চার জেলা নিয়ে নতুন বিভাগ ময়মনসিংহ

  • এলাকায় আনন্দ-উল্লাস
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
চার জেলা নিয়ে নতুন বিভাগ ময়মনসিংহ

ঢাকা বিভাগের চার জেলা ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর ও নেত্রকোনা নিয়ে ময়মনসিংহ বিভাগ গঠনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে সরকার। ময়মনসিংহ হচ্ছে দেশের অষ্টম প্রশাসনিক বিভাগ। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) সভায় এই প্রশাসনিক বিভাগ গঠনের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।

ময়মনসিংহ বিভাগ ঘোষণার খবর জানাজানি হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোতে মানুষের মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়।

কোথাও কোথাও আনন্দ মিছিল করা হয়। বিতরণ করা হয় মিষ্টিও।

ময়মনসিংহ বিভাগ হওয়ার আগ পর্যন্ত ঢাকা বিভাগে জেলা ছিল ১৭টি। নতুন বিভাগ হওয়ায় ১৩ জেলা নিয়ে ঢাকা বিভাগ পুনর্গঠন করা হবে।

তবে আগামী দিনে ফরিদপুরকে বিভাগ করা হলে ঢাকা বিভাগের জেলার সংখ্যা আরো কমে যাবে। সরকার কুমিল্লা ও নোয়াখালী মিলিয়ে আরো একটি প্রশাসনিক বিভাগ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

গতকাল সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদসচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা সাংবাদিকদের বলেন, নতুন এই বিভাগে সবার প্রথমে হবে বিভাগীয় কমিশনার ও রেঞ্জ ডিআইজি পুলিশের অফিস। পর্যায়ক্রমে অন্য সব কার্যালয়ও পাবে ময়মনসিংহ।

ময়মনসিংহ বিভাগের আয়তন ১০ হাজার ৫৮৪ বর্গকিলোমিটার। এই বিভাগের জনসংখ্যা এক কোটি ১৩ লাখ ৬৯ হাজার ৬০৬ জন।

ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর ও নেত্রকোনার সঙ্গে টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জ জেলা রেখে ময়মনসিংহ বিভাগ গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। এ নিয়ে গত ২৬ জানুয়ারি মন্ত্রিসভা বৈঠকে আলোচনাও হয়। কিন্তু আলোচনায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু ময়মনসিংহ বিভাগে কিশোরগঞ্জকে না রাখার অনুরোধ করেন।

কারণ হিসেবে তাঁরা বৈঠকে জানান, কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকার দূরত্ব কম। আর সব কিছু ঢাকাকেন্দ্রিক হওয়ায় কিশোরগঞ্জকে ময়মনসিংহ বিভাগে অন্তর্ভুক্ত করলে কিশোরগঞ্জের সাধারণ মানুষ এটাকে ভালোভাবে নেবে না। এই মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর বাড়ি কিশোরগঞ্জ। কিশোরগঞ্জকে ঢাকার সঙ্গে রাখার দাবিতে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে কিশোরগঞ্জবাসী। এ ছাড়া টাঙ্গাইলেও এ ধরনের কর্মসূচি পালন করা হয়।

পৌরসভা হলো ভাণ্ডারিয়া : নিকার সভায় পিরোজপুর জেলার ভাণ্ডারিয়া উপজেলাকে পৌরসভায় উন্নীত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া কুমিল্লার মুরাদনগর থানা বিভক্ত করে বাঙ্গরা নামে আরেকটি নতুন থানা গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর ফলে মুরাদনগর উপজেলায় দুটি থানা হবে।

ময়মনসিংহে আনন্দ-উল্লাস : ময়মনসিংহ থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, ময়মনসিংহবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি অনুযায়ী সরকার ময়মনসিংহকে বিভাগ ঘোষণা করায় আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে এলাকার সর্বস্তরের মানুষ। বিকেলে ময়মনসিংহ শহরে আনন্দ মিছিল বের করা হয় পৌরসভার উদ্যোগে। স্বল্প সময়ের প্রস্তুতিতেও এ মিছিলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেয় শহরের বিভিন্ন স্তরের বিপুলসংখ্যক মানুষ। আনন্দ মিছিলটি বিকেল সাড়ে ৫টায় রেলস্টেশন চত্বর থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান সড়ক হয়ে টাউন হল ময়দানে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে নেতৃত্ব দেন প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, কাউন্সিলর শরাফ উদ্দিন, কাউন্সিলর জামাল হোসেন রোজ, কাউন্সিলর লিয়াকত আলী, চেম্বার পরিচালক শংকর সাহা প্রমুখ। শহরের বাইরে থাকায় মিছিলে অংশ নিতে পারেননি পৌর মেয়র ইকরামুল হক টিটু। টিটু কালের কণ্ঠকে বলেন, এ দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে ময়মনসিংহের ইতিহাসে। এ অঞ্চলের মানুষ কৃতজ্ঞ থাকবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে।

আবেগাপ্লুত নাগরিক আন্দোলনের নেতারা : ময়মনসিংহকে বিভাগ ঘোষণার দাবি নিয়ে রাজপথে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার থাকা সংগঠনটির নাম জেলা নাগরিক আন্দোলন। প্রায় ২০ বছর ধরে এ সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করে আসছিল ময়মনসিংহ বিভাগ ঘোষণার দাবিতে। গতকাল বিভাগ ঘোষণার পর এ সংগঠনের নেতারা নিজেদের অনুভূতি জানাতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

নাগরিক আন্দোলনের সভাপতি অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান খান বলেন, 'আমরা দীর্ঘসময় ধরে আন্দোলন করছি। তবে আমাদের বিশ্বাস ছিল, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ময়মনসিংহকে বিভাগ ঘোষণার ব্যাপারে আন্তরিক। তাই এবার আমাদের আশা ছিল অনেক। সেই আশা পূরণ হয়েছে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ।' জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমীন কালাম বলেন, 'এটি এক ঐতিহাসিক সময়। এত দিন যা ছিল স্বপ্ন, আজ তা বাস্তব।' সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক শহীদুর রহমান বলেন, 'অনেকেই বলতেন ময়মনসিংহ কোনো দিন বিভাগ হবে না। কিন্তু সরকারের আন্তরিকতা সেসব কথাকে মিথ্যা প্রমাণ করে দিল।' আনন্দ মোহন কলেজ ছাত্রসংসদের সাবেক সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল বলেন, 'আমরা সবচেয়ে খুশি হতাম যদি আজ টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জ যুক্ত থাকত।' জেলা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমদাদুল হক মিল্লাত বলেন, উন্নয়নবঞ্চিত ময়মনসিংহ এখন আশার আলো দেখছে। টিইউসির জেলা সভাপতি মাহবুব বিন ছাইফ বলেন, 'জীবদ্দশায় ময়মনসিংহে বিভাগ দেখতে পারলাম, এটা অনেক বড় আনন্দের ব্যাপার।'

প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন ধর্মমন্ত্রীর : ময়মনসিংহকে বিভাগ ঘোষণায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ধর্মমন্ত্রী আলহাজ অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। গতকাল সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী আন্তরিক হওয়ার কারণেই আজকে ময়মনসিংহ বিভাগ হলো। তিনি বলেন, টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জ জেলা যুক্ত হতে না চাইলে এ দুই জেলাকে বাদ দিয়েই ময়মনসিংহকে বিভাগ ঘোষণার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছিলেন। ধর্মমন্ত্রী বিভাগ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখার জন্য বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদকেও ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, 'আমরা উভয়ে মিলে ময়মনসিংহের উন্নয়নে কাজ করে যাব।'

প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের সূতিকাগার ময়মনসিংহ জেলা হয়েছিল ১৭৮৭ সালের ১ মে। সময়ের বিবর্তনে ও প্রশাসনিক প্রয়োজনে সেই জেলা ধাপে ধাপে বিভক্ত হয়। এর পরও দেশের অন্যতম বৃহত্তম জেলা হিসেবে ছিল ময়মনসিংহ।

জামালপুরে আনন্দ মিছিল, মিষ্টি বিতরণ : জামালপুর প্রতিনিধি জানান, ময়মনসিংহ বিভাগ ঘোষণায় জামালপুর শহরে গতকাল বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে। শহরের তমালতলা থেকে আনন্দ মিছিল নিয়ে শহর প্রদক্ষিণ করা হয়। পরে শহরের স্টেশন রোডে পূরবী পেট্রল পাম্পের সামনে পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মিষ্টিও বিতরণ করা হয়। ওই পথসভায় বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট বাকী বিল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী। আনন্দ মিছিলে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মাহফুজুর রহমান মধু, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নাইম রহমান, শহর যুবলীগের সভাপতি শাহরিয়ার উজ্জল, ছানোয়ার হোসেন ছানু, নিহাদুল আলম নিহাদ প্রমুখ।

