<p><strong>সূর্যঘড়ি</strong></p> <p>সবচেয়ে পুরনো সময় হিসাব করার যন্ত্র হিসেবে ধরা হয় সূর্যঘড়িকে। এতে একটি গোলাকার খালি জায়গার মাঝখানে একটি লম্বা স্থাপনা বানানো হয়। সূর্য তো সকালে একদিক দিয়ে উঠে আরেক দিকে অস্ত যায়। ফলে স্থাপনাটির ছায়াও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলাতে থাকে। সে অনুযায়ী খালি জায়গাটিতে দাগ কাটা থাকে। স্থাপনাটির ছায়া কোন দাগে অবস্থান করছে, সেটা দেখে সময় হিসাব করা হয়।</p> <p>তবে রাতের বেলা এই ঘড়ি একদম অকেজো হয়ে পড়ত। তার ওপর আকাশ মেঘলা থাকলে দিনের বেলায়ও সময়ের হিসাব ঠাহর করা যেত না। কাজেই নতুন ধরনের ঘড়ি বানানোর চেষ্টা চলতে লাগল।</p> <p> </p> <p><strong>জলঘড়ি</strong></p> <p>সেই চেষ্টারই ফসল জলঘড়ি। একটি পাত্রের নিচে একটি চিকন নল বসানো থাকত। সেই নল ছিপি দিয়ে বন্ধ করা থাকত। পাত্রটায় পানি ভরে রাখা হতো। যখন থেকে সময় হিসাব করা দরকার, তখন স্রেফ ছিপিটা খুলে ফেললেই হলো। একবার ওই পাত্র খালি হতে যে সময় লাগে, সেটাকে একক ধরে সময়ের হিসাব করা হতো। আবার অনেক অঞ্চলের জলঘড়িগুলোতে উল্টো পদ্ধতিতেও হিসাব করা হতো। মানে ওগুলোতে খালি পাত্রে জল ভরার ব্যবস্থা করা হতো। একটি পাত্র পানিপূর্ণ হতে যে সময় লাগত, সেটাকে একক ধরে সময়ের হিসাব করা হতো।</p> <p> </p> <p><strong>বালুঘড়ি ও মোমঘড়ি</strong></p> <p>এই একই পদ্ধতিতে কাজ করা আরেক ধরনের ঘড়িও তৈরি হয়েছিল—বালুঘড়ি। স্রেফ পানির বদলে ওগুলোতে ব্যবহার করা হতো বালু। পাশাপাশি আরেক ধরনের ঘড়িরও প্রচলন হয়েছিল—মোমঘড়ি। এগুলোতে চিকন লম্বা মোমবাতি জ্বালানো থাকত। মোমবাতি কতখানি পুড়ল তার ওপর ভিত্তি করে সময় হিসাব করা হতো।</p> <p> </p> <p><strong>পেন্ডুলাম ঘড়ি ও স্প্রিংয়ের ঘড়ি</strong></p> <p>এরপর এলো পেন্ডুলাম ঘড়ির যুগ। পেন্ডুলাম হয় সময় একই গতিতে দোলে। এই সূত্রকে ব্যবহার করে বানানো হলো পেন্ডুলাম ঘড়ি। ফলে সময়ের হিসাব আরো পুঙ্খানুপুঙ্খ হলো। এবার একেবারে মিনিট, সেকেন্ড দিয়ে সময়ের হিসাব করতে পারা গেল। শুধু করা গেল না সমুদ্রে। কারণ জাহাজ তো নিজেই সব সময় সাগরের ঢেউয়ে দোল খাচ্ছে। তাতে পেন্ডুলাম নিজেই আর ঠিকঠাক দোল খেতে পারে না। অতএব তৈরি হলো স্প্রিংয়ের ঘড়ি। এই ঘড়িগুলোতে আগে চাবি ঘুরিয়ে দম দিয়ে নিতে হয়।</p> <p> </p> <p><strong>কোয়ার্টজের ঘড়ি ও আণবিক ঘড়ি</strong></p> <p>গত শতকের ষাটের দশকে তৈরি করা হয় কোয়ার্টজের ঘড়ি। কোয়ার্টজের বিশেষত্ব হলো, এই ধাতুর মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ পরিবহন করলে, এটি কাঁপতে থাকে। এই কম্পন ব্যবহার করেই এই ঘড়িগুলো কাজ করে। কোয়ার্টজ ঘড়ি খুললে দেখবে ভেতরে কোয়ার্টজের একটি ছোট্ট টুকরা আছে। ওটির ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ পরিবাহিত করে, ওটির কম্পন পরিমাপ করেই এই ঘড়িগুলোতে সময়ের হিসাব করা হয়। এখনো অধিকাংশ হাতঘড়িই কোয়ার্টজ ব্যবহার করে বানানো হয়।</p> <p>বিশ শতকের শেষে বিজ্ঞানীরা বানালেন আণবিক ঘড়ি। আণবিক ঘড়ি স্রেফ তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গের কম্পনের হিসাব করে সময় পরিমাপ করে। এমন একটি ঘড়ি যদি ঠিকঠাক বানানো যায়, ৩০ কোটি বছরেও সেই ঘড়ির পরিমাপ ১ সেকেন্ডও এদিক-সেদিক হবে না।</p>