ঢাকা, শুক্রবার ১৪ মার্চ ২০২৫
২৯ ফাল্গুন ১৪৩১, ১৩ রমজান ১৪৪৬

ঢাকা, শুক্রবার ১৪ মার্চ ২০২৫
২৯ ফাল্গুন ১৪৩১, ১৩ রমজান ১৪৪৬
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

সামাজিক দূরত্ব মানা সম্ভব না হলে নিজেকে নিরাপদ করার পাঁচ উপায়

কালের কণ্ঠ অনলাইন
কালের কণ্ঠ অনলাইন
শেয়ার
সামাজিক দূরত্ব মানা সম্ভব না হলে নিজেকে নিরাপদ করার পাঁচ উপায়

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়গুলোর একটি হিসেবে বিশেষজ্ঞরা যে বিষযটির দিকে সবাইকেই খেয়াল রাখতে বলছেন, তাহলো সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, অর্থাৎ অন্যদের কাছ থেকে শারীরিকভাবে খানিকটা দূরে থাকা। কিন্তু জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হয়ে এলে তা কতটা মানা সম্ভব, তা একটি বড় প্রশ্ন হয়েই থাকছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে হলে কিছু অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, নিয়মিত সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়া।

কারণ সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়া হলে তা হাতে থাকা জীবাণুকে মেরে ফেলে। একই কারণে সাবান-পানি না থাকলে অ্যালকোহল সমৃদ্ধ হ্যান্ড রাব বা স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে বলা হয়।

এর পরের ধাপটি হচ্ছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, অন্যদের কাছ থেকে কমপক্ষে এক মিটার বা তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

কেন? - কারণ, হাঁচি, কাশি বা কথা বলার সময় মানুষের নাক বা মুখ থেকে যে ড্রপলেটস বের হয়, তাতে ভাইরাস থাকতে পারে, আর আক্রান্ত ব্যক্তির খুব বেশি কাছে গেলে শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে এই ড্রপলেটস কোভিড-১৯ এর ভাইরাস নিয়ে আপনার মধ্যে ঢুকতে পারে।

সতর্কতা হিসেবে ভিড় এড়িয়ে চলারও পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। কারণ সংস্থাটির মতে, ভিড়ের মধ্যে গেলে কোভিড-১৯ আক্রান্ত কারো সংস্পর্শে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে এবং অন্যদের থেকে এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখাটাও সম্ভব হয় না।

শুধু তাই নয়, সংস্থাটি বলছে আমাদের আশেপাশে যেসব মানুষ থাকে তারাও যাতে ভালভাবে শ্বাস-প্রশ্বাসের আদব মেনে চলেন তাও নিশ্চিত করতে হবে।

তার মানে হচ্ছে, হাঁচি বা কাশি দেয়ার সময় নাক-মুখ ঢেকে রাখতে হবে - না হলে কনুই বাঁকিয়ে তার মধ্যে হাঁচি-কাশি দিতে হবে।

পারলে হাঁচি ও কাশি দেয়ার সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে, যাতে এর মাধ্যমে ড্রপলেটস অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে না পরে। পরে টিস্যুটি ফেলে দিয়ে সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে।

হাঁচি-কাশির আদব মেনে চললে আশেপাশের মানুষকে ফ্লু বা কোভিড-১৯ এর মতো সংক্রমণ থেকে মুক্ত রাখা সম্ভব।

কিন্তু বাংলাদেশে লকডাউন শিথিল এবং মার্কেটসহ নানা ধরণের প্রতিষ্ঠান চালু করার ঘোষণা দেয়ার কারণে এই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাটাই একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কারণ বাস্তবতা হলো, মার্কেটে গিয়ে বা ভিড় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এমন জায়গায় গিয়ে, আসলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখা আদৌ সম্ভব নয়।

এছাড়া বাংলাদেশে বেশীরভাগ এলাকাই ঘন বসতিপূর্ণ হওয়ায় লকডাউন ছাড়া সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করাটাও প্রায় অসম্ভব ব্যাপার।

এমন অবস্থায়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে নিজেকে কীভাবে রক্ষা করা সম্ভব?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণের ধারা যেহেতু উর্ধ্বমুখী, তাই লকডাউন শিথিল করাটা খুবই বিপদজনক হয়েছে। বাংলাদেশ বিপদে পড়তে যাচ্ছে কি-না, তাও সাত থেকে ১৪ দিনের মধ্যে বুঝা যাবে বলে মনে করছেন তারা।

উপায় কী?

এমন মুহূর্তে যাদের বাইরে বের না হলে কোন ধরণের অসুবিধা নেই, এমন মানুষদের ঘরেই থাকা উচিত বলে মত দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। আর বের হতে হলেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কোন বিকল্প নেই বলেও মত তাদের।

আইইডিসিআর-এর উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, বাইরে বের হতে হলে অবশ্যই মাস্ক পড়তে হবে, সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

আর এ বিষয়ে সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রমণ রোগ ও রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের পরিচালক শাহনীলা ফেরদৌস বলেন, দরকার না হলে বাইরে না যাওয়াটাই হবে সবচেয়ে বড় সতর্কতামূলক পদক্ষেপ।

তবে যদি বাইরে যেতেই হয়, তাহলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা অবশ্যই করতে হবে, বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি। এই বিশেষজ্ঞের মতে, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় এর কোন বিকল্প নেই।

তবে বাংলাদেশে জনঘনত্ব বেশি বলে অনেক ক্ষেত্রেই এটা মেনে চলা কঠিন বলেই মনে করেন শাহনীলা ফেরদৌস।

"আমি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছি কিন্তু অন্য কেউ হয়তো চলে, আসলো তাকে তো আর সরিয়ে দিতে পারবো না," তার মন্তব্য।

সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব না হলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে কিছু সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

এগুলো হচ্ছে -

১. মাস্ক যথাযথভাবে পরা

ভিড় বা জনসমাগমে যেতে হলে প্রথমেই যে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে, আবশ্যিকভাবে মাস্ক পরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাস্ক পরার কোন বিকল্প নেই।

ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, কোভিড-১৯ রোগীর সংস্পর্শে যেতে হয় এমন চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে যদি এন-৯৫ মাস্ক না থাকে, তাহলে তারা সার্জিক্যাল মাস্ক এক সাথে দু'টি পড়তে পারেন। এমনকি তিনটিও পরা যেতে পারে।

দু'টি বা তিনটি সার্জিক্যাল মাস্ক একটি এন-৯৫ মাস্কের বিকল্প। তবে এন-৯৫ মাস্ক থাকলে একটি পরলেই হবে।

অচেনা মানুষের সামনে বা বাইরে গেলে এক সাথে দুটো মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই।

তবে যে মাস্কটি পরা হচ্ছে, সেটি সঠিক নিয়মে পরতে হবে। নাক-মুখ পুরোপুরি ঢেকে দিতে হবে। নাকের সাথে মাস্কের মাঝখানে যাতে কোন শূন্যস্থান না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

মাস্কের ভেতরে যাতে বাতাস প্রবেশ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। নাক বা থুতনি বাইরে বেরিয়ে থাকলে দুটি মাস্ক পরেও কোন লাভ হবে না।

শাহনীলা ফেরদৌস বলেন, প্রয়োজন হলে ঘরে তৈরি করা তিন স্তর বিশিষ্ট কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে, এ ধরণের মাস্ক এক বার ব্যবহারের পর সেটি সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে বারবার ব্যবহার করা সম্ভব হবে।

২. গন্তব্যে যাওয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যতবার সম্ভব হাত ধোয়া

বাইরে বের হলে যতটা সম্ভব সাবধান থাকতে হবে, যাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হয়। সেটি না হলে বাসা থেকে বের হওয়ার পর থেকে শুরু করে গন্তব্যে পৌঁছানো পর্যন্ত যতবার সম্ভব সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে এখন বিভিন্ন অফিস, দোকান, ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠানের বাইরে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকে। এগুলো ব্যবহার করে বারবার সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়ার চেষ্টা করতে হবে।

এছাড়া হাত না ধুয়ে কোনভাবেই চোখ, মুখ ও নাকে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

৩. সাবান দিয়ে গোসল করা

শুধু কাপড় পরিষ্কার করা বা হাত-মুখ ধুলেই হবে না।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে হলে, বাইরে থেকে আসার পর পুরো শরীরে সাবান মেখে গোসল করে নিতে হবে। এর আগে পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছে যাওয়া যাবে না।

পরিবারে বয়স্ক বা শারীরিকভাবে অসুস্থ বা ঝুঁকিপূর্ণ কেউ থাকলে তাদের কাছ থেকে এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

৪. পরিহিত পোশাকটি ধুয়ে ফেলা

বাইরে বের হওয়ার পর বাসায় ফিরলে পরিহিত পোশাকটি সাবান এবং পানি দিয়ে কমপক্ষে আধাঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। তার পর এটি ধুয়ে ফেলতে হবে।

এমনকি পরিহিত জুতা জোড়াও ঘরের বাইরে রাখতে হবে এবং সেগুলো সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

৫. চশমা-গ্লাভস-পিপিই'র ব্যবহার

শাহনীলা ফেরদৌস বলেন, যেহেতু চোখের মধ্য দিয়েও করোনাভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে, তাই এটি ঠেকাতে সতর্কতার অংশ হিসেবে জিরো পাওয়ারের গ্লাস বা চশমা পরা যেতে পারে। এতে করে চোখ সরাসরি ড্রপলেটস থেকে দূরে থাকবে বলে জানান তিনি।

তবে মুশতাক হোসেন বলছেন, বাইরে বের হওয়ার সময় হাতে গ্লাভস বা পিপিই (ব্যক্তিগত সুরক্ষা পোশাক) পরাটা জরুরী নয়। কারণ গ্লাভস পরলে সেটা যদি পরিবর্তন করে আরেকটি পরা না যায়, তাহলে সেটি কোন কাজে আসে না।

এর চেয়ে সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়াটা অনেক বেশি নিরাপদ বলে মত দেন মুশতাক হোসেন। একই কথা তিনি বলেছেন পিপিই বা ব্যক্তিগত সুরক্ষা পোশাক পরার ক্ষেত্রেও।

তার মতে, যাদেরকে কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তি পরিবহন, মরদেহ সৎকার কিংবা চিকিৎসা দেয়ার মতো কাজ করতে হয় না, তাদের পিপিই বা ব্যক্তিগত সুরক্ষা পোশাক পরার দরকার নেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে হলে - বিশেষ করে যখন বাংলাদেশে সংক্রমণের হার প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে তখন - ব্যক্তিগত সচেতনতাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

মন্তব্য

হারানো ৩ সভ্যতার অজানা রহস্য

শেয়ার
হারানো ৩ সভ্যতার অজানা রহস্য
সংগৃহীত ছবি

পৃথিবীতে বহু সভ্যতা এসেছে, রাজত্ব করেছে আবার হঠাৎ করেই হারিয়ে গেছে। তাদের বিশাল নগরী, উন্নত জীবনব্যবস্থা আর বিস্ময়কর স্থাপত্য আজও মানুষের কৌতূহলের বিষয়। কিভাবে হারিয়ে গেল এত সমৃদ্ধ জনপদ? 

চলুন জেনে নিই তিনটি রহস্যময় সভ্যতার গল্প।

মায়া সভ্যতা 

লাতিন আমেরিকার গভীর জঙ্গলে একসময় ছিল এক বিস্ময়কর সভ্যতা, মায়া সাম্রাজ্য।

তাদের ছিল বিশাল পিরামিড, জ্যোতির্বিদ্যার অসাধারণ জ্ঞান, হায়ারোগ্লিফিক লিপি। কিন্তু ৮০০-৯০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এই সভ্যতার অধিকাংশ শহর একে একে ফাঁকা হয়ে যায়। 
গবেষকরা বলেন, বেশ কিছু সমস্যার কারণেই মায়াদের পতন হয়-
দীর্ঘস্থায়ী খরা, খাদ্যসংকট, যুদ্ধ ও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা।
বর্তমানে গুয়াতেমালা ও মেক্সিকোর জঙ্গলে তাদের বিশাল পিরামিড দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু মানুষ নেই।

খেমার সাম্রাজ্য

খেমার সাম্রাজ্য ছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী সাম্রাজ্যগুলোর একটি। ৯ম শতকে শুরু হয়ে ১৫শ শতকের দিকে এই সাম্রাজ্য ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়। এর রাজধানী ছিল অ্যাংকর, যেখানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় স্থাপনা অ্যাংকর ওয়াট তৈরি হয়েছিল। হঠাৎ করেই এই নগরী ফাঁকা হয়ে যায়।

গবেষকরা ৩টি কারণ বের করেছেন।
১। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রবল খরা দেখা দেয়।
২। যুদ্ধ ও অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ সাম্রাজ্যকে দুর্বল করে দেয়।

৩। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অবকাঠামো নষ্ট হয়ে যেতে থাকে।

