<p>হার্ট বা হৃপিণ্ডের ধমনির রোগ নির্ণয়ের একটি পদ্ধতি হলো করোনারি এনজিওগ্রাম। এটা কোনো চিকিৎসাপদ্ধতি নয়, বরং হৃদযন্ত্র বা হার্টের করোনারি আর্টারি বা ধমনিতে রোগের মাত্রা, অবস্থান জানার একটি পরীক্ষা মাত্র। বিশেষ করে যাদের হার্টে ব্লক থাকে এনজিওগ্রামের মাধ্যমে তাদের হৃপিণ্ডের রক্তনালিতে ‘রেডিও ওপেক ডাই’ প্রয়োগ করে করোনারি রক্তনালির রোগ নির্ণয় করা হয়। এর মাধ্যমে রক্তনালিতে কয়টি ব্লক আছে, কী অবস্থায় আছে সেসব ধমনির রক্তনালির কার্যক্রম এক্স-রে মনিটরের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা যায়। এরপর চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নেন, এই ব্লক বা রোগ ওষুধ খেলে সারবে অথবা রিং লাগাতে হবে, নাকি বাইপাস অপারেশনের প্রয়োজন হবে?</p> <p>এসব এন্ডোভাসকুলার প্রসিডিউর সাধারণত শরীরের তিনটি ধমনি দিয়ে করা হয়। এগুলো হলো, ফিমোরাল অ্যাপ্রোচ বা পায়ের রক্তনালি দিয়ে, রেডিয়াল অ্যাপ্রোচ বা হাতের রক্তনালি দিয়ে ও ব্রাকিয়াল অ্যাপ্রোচ বা বাহুর রক্তনালি দিয়ে। তবে আমাদের দেশে বেশির ভাগ ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্টরা ফিমোরাল অ্যাপ্রোচ বা পায়ের রক্তনালি দিয়ে এনজিওগ্রাম করে স্ট্যান্টিং বা এনজিওপ্লাস্টি করে থাকেন।</p> <p> </p> <p><strong>রেডিয়াল এনজিওগ্রাম</strong></p> <p>ফিমোরাল এনজিওগ্রাম বা পায়ের রক্তনালির পরিবর্তে হাতের কবজি থেকে ২ সেমি ওপরে (রেডিয়াল ধমনি) ছোট ছিদ্র করে এনজিওগ্রাম করেও রিং পরানো বা এনজিওপ্লাস্টি করা অনেক সহজ, কম সময় ও কম খরচের একটি পদ্ধতি। একেই বলে রেডিয়াল এনজিওগ্রাম। বাংলাদেশে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি প্রাইভেট সেক্টরে গড়ে ওঠা কার্ডিয়াক সেন্টারগুলোতে এখন বেশি করা হচ্ছে এ ধরনের এনজিওগ্রাম।</p> <p>চলতি বছর ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব কার্ডিওলজি (ইএসসি) হার্ট অ্যাটাকের রোগীদের প্রথম নির্দেশনা হিসেবে রেডিয়াল এনজিওপ্লাস্টি করার পরামর্শ দিয়েছেন। কেননা হার্ট অ্যাটাকের পর রেডিয়াল এনজিওপ্লাস্টিতে মৃত্যুর হার অনেক কম।</p> <p> </p> <p><strong>প্রস্তুতি</strong></p> <p>রেডিয়াল এনজিওগ্রামের জন্য তেমন প্রস্তুতির দরকার নেই। প্রি-ক্যাথ ইনভেস্টিগেশন, যেমন সিবিসি, ক্রিয়েটিনিন, ইএসআর, হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ, এইচবিএস এজি, বিটিআরএল, ইসিজি, রক্তের গ্রুপ প্রভৃতি পরীক্ষা করে দুই ঘণ্টার মধ্যে ক্যাথল্যাবে রোগীকে প্রবেশ করানো হয়। এরপর রোগীকে শুইয়ে তার হাতের নিচের অংশ অর্থাৎ এলবো জয়েন্ট ও রিস্ট জয়েন্টের মাঝামাঝি অংশে ১০-১৫ সেন্টিমিটার পরিষ্কার করে রেডিয়াল আর্টারি বা ধমনিতে একটি সরু ছিদ্র করে ক্যাথেটার দিয়ে এনজিওগ্রাম করা হয়।</p> <p> </p> <p><strong>সুবিধা</strong></p> <p>►    পা দিয়ে এনজিওগ্রাম করায় ১-২ শতাংশ রোগীর রক্ত জমাট (হেমাটোমা) হতে পারে। অনেকের পেটে রক্ত জমাট বেঁধে (রেক্ট্রোপেরিটোনিয়ল হেমাটোমা) মৃত্যুঝুঁকি থাকে। রেডিয়ালে বড় ধরনের হেমাটোমা হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। </p> <p>►    এনিউরিজম, সিউডো এনিউরিজম, আর্টারি ভেনাস ফিস্টুলা খুব খারাপ সাইড ইফেক্ট। এ অবস্থায় পায়ের রক্তনালি দিয়ে এনজিওগ্রাম করাতে সময় ও খরচও বেশি লাগে। রেডিয়ালে এ আশঙ্কা নেই।</p> <p>►    ভর্তি হওয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যে ক্যাথল্যাবে এনজিওগ্রাম করে পরবর্তী দেড়-দুই ঘণ্টার মধ্যে বাড়ি চলে যেতে পারে।</p> <p>►    বিছানায় বা কেবিনে রোগীতে ভর্তি করে রাখার দরকার হয় না বলে হাসপাতালের খরচও তুলনামূলক কম হয়। </p> <p>►    পায়ের রক্তনালি দিয়ে এনজিওগ্রাম করলে কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা হাসপাতালে থাকতে হয়। পা সোজা করে দীর্ঘক্ষণ শুয়ে থাকতে হয়। রেডিয়ালে মাত্র দুই ঘণ্টার মতো বিছানায় শুয়ে থাকাসহ মাত্র ৬ ঘণ্টা হাসপাতালে অবস্থান করতে হয়।</p> <p>►    রেডিয়াল এনজিওগ্রামে অল্প সময়ের মধ্যে রোগী দ্রুত চলাফেরা করতে পারে, ওই হাত দিয়ে কাজকর্মও করতে পারে। সে যে রোগী এটা তার কাছে মনেই হয় না। </p> <p>►    মারা যাওয়ার রেকর্ড নেই বললেই চলে।</p> <p> </p> <p><strong>লেখক :</strong> ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড</p> <p>ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট</p> <p>জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল</p>
