটার বানাবেন বলে জানিয়ে দেন নির্বাচন অফিসার। ওনার আচরণে মনে হয়েছে, মেয়েদের পেলেই তিনি এমন আচরণ করেন।</p> <p>ঝুনাখালি গ্রামের পাঞ্জু শেখ বলেন, আমার শ্যালক ইকবল মাতবরের এনআইডি কার্ড করতে গেলে নির্বাচন অফিসাসের কথা বলে অফিসের কর্মচারী সাইফুল ৫ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে বাধ্য হয়ে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে শ্যালকের এনআইডি কার্ড করেছি। একইভাবে জয়ঝাপ গ্রামের মো. রাব্বী মোল্যা ইমার্জেন্সি ভোটার হতে চাইলে অফিসের কর্মচারী মো. কায়েস শেখ তার কাছে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। বড় খারদিয়া গ্রাম থেকে নতুন ভোটার হতে আসা মো. ফারহান মিয়ার কাছেও পাঁচ হাজার টাকা দাবি করা হয়।</p> <p>একাধিক সেবাপ্রত্যাশী জানান, ভোটার হওয়ার জন্য ভোটারপ্রতি আমরা ৫ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দিয়েছি। কিন্তু আমাদের এনআইডি কার্ড এখনো বের হয়নি। কেউ কেউ টাকার বিনিময় জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল সংশোধনের জন্য আবেদন করেছেন। আমাদের কাজ চলমান রয়েছে। তাই নাম প্রকাশ করলে নির্বাচন অফিস থেকে ঝামেলা বাধাবে।</p> <p>সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ভাওয়াল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফারুকুজ্জামান ফকির মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, সালথা নির্বাচন অফিস এখন দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। আমার ইউনিয়নের কেউ ভোটার হতে গেলে টাকা দাবি করা হয়। টাকা না দিলে ভোটার হতে পারে না। যেকোনো কাজে গেলেই টাকা ছাড়া করে না। এমন ঘুষখোর নির্বাচন অফিসার জীবনেও দেখিনি। আমি এই নির্বাচন অফিসারের অপসারণ দাবি করছি।</p> <p>তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সালথা উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. আব্দুল রশিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ওই নারীর সঙ্গে আমার একদিন দেখা হয়েছে। তাঁর আচরণ মোটেও ভালো না। সে ৪০ বছর বয়সে ভোটার হতে এসেছে। তাই আমি তাঁর মুখ দেখতে চেয়েছি। কারণ এর আগে রোহিঙ্গারা ভোটার হতে এসেছিল। তখন ঝামেলায় পড়েছিলাম। ওই নারীর সঙ্গে কোনো ধরনের আজে-বাজে কথা হয়নি। সেবাপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার বিষয় তিনি আরো বলেন, কারো কাছ থেকে অফিসের কেউ টাকা নিলে, সেটা আমি জানি না। আমার অফিসে কোনো ধরনের ঘুষ লেনদেন হয় না।</p> <p>সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বালী কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রকাশ্যে ঘুষ লেনদেনের যে ভিডিও প্রকাশ হয়েছে, সে বিষয় তদন্ত করা হবে। তাছাড়া ভোটার হতে এসে ওই নারীসহ যারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন, তারা অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।</p>