<p> একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে বৃহস্পতিবার রাতে ফাঁসিতে ঝোলানোর পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে জামায়াত-শিবির। তাদের সহিংসতায় পাঁচ জেলায় সাতজন নিহত হয়েছে। বেশ কিছু এলাকায় আওয়ামী লীগের অফিস, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, পুলিশ ফাঁড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে তারা। বিভিন্ন স্থানে রাস্তা কেটে ও ব্রিজের পাটাতন খুলে এবং রাস্তার ওপর গাছ ফেলে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। এ ছাড়া বহু যানবাহনে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রাজধানীর মতিঝিল, ফকিরাপুল, মালিবাগ, রামপুরা, খিলগাঁওসহ কয়েকটি এলাকায় ব্যাপক 'ঘূর্ণিসন্ত্রাস' চালায় জামায়াত-শিবির।</p> <p> নিহতদের মধ্যে সাতক্ষীরায় আওয়ামী লীগের দুই নেতা ও এক স্কুলছাত্র, পিরোজপুরে একজন- যাকে একইসঙ্গে নিজেদের কর্মী বলে দাবি জামায়াত ও বিএনপির, নোয়াখালীতে এক চটপটির দোকানদার, যশোরে এক শিবিরকর্মী ও খুলনায় আখের রস বিক্রেতা এক কিশোর রয়েছে।</p> <p> রাজধানী : গতকাল জুমার নামাজের পরপরই মতিঝিল, মালিবাগ, রামপুরা, খিলগাঁও, ফকিরাপুলসহ কয়েকটি এলাকায় ব্যাপক 'ঘূর্ণিসন্ত্রাস' চালায় জামায়াত-শিবির। তারা শতাধিক দোকানপাট ও যানবাহনে ভাঙচুরের পাশাপাশি আগুন দেয়। আগুনে অন্তত ২০টি যানবাহন ও ফুটপাতের অনেক দোকান পুড়ে গেছে। হামলা করা হয় ওষুধের দোকান ও গণমাধ্যমের গাড়িতেও। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শিবিরকর্মীদের সংঘর্ষে ১৩ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে শিশু, নারীসহ পথচারীর সংখ্যাই বেশি। ১১ জনকে আটক করা হয়েছে।</p> <p> প্রত্যক্ষদর্শী আরামবাগ এলাকার ফুটপাতের ব্যবসায়ী আলমগীর, হারেজ মিয়া, সবুজসহ আরো কয়েকজন জানান, জুমার নামাজের কিছুক্ষণ আগেই বেশির ভাগ দোকানপাট বন্ধ করে ব্যবসায়ীরা নামাজ পড়তে যান। কেউ কেউ বাসায় চলে যান। দুপুর ২টার দিকে মতিঝিল এজিবি কলোনি, মালিবাগ, আরামবাগ ও আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশের বিভিন্ন গলি থেকে ঝটিকা মিছিল নিয়ে প্রধান সড়কে এসেই তাণ্ডব শুরু করে কয়েক শ শিবিরকর্মী। এ সময় আরামবাগ ও এজিবি কলোনি এলাকায় চারটি প্রাইভেট কার, পাঁচটি মোটরসাইকেল, একটি কাভার্ড ভ্যান, ১৩টি রিকশা ও মালবাহী ভ্যান এবং ফুটপাতের দোকানগুলোতে নির্বিচারে আগুন দেয় তারা। আইডিয়াল স্কুলের গলিতে হলিডে মার্কেটে ভাঙচুরের পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের আবর্জনা ব্যবস্থাপনা বিভাগের ১০ নম্বর ওয়ার্ড কার্যালয়েও আগুন দেয়। পরে পুলিশ ও র‌্যাব এসে ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। শিবির ক্যাডাররা ককটেল আর গুলি ছুড়ে বিভিন্ন গলিতে ঢুকে পালিয়ে যায়।</p> <p> হলিডে মার্কেটের দোকানদার আফজালসহ আরো কয়েকজন জানান, নামাজের পরপরই কয়েকটি গলি থেকে জামায়াত-শিবিরের মিছিল প্রধান সড়কে আসে। মিছিলকারীরা 'ধর ধর' চিৎকার আর 'নারায়ে তকবির ...' ধ্বনি দিয়ে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ শুরু করে। এ সময় একের পর এক ককটেল ও পেট্রলবোমার বিস্ফোরণে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কিছু মুখোশধারী প্রাইভেট কার, রিকশা ও ভ্যানে পেট্রল ঢেলে আগুন দেয়। তারা সামনে যা পেয়েছে তাতেই আগুন দিয়েছে। একপর্যায়ে হলিডে মার্কেটের জিনিসপত্র তছনছ করে রাস্তায় জড়ো করে তাতেও আগুন দেয়।</p> <p> প্রাইভেট কারচালক আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন, মতিঝিল এজিবি কলোনি এলাকায় আইডিয়াল স্কুলের কাছাকাছি স্থানে তিনি ২০০-৩০০ শিবিরকর্মীর মিছিলের সামনে পড়েন। তারা গাড়ি ভাঙচুর করতে করতেই আগুন ধরিয়ে দেয়। প্রাণরক্ষায় তিনি লাফিয়ে বের হয়ে যান।</p> <p> আরেক চালক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মালিকের স্ত্রী ও সন্তানকে আইডিয়াল স্কুলের সামনে নামিয়ে দিয়ে কাঁচাবাজার মোড়ে পার্কিং করে তিনি বসে ছিলেন। হঠাৎ শিবিরের মিছিল ও তাণ্ডব দেখে গাড়ি স্টার্ট করামাত্র শিবিরের কয়েকজন ক্যাডার এসে তাঁকে মারধর করে গাড়ি থেকে নামিয়ে পেট্রল ঢেলে আগুন দেয়। এ সময় তারা আরো তিনটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।</p> <p> একই সময়ে শিবিরকর্মীরা মালিবাগ রেললাইন থেকে মিছিল নিয়ে রামপুরার দিকে যায়। সেখানে মালিবাগ চৌধুরীপাড়ায় একটি কাভার্ড ভ্যান ও যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয় এবং একটি ওষুধের দোকান ভাঙচুর করে। তারা রামপুরা, আবুল হোটেল থেকে মালিবাগ রেলগেট, খিলগাঁও ও মানিকনগরেও ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ চালায়। এ ছাড়া মানিকনগরে সোহাগ পরিবহনের একটি গাড়িসহ আরো অন্তত চারটি গণপরিবহনে ভাঙচুর চালায়।</p> <p> সাতক্ষীরা : বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল পর্যন্ত ভয়াবহ তাণ্ডব চালিয়েছে জামায়াত-শিবির। তারা আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে কুপিয়ে ও জবাই করে এবং এক স্কুলছাত্রকে অপহরণের পর গুলি করে হত্যা করেছে। এ ছাড়া সংখ্যালঘু ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, লুটপাট ও আগুন দেওয়া হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে শহীদ মিনার ও মন্দির। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তিনটি আওয়ামী লীগ কার্যালয় ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের অফিস। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দিন কাটাচ্ছে চরম আতঙ্কের মধ্যে।</p> <p> নিহতরা হলেন কলারোয়া উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের গজনা গ্রামের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহেদী হাসান (৩২) ও গোপীনাথপুরের ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান (৫৪) এবং সদর উপজেলার কুচপুকুর গ্রামের জিয়াউর রহমানের ছেলে ব্র্যাক স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র রিয়াদ হোসেন (১০)।</p> <p> নিহত আজিজুর রহমানের স্ত্রী জবেদা বেগম জানান, রাত ১২টার দিকে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা প্রথমে তাঁদের ঘরে আগুন দেয়, পরে কুপিয়ে তাঁর স্বামীকে হত্যা করে। নিহত মেহেদী হাসানের ভাই আবদুর রহমান মোড়ল জানান, রাত দেড়টার দিকে জামায়াত-শিবিরের ২০-২৫ জন সন্ত্রাসী বাড়ি থেকে তাঁর ছোট ভাই মেহেদীকে ধরে নিয়ে দক্ষিণ ক্ষেত্রপাড়া গ্রামের ঋষিপাড়ার মোড়ে জবাই করে হত্যা করে। নিহত রিয়াদের পরিবার জানায়, জামায়াত-শিবিরকর্মীরা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রিয়াদকে অপহরণ করে রাতে তাঁকে গুলি করে হত্যা করে। গতকাল বলাডাঙা গ্রামের জয়নুদ্দিন মাস্টারের বাড়ির পেছনের বাঁশবাগান থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।</p> <p> পিরোজপুর : বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটার দিকে জিয়ানগরের ঘোষেরহাট বাজারে ১৮ দলীয় জোটের একটি মিছিলে গুলিতে শুক্কুর আলী নামে একজন নিহত ও ছয়জন আহত হয়। জামায়াতের অভিযোগ, পত্তাশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তোবারক আলীর বাড়ির ছাদ থেকে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিবিদ্ধ শুক্কুরকে ভাণ্ডারিয়া হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরিবারের পক্ষ থেকে শুক্কুর জামায়াতকর্মী ছিল বলে জানানো হলেও তাকে নিজেদের কর্মী হিসেবে দাবি করেছে স্থানীয় বিএনপি।</p> <p> খুলনা অফিস : খুলনায় শিবিরকর্মীরা পুলিশ ফাঁড়ি, নির্বাচন কমিশন অফিসে হামলা, ভাঙচুর এবং যানবাহন ও দোকানপাটে আগুন দিয়েছে। গতকাল রাত পৌনে ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে শতাধিক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নাঈম হোসেন (১৭) নামে এক কিশোর নিহত হয়েছে।</p> <p> পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত সাড়ে ৮টার দিকে শিবিরকর্মীরা আকস্মিকভাবে নগরীর নিরালা মোড় এলাকায় ককটেল ফাটাতে শুরু করে। একপর্যায়ে তারা নিরালা পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালায়। এ ছাড়াও শিবিরকর্মীরা ২৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ অফিস, একটি ওষুধ কম্পানির পিকআপ, দুই-তিনটি ট্রাক, বেশ কয়েকটি ইজিবাইক ও মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে। তারা আশপাশের দোকানগুলোতে ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশ শতাধিক রাউন্ড গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় পার্শ্ববর্তী বাগমারা ব্যাংকার্স কলোনির বাসিন্দা আমীর হোসেনের ছেলে নাঈম হোসেন গুলিবিদ্ধ হয়। খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর সে মারা যায়। কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে নাঈমের মৃত্যু হয়েছে। নাঈম আখ ও আখের রস বিক্রি করত।</p> <p> এ ছাড়া রাত ৯টার দিকে শেরে বাংলা রোডে বিভাগীয় নির্বাচন কমিশন অফিসে হামলা চালায় শিবিরকর্মীরা। খুলনা সদর থানার ওসি সাহাবুদ্দিন আজাদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, 'হামলাকারীদের আটকে অভিযান চলছে।'</p> <p> নোয়াখালী : বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে সোনাইমুড়ি-চাটখিল সড়কের আফানিয়ায় জামায়াত-শিবিরকর্মীরা অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন চটপটির দোকানদার খোরশেদ আলম (৪৫) ও রিকশাচালক হেনা (৩০)। হাসপাতালে খোরশেদ মারা যান। এদিকে ওই রাতেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১-এর বিচারক জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিমের সেনবাগের বাড়িতে পেট্রলবোমা ছুড়ে আগুন লাগানোর চেষ্টা করে জামায়াত-শিবির। কোম্পানীগঞ্জে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আগুন দেয়। এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন সড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করে।</p> <p> যশোর : বাঘারপাড়ার বলতে ঘাটায় গতকাল ভোরের দিকে সড়কে যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করতে গিয়ে ট্রাকচাপায় আশরাফুল ইসলাম (২০) নামে এক শিবিরকর্মী নিহত হয়। এ ছাড়া যশোর-বেনাপোল, যশোর-মণিরামপুর ও যশোর-খুলনা সড়কে গাছ ফেলে অবরোধ সৃষ্টি করা হয়। নতুনহাট এলাকায় একটি পেট্রল পাম্প ভাঙচুর ও দুটি ট্রাকে আগুন দেয় জামায়াত-শিবির।</p> <p> চট্টগ্রাম : সাতকানিয়া, বাঁশখালী এবং লোহাগাড়া উপজেলায় ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে জামায়াত-শিবির। তারা সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ায় অন্তত ২০০ গাছ কেটে ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে। এ সময় ১৩টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ২০টি গাড়ি ভাঙচুর করে। পুলিশ, বিজিবি এবং জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীদের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া জামায়াত-শিবিরকর্মীরা সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্সহ আওয়ামী লীগ নেতাদের বেশ কয়েকটি বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। লোহাগাড়ার পদুয়ায় ফিলিং স্টেশন, মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি ও পদুয়া ফরেস্ট অফিসে ভাঙচুর এবং আগুন দেওয়া হয়। এ ছাড়া দুপুরে লোহাগাড়ার চুনতি পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালালে পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে। অন্যদিকে বাঁশখালী-চট্টগ্রাম সড়কের পুকুরিয়া থেকে বাঁশখালীর টইটং পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন স্থানে শতাধিক গাছ কেটে এবং গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করে জামায়াত-শিবির। এ ছাড়া তারা তিনটি বেইলি ব্রিজের পাঠাতন উঠিয়ে ফেলে। কালীপুর সদর আমিনহাট ও সাবরেজিস্ট্রি অফিসের পাশে, বৈলছড়ি বাজার, বাহারছড়া বশিরুল্লাহ মিয়াজি বাজার, নাপোড়া বাজার এলাকায় ৪২টি দোকান এবং মুরগির খামারে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।</p> <p> বগুড়া : গতকাল সকাল ১০টার দিকে সিলিমপুর তেলিপুকুর এলাকায় আকিজ গ্রুপের কেন্দ্রীয় ডিপোতে আগুন দেয় জামায়াত-শিবিরকর্মীরা। এতে ডিপোর ৭০টি পরিবহনসহ অন্তত ১২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি আকিজ কর্তৃপক্ষের। দুপুরে শহরের নিশিন্দারায় সওজের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার রাতে শিবগঞ্জের দীঘলকান্দি মাঝিপাড়ায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক কেটে ফেলে জামায়াত-শিবির। তারা বগুড়া-নওগাঁ ও বগুড়া-নাটোর সড়ক এবং শেরপুর উপজেলার মহিপুর থেকে শাজাহানপুর উপজেলার নয়মাইল পর্যন্ত মহাসড়কের দুই পাশের গাছ কেটে ও গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ এবং বেশ কিছু যানবাহনে ভাঙচুর চালায়। কাহালু উপজেলার পাঁচপীর এলাকায় রেলে নাশকতার লক্ষ্যে রেললাইনের নিচের পাথর ও মাটি সরিয়ে সুড়ঙ্গ তৈরি করে এবং গাবতলী থেকে সুখানপুকুর স্টেশনের মাঝামাঝি কয়েকটি স্থান থেকে দুই শতাধিক স্প্যান্ডেল ক্লিপ খুলে নেয়।</p> <p> অন্যান্য এলাকার চিত্র : গতকাল সকালে গাজীপুরের জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশন স্টেশনের ট্রেন পরিচালনা কক্ষে পেট্রলবোমা ছোড়ে শিবিরকর্মীরা। এতে আগুন ধরে ওই কক্ষে থাকা যন্ত্রপাতি ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পুড়ে যায়। এ সময় ট্রেনের জন্য অপেক্ষমাণ এক যাত্রী দগ্ধ হন। হামলাকারীরা স্টেশনমাস্টারকেও পিটিয়ে আহত করে। সন্ধ্যায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে দুটি পণ্যবাহী ট্রাকে ও একটি লেগুনায় আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।</p> <p> সিলেটে বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে নগরের জালালাবাদ থানা প্রাঙ্গণে পাঁচটি হাতবোমার বিস্ফোরণ এবং মোগলাবাজার রেলস্টেশনের সিগন্যাল ও স্টোর রুমে পেট্রল ঢেলে আগুন দেয় জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। এ ছাড়া সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের লালাবাজারে একটি ট্রাকে আগুন দেয় শিবিরকর্মীরা। এদিকে সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ভাস্কর্য 'চেতনা ৭১'-এর নামফলক ভেঙে ফেলেছে শিবিরকর্মীরা।</p> <p> রাজশাহী নগরীসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে রাতভর রাস্তার পাশের গাছ কেটে সড়ক অবরোধ করে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা। বৃহস্পতিবার রাতে তারা সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরীর বাড়িতে হামলা ও পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে। এ ছাড়া নগরীর ২৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুস সাত্তারের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।</p> <p> কুমিল্লায় বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে জেলা পরিষদের প্রশাসকের বাসায় পেট্রলবোমা ছুড়লে জানালার কাচ ভেঙে ভেতরে আগুন ধরে যায়। পরে বাসার লোকজন দ্রুত আগুন নিভিয়ে ফেলে। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে কয়েকটি ট্রাকে অগ্নিসংযোগ ও ফিলিং স্টেশনে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় জামায়াত-শিবির।</p> <p> ঝিনাইদহের মহেশপুরের সামন্তা, বাঁশবাড়িয়া ও গোপালপুর গ্রামে বৃহস্পতিবার রাতে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের আটটি বাড়ি ও চারটি দোকানে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে জামায়াতি সন্ত্রাসীরা। তারা গতকাল কোটচাঁদপুরের পাশপাতিলা বাজারে একটি ট্রাকে আগুন দেয়। এ ছাড়া কোটচাঁদপুর-চৌগাছা সড়কে গাছ কেটে ও কোটচাঁদপুর-জালালপুর রাস্তা খুঁড়ে ব্যারিকেড দেয় তারা।</p> <p> গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলা সদরে গ্রামীণ ব্যাংক এলাকায় গতকাল দুপুরে পুলিশ-বিজিবির সঙ্গে ১৮ দলের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় জামায়াত-শিবিরের তিন কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পঞ্চবটিতে গতকাল সকালে চারটি গাড়িতে আগুন ও ২০-২৫টি গাড়ি ভাঙচুর করে শিবিরকর্মীরা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় একটি স্টিলের সেতুর পাটাতল খুলে ফেলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে জামায়াত-শিবির।</p> <p> চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে আওয়ামী লীগের তিন নেতার বাড়িসহ আটটি বাড়িতে এবং ৩৫টি দোকানে আগুন দেয় শিবির। এ ছাড়া মার্কেন্টাইল ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক ও প্রিয়া ফিলিং স্টেশনে ভাঙচুর চালায় তারা। এ সময় দুটি ট্রাক, একটি প্রাইভেট কার ও একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়।</p> <p> সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া সদরে পাটের গুদাম, বেলকুচি সদরে একটি সিনেমা হল, আওয়ামী লীগ নেতাদের ১০টি বাড়ি এবং একটি তাঁত ফ্যাক্টরিতে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া চণ্ডিদাসগাতী, নকলা ও উল্লাপাড়ায় তিনটি বেইলি ব্রিজের পাটাতন এবং সয়দাবাদে রেললাইনের ফিশপ্লেট খুলে নেয় জামায়াত-শিবির।</p> <p> নীলফামারী সদরে অন্তত ৬৫টি দোকান এবং কচুকাটা বাজারে আওয়ামী লীগ কার্যালয় ও দুটি বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া তিনটি বেইলি ব্রিজের পাটাতন তুলে এবং গাছ ফেলে সড়ক অবরোধ করে শিবিরকর্মীরা। এদিকে সকালে রামনগরে সাংবাদিক তৈয়ব আলীকে কুপিয়ে আহত করে শিবিরকর্মীরা। ফেনীতে অন্তত ৩০টি গাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানসহ তিন আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে শিবির। এ ছাড়া ভবানীগঞ্জ ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি শিহাবুরকে কুপিয়ে আহত করে।</p> <p> চাঁদপুরের কচুয়ার খাজুরিয়া এলাকায় বরযাত্রীবাহী তিনটি মাইক্রোবাসে হামলা ও মনপুরায় সুরমা পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয় শিবিরকর্মীরা। এতে শিশুসহ ১০ জন আহত হয়।</p> <p> নড়াইলের জেলা পরিষদের প্রশাসক অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোসের আওড়িয়া ইউনিয়নের কমলাপুর গ্রামের বাড়িতে আগুন দেয় শিবিরকর্মীরা। বাগেরহাটের কাড়াপাড়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের তিন নেতার বাড়িতে পেট্রল ঢেলে আগুন দেয় জামায়াত-শিবির। পাবনার আতাইকুলা দুর্গাপুরে তিন আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি এবং শ্রীপুরে শেখ রাসেল ক্লাব ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ অফিসে আগুন দেয় শিবির। কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে গাছ কেটে অবরোধ সৃষ্টি করায় কক্সবাজারের সঙ্গে চট্টগ্রাম ও টেকনাফের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।</p> <p>  </p> <p>  </p>