<p>‘আমরা হিজড়ারা সমাজের বোঝা নই। আমরা কারো বোঝা হয়ে থাকতেও চাই না। আমরা দেখিয়ে দিতে চাই, আমরাও পারি। অন্য সবার মতো আমরাও কাজ করতে পারি। আমরা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী নই, পিছিয়ে দেওয়া জনগোষ্ঠী। মানুষ ও সমাজ আমাদের পিছিয়ে দিয়েছে বলে মানুষের কাছে আমাদের হাত পাততে হয়। মানুষের ভালোবাসা পেলে আমাদের হাত পেতে খেতে হতো না; আমরা সমাজের মূল স্রোতধারায় চলতে পারতাম।’</p> <p><strong>আরো পড়ুন: <a href="http://www.kalerkantho.com/online/miscellaneous/2018/01/27/594831" target="_blank">আর্কটিক সাগরে ‘পোলার সিল্ক রুট’ তৈরি করবে চীন</a></strong></p> <p>কথাগুলো বললেন হিজড়া সম্প্রদায়ের সদস্য সামিউল আলিম শাম্মি, যিনি একটি বিউটি পার্লার পরিচালনা করে অন্তত পাঁচজন হিজড়ার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। গতকাল শুক্রবার সকালে সাভারের হেমায়েতপুরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কসংলগ্ন মাওলানা শপিং কমপ্লেক্সে হিজড়াদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের জন্য নির্মিত ‘উত্তরণ বিউটি পার্লার-২’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন শাম্মি। মূলত পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অতিরিক্ত ডিআইজি (পার্সোনাল ম্যানেজমেন্ট) হাবিবুর রহমানের ব্যক্তিগত উদ্যোগে এবং সমাজের উচ্চবিত্ত ব্যক্তিদের সহযোগিতায় হিজড়াদের কর্মসংস্থানের জন্য এই উত্তরণ বিউটি পার্লারের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বছর দুয়েক আগে আশুলিয়ার পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায় উত্তরণ বিউটি পার্লার-১-এর কার্যক্রম শুরু হয়। ফিতা কেটে উত্তরণ বিউটি পার্লার-২ উদ্বোধন করেন পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। পরে হিজড়াদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়।</p> <p>হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান ও স্থানীয় তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফখরুল আলম সমর। আরো বক্তব্য দেন ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সাধারণ সম্পাদক সারোয়ার আলম, পাঞ্জেরী পাবলিকেশনস লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও উত্তরণ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান শায়ক প্রমুখ।</p> <p>শাম্মি কালের কণ্ঠকে বলেন, অসহায় হিজড়াদের মধ্যে যে ব্যক্তি সহায়কের ভূমিকা পালন করছেন, দুর্বলদের শক্তি জোগাচ্ছেন, যিনি তাদের পথপ্রদর্শক—তিনি হলেন উত্তরণ ফাউন্ডেশনের কর্ণধার অতিরিক্ত ডিআইজি হাবিবুর রহমান।</p> <p>প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে শাম্মি বলেন, ২০১৩ সালের নভেম্বরে শেখ হাসিনা হিজড়া সম্প্রদায়কে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। এখন হিজড়ারা ভোট দিতে পারবে। তারা আর পিছিয়ে থাকবে না; সমাজের মূল স্রোতধারায় কাজ করবে। এই সমাজ, রাষ্ট্রে সবার সুদৃষ্টিভঙ্গিই তাদের কাম্য।</p> <p>হিজড়া সদস্য সোহাগী বলেন, ‘উত্তরণ’-এর মাধ্যমে হিজড়ারা স্বাবলম্বী হতে পারবে; নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে। তিনি ১২-১৩ বছর ধরে সাভারের বলিয়ারপুরের কোন্ডা এলাকায় বোনের সহযোগিতায় একটি বিউটি পার্লার পরিচালনা করে আসছিলেন।</p> <p>হিজড়া প্রতিনিধি আপন জানান, তিনি রাজধানীর উত্তরায় ২৫ জন হিজড়া সদস্য নিয়ে একটি গার্মেন্ট পরিচালনা করেন।</p> <p><strong>আরো পড়ুন: <a href="http://www.kalerkantho.com/online/miscellaneous/2018/01/27/594829" target="_blank">চিহ্নিত হচ্ছে 'এলিয়েন', প্রস্তুত হচ্ছে তালিকা</a></strong></p> <p>অতিরিক্ত ডিআইজি হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সমাজে হিজড়াদের আমরা পজিটিভলি দেখি না। কারো বাড়িতে হিজড়ারা গেলে লোকজন ডাকাত পড়ার মতো আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। থানায় ফোন করে, আত্মীয়স্বজনকে ডাকে। হিজড়াদের বাস্তব অবস্থার কথা আমরা জানার চেষ্টা করি না। যদি আমরা আমাদের সৃষ্টির সেরা দাবি করে থাকি, তাহলে হিজড়ারাও তা-ই। পরিবারে হিজড়া শিশুর জন্ম হলে সমাজে এটি আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। ভাই-বোনরাও মেনে নিতে চায় না। সে যে একজন স্বাভাবিক, সাধারণ মানুষ, এটি সৃষ্টিরই একটি লীলাখেলা, সে নিজের ইচ্ছায় ওভাবে জন্মায়নি—এগুলো আমরা ভুলে যাই। পরিবারের কেউ তাকে পছন্দ করে না বলে সে বাবা-মা, ভাই-বোন ছেড়ে একদিন নিরুদ্দেশ হয়। ভাবে, পরিবারটা তার জন্য নয়। কিন্তু সে কোথায় যাবে? শেষে সে হিজড়ারা যেখানে থাকে সেখানে আশ্রয় নেয়। শুরু হয় তার জীবন সংগ্রাম।’</p> <p>হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমেরিকা বা ইউরোপে হিজড়ারা সমাজের মূল ধারায় মিশে আছে। এটা ওই সমাজের লোকজনের কাছে কোনো ব্যাপার না। আর আমাদের দেশে রাস্তায় গিয়ে তাকে হাত পাততে হয়। কোনো বাড়িওয়ালা তাদের বাড়িভাড়া দিতে চায় না। দিলেও বেশি ভাড়া চায়। লেখাপড়ারও তেমন সুযোগ নেই।’ </p>