অ্যাংকর ওয়াট পর্যটকদের জন্য খোলা, কিন্তু শহরটির অধিকাংশ অংশ বিশাল গাছের শেকড়ের নিচে চাপা পড়ে আছে। 

সিন্ধু সভ্যতা

সিন্ধু সভ্যতা ছিল পৃথিবীর প্রাচীনতম শহরগুলোর মধ্যে একটি। যা আজকের পাকিস্তান ও উত্তর-পশ্চিম ভারতের অংশে বিস্তৃত ছিল। মহেঞ্জোদারো এবং হরপ্পা শহরগুলোতে ছিল- পরিকল্পিত সড়ক, পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা, বিশাল স্নানাগার, যা আধুনিক শহরের মতোই। কিন্তু ১৯০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে এই সভ্যতা হঠাৎ করে ধ্বংস হয়ে যায়। কিছু গবেষক বলেন, শক্তিশালী ভূমিকম্প বা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নদীগুলো শুকিয়ে গিয়েছিল। আবার কেউ মনে করেন, আর্য জাতির আক্রমণ সিন্ধু সভ্যতাকে ধ্বংস করেছিল।

এই তিনটি সভ্যতাই একসময় উন্নতির শীর্ষে ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা টিকতে পারেনি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন এসবের কারণে সভ্যতাগুলো ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।

সূত্র : ব্রিটানিকা
 

মন্তব্য
মতামত

সামরিক বাহিনীর ঐক্য বিনষ্টে ষড়যন্ত্র ও সাম্প্রতিক দৃশ্যপট

মুজতবা আহমেদ মুরশেদ
মুজতবা আহমেদ মুরশেদ
শেয়ার
সামরিক বাহিনীর ঐক্য বিনষ্টে ষড়যন্ত্র ও সাম্প্রতিক দৃশ্যপট

বাংলাদেশের সামরিক শক্তি ও কাঠামো নিয়ে এদেশের জনগণ চিরকাল গর্বিত। জনগণ সবসময়ই তাদের সোনালী সন্তানদের প্রতি সমর্থন দিয়ে এসেছে। এটাই তো সত্য, জাতীর যেকোনো প্রয়োজনে আমাদের সামরিক বাহিনীই এগিয়ে আসে এবং জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে সাহসী ভূমিকা পালন করে।

গত বছর আগস্ট মাসে, যখন সারা দেশ ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের ঝুঁকিতে, তখন আবারও আমরা সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বের দৃঢ় অবস্থান চাক্ষুস করি।

সামরিক বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা দেশকে রক্তক্ষয়ী বিপদ থেকে রক্ষা করেন। সত্যি বলতে, রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করার পূর্ণ সুযোগ পেয়েও সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সে পথে হাঁটেন নি।

আরো পড়ুন

ছুরিকাঘাত করে লুটে নেয় মোবাইল-টাকা, চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

ছুরিকাঘাত করে লুটে নেয় মোবাইল-টাকা, চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

 

তিনি দেশের জনগণের প্রতি অবিচল সমর্থন রেখে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি তার দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। সে সময়ে তিনি শপথ নিয়েছিলেন, "যা-ই ঘটুক না কেন, দেশের প্রতি তার শপথ এবং আনুগত্য বজায় রাখবেন।

ফলাফলে তিনি জনগণের দাবির সঙ্গে থেকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের সকল সুযোগ  সম্পন্ন হওয়া এবং এই বছরই নির্বাচন আয়োজন নিশ্চিত করতে সহায়তা করবেন।

এটাই সত্য, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের শুরুর দিকে, জেনারেল ওয়াকার ও তার বাহিনী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ছাত্রদের নেতৃত্বে আন্দোলন চলাকালীন বিক্ষোভরত জনগণের দিকে গুলি চালানো থেকে বিরত ছিলেন। এর ফলে ১৫ বছরের শাসনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগে বাধ্য হন। 

আরো পড়ুন

এবার শ্রীলঙ্কায় ব্র্যান্ড বিজনেস সম্প্রসারণ করল ওয়ালটন এসি

এবার শ্রীলঙ্কায় ব্র্যান্ড বিজনেস সম্প্রসারণ করল ওয়ালটন এসি

 

এখানে উল্লেখযোগ্য, ৫ মার্চ, ইউএন হাই কমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস, ফলকার টার্ক, একটি সাক্ষাৎকারে বিবিসির 'হার্ডটক'-এ বলেছিলেন যে, জাতিসংঘ বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীকে স্পষ্টভাবে সতর্ক করে দিয়েছিল যে, জনতার প্রতিবাদ দমনে সামরিক বাহিনীর অংশ নিলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে তাদের অংশগ্রহণ ঝুঁকির মধ্যে পরতে পারে।

 

টার্ক আরো বলেছিলেন, "আমরা আসলে সেনাবাহিনীকে সতর্ক করে দিয়েছিলাম যে, যদি তারা জড়িত হয়, তবে তারা আর শান্তি মিশনে ট্রুপস পাঠাতে পারবে না," টার্ক প্রকাশ করেছিলেন। "ফলস্বরূপ, আমরা দেখেছি যখন মুহাম্মদ ইউনুস অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।"

কিন্তু সত্যটা এমন নয়। সময়ের রেকর্ড খতিয়ে দেখলে পরিষ্কার বোঝা যায়, ৩ আগস্টেই সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার ঘোষণা করেছিলেন, "আর কোনো গুলি নয়, কারণ ছাত্রদের প্রতিবাদ করার অধিকার রয়েছে।" 

ওদিকে  ইউএন হাই কমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস এর মতে, তিনি ৪/৫ আগস্ট রাতে এ  বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছিলেন।

তাহলে টার্কের দাবি মানলে ভুল হবে যে, সেনাবাহিনী ভোলকার টার্কের ফোন পেলে প্রতিক্রিয়ায় জনগণের বুকে গুলি চালায় নি।

কোনো সন্দেহ নেই, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবসময় জাতীয় স্বার্থকেই অগ্রাধিকার দিয়েছে এবং এমন নয় যে তারা বাহ্যিক চাপের দ্বারা পরিচালিত হয়েছেন। 

আরো পড়ুন

মাগুরার সেই শিশুর জীবন সংকটাপন্ন, দুবার ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’

মাগুরার সেই শিশুর জীবন সংকটাপন্ন, দুবার ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’

 

উল্লেখ্য, জাতিসংঘের মিশনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে, সেনাবাহিনী ব্যক্তিগত লাভের জন্য কখনোই কাজ করে না। এখানে বাংলাদেশ সরকারের জন্য জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ থেকে অর্থনৈতিক লাভও উল্লেখযোগ্য, কারণ জাতিসংঘ বাংলাদেশকে এই অংশগ্রহণের জন্য একটি বড় অঙ্কের অর্থ ফেরত দেয়। অতএব, জাতিসংঘ মিশনে অংশগ্রহণ বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

সমরিক বাহিনীর এমন সকল পেশাদারি পদক্ষেপগুলির পরও দেখা যায়, বর্তমানে বিদেশে বসবাসরত ভুল পথ অনুসরণকারী ও অনিয়ন্ত্রিত কিছু অবরপ্রাপ্ত সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা নিরবচ্ছিন্নভাবে আমাদের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের প্রতীক, সামরিক বাহিনীকে অস্থিতিশীল করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। 

তথ্য যাচাই সাপক্ষে দেখা যায়,  এই কর্মকর্তারা নানা মোহে পড়ে বিভিন্ন সংস্থার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। তাছাড়া, বিদেশে অত্যন্ত বিলাসবহুল জীবনযাপনকারী কয়েকজন কুখ্যাত ব্যক্তিও ইউটিউবের মাধ্যমে বারবার কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ছড়িয়ে সামরিক বাহিনীর মধ্যে সমস্যা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন। তাদের কর্মকাণ্ড স্পষ্টভাবেই দেশপ্রেমিক সামরিক বাহিনীকে অস্থিতিশীল করতে মদত যোগাতে চায়। 

এই অজাচিত চেষ্টাগুলোর পাশাপাশি, প্রতিবেশী দেশের কিছু গোষ্ঠীও বাংলাদেশের এই সংকটময় মুহূর্তে সামরিক বাহিনীর ভাবমূর্তিকে কলঙ্কিত করার চালাচ্ছে। আশ্চর্যজনকভাবে, ভারতের কিছু মালিকানাধীন মিডিয়া, যেমন ‘দ্য ইকোনমিক টাইমস’ এবং ‘ইন্ডিয়া টুডে’, নিয়মিতভাবে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর কার্যক্রমে কালিমা লেপন ও বিভাজন সৃষ্টি করতে সচেষ্ট। তারা চাইছে ক্যন্টনমেন্টগুলোতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হোক। কিন্তু কেন?