এ ছাড়া জামালপুর প্রেসক্লাব ভবনে ক্লাবের সভাপতি হাফিজ রায়হান সাদা ও সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান জেলার কর্মরত সাংবাদিকদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করেন। জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের সামনে সাধারণ মানুষের মাঝে মিষ্টি বিতরণ করেন জেলা দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেলু আকন্দ, মানবাধিকারকর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম, অ্যাডভোকেট জাহিদ আনোয়ার প্রমুখ।

শেরপুরের বিভিন্ন সংগঠনের সন্তোষ : শেরপুর প্রতিনিধি জানান, ময়মনসিংহ বিভাগ ঘোষণা করায় শেরপুরের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে অভিনন্দন জানানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। গতকাল সরকারি সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর উল্লসিত হয়ে ওঠে জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার এ সিদ্ধান্ত ঐতিহাসিক। তিনি বলেন, 'আমাদের প্রধানমন্ত্রী সব সময় জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বিভাগ ঘোষণার মধ্যে দিয়ে এ অঞ্চলের প্রায় দুই কোটি মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে নবদিগন্তের সূচনা হলো।'

হুইপ আতিউর রহমান বলেন, ময়মনসিংহ বিভাগ দীর্ঘদিনের দাবি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট চন্দন কুমার পাল বলেন, 'আমরা অভিভূত। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ শেষ করলেন আমাদের সকলের প্রিয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা।'

জেলা বিএনপির সহসভাপতি সাইফুল ইসলাম স্বপন বলেন, ময়মনসিংহ বিভাগ ঘোষণা একটি ভালো উদ্যোগ।

শেরপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ছানোয়ার হোসেন ছানু বলেন, 'আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি আজ পূরণ হলো। এ বিভাগের মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞ।'

শেরপুর পৌরসভার মেয়র হুমায়ুন কবির রোমান বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনাকে প্রাণঢালা অভিনন্দন।

ময়মনসিংহ বিভাগ বাস্তবায়ন আন্দোলন কমিটির সদস্য ও জেলা জাসদের সভাপতি মনিরুল ইসলাম লিটন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

শেরপুর চেম্বারের সভাপতি মো. মাসুদ বলেন, 'আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করলেন প্রধানমন্ত্রী।'

এ ছাড়া সন্তোষ প্রকাশ করেছে শেরপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ড, জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ, পাতাবাহার খেলাঘর আসর, বিপ্লবী রবি নিয়োগী সভাকক্ষ, প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

মন্তব্য
বিশেষ লেখা

বাংলাদেশ কি সত্যিই খাদের কিনারে?

    অদিতি করিম
শেয়ার
বাংলাদেশ কি সত্যিই খাদের কিনারে?

বিলেতের প্রভাবশালী সংবাদপত্র দ্য গার্ডিয়ানের সাংবাদিক হান্না এলিস পিটারসেন সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাত্ হয়। এই সব কিছু মিলিয়ে সম্প্রতি তিনি দ্য গার্ডিয়ানে একটি দীর্ঘ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। এই প্রতিবেদনটি দেশে-বিদেশে সাড়া ফেলেছে।

এই প্রতিবেদনের এক জায়গায় হান্না বলেছেন, ঢাকার রাজপথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে তাঁর মনে হয়েছে, বাংলাদেশ এখন খাদের কিনারে।

তাঁর এই সাক্ষাৎকারভিত্তিক প্রতিবেদনটি নিয়ে এ দেশের রাজনীতিতে তোলপাড় চলছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তো বটেই, বিভিন্ন রাজনৈতিক আলোচনায়ও হান্না এলিস পিটারসেনের এই উক্তিটি নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। অনেক রাজনীতিবিদ তাঁর উক্তিকে উদ্ধৃত করে বাংলাদেশের সংকট মোকাবেলার জন্য আশু এবং জরুরি পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছেন।

বাস্তবতা কী বলে? বাংলাদেশ কি সত্যি খাদের কিনারে, নাকি হান্না এলিস পিটারসেনের বক্তব্য একটু বাড়াবাড়ি?

