<p>কনডম, ক্যাথেটার ও স্যালাইন পানি-এ তিন উপাদান ব্যবহার করে বিশ্বের লাখো প্রসূতি মায়ের জীবন রক্ষা করছে এক উদ্ভাবন। বর্তমানে এশিয়া ও আফ্রিকার বহু অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এটি, যার নাম সায়েবাস মেথড।</p> <p>অনেকেই জানেন না, এ মেথডের উদ্ভাবক ডাক্তার সায়েবা আক্তার। তার নাম অনুসারেই এ পদ্ধতিটি সায়েবাস মেথড নাম দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি বিবিসিসহ বিশ্বের বহু আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা ডা. সায়েবার এ পদ্ধতিটি যে লাখো নারীর জীবন বাঁচাচ্ছে, তার তথ্য উল্লেখ করেছে। তবে এ পদ্ধতির উদ্ভাবক ডা. সায়েবার কথা মোটেই আলোচনায় আসেনি।</p> <p>ডা. সায়েবা নিভৃতচারী-প্রচারবিমুখ চিকিৎসক। এ কারণে তার এ পদ্ধতিটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে গেলেও তার নামটি আলোচনায় নেই।</p> <p>প্রায় ১৭ বছর আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক প্রসূতি মায়ের অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে গিয়ে এ পদ্ধতি আবিষ্কার করেন ডাক্তার সায়েবা। সে সময় তিনি এ পদ্ধতিটি যে কতটা কার্যকর হবে, তা ভাবতেও পারেননি। তাঁর এই পদ্ধতি এখন অনুকরণ করা হচ্ছে এশিয়া ও আফ্রিকার বহু দেশে। ইউনিসেফ, আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতাল, ওয়ার্ল্ড ভিশন, পাথফাইন্ডারসহ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা এটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।</p> <p>একটি ক্যাথেটার, একটি সাধারণ কনডম আর স্যালাইন পানি—এই তিনটি সাধারণ জিনিস ব্যবহার করেই সায়েবা আক্তার তার এই জীবনরক্ষাকারী কিট বানিয়েছেন। মূল্যবান জীবন রক্ষা করলেও এই যন্ত্র বানাতে খরচ পড়ে মাত্র ১০০ টাকা!</p> <p>শুধু বাংলাদেমেই নয়, বিশ্বের প্রায় সব উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মাতৃমৃত্যুর অন্যতম একটি কারণ হলো বাচ্চা জন্ম দেবার পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ। কিন্তু এর সহজ সমাধান হলো অত্যন্ত কম মূল্যের এ কিট। বিভিন্ন পরীক্ষাতেও দেখা গেছে, এই কিট দিয়ে চিকিৎসায় সফলতার হার অনেক।</p> <p>বিশ্বে প্রতি দুই মিনিটে গর্ভাবস্থায় ও সন্তান জন্মদানের সময় একজন মায়ের মৃত্যু ঘটে। এর সবচেয়ে বড় কারণ হলো ব্যাপক হারে রক্তক্ষরণ। আর আগে এর সমাধান ছিল ব্যয়বহুল 'ইউবিটি কিট'। এখন অবশ্য উন্নয়নশীল দেশে সে কিটের আর প্রয়োজন হচ্ছে না।</p> <p>বর্তমানে আফ্রিকাজুড়ে ধাত্রীদের এই কিট ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। কেনিয়ার নাইরোবির এক ধাত্রী আ-আন মুলিঙ্গে বলছেন, ‘এই পদ্ধতি ব্যবহার করে আমরা কজন মায়ের জীবন বাঁচিয়েছি। সন্তান জন্মদানের সময় কোনো নারীর যখন অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়, তখন আমরা এটা ব্যবহারের পরই রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়ে যায়।’</p> <p>তিনি বলেন, ‘একটা কনডমের মধ্যে ক্যাথেটার ঢুকিয়ে কনডমের মুখের কাছের অংশটি বেঁধে ফেলি এবং কনডমটি হাত দিয়ে জরায়ুর ভেতরে ঢুকিয়ে দিই। এরপর সিরিঞ্জ দিয়ে ক্যাথেটারে ভেতরে স্যালাইন ঢুকিয়ে ফুলিয়ে দিই কনডমটি। এটি ফুলে ওঠায় জরায়ুর মুখ বন্ধ হয়ে যায় এবং রক্তক্ষরণ থেমে যায়।’</p> <p style="text-align:start">২০১১ সালে যুক্তরাজ্যের রয়েল কলেজ অব অবসটেট্রিশিয়ানস অ্যান্ড গাইনোকোলজিস্টসের পক্ষ থেকে ডা. সায়েবাকে এই উদ্ভাবনের জন্য সম্মানসূচক ডিগ্রি দেওয়া হয়েছে। ২০০৩ সালের পর থেকে বিশ্বের অনেক শীর্ষ সারির মেডিকেল জার্নালে তার এ বিষয়ে গবেষণাপত্র ছাপা হয়েছে। বেশ কিছু আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি।</p> <p>তথ্যসূত্র : বিবিসি</p>