<p>বাংলাদেশের ঢাকা শহরে ব্যাচেলরদের সবাই বাসা ভাড়া দিতে চায় না। অবশ্য বাসা ভাড়া দেওয়া নিয়ে সমস্যা হয় ভারতের শহরগুলোতেও। কলকাতাতে মুসলিম, একক মেয়ে, লিভ-ইন দম্পতিকে কেউ বাসা ভাড়া দিতেই চায় না।</p> <p>অনেক দিন থেকেই অভিযোগ, কলকাতায় ঘর ভাড়া দেওয়ার আগে ধর্ম কী, তা যাচাই করে দেখা হয়। সে কারণে অনেকেই নাম বদলানোর সিদ্ধান্ত নেন।</p> <p>এক পরিচিত মুসলিম বান্ধবীর মাধ্যমে সুমিত মিত্রকে (নাম পরিবর্তিত) ফোন করেন এক মুসলিম তরুণ। সুমিতবাবু স্নেহচ্ছলেই তাকে বললেন, কিছু মনে করিস না ভাই, তোকে ঘর ভাড়া দিতে পারব না। অনেকেই মুসলিমদের ঘর ভাড়া দিতে চান না।</p> <p>কারা চান না? তার উত্তর, কেউই চান না। তোর জন্য আলাদা জায়গা দেখে দেব। অ্যাডভান্স দিতে রাজি আছে ওই তরুণ। টাকাপয়সা নিয়ে সমস্যা নেই, বৈধ পরিচয়পত্র রয়েছে, সে সব শুনেও তার বক্তব্য, না ভাই। কিছু মনে করিস না। তোর জন্য আলাদা জায়গা দেখে দেব।</p> <p>একই অভিজ্ঞতা হল প্রদীপ লাহার (নাম পরিবর্তিত) সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময়। প্রদীপবাবুও বাড়ি-ফ্ল্যাট ভাড়া সংক্রান্ত ব্যবসায় জড়িত। প্রথমে তিনিও প্রবল উৎসাহে জানালেন, বাড়ি জোগাড় করে দেবেন। তবে শামিম খান নামটা শোনার পরে বললেন, কিছু মনে করবেন না। অনেক জায়গাতেই মুসলমানদের ঘর ভাড়া দেওয়া হয় না।</p> <p>নিজের পছন্দের জায়গায় ঘরভাড়ার জন্য জোর করতে বিরক্ত হয়েই বললেন,  শুনুন। আপনার মতোই এক জনকে বাড়ি ভাড়া করিয়ে দিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু বাড়ির মালিক জানিয়েছিলেন, বাড়িতে রাধা-কৃষ্ণের মূর্তি রয়েছে। কোনো মুসলমানকে ঘর ভাড়া দেবেন না। ওই ছেলেটিকে আর একটি বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলাম। সেই বাড়ির মালিকও বলেছিলেন, বাড়িতে বাবা-মা রয়েছেন। ঠাকুর রয়েছে। বাড়ি ভাড়া দিতে পারবেন না। তবে প্রদীপবাবুও আশ্বাস দিলেন, অন্যত্র তিনি ব্যবস্থা করে দেবেন। কিছু দিন পরে ফোন করতে হবে।</p> <p>আর এক জনকে ফোন করা হলে নাম শুনে আপত্তি করেননি। তবে বললেন, একটু অসুবিধা হবে। এর আগে নিজের রিস্কে একজন মুসলিম ছেলেকে বাড়ি ভাড়া করিয়ে দিয়েছিলাম। সে আমার অনেক দিনের কাস্টমার। আপনাকেও করিয়ে দেব।</p> <p>সুমিতবাবু বা প্রদীপবাবুরা স্পষ্ট যা বলার বলেছেন। অনেকেই বলেন না। উত্তর থেকে দক্ষিণ, শহরের বেশ কয়েকজন, কত বাজেট, কত জন থাকব ইত্যাদি প্রশ্ন করেছেন। কিন্তু নামটা শোনার পরে থমকে মগেছেন। তার পরই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ডিটেইলস বলছি। ফোন আর আসেনি।</p> <p>গবেষক সাবির আহমেদ বলছিলেন, অনেক জায়গায় বাড়ির মালিককে বোঝাতে হয়, এরা তেমন মুসলিম নন! এরা বাংলায় কথা বলেন, এরা এখানকারই। অনেক জায়গায় ঘর ভাড়া কেন দিচ্ছি না, সেই কারণটাও পরিষ্কার বলা হয় না। আসল কিন্তু ধর্মীয় কারণই।</p> <p>যাদবপুরে ঘর ভাড়া নিতে গিয়েছিলেন ছাত্রী তানভি সুলতানা। কথাবার্তা চূড়ান্তও হয়ে যায়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বাড়ির মালিক যখন জানতে পারেন যে, তানভি মুসলিম, তখন আর রাজি হননি। তানভি বলছেন, বাড়ির মালিক মুখের উপরে বলে দিয়েছিলেন, কিছু মনে করো না। তুমি তো মুসলিম। বাড়ি ভাড়া দিতে পারব না!</p>