বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন স্বামী এবং জোর করে তাকে বিয়ে করতে বাধ্য করেছিলেন। 'রিপলিং' নামে সিঙ্গাপুরের বহু বিলিয়ন ডলারের একটি সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা প্রসন্ন শঙ্করের বিরুদ্ধে ফের সামনে এল বিস্ফোরক অভিযোগ।
সংবাদ সংস্থা দ্য সান ফ্রান্সিসকো স্ট্যান্ডার্ডের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, প্রসন্নের স্ত্রী দিব্যা শশীধরের আদালতে জমা করা নথি, ইমেল, ছবি এবং অন্যান্য রেকর্ড সামনে আসতেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে। এছাড়াও ওই সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে দিব্যা অভিযোগ করেন, কীভাবে তার স্বামী তাকে লাগাতার যৌন সম্পর্কে বাধ্য করেছিলেন।
স্ত্রীর দায়ের করা অপহরণ এবং ধর্ষণের অভিযোগের তদন্তে নেমে চেন্নাই পুলিশ তাকে হেনস্থা করছে বলেও দাবি করেছেন প্রসন্ন।
প্রসন্নের দাবি, কোনও এফআইআর ছাড়া ‘অবৈধ ভাবে’ তাঁর মোবাইল ফোনের অবস্থান, গাড়ি, ইউপিআই এবং আইপি নজরে রাখছে পুলিশ।
স্ত্রীর বিরুদ্ধে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে থাকার অভিযোগও তুলেছেন তিনি। বিষয়টি জানতে পেরেই নাকি প্রসন্নের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পথে হেঁটেছিলেন দিব্যা। কত খোরপোশ দেওয়া হবে, তা নিয়ে আলোচনাও করেছিলেন দু’জনে মিলে। তবে অভিযোগ, টাকার অঙ্কে সন্তুষ্ট হননি দিব্যা। এর পরেই দিব্যা ভুয়ো অভিযোগ দায়ের করেন বলে দাবি করেন প্রসন্ন।
যদিও দিব্যার দাবি একেবারেই ভিন্ন। তার অভিযোগ, যৌনকর্মীদের সঙ্গে লাগাতার সঙ্গম করতেন প্রসন্ন। কখনও কখনও যৌনকর্মীদের বাড়িতেও নিয়ে আসতেন। আবার কখনও দিব্যাকে নিজের বন্ধুদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার জন্য জোর করতেন প্রসন্ন। প্রতিবাদ করলে উল্টে তাকে ‘উদারমনস্ক’ হতে বলতেন প্রসন্ন। দিব্যার উপর ২৪ ঘণ্টা নজর রাখার জন্য প্রসন্ন বাড়িতে একাধিক সিসিটিভিও বসিয়েছিলেন বলে অভিযোগ।
এ ছাড়াও অভিযোগ, কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়াতেন প্রসন্ন। তবে কোথাওই বেশি দিন থাকতেন না। ‘দ্য সান ফ্রান্সিসকো স্ট্যান্ডার্ড’-এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য এ বিষয়ে যাবতীয় ছবি, ভিডিয়ো এবং নথি প্রমাণ হিসাবে দেখিয়েছেন দিব্যা।
দিব্যার দাবি, প্রসন্নের সঙ্গে সংসার করা তাঁর কাছে ‘দুঃস্বপ্নের মতো’। সংবাদমাধ্যমে তিনি এ-ও দাবি করেছেন, ২০১৬ সালে সন্তান জন্ম দেওয়ার পর পরই প্রসন্ন তাঁকে ‘যন্ত্রণাদায়ক যৌনমিলনে’ বাধ্য করেছিলেন। প্রসন্ন নাকি বলেছিলেন যে, পুরুষদের ‘প্রধান চাহিদা’ সঙ্গম। দিব্যা রাজি না হওয়ায় প্রসন্ন হুমকি দিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ দিব্যার।
