<p>অটোফ্যাগি শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ 'অটো' এবং 'ফ্যাগি' থেকে। প্রথমটির অর্থ নিজে এবং দ্বিতীয়টির অর্থ খাওয়া। অটোফ্যাগি এক দৈহিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোষগুলো তার বর্জ্যকে ব্যবহার করে শক্তি উৎপাদন করে থাকে। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত ও মৃতপ্রায় কোষ থেকে দেহকে পরিত্রাণ পেতে সহায়তা করে। আর অটোফ্যাগি প্রক্রিয়াটি ঘটে মাঝে মাঝে খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকলে। যেমনটা রোজার সময় ঘটে থাকে। তখন পুষ্টির অভাবে কোষ নিজের মধ্যকার বর্জ্য ব্যবহার করে। ফলে কোষের ভেতরটা পরিষ্কার হয়ে যায়। আবার মৃতপ্রায় কোষগুলোকে মেরে ফেলে সেখানে নয়া কোষের গঠন সম্পন্ন হয়। এভাবে দেহের কোষগুলো নবজীবন লাভ করে। এই অটোফ্যাগি নিয়ে গবেষণা করে চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন জাপানের বিজ্ঞানী ইয়োশিনোরি ওশুমি। </p> <p>প্রোটিন ক্ষয় এবং ক্ষতিগ্রস্ত কোষের স্থলে নতুন কোষ গঠনের মাধ্যমে অটোফ্যাগি প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়। এটা দেহের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কোষ যখন মৃতপ্রায় অবস্থায় চলে যায় তখন অটোফ্যাগি প্রক্রিয়া ত্বরাণ্বিত হয় এবং এর পরিসর বাড়ে। অটোফ্যাগি সেই সব কোষেই শুরু হয় যেখানে সেলুলার স্ট্রেস শুরু হয়। এই অবস্থার আবির্ভাব ঘটে যখন পুষ্টির অভাবে কোষ বাড়ে না এবং তার প্রাণশক্তি ফুরিয়ে যেতে থাকে। আর সেখানেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে শুরু হয় অটোফ্যাগি। এ প্রক্রিয়ায় কোষ তার মধ্যে থেকে যাওয়া বর্জ্য ব্যবহার করে মেরামত প্রক্রিয়া পরিচালনার শক্তি উৎপাদন করে। </p> <p><strong>অটোফ্যাগি এবং কোষের মৃত্যু </strong><br /> বিশেষ অবস্থায় অটোফ্যাগির মাধ্যমে কোষগুলোকে মেরেও ফেলা হয়। একে প্রগ্রামড সেল ডেথ বা পিসিডি বলে। কোষের মৃত্যুকে বলে অটোফ্যাগিক সেল ডেথ। যে টার্গেটকৃত কোষগুলোকে মারা হয় তাদের বলা হয় অ্যাপোপটোসিস। </p> <p>আসলে কোষের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে সেখানে নতুন কোষের প্রয়োজন হয়। কাজেই কোষের বিয়োগের সাথে নতুন কোষ গঠনের কাজটিও সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে হয়। অটোফ্যাগি এই দুই কাজের মধ্যে ভারসাম্য স্থাপন করে। একদিকে যেমন অপ্রোয়জনীয় এবং ক্ষতিগ্রস্ত কোষের ধ্বংস ঘটে, তেমনই নয়া কোষ গঠনের কাজও চলতে থাকে। </p> <p><strong>অটোফ্যাগি এবং স্ট্রেস </strong><br /> পুষ্টির অভাবঘটিত কারণ কিংবা বাইরের বিরূপ পরিস্থিতির কারণে সৃষ্ট পরিবেশে টিকে থাকতে কোষগুলোকে সহায়তা করে অটোফ্যাগি। এ প্রক্রিয়া ছত্রাক, উদ্ভিদ, ফলের পোকা এবং কীট-পতঙ্গের মধ্যে দেখা যায়। পরীক্ষাগারে ব্যবহৃত ইঁদুর বা গিনিপিগ এবং মানুষের দেহেও চলমান থাকে অটোফ্যাগি প্রক্রিয়া। </p> <p>কাজেই দেহের কোষগুলোতে খাদ্যের অভাব ঘটলেই অটোফ্যাগি শুরু হয়ে যায়। এতে কোষের আবর্জনা দূরীভুত হয়। মৃত এবং অপ্রয়োজনীয় কোষগুলোকে মেরে ফেলে নতুন কোষ গঠন করে। কাজেই রোজা রাখার ফলে অটোফ্যাগি প্রক্রিয়াটাকে ত্বরাণ্বিত করা যায়। এতে মূলত দেহ নতুন কোষ অর্থাৎ নতুন জীবন লাভ করে। <br /> সূত্র : নিউজ মেডিকেল </p>