সামরিক বাহিনীর কমান্ডে অস্থিতিশীল চলছে। এই মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে, ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর) ১১ মার্চ ২০২৫ তারিখে একটি নোট প্রকাশ করেছে, 

"বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, কিছু ভারতীয় মিডিয়া আউটলেট, যেমন ‘দ্য ইকোনমিক টাইমস’ এবং ‘ইন্ডিয়া টুডে’, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর কমান্ড চেইনে বিপর্যয় এবং অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা সম্পর্কিত মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এই রিপোর্টগুলি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং এটি বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ও সশস্ত্র বাহিনীর সম্মানকে ক্ষুণ্ন করার জন্য একটি উদ্দেশ্যমূলক তথ্যগত প্রচারণার অংশ বলে প্রতীয়মান।'

আইএসপিআর আরো জানায়, 'আমরা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিচ্ছি যে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শক্তিশালী, ঐক্যবদ্ধ এবং প্রধান সেনাপ্রধানের নেতৃত্বে তার সাংবিধানিক কর্তব্য পালনে পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কমান্ড চেইন দৃঢ় এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সকল সদস্য, শীর্ষ জেনারেলসহ, সাংবিধানিক কর্তব্য, কমান্ড চেইন এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রতি তাদের আনুগত্যে অবিচল। বাহিনীর মধ্যে অসহযোগিতা বা অবিশ্বাসের যে কোনো অভিযোগ সম্পূর্ণরূপে ভিত্তিহীন এবং ক্ষতিকর। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিজ দেশের সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা এবং নিরাপত্তা রক্ষার জন্য তার দেওয়া প্রতিশ্রুতি বজায় রেখেছে।"
 
সন্দেহাতীতভাবে বলা যায়, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ৫ আগস্ট এবং তার পরেও বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষা করেছেন। এটাই কি তার অপরাধ? তিনি বাংলাদেশের সম্ভাব্য গৃহযুদ্ধ থেকে রক্ষা করেছেন। এটাও কি তার অপরাধ? চাপ সত্ত্বেও, তিনি সামরিক শাসন আরোপ করেননি। এটাও কি তার অপরাধ? 

তার জীবনী সম্পর্কে BBC ওয়ার্ল্ডের রিপোর্টে লিখেছে, “ওয়াকার বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিফেন্স স্টাডিজে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং কিংস কলেজ, লন্ডন থেকে ডিফেন্স স্টাডিজে মাস্টার অব আর্টস ডিগ্রি লাভ করেছেন, যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে। 

সেনাবাহিনী প্রধান হওয়ার আগে, তিনি প্রায় ছয় মাসের জন্য চিফ অব জেনারেল স্টাফ হিসেবে কাজ করেছেন - যেখানে তিনি সামরিক কার্যক্রম এবং গোয়েন্দা সংক্রান্ত কাজ, বাংলাদেশে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ এবং বাজেট দেখাশোনা করেছিলেন।

এসব বলা এ কারণে, এই সময়ে পুরো দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম আকাশচুম্বী, নারীদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে এবং সার্বিকভাবে পুলিশের কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ায় নানা মাত্রিক নিরাপত্তাও নাজুক। এমন পরিস্থিতিতে দেশ জুড়ে বিভিন্ন ধারার অরাজকতা চলছে। 

আরো পড়ুন

দাউদকান্দিতে ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগ

দাউদকান্দিতে ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগ

 

দেখা যাচ্ছে, পুলিশ বিভাগের দুর্বল উপস্থিতির মাঝেও বাংলাদেশের জনগণের জন্য একমাত্র আশার আলো সামরিক বাহিনী এবং জনগণের জন্যে সাহসের একমাত্র উৎস হচ্ছে সামরিক বাহিনীর মাঝে অবিচল ঐক্য।

কিছু অপশক্তি গুজবকে পুজি করে সামরিক বাহিনীর মাঝে বিশৃংখলা ঘটাতে চায় এবং সামরিক বাহিনী এবং সরকারের মাঝে দূরত্ব বাড়াতে চায়। কারণ, সামরিক বাহিনীর শৃঙ্খলা ও একতা ভাঙতে পারলে দেশের নিরাপত্তা এবং জাতীয় স্বার্থে বিপর্যয় ঘটবে, যা স্বার্থান্বেসী মহল তাদের নিজেদের ফায়দার জন্য কাজে লাগতে পারবে। 

তাই দেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে, আমাদের দায়িত্ব হলো এই ধরনের মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে সক্রিয় থাকা এবং সামরিক বাহিনীর প্রতি পূর্ণ সমর্থন প্রদান করা। তাহলেই বর্তমান সরকারের প্রতি সামরিক বাহিনীর পূর্ণ সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা দেশের মধ্যে স্থিতিশীলতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠিত করতে পারব।

লেখক : কবি, কথা সাহিত্যিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

মন্তব্য

মৃতদের বন, গাছই যেখানে কফিন

শেয়ার
মৃতদের বন, গাছই যেখানে কফিন
সংগৃহীত ছবি

আপনি কি কখনো শুনেছেন এমন এক জায়গার কথা, যেখানে মানুষকে মাটির নিচে নয়, বরং গাছের ভেতরে কবর দেওয়া হয়? 
ইন্দোনেশিয়ার টারাজা সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে মৃত্যু মানে শুধু জীবন শেষ হয়ে যাওয়া নয়। বরং প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়ার সুযোগ। এই বিশ্বাস থেকে তারা একটি বিশেষ ধরনের কবর প্রথা অনুসরণ করে, যেখানে শিশুদের দেহ গাছের ভেতরে রাখা হয়।

যেভাবে চলে এই অদ্ভুত কবর দেওয়ার প্রক্রিয়া

কোনো শিশুর মৃত্যু হলে, তার পরিবার কফিনের পরিবর্তে একটি বড় গাছ বেছে নেয়।

গাছের কান্ডে একটি ছোট গর্ত করা হয় এবং শিশুটির দেহ সেখানে রাখা হয়। পুনরায় গর্তটি আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়, যাতে গাছ ধীরে ধীরে সেই জায়গাটি নিজের মধ্যে শোষণ করে নেয়। পরিবারের সদস্যরা বিশ্বাস করেন, শিশুটির আত্মা গাছের সঙ্গে মিশে গিয়ে প্রকৃতির অংশ হয়ে যাবে। এই বিশেষ কবরস্থানকে বলা হয় Makam Pohon যার অর্থ গাছের সমাধি।

টারাজা সম্প্রদায়ের বিশ্বাস অনুযায়ী, গাছ হচ্ছে জীবনের প্রতীক। ছোট শিশুরা পৃথিবীতে তেমন একটা সময় কাটাতে পারে না, তাই তাদের গাছের ভেতর রাখলে তারা প্রকৃতির সঙ্গে মিশে নতুন জীবন পায়।

টারাজা সম্প্রদায়ের মানুষ শুধু এই গাছের কবর দিয়েই থেমে থাকে না। তারা মৃতদের প্রতি বছর তাদের কবর থেকে তুলে আনে।

মৃত আত্মীয়দের পোশাক বদলায়, পরিষ্কার করে এবং পরিবারের সঙ্গে কিছুক্ষণ রাখে। এই বিশেষ রীতি Ma’nene নামে পরিচিত যেখানে মৃতদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করা হয়।

এটি কি অদ্ভুত নাকি এক অনন্য সংস্কৃতি?

আমাদের কাছে এটি বিস্ময়কর মনে হলেও টারাজাদের কাছে এটি খুবই স্বাভাবিক এবং শ্রদ্ধার বিষয়। তারা বিশ্বাস করে, মৃত্যু মানেই শেষ নয় বরং এটি প্রকৃতির সঙ্গে এক নতুন সংযোগের শুরু। এ ধরনের অদ্ভুত কিন্তু সুন্দর সংস্কৃতি আমাদের শেখায়, মানুষের বিশ্বাস আর প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক কত বিচিত্র হতে পারে।


সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

মন্তব্য

ওইমিয়াকন, বরফের গ্রামে টিকে থাকার লড়াই

    এখানে স্কুল বন্ধ হয় কেবল তখনই যখন তাপমাত্রা -৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের এর নিচে নামে
শেয়ার
ওইমিয়াকন, বরফের গ্রামে টিকে থাকার লড়াই
সংগৃহীত ছবি

পৃথিবীর কিছু জায়গা আছে যেখানে প্রকৃতি তার ভয়ংকর রূপ দেখায়। সেখানে মানুষের টিকে থাকার ক্ষমতাও চরম পরীক্ষার মুখে পড়ে। রাশিয়ার ওইমিয়াকন গ্রাম তেমনই এক জায়গা, পৃথিবীর সবচেয়ে ঠান্ডা জনবসতিপূর্ণ স্থান। শীত এখানে শুধুই একটি ঋতু নয়, বরং এক ভয়ঙ্কর বাস্তবতা, যেখানে বেঁচে থাকাটাই যেন এক যুদ্ধ।