দিব্যার কথায়, ‘‘প্রসন্ন আমায় বলত, যৌনতা আমার জন্য একটি প্রাথমিক চাহিদা। তোমাকে এটা করতে হবে। তুমি কতটা ব্যথায় ভুগছ তা কোনও ব্যাপার নয়।’’
দিব্যা আরো বলেছেন, ‘‘আক্ষরিক অর্থেই আমায় প্রসন্ন বলত, যদি তুমি এটা না করো, তা হলে আমি বাইরে গিয়ে সঙ্গম করব।’’
‘দ্য সান ফ্রান্সিসকো স্ট্যান্ডার্ড’-এর প্রতিবেদনে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে দিব্যাকে লেখা প্রসন্নের একটি ইমেল উদ্ধৃত করা হয়েছে। সেই মেলে প্রসন্ন তাকে যৌনকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করার এবং তাদের দর জিজ্ঞাসা করার কথা বলেছিলেন। অন্য একটি ইমেলে স্ত্রীকে ‘উদারমনস্ক’ হওয়ার পরামর্শও নাকি তিনি দিয়েছিলেন।
অন্য দিকে, ‘দ্য সান ফ্রান্সিসকো স্ট্যান্ডার্ড’কে দেওয়া অন্য একটি ইমেলে প্রসন্ন লিখেছেন, তার বিরুদ্ধে দিব্যার তোলা অভিযোগ ভুয়ো। উদারমনস্ক হওয়ার প্রস্তাব যখন দিয়েছিলেন তখন তাদের বিয়ে পানসে হয়ে গিয়েছিল। তাতে শারীরিক সম্পর্ক ছিল না। আর সে কারণেই তিনি রাগের মাথায় ওই কথা বলেছিলেন।
পুলিশ সূত্রে খবর, ‘অন্যায় ভাবে’ গ্রেফতারের ভয়ে ছেলেকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন প্রসন্ন। তার খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ। তবে প্রসন্নের দাবি, তার ছেলে নিরাপদে এবং সুখে থাকা সত্ত্বেও পুলিশ তাদের খুঁজে বেড়াচ্ছে।
সম্পর্কে এমন তিক্ততা তৈরি হলেও প্রসন্ন এবং দিব্যার সম্পর্কের শুরুর দিনগুলো ছিল মধুর। ২০০৭ সালে প্রথম দেখা হয় যুগলের। দু’বছর পর তাদের প্রেমপর্ব শুরু হয়। প্রসন্ন এবং দিব্যা— দু’জনেই মেধাবী। দীর্ঘ দিন একে অপরের থেকে দূরে ছিলেন যুগল। প্রসন্ন সিলিকন ভ্যালিতে একটি অ্যাপ তৈরির কাজ করছিলেন। অন্য দিকে, দিব্যা উচ্চশিক্ষার জন্য কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন।
২০১৩ সালে পুনরায় একসঙ্গে থাকতে শুরু করেন প্রসন্ন এবং দিব্যা। একসঙ্গে নেদারল্যান্ডসে ছিলেন তারা। দিব্যার পরিবারের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও তারা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন।
২০১৫ সালে সান ফ্রান্সিসকোয় চলে যান প্রসন্ন। সেখানে তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিরেক্টর হিসাবে একটি স্টার্টআপ সংস্থায় যোগ দেন। ২০১৭ সালে সিকিউরিটিজ় অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের তদন্তে দেখা যায় যে, সংস্থাটি বিনিয়োগকারীদের ঠকাচ্ছে। এর পরেই প্রসন্ন পদত্যাগ করেন।
২০১৭ সালের প্রথম দিকে ‘রিপলিং’ তৈরি করেন প্রসন্ন। প্রতিবেদন অনুযায়ী, রিপলিংয়ের ৯ শতাংশ শেয়ারের মালিক তিনি। সংস্থা সাফল্যের মুখ দেখার পর এখন কোটি কোটি টাকার মালিক প্রসন্ন। সহকর্মীদের দাবি, প্রসন্ন ‘কোডিং গড’ এবং একজন অসাধারণ ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে স্ত্রীর অভিযোগ গুরুতর।