সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অনুগতদের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানের সমাপ্তি ঘটেছে বলে দেশটির নতুন কর্তৃপক্ষ সোমবার ঘোষণা করেছে। এতে এক হাজারেরও বেশি বেসামরিক নিহত হয়েছে, যা গত ৮ ডিসেম্বর আসাদের পতনের পর সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা।
ব্রিটেনভিত্তিক যুদ্ধ পর্যবেক্ষণ সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া এই সহিংসতায় অন্তত এক হাজার ৬৮ জন বেসামরিক নিহত হয়েছে। নিহতদের বেশির ভাগই আসাদপন্থী আলাউইত সম্প্রদায়ের সদস্য, যাদের নিরাপত্তা বাহিনী বা তাদের মিত্র গোষ্ঠীগুলো হত্যা করেছে।
এ ছাড়া নিরাপত্তা বাহিনীর ২৩১ জন সদস্য ও ২৫০ জন আসাদপন্থী যোদ্ধাও নিহত হয়েছেন। তবে কর্তৃপক্ষ হতাহতের নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা প্রকাশ করেনি। আলাউইতদের গণহত্যার পাশাপাশি এই হামলার শিকার হয়েছে সিরিয়ার খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সদস্যরাও।
এদিকে উপকূলীয় আলাউইত অধ্যুষিত অঞ্চলে সংঘর্ষ সিরিয়ার অনিশ্চিত পরিবর্তন প্রক্রিয়াকে আরো জটিল করে তুলেছে, যেখানে আসাদ পরিবারের দীর্ঘ শাসনের অবসানের পর নতুন শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হাসান আবদুল ঘানি সোমবার জানান, ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলীয় লাতাকিয়া ও তার্তুস প্রদেশে ‘নিরাপত্তা হুমকি ও শাসনব্যবস্থার অবশিষ্টাংশ’ মোকাবেলায় পরিচালিত সামরিক অভিযান শেষ হয়েছে। তিনি রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সানাতে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এই ঘোষণার আগে অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা বলেছেন, সিরিয়া আরেকবার গৃহযুদ্ধে জড়াবে না। তিনি সানায় প্রকাশিত এক ভাষণে বলেন, ‘সিরিয়া...কোনো বিদেশি শক্তি বা দেশীয় কোনো পক্ষকে অরাজকতা বা গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার সুযোগ দেবে না।
কেউ বেসামরিক হত্যাকাণ্ডে জড়িত বা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অতিক্রম করলে, তাকে কঠোরভাবে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।’
আরো পড়ুন
৩ দিনে নিহত অন্তত ১৩০০, নতুন করে কী হচ্ছে সিরিয়ায়
‘পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নেই’
এদিকে বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক এই সহিংসতা ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত দেশটিতে নতুন শাসকদের শাসন ও পুনর্গঠনে তাদের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরিয়া বিশেষজ্ঞ জোশুয়া ল্যান্ডিস বলেন, ‘আলাউইতদের উপকূলীয় শহরগুলোতে যে মিলিশিয়া বিশৃঙ্খলা দেখা গেছে, তা প্রমাণ করে, নতুন সিরীয় বাহিনী পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই সহিংসতা আহমেদ আল-শারার শাসন সুসংহত করার প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করবে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দাবিকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।’
অন্যদিকে আসাদের অন্যতম প্রধান মিত্র ইরান সোমবার জানায় তারা সাম্প্রতিক সহিংসতায় কোনোভাবে জড়িত নয়।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এসমাইল বাকাই সৌদি মালিকানাধীন আল-অ্যারাবিয়া টিভিসহ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘এসব অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন।’
জাতিসংঘ, আরব লীগ, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য সরকারও এই সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছে। সিরীয় প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ঘোষণা করেছে, ‘একটি স্বাধীন কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা বেসামরিকদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের তদন্ত করবে এবং দায়ীদের বিচারের আওতায় আনবে।’