ওইমিয়াকন অবস্থিত রাশিয়ার সাইবেরিয়ায়। যেখানে শীতকাল প্রায় সারা বছরই টিকে থাকে। ১৯৩৩ সালে এখানে রেকর্ড করা হয়েছিল -৬৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা, যা কোনো জনবসতিপূর্ণ স্থানের জন্য পৃথিবীর সর্বনিম্ন। এমনকি অ্যান্টার্কটিকার কিছু অংশেও এতটা ঠান্ডা হয় না।

এখানে শীতকালে গড়ে তাপমাত্রা -৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি থাকে। এত কম তাপমাত্রায় দেহের খোলা অংশ কয়েক মিনিটের মধ্যে জমে যেতে পারে, নিঃশ্বাস নিলে ফুসফুসের ক্ষতি হতে পারে, আর কলের পানি সবসময় জমে থাকে।

ওইমিয়াকন শহরে জীবন মোটেও সহজ নয়। এখানে মানুষের ঠান্ডার সাথে যুদ্ধ করেই বেশিরভাগ সময় চলে।

গাড়ি চালানোর চ্যালেঞ্জ

গাড়ির ব্যাটারি জমে যাওয়ার কারণে অনেকেই তাদের গাড়ি ২৪ ঘণ্টা চালু রেখে দেয়। একবার বন্ধ হলে আবার চালু করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। রাস্তার নিচে থাকা পাইপগুলোও জমে যায়। তাই এখানে প্রায় কোনো পানির লাইন নেই।

খাদ্য ও পানীয় সংগ্রহ 

চাষাবাদের কোনো সুযোগ নেই।

তাই মানুষ মূলত হরিণের মাংস ও মাছ খেয়ে বেঁচে থাকে। মাছ ধরতে গেলে বরফ কাটতে হয়, আর ধরা মাত্রই মাছ জমে যায়। দুধও তরল অবস্থায় রাখা যায় না, তাই তা বরফ আকারে বিক্রি করা হয়।

গরম থাকার কৌশল 

বাসাগুলো কাঠের তৈরি। এগুলোকে গরম রাখার জন্য দিনরাত চুলা জ্বালিয়ে রাখতে হয়। এখানে বাথরুমগুলো ঘরের বাইরে থাকে, কারণ পাইপলাইনে পানি জমে গেলে তা বিস্ফোরিত হতে পারে।

ওইমিয়াকনের জনসংখ্যা খুবই কম। শুধুমাত্র কয়েকশো মানুষ এখানে বসবাস করেন। তাদের প্রধান পেশা পশুপালন, বিশেষ করে রেনডিয়ার (হরিণ) পালন।এখানে স্কুল বন্ধ হয় কেবল তখনই যখন তাপমাত্রা -৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের এর নিচে নামে। স্থানীয় শিশুরা এত কম তাপমাত্রাতেও স্কুলে যায়, যা অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে।

পর্যটকদের জন্য আকর্ষণ-

এই ভয়ংকর ঠান্ডার মধ্যেও কিছু দুঃসাহসী পর্যটক ওইমিয়াকন ঘুরতে যান। এখানে গেলে যা যা অভিজ্ঞতা হয়।

ফ্রোজেন নুডলস চ্যালেঞ্জ: গরম নুডলস বাইরে রেখে দিলে সেকেন্ডের মধ্যে জমে যায়। কাঠের ঘর ও বরফাচ্ছন্ন অঞ্চল দেখতে সত্যিই অন্যরকম।
ট্র্যাডিশনাল ইয়াকুট খাবার: এখানে বিশেষ ধরনের হিমায়িত মাছ ও মাংস খাওয়ার প্রচলন আছে।

ওইমিয়াকন হলো প্রকৃতির এক অবিশ্বাস্য সৃষ্টি, যেখানে মানুষ প্রকৃতির কঠোরতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। আধুনিক বিশ্বের স্বাচ্ছন্দ্য এখানে একেবারেই অনুপস্থিত। এখানকার মানুষের জীবনযাত্রা আমাদের শেখায়, পরিবেশ যতই কঠিন হোক মানুষ টিকে থাকার পথ খুঁজে নেয়।


সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান 
 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