এ কথা ঠিক যে, ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর নতুন সরকার খুব একটা স্বস্তিতে নেই। এই সরকারের মধুচন্দ্রিমা সময় পার হয়েছে। এখন এই সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশার চাপ দিন দিন বাড়ছে। প্রত্যাশা পূরণ না হলে হতাশাও তৈরি হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে।

বাংলাদেশের মানুষ ৫ আগস্টের পর অনেক বড় রকম একটা প্রত্যাশার ফানুস নিয়ে নতুন সরকারের দিকে তাকিয়ে ছিল। ১৫ বছরের দম বন্ধ অবস্থা থেকে মুক্তির পর এ দেশের জনগণ তাদের পুঞ্জীভূত বঞ্চনার অবসান চাচ্ছে খুব দ্রুত। আর এ কারণেই দাবি-দাওয়ার চাপ অনেক বেশি। বিশেষ করে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের গত ১৭ বছর জমে থাকা অভাব-অভিযোগ, বঞ্চনা, নিপীড়ন ইত্যাদি পূরণের জন্য তারা চটজলদি পথ খোঁজে রাজপথে নামার মাধ্যমে।

দায়িত্ব গ্রহণের পর এই সরকার সবচেয়ে বড় যে চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ে তা হলো কথায় কথায় রাজপথ দখল এবং বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে সড়ক অবরোধ।

এটি জনজীবনকে রীতিমতো অতিষ্ঠ করে তোলে। বিভিন্ন সড়ক অবরোধ হওয়ার ফলে মানুষের কর্মজীবনে এক ভয়ংকর বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টি হয়। আমরা জানি যে শেখ হাসিনার পতনের পর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, বিশেষ করে পুলিশ বাহিনী নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। এই বাহিনীর একটা বড় অংশ দলীয়করণের কারণে রীতিমতো আওয়ামী লীগের পেটোয়া বাহিনীতে পরিণত হয়েছিল। অনেকে গণ-অভ্যুত্থানের পর জনরোষের ভয়ে পালিয়ে যায়। ফলে পুলিশ প্রশাসনের কার্যক্রম সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। বেশ কিছুদিন পুলিশের কোনো কার্যক্রমই ছিল না।

নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর একটি ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে পুলিশ প্রশাসনকে নতুন করে গড়ে তুলছে। এই প্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি। এই গণ-অভ্যুত্থান সামগ্রিক ভাবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা পুলিশের মনোবলকে দুর্বল করে ফেলেছে। পুলিশের বেশ কিছু সদস্য এই গণ-অভ্যুত্থানে মারা গেছেন। এটিও গোটা বাহিনীর মনোবল ভেঙে যাওয়ার একটি বড় কারণ। ফলে ৫ আগস্টের পর তাঁরা আগের মতো উদ্যম এবং দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছেন না। তাঁদের মধ্যে একটা ঢিলেঢালা ভাব। এক ধরনের আতঙ্ক এবং হতাশাগ্রস্ত মনোভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। এ কারণে বিভিন্ন রাস্তায় কথায় কথায় অবরোধ এবং অবস্থান কর্মসূচিগুলোতে পুলিশ বাহিনী নিরাপদ দূরত্বে থাকছে। গা বাঁচিয়ে তামাশা দেখছে। পুলিশের এই হতাশাজনক অবস্থা দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক হওয়ার প্রধান কারণ।

আমরা জানি, ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন থানা থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র লুট হয়েছিল। এসব অস্ত্র এখনো সন্ত্রাসীদের দখলে। অস্ত্র উদ্ধারের নামে যে অভিযান পরিচালিত হয়েছিল, সেই অভিযান মোটেও সফল হয়নি। ফলে সন্ত্রাসীদের হাতে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র রয়েছে। পাশাপাশি ৫ আগস্টের পর বেশ কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী কারাগার থেকে মুক্তি পায়। তারা নতুন করে তাদের নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। ফলে সারা দেশে চুরি, ছিনতাই, রাহাজানি ইত্যাদি ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। বিশেষ করে বিচার নিজের হাতে তুলে নেওয়া এবং মব জাস্টিসের নামে এক ধরনের মতলববাজি সারা দেশে রীতিমতো আতঙ্ক বাড়াচ্ছে। সুযোগসন্ধানী দুর্বৃত্তরা এই সুযোগে যে যার মতো দখল বাণিজ্যে শামিল হয়ে প্রতিপক্ষের জমিজমা, ঘাট, হাট-বাজার ইত্যাদি সব দখল করে নিচ্ছে। দখল-পাল্টাদখল নিয়েও চলছে হানাহানি-খুনাখুনি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সারা দেশে নির্বিচারে নারী নিপীড়নের ঘটনা। বিশেষ করে মাগুরার আছিয়া গোটা বাংলাদেশকে কাঁদিয়ে বিদায় নিয়েছে। এ রকম একটা নাজুক পরিস্থিতিতে শুধু সেনাবাহিনীর উপস্থিতির কারণে এখনো মানুষের মধ্যে কিছুটা আশা আছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি একই রকম অবস্থান একটা পর্যায়ে মানুষকে ক্ষুব্ধ করে তোলে, হতাশ করে তোলে এবং মানুষ বিরক্ত হতে শুরু করছে। যেকোনো সময় যেকোনো স্থানে কিছু দর্বৃত্ত মব করে হামলা চালাচ্ছে, লুটপাট করছে, আগুন লাগিয়ে বিচার নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে, রাস্তায় কাউকে প্রতিপক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করে তাকে পেটানো হচ্ছে ইত্যাদি ঘটনাগুলো একটা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশে। এসব উদ্বেগজনক।

এ রকম একটি নাজুক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণেই দেশের অর্থনীতিতেও সৃষ্টি হয়েছে স্থবিরতা। ব্যবসায়ীরা কেউ নতুন বিনিয়োগ করছেন না। সাম্প্রতিক প্রধান উপদেষ্টা অর্থ মন্ত্রণালয়ের জন্য একজন বিশেষ সহকারী নিয়োগ দিয়েছেন। ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী একজন দক্ষ অর্থনীতিবিদ। দেশে-বিদেশে তিনি বিভিন্ন উদ্ভাবনী অর্থনৈতিক চিন্তার জন্য আলোচিত। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই একটি মতবিনিময়সভায় তিনি বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কে ব্যবসা করতে চাইবে? এই সরকারের মেয়াদ সম্পর্কে মানুষের সুস্পষ্ট ধারণা নেই। এই সরকার কত দিন টিকবে, সেটা মানুষ জানে না।

সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, এই সরকারের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য কী, সে সম্পর্কে একটা অস্পষ্টতা থাকার কারণে বিদেশি বিনিয়োগ যেমন কমছে, তেমনি বাংলাদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে দেশীয় শিল্প উদ্যোক্তারাও বিনিয়োগে আগ্রহী নন। আমরা জানি, ৫ আগস্টের পর থেকে বহু শিল্প-কারখানা আক্রান্ত হয়েছে। সেখানে দর্বৃত্তরা আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। অনেকে নিরুপায় হয়ে শিল্প-কারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে লাখ লাখ শ্রমিক এখন বেকার। বেতন-ভাতার দাবিতে প্রতিদিনই বিভিন্ন সড়ক অবরোধ হচ্ছে। সাধারণ চোখে আমরা মনে করতে পারি, বাংলাদেশ একটা নাজুক সময় পার করছে। দেশটির সার্বিক অবস্থা ভালো নয়।

কিন্তু আমরা যদি বিশ্বের যেকোনো দেশের বিপ্লবের তাৎপর্য অনুভব করি এবং বিপ্লবের পরবর্তী পরিস্থিতিগুলোকে বিচার-বিশ্লেষণ করতে চাই, তাহলে দেখব, বিপ্লবোত্তর সমাজে এই ঘটনাগুলো স্বাভাবিক ঘটনা। বিশেষ করে বিপ্লবের ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে নতুন সভ্যতার সূচনা হয়। নতুন দিন বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত হয়। বাংলাদেশ এখন সেই নতুন বিনির্মাণের প্রাক-স্তরে রয়েছে। বাংলাদেশের গত ১৫ বছরে যে বিধিব্যবস্থা এবং আইন-প্রশাসন ইত্যাদি ছিল, সবই ছিল ভঙ্গুর, দলীয়করণে দুষ্ট। একটি নির্দিষ্ট দলকে ক্ষমতায় রাখার অভিপ্রায়ে আবর্তিত। এই অবস্থা থেকে একটি জনগণের সরকার এবং জনগণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা অনেক কঠিন কাজ। ৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ আসলে সেই কঠিন সময়টা পার করেছে। এ কারণেই হয়তো ঢাকার রাস্তায় ঘুরতে গিয়ে গার্ডিয়ানের সাংবাদিক হান্না এলিস পিটারসেনের মনে হয়েছে, বাংলাদেশ খাদের কিনারে। সে জন্যই জনগণের মধ্যে সাময়িক অস্থিরতা, হতাশা। কিন্তু এই অস্থিরতা ও হতাশা বেশি দিন থাকবে না। অতীত ইতিহাস তাই বলে। হান্না এলিস পিটারসেন যদি বাংলাদেশ সম্পর্কে আরো একটু গভীরভাবে অনুসন্ধান করতেন, এ দেশের মানুষের মনমানসিকতা, চেতনা, ঐতিহ্য এবং আকাঙ্ক্ষাগুলোকে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করতেন, তাহলে কিন্তু তিনি বাংলাদেশকে খাদের কিনারে দেখতেন না। তখন তিনি বাংলাদেশকে দেখতেন একটি নতুন অভিযাত্রার বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে। তখন তিনি তাঁর লেখায় কবি সুকান্তকে উদ্ধৃত করতেন।

সাবাস, বাংলাদেশ, এ পৃথিবী

অবাক তাকিয়ে রয়:

জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার

তবু মাথা নোয়াবার নয়।

বাংলাদেশ যেন সেই রকমই একটি ঐতিহ্যকে ধারণ করে। যে দেশটি জ্বলে-পুড়ে ছারখার হওয়ার পরও আবার মাথা তুলে দাঁড়ায়। আবার ঘুরে দাঁড়ায়। বাংলাদেশের মানুষের রয়েছে অফুরন্ত প্রাণশক্তি। স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কাটার অফুরন্ত সাহস। এটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা রাজনৈতিক দুর্যোগ যাই হোক না কেন, বাংলাদেশের মানুষ লড়াই করে, ঘুরে দাঁড়ায়, হারে না, বাংলাদেশের মানুষ দমে না। নতুন স্বপ্নের জাল বোনে। এটাই হলো বাংলাদেশের ইতিহাস।

মার্চ আমাদের স্বাধীনতার মাস। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর আক্রমণ, হত্যা, লুণ্ঠন এবং অপারেশন সার্চলাইটের পরও বাংলাদেশ হারেনি। তখনো বাংলাদেশ খাদের কিনারায় চলে গিয়েছিল। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশের অকুতোভয় বীর জনগণ সেই খাদের কিনারা থেকে এক অভূতপূর্ব মুক্তি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দেশকে মুক্ত করেছে। আমরা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি। বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ।

অর্থনীতিবিদরা বলতেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভারাক্রান্ত বাংলাদেশ কখনো উন্নতি করতে পারবে না। বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের একটি মডেল। যুক্তরাষ্ট্রের দুজন অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশ সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন, বাংলাদেশ যদি ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত হতে পারে, তাহলে সেটিই হবে বিশ্বের একটি মডেল। বিশ্বে তাহলে আর কোনো দেশেই ক্ষুধা-দারিদ্র্য থাকবে না। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও শ্রম তাদের ভবিষ্যদ্বাণী ভুল প্রমাণ করেছে। স্বাধীনতার পর কেউ চিন্তা করেনি, বাংলাদেশ ক্ষুধা-দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে। কিন্তু বাংলাদেশ সারা বিশ্বকে যেন অবাক করে দেওয়ার জন্যই জন্ম হয়েছে। আমরা দেখি, ক্ষুধা-দুর্ভিক্ষ পেরিয়ে বাংলাদেশ একটি সুখী-সমৃদ্ধ রাষ্ট্রের পথে অভিযাত্রা করেছে। বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হয়েছে। এই দেশের ১৮ কোটি মানুষ অফুরন্ত প্রাণশক্তি দিয়ে খাদ্য উৎপাদন যেমন বাড়িয়েছে, তেমনি শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থনীতিকেও নিয়ে গেছে একটি সম্ভাবনার দুয়ারে। যার ফলে বাংলাদেশ সম্পর্কে স্বাধীনতার পর যে মূল্যায়ন করা হতো, সেই মূল্যায়ন ৫৩ বছর পর এসে ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এটি বাংলাদেশের সাফল্য। বাংলাদেশ সম্পর্কে তাই কোনো পূর্ব অনুমান ঠিক নয়। এ দেশের মানুষ আবেগপ্রবণ, ভালোবাসার আলিঙ্গনে আপনার জন্য সব কিছু উজাড় করে দেবে। এ দেশের মানুষ হাসতে হাসতে মরতে পারে। ধ্বংসস্তূপের অন্ধকারে নতুন স্বপ্নের সকাল গড়ে। বাংলাদেশ নিয়ে হতাশার মুহূর্তে এ দেশের জনগণ নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন করে। আর এ কারণেই বাংলাদেশ নিয়ে আজ যে হতাশা বা দুর্ভাবনা, সেটি হয়তো শেষ বিচারে সঠিক হবে না। কারণ এ দেশের মানুষ পরাজয় মানে না, হার মানে না। একাত্তরে যেমন বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে, তেমনি প্রমাণ করেছে চব্বিশে। বাংলাদেশ খাদের কিনারে নয়, বাংলাদেশ এখন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের দুর্গম পথে। তবে এ দেশের জনগণের জয় অনিবার্য।

 

লেখক : নাট্যকার ও কলাম লেখক

auditekarim@gmail.com

 

মন্তব্য

সস্ত্রীক বিদেশ যেতে বাধা নেই ওরিয়ন চেয়ারম্যানের

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
সস্ত্রীক বিদেশ যেতে বাধা নেই ওরিয়ন চেয়ারম্যানের

ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিম ও তাঁর স্ত্রী মিসেস আরজুদা করিমের বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। গতকাল সোমবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত অভিযোগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, চিকিৎসা ও ওমরাহ হজ পালনের জন্য বিদেশ যেতে অনুমতি চেয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে আবেদন করেন ওবায়দুল করিম, তাঁর স্ত্রী আরজুদা করিম ও তাঁর মেয়ে জেরীন করিম। শুনানি শেষে আদালত ওবায়দুল করিম ও তাঁর স্ত্রীর বিদেশ যাওয়ার অনুমতির আদেশ দেন।

এর আগে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওবায়দুল করিমসহ পরিবারের সদস্যদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন আদালত। আবেদনে বলা হয়, ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধানকালে প্রাপ্ত তথ্য প্রমাণে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা প্রমাণিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গোপন সূত্রে জানা যায়, অভিযোগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশ ত্যাগ করে অন্য দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।

তাদের বিদেশ গমন রহিত করা প্রয়োজন।

 

মন্তব্য
ডা. শফিকুর রহমান

শহীদ সেলিম ও মন্টু দাসের পরিবারের পাশে জামায়াত

ঝালকাঠি ও বরগুনা প্রতিনিধি
ঝালকাঠি ও বরগুনা প্রতিনিধি
শেয়ার
শহীদ সেলিম ও মন্টু দাসের পরিবারের পাশে জামায়াত
শফিকুর রহমান

রাজধানীতে জুলাইয়ে শহীদ সেলিম তালুকদারের শ্বশুরবাড়ি ঝালকাঠি শহরের কবিরাজবাড়ি এলাকায় গিয়ে তাঁর স্ত্রী-সন্তানের খোঁজখবর নিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। গতকাল সোমবার দুপুরে ওই পরিবারকে সান্ত্বনা জানিয়ে শিশুটির দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।

এর আগে গতকাল সকালে বরগুনায় নির্যাতিত শিশু এবং তার বাবা নিহত মন্টু চন্দ্র দাসের বাড়িতে গিয়ে অসহায় পরিবারটির পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জামায়াতের আমির।

গতকাল দুপুরে হেলিকপ্টারে ঝালকাঠি শহরের পৌর মিনি স্টেডিয়ামে নামেন তিনি।

এ সময় জেলা জামায়াতের নেতৃবৃন্দ তাঁকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। পরে শহীদ সেলিম তালুকদারের বাড়িতে গিয়ে তিনি বলেন, আমরা নবজাতক কন্যাসন্তানটির নাম রেখেছি সাইমা সেলিম রোজা। তার বেড়ে ওঠা, বিকশিত হওয়া, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বিয়ে পর্যন্ত সব দায়িত্ব আমরা নিচ্ছি।

দুপুরে ঝালকাঠি পৌর মিনি স্টেডিয়ামের সামনে এক পথসভায় জামায়াতের আমির বলেন, শহীদরা এ জাতির সম্পদ।

আমরা সবাই শহীদ পরিবারের সদস্য। জামায়াতে ইসলামী জুলাই-আগস্টের সব শহীদ পরিবারের প্রতি নৈতিক দায়িত্ব পালন করবে। 

তিনি বলেন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে একটি কল্যাণকর এবং মানবিক রাষ্ট্র গড়তে চাই। কোরআনের ভিত্তিতে একটি মানবিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি আমরা।

সেই অভিযাত্রায় দেশবাসীকে পাশে থাকার আহ্বান জানাই।

জেলা জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে পথসভায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বক্তব্য দেন ঝালকাঠি-২ আসনে জামায়াতের প্রার্থী শেখ নেয়ামুল করিম, বরিশাল জেলা আমির অধ্যাপক আব্দুল জব্বার প্রমুখ। 

এর আগে, সকাল ১০টায় জামায়াতের আমির ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে বরগুনা সার্কিট হাউস মাঠে পৌঁছান। এরপর শহরের কালীবাড়ি এলাকায় মন্টু দাসের বাড়িতে গিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারকে উপহারসামগ্রী দেন। এরপর সকাল এগারোটায় বরগুনা শহীদ মিনারে এক পথসভায় অংশ নেন তিনি।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আল্লাহ আল-কোরআনে বলেছেন, যারা ধর্ষণ করে, তারা পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট। আমরা সামাজিকভাবে মজলুমের পাশে দাঁড়ালে, জুলুমকারী ভয় পাবে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন দলটির কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাড. মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর, বরগুনা জেলা আমির অধ্যাপক মহিবুল্লাহ হারুন প্রমুখ।

 

মন্তব্য
এনডিটিভিকে মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান

বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র

    গ্যাবার্ডের মন্তব্য সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে করা হয়নি : অন্তর্বর্তী সরকার
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র
তুলসী গ্যাবার্ড

বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন ও সহিংসতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দেশটির গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্বজুড়ে ইসলামী সন্ত্রাসবাদকে হারাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। গতকাল সোমবার  সাক্ষাৎকারটি প্রচারিত হয়েছে।

এনডিটিভি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ড বলেন, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতন, হত্যা ও নিপীড়ন যুক্তরাষ্ট্র সরকার এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসনের জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয়।

এদিকে তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। সরকার স্পষ্ট করে বলেছে, তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্যে আমরা গভীর উদ্বিগ্ন হতাশ ও ক্ষুব্ধ। তিনি তাঁর মন্তব্যে অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন ও হত্যা চলছে এবং বাংলাদেশের আদর্শ ও লক্ষ্যে ইসলামী সন্ত্রাসবাদীদের মূল নিহিত, যারা বাংলাদেশে ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। তাঁর এই বিবৃতি যেমন বিভ্রান্তিকর, তেমনি বাংলাদেশের সুনামের প্রতি অবিচার।

কারণ এই জাতি ঐতিহ্যগতভাবে ইসলামী রীতিনীতি অনুশীলন করে এবং সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে দেশটির প্রশংসনীয় অবস্থান রয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, গ্যাবার্ডের মন্তব্য কোনো প্রমাণ ও সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে করা হয়নি। তাঁর মন্তব্য পুরো জাতির ওপর কলঙ্ক লেপে দিয়েছে। বাংলাদেশ যেকোনো ধরনের ইসলামী খেলাফত ব্যবস্থার নিন্দা জানায়।

তুলসী গ্যাবার্ড বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন মন্ত্রিসভা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন মন্ত্রিসভা এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে, তবে এটি আমাদের উদ্বেগের কেন্দ্রীয় বিষয় হিসেবে রয়ে গেছে।

এ সময় তিনি বাংলাদেশে ইসলামী চরমপন্থা ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর উত্থানের কথা উল্লেখ করেন।

সাক্ষাৎকারে তুলসী গ্যাবার্ড ইসলামী খিলাফত-এর আদর্শের কথা উল্লেখ করে বলেন, বিশ্বজুড়ে চরমপন্থী ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো এমন একটি ফলাফল অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করছে। ইসলামী সন্ত্রাসীদের হুমকি এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বৈশ্বিক প্রচেষ্টা একই আদর্শ ও লক্ষ্যে নিবদ্ধ, যা হলো ইসলামী খিলাফতের মাধ্যমে শাসন বা শাসন করা।

তিনি আরো বলেন, এটি স্পষ্টতই অন্য যেকোনো ধর্মের মানুষকে প্রভাবিত করে, বিশেষ করে যারা তাদের গ্রহণযোগ্য ধর্মের বাইরে। তারা এটিকে সন্ত্রাস ও সহিংসতার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে চায়। সূত্র : এনডিটিভি

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