<p>বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে বোঝাতে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূতকে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশেষ দূত ক্রিস্টিন শ্রেনার বার্গিনার গতকাল সোমবার ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা ইউএনবি এ তথ্য জানায়।</p> <p>এদিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মহাপরিচালক উইলিয়াম ল্যাসি সুইং। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে বৈঠকে তিনি এ আশ্বাস দেন। অন্যদিকে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা পরিস্থিতিকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে অভিহিত করেছেন মিয়ানমারে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক (ইউএন রেসিডেন্ট কো-অর্ডিনেটর, সংক্ষেপে ইউএনআরসি)  নুট ওস্তবি। গতকাল তিনি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরের ছবি পোস্ট করার পাশাপাশি লিখেছেন, ‘কক্সবাজারে আমার প্রথম সফর এখানে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বড় চ্যালেঞ্জ ও কষ্ট দেখিয়েছে। চ্যালেঞ্জ ও প্রয়োজনগুলো মোকাবেলায় বিভিন্ন এজেন্সি ও অংশীদারগুলো যে বিশাল দায়িত্ব পালন করে চলেছে তাতে আমি গর্বিত। স্বেচ্ছায় ফিরে যাওয়ার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য আমাদের অবশ্যই প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করতে হবে।’</p> <p>মিয়ানমারে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক নুট ওস্তবির এই বার্তা বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক মিয়া সেপ্পোও রিটুইট করেছেন। নুট ওস্তবি কবে কক্সবাজার সফর করেছেন তা ওই টুইটে উল্লেখ নেই।</p> <p>জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূতের সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব জানান, প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী ভারত, চীন, থাইল্যান্ড ও লাওসের মতো দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের কথা বলার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। এ সংকটে বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতার জন্য প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ধন্যবাদ জানান।</p> <p>শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনপ্রক্রিয়ায় জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) অংশগ্রহণের বিষয়েও মিয়ানমার নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে।  তিনি বলেন, ভারত, চীন, এমনকি জাপানও রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য ঘর নির্মাণ করছে।</p> <p>জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত ক্রিস্টিন শ্রেনার বার্গিনার রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কফি আনান কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশকে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে সহযোগিতারও আশ্বাস দেন তিনি।</p> <p>বিশেষ দূত বলেন, তিনি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা সংকট ব্যবস্থায় বাংলাদেশের কর্মকাণ্ড দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। তিনি নিপীড়নের শিকার হওয়া কয়েকজনের সঙ্গেও কথা বলেছেন। তারা এখনো মানসিকভাবে আঘাতগ্রস্ত বলে তাঁর মনে হয়েছে।</p> <p>বিশেষ দূত আরো বলেন, বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে জেনে তিনি খুশি হয়েছেন। জাতিসংঘের জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা শিন উমেজু, জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) আঞ্চলিক প্রতিনিধি জেমস লিঞ্চ, বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) উপমিশনপ্রধান আবদুস সাত্তর ইসোভ ও আবাসিক সমন্বয়কের মানবিক সহায়তাবিষয়ক উপদেষ্টা লানে ক্রাইনেক এ সময় উপস্থিত ছিলেন।</p> <p>রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহযোগিতা করবে আইওএম : সফররত আইওএম মহাপরিচালকসহ সংস্থার ছয় প্রতিনিধির একটি দল গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে যায়। অন্যরা হলেন আইওএম মহাপরিচালকের জ্যেষ্ঠ আঞ্চলিক উপদেষ্টা ওয়েন লি, মুখপাত্র লেনার্ড ডয়েল, বাংলাদেশে আইওএমের মিশনপ্রধান জরজি গিগোরি, উপমিশনপ্রধান আবদুস সাত্তার ইসোভ, রিফিউজি সেল ইউনিটপ্রধান পেপি সিদ্দিক। সংস্থার অতীত অভিজ্ঞতার বিষয়টি উল্লেখ করে আইওএম মহাপরিচালক বলেন, রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের জন্য অস্বাভাবিক এক চ্যালেঞ্জ। আইওএমের পক্ষে যা করা সম্ভব তাঁরা করবেন।</p> <p>প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আইওএম মহাপরিচালকের সাক্ষাৎ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, আইওএম মহাপরিচালক রোহিঙ্গাদের দুর্দশার চিত্র সরেজমিন দেখতে কক্সবাজার সফর করেন। বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি সাহায্য ও সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়ে উইলিয়াম ল্যাসি সুইং বলেছেন, চলমান এই সংকট নিরসনে সবাইকে একসঙ্গে কঠোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। রোহিঙ্গা ঢলের কারণে কক্সবাজারে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর দুর্দশার চিত্রও তিনি দেখেছেন।</p> <p>প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রোহিঙ্গারা কত দিন বাংলাদেশে থাকবে তা তিনি জানেন না। তবে পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।</p> <p>রোহিঙ্গাদের অপেক্ষাকৃত ভালো জীবনযাপন নিশ্চিত করতে তাদের কক্সবাজার থেকে স্থানান্তরের জন্য একটি দ্বীপ প্রস্তুত করা হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসেবা দেবে। তিনি আরো বলেন, ‘রোহিঙ্গা ঢলের কারণে স্থানীয় লোকজনও দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। তাদের চাষাবাদের জমিতে রোহিঙ্গারা অবস্থান করছে।’</p> <p>আইওএম বাংলাদেশের ফেসবুক পেজে প্রকাশিত বার্তায় বলা হয়েছে, সংস্থার মহাপরিচালক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে থাকার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন। সংস্থার মুখপাত্র লেনার্ড ডয়েল এক টুইট বার্তায় জানান, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের অগ্রগতি এগিয়ে নিতে জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থার প্রধান উইলিয়াম সুইং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।’ অন্য এক টুইট বার্তায় তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে আইওএম মহাপরিচালকের সাক্ষাতের কথা জানান। সেখানে তিনি আরো লিখেছেন, আইওএমপ্রধান সহযোগিতার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং রোহিঙ্গা সংকটে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন</p> <p> </p> <p> </p>