<p>কাহালু উপজেলার মালঞ্চা-রানীরহাট আঞ্চলিক সড়কে মুলার সাঁকো এলাকায় দ্রুতগামী মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় সিরাজুল ইসলাম জেমস (১৭) ও সোহানুর রহমান সোহান (১৭) নামে দুই তরুণ বন্ধুর মৃত্যু হয়েছে। এ দুর্ঘটনায় তাদের অপর বন্ধু রাশেদুল ইসলাম (১৮) গুরুতর আহত হয়েছে।</p> <p>তিনবন্ধু হলো নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটগ্রাম ইউনিয়নের ভুস্কুর গ্রামের কৃষক মুক্তার হোসেনের ছেলে সিরাজুল ইসলাম জেমস, দিনমজুর মোখলেছার রহমানের ছেলে সোহানুর রহমান সোহান ও কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে রাশেদুল ইসলাম (১৮)। সিরাজুল ইসলাম জেমস এবার এসএসসি ও রাশেদুল মাদরাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। আর সোহান লেখাপড়া করে না।</p> <p>জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) সকালে নিজ বাড়ি থেকে ওই তিন বন্ধু মোটরসাইকেলযোগে কাহালু উপজেলার ইন্দুখুর বাজারে বেড়াতে যায়। সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পথে দুপুর একটার দিকে কাহালু উপজেলার মালঞ্চা-রানীরহাট আঞ্চলিক সড়কে মুলার সাঁকো এলাকায় দ্রুতগামী মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক সংলগ্ন গাছের সাথে ধাক্কা লাগে। এতে মোটরসাইকেলটি দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং তিনজনই সড়কের ওপর ছিটকে পড়ে ঘটনাস্থলেই সিরাজুল ইসলাম জেমস মারা যায়। স্থানীয় লোকজন অপর দুইজনকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে সোহানুর রহমান সোহান মারা যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় রাশেদুল ইসলাম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।</p> <p>একই গ্রামে জন্ম তিনজনের। বেড়ে ওঠাও একসঙ্গে। দিন নেই, রাত নেই একজনের প্রয়োজনে অন্য দুজন ছুটে আসতেন। এলাকার সবার কাছেও ‘হরিহর আত্মা’ পরিচিতি পেয়েছিলেন তিন তরুণ। কে জানত, পৃথিবী থেকে বিদায়ও নেবেন এরমধ্যে একসাথে দুই বন্ধু। কবরও দেওয়া হয়েছে পাশাপাশি</p> <p>আজ শুক্রবার (২২ মার্চ) সকালে ওই নিহত দুই বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দুই তরুণের স্বজনদের কান্নায় চোখ মুছছেন অনেক প্রতিবেশীও। বেলা ১১টায় ভুস্কুর গ্রামে জানাজা শেষে দুই বন্ধুকে কবরও দেওয়া হয়েছে পাশাপাশি। আহত আরেক বন্ধু রাশেদুল ইসলামের অবস্থাও ভালো নয়। সে বগুড়া শহীদ জিয়াউর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।</p> <p>সোহানুর রহমান সোহান ছিলেন বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। ছেলেকে হারিয়ে বুক চাপড়ে কাঁদছিলেন সোহানের মা মনোয়ারা বেগম। এ সময় স্বজন ও প্রতিবেশীরা তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সোহানের মা মনোয়ারা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘আমি এখন কী নিয়া বাঁচব। আমার সোনারে, আমার জুদুরে তোমরা আইনা দাও।’ বড় ছেলের মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন বাবা মুক্তার হোসেন। তাকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে কাঁদছেন আত্মীয়-প্রতিবেশীরাও।</p> <p>নন্দীগ্রাম ভাটগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কামাল আজাদ বলেন, ‘শুক্রবার গ্রামের ভুস্কুর মাদরাসায় জানাজা শেষে দুই বন্ধুকে পাশাপাশি কবরে চির নিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে।’</p>