কারণ হিসেবে তাঁরা বৈঠকে জানান, কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকার দূরত্ব কম। আর সব কিছু ঢাকাকেন্দ্রিক হওয়ায় কিশোরগঞ্জকে ময়মনসিংহ বিভাগে অন্তর্ভুক্ত করলে কিশোরগঞ্জের সাধারণ মানুষ এটাকে ভালোভাবে নেবে না। এই মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর বাড়ি কিশোরগঞ্জ। কিশোরগঞ্জকে ঢাকার সঙ্গে রাখার দাবিতে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে কিশোরগঞ্জবাসী। এ ছাড়া টাঙ্গাইলেও এ ধরনের কর্মসূচি পালন করা হয়।
পৌরসভা হলো ভাণ্ডারিয়া : নিকার সভায় পিরোজপুর জেলার ভাণ্ডারিয়া উপজেলাকে পৌরসভায় উন্নীত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া কুমিল্লার মুরাদনগর থানা বিভক্ত করে বাঙ্গরা নামে আরেকটি নতুন থানা গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর ফলে মুরাদনগর উপজেলায় দুটি থানা হবে।
ময়মনসিংহে আনন্দ-উল্লাস : ময়মনসিংহ থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, ময়মনসিংহবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি অনুযায়ী সরকার ময়মনসিংহকে বিভাগ ঘোষণা করায় আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে এলাকার সর্বস্তরের মানুষ। বিকেলে ময়মনসিংহ শহরে আনন্দ মিছিল বের করা হয় পৌরসভার উদ্যোগে। স্বল্প সময়ের প্রস্তুতিতেও এ মিছিলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেয় শহরের বিভিন্ন স্তরের বিপুলসংখ্যক মানুষ। আনন্দ মিছিলটি বিকেল সাড়ে ৫টায় রেলস্টেশন চত্বর থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান সড়ক হয়ে টাউন হল ময়দানে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে নেতৃত্ব দেন প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, কাউন্সিলর শরাফ উদ্দিন, কাউন্সিলর জামাল হোসেন রোজ, কাউন্সিলর লিয়াকত আলী, চেম্বার পরিচালক শংকর সাহা প্রমুখ। শহরের বাইরে থাকায় মিছিলে অংশ নিতে পারেননি পৌর মেয়র ইকরামুল হক টিটু। টিটু কালের কণ্ঠকে বলেন, এ দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে ময়মনসিংহের ইতিহাসে। এ অঞ্চলের মানুষ কৃতজ্ঞ থাকবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে।
আবেগাপ্লুত নাগরিক আন্দোলনের নেতারা : ময়মনসিংহকে বিভাগ ঘোষণার দাবি নিয়ে রাজপথে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার থাকা সংগঠনটির নাম জেলা নাগরিক আন্দোলন। প্রায় ২০ বছর ধরে এ সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করে আসছিল ময়মনসিংহ বিভাগ ঘোষণার দাবিতে। গতকাল বিভাগ ঘোষণার পর এ সংগঠনের নেতারা নিজেদের অনুভূতি জানাতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
নাগরিক আন্দোলনের সভাপতি অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান খান বলেন, 'আমরা দীর্ঘসময় ধরে আন্দোলন করছি। তবে আমাদের বিশ্বাস ছিল, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ময়মনসিংহকে বিভাগ ঘোষণার ব্যাপারে আন্তরিক। তাই এবার আমাদের আশা ছিল অনেক। সেই আশা পূরণ হয়েছে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ।' জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমীন কালাম বলেন, 'এটি এক ঐতিহাসিক সময়। এত দিন যা ছিল স্বপ্ন, আজ তা বাস্তব।' সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক শহীদুর রহমান বলেন, 'অনেকেই বলতেন ময়মনসিংহ কোনো দিন বিভাগ হবে না। কিন্তু সরকারের আন্তরিকতা সেসব কথাকে মিথ্যা প্রমাণ করে দিল।' আনন্দ মোহন কলেজ ছাত্রসংসদের সাবেক সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল বলেন, 'আমরা সবচেয়ে খুশি হতাম যদি আজ টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জ যুক্ত থাকত।' জেলা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমদাদুল হক মিল্লাত বলেন, উন্নয়নবঞ্চিত ময়মনসিংহ এখন আশার আলো দেখছে। টিইউসির জেলা সভাপতি মাহবুব বিন ছাইফ বলেন, 'জীবদ্দশায় ময়মনসিংহে বিভাগ দেখতে পারলাম, এটা অনেক বড় আনন্দের ব্যাপার।'
প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন ধর্মমন্ত্রীর : ময়মনসিংহকে বিভাগ ঘোষণায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ধর্মমন্ত্রী আলহাজ অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। গতকাল সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী আন্তরিক হওয়ার কারণেই আজকে ময়মনসিংহ বিভাগ হলো। তিনি বলেন, টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জ জেলা যুক্ত হতে না চাইলে এ দুই জেলাকে বাদ দিয়েই ময়মনসিংহকে বিভাগ ঘোষণার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছিলেন। ধর্মমন্ত্রী বিভাগ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখার জন্য বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদকেও ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, 'আমরা উভয়ে মিলে ময়মনসিংহের উন্নয়নে কাজ করে যাব।'
প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের সূতিকাগার ময়মনসিংহ জেলা হয়েছিল ১৭৮৭ সালের ১ মে। সময়ের বিবর্তনে ও প্রশাসনিক প্রয়োজনে সেই জেলা ধাপে ধাপে বিভক্ত হয়। এর পরও দেশের অন্যতম বৃহত্তম জেলা হিসেবে ছিল ময়মনসিংহ।
জামালপুরে আনন্দ মিছিল, মিষ্টি বিতরণ : জামালপুর প্রতিনিধি জানান, ময়মনসিংহ বিভাগ ঘোষণায় জামালপুর শহরে গতকাল বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে। শহরের তমালতলা থেকে আনন্দ মিছিল নিয়ে শহর প্রদক্ষিণ করা হয়। পরে শহরের স্টেশন রোডে পূরবী পেট্রল পাম্পের সামনে পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মিষ্টিও বিতরণ করা হয়। ওই পথসভায় বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট বাকী বিল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী। আনন্দ মিছিলে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মাহফুজুর রহমান মধু, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নাইম রহমান, শহর যুবলীগের সভাপতি শাহরিয়ার উজ্জল, ছানোয়ার হোসেন ছানু, নিহাদুল আলম নিহাদ প্রমুখ।
এ ছাড়া জামালপুর প্রেসক্লাব ভবনে ক্লাবের সভাপতি হাফিজ রায়হান সাদা ও সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান জেলার কর্মরত সাংবাদিকদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করেন। জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের সামনে সাধারণ মানুষের মাঝে মিষ্টি বিতরণ করেন জেলা দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেলু আকন্দ, মানবাধিকারকর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম, অ্যাডভোকেট জাহিদ আনোয়ার প্রমুখ।
শেরপুরের বিভিন্ন সংগঠনের সন্তোষ : শেরপুর প্রতিনিধি জানান, ময়মনসিংহ বিভাগ ঘোষণা করায় শেরপুরের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে অভিনন্দন জানানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। গতকাল সরকারি সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর উল্লসিত হয়ে ওঠে জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার এ সিদ্ধান্ত ঐতিহাসিক। তিনি বলেন, 'আমাদের প্রধানমন্ত্রী সব সময় জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বিভাগ ঘোষণার মধ্যে দিয়ে এ অঞ্চলের প্রায় দুই কোটি মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে নবদিগন্তের সূচনা হলো।'
হুইপ আতিউর রহমান বলেন, ময়মনসিংহ বিভাগ দীর্ঘদিনের দাবি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট চন্দন কুমার পাল বলেন, 'আমরা অভিভূত। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ শেষ করলেন আমাদের সকলের প্রিয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা।'
জেলা বিএনপির সহসভাপতি সাইফুল ইসলাম স্বপন বলেন, ময়মনসিংহ বিভাগ ঘোষণা একটি ভালো উদ্যোগ।
শেরপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ছানোয়ার হোসেন ছানু বলেন, 'আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি আজ পূরণ হলো। এ বিভাগের মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞ।'
শেরপুর পৌরসভার মেয়র হুমায়ুন কবির রোমান বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনাকে প্রাণঢালা অভিনন্দন।
ময়মনসিংহ বিভাগ বাস্তবায়ন আন্দোলন কমিটির সদস্য ও জেলা জাসদের সভাপতি মনিরুল ইসলাম লিটন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
শেরপুর চেম্বারের সভাপতি মো. মাসুদ বলেন, 'আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করলেন প্রধানমন্ত্রী।'
এ ছাড়া সন্তোষ প্রকাশ করেছে শেরপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ড, জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদ, পাতাবাহার খেলাঘর আসর, বিপ্লবী রবি নিয়োগী সভাকক্ষ, প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।