ঢাকা, রবিবার ০৬ এপ্রিল ২০২৫
২২ চৈত্র ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৬

ঢাকা, রবিবার ০৬ এপ্রিল ২০২৫
২২ চৈত্র ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৬

বদলে যাচ্ছে পোশাক খাত

এম সায়েম টিপু
এম সায়েম টিপু
শেয়ার
বদলে যাচ্ছে পোশাক খাত

একসময় যাঁরা বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে মুখর ছিলেন, এ খাতের অর্জন নিয়ে তাঁরাই এখন প্রশংসায় পঞ্চমুখ। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে নানা আয়োজনে পোশাক খাতের ইতিবাচক পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়ে বিদেশি কূটনীতিকরা বলেছেন, বিশ্বমানের পোশাক কারখানা আছে বাংলাদেশে। তবে বিশ্ব অঙ্গনে নেই তেমন প্রচারণা। পরপর আগুন ও ভবন ধসে প্রাণহানির ঘটনায় এ দেশের পোশাক খাত নিয়ে যে নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে তা দূর করার জন্য ইতিবাচক প্রচারের ওপর জোর দিয়েছেন তাঁরা।

রানা প্লাজা দুর্ঘটনার ভয়াল স্মৃতির স্মরণে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতরা বলেছেন, বাংলাদেশের কিছু পোশাক কারখানা এখন এতটাই আন্তর্জাতিকমানের যে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইউরোপ ও আমেরিকার অনেক কারখানা থেকেও এগিয়ে। ওই রাষ্ট্রদূতরা বলেন, ‘রানা প্লাজা দুর্ঘটনা না ঘটলে বা নিজ চোখে না দেখলে হয়তো বিশ্বাস করতাম না।’

গত শনিবার রাজধানীতে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) রানা প্লাজার দুর্ঘটনার তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সংলাপে এমন করেই তাঁদের অভিমত ব্যক্ত করেন। এ সময় মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেন, ‘বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের অনেক উন্নতি হয়েছে।

এটা আরো করতে হবে। এ জন্য আমরা সহায়তা করব। এই দেশে অনেক ভালো ভালো কারখানা আছে। এত ভালো কারখানা যে বাংলাদেশে আছে, এই দুর্ঘটনা না ঘটলে হয়তো জানা যেত না।

নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত লিওনি মার্গারেথা কিউলেনার বলেন, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের চেয়েও অনেক ভালো ভালো কারখানা রয়েছে। এটা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রচার পায়নি। নেদারল্যান্ডস এই কাজে বাংলাদেশকে সহায়তা দিতে প্রস্তুত।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সংগঠনটির সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান কালের কণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ২৮টি কারখানা আছে ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের (ইউএসজিবিসি) পরিবেশগত মানের সনদ পাওয়া। এর মধ্যে লিড সনদের সর্বোচ্চ মান প্লাটিনাম ছয়টি, গোল্ড ১৪টি, সিলভার পাঁচটি এবং তিনটি সার্টিফায়েড লিড সনদপ্রাপ্ত কারখানা রয়েছে।

এর মধ্যে একটি ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও। এই কারখানা ১১০ নম্বরের মধ্যে ৯০ নম্বর পেয়েছে। পৃথিবীর অন্য কোনো কারখানা এত বেশি নম্বর পাওয়ার ঘটনা বিরল। এ ছাড়া শতাধিক গ্রিন কারখানা ইউএসজিবিসি সনদ পাওয়ার প্রক্রিয়ায়।

জানতে চাইলে বিজিএমইএ পরিচালক ও বিশ্বমানের পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ডিবিএল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুর রহিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাংলাদেশে বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের রাষ্ট্রদূতরা সরেজমিনে কারখানা পরিদর্শনের পরই তাঁদের এই ধারণা তৈরি হয়েছে। এখন আমাদের ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য জরুরি উদ্যোগ নিতে হবে। সুইডেনের রাষ্ট্রদূত সম্প্রতি আমাদের ডিবিএল গ্রুপের কারখানা পরির্দশনে গিয়ে একই অনুভতি প্রকাশ করেছেন। তাঁর পরামর্শ, এ জন্য এখনই স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে দেশের তৈরি পোশাক খাতের ব্র্যান্ডিয়ের উদ্যোগ নিতে হবে। প্রয়োজনে বহির্বিশ্বে প্রচারণায় লবিস্ট নিয়োগ করা যেতে পারে। আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলো যা করে থাকে।’

ইপিলিয়ন স্টাইল লিমিটেডের পরিচালক মো. জুনাইয়েদ আবু সালেহ মুসা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর আমাদের দেশের কারখানাগুলোতে অনেক কাজ হয়েছে। অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স পরিদর্শনে এই অগ্রগতি ত্বরান্বিত হয়েছে। এ ছাড়া বিজিএমইএর উদ্যোগে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা কারখানা পরিদর্শনের ফলে ইতিবাচক পরিবর্তনগুলো দৃশ্যমান হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক প্রচারণায় আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে।’ তিনি বলেন, ‘বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ইতিবাচক প্রচারণার জন্য যেকোনো উদ্যোগের সঙ্গে থাকব আমরা।’

অটুট থাকবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অঙ্গীকার : এদিকে গত শুক্রবার বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের অগ্রগতির কথা স্বীকার করে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ব্রাসেলসে এক বিবৃতি দিয়েছে। এতে বলা হয়, তারা বাংলাদেশের পোশাক খাতের অগ্রগতিতে সম্পৃক্ত থাকবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের প্রতি যে অঙ্গীকার তাদের ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের সেই অঙ্গীকার অটুট আছে। রানা প্লাজার তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের তিন কমিশনার এক যৌথ বিবৃতিতে  এ কথা জানান। তাঁরা বলেন, ‘আজ বাংলাদেশে শ্রমবিষয়ক বেশ কিছু অধিকার দুই বছর আগের চেয়ে অনেক বেশি সুরক্ষিত। ভবন নিরাপত্তা এবং কাজের পরিবেশ অনেক উন্নত হয়েছে।’

চমত্কার অর্জন : এদিকে গতকাল রবিবার রানা প্লাজা দুর্ঘটনার তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে এক বিবৃতিতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেন, ‘তিন বছর আগে রানা প্লাজা ভবনটি ধসের ঘটনায় অনেক শ্রমিক ভবনের নিচে চাপা পড়ে। যারা বেঁচে আছে তাদের জীবন-সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে তাদের দুঃখের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি।’

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘রানা প্লাজার দুঃখজনক ভবন ধস আমাদের সবার ওপর দায়িত্ব বর্তায়। আর সেই দায়িত্ব হলো সম্মিলিতভাবে একটি নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরি এবং শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করা।’

পোশাক খাতের অগ্রগতির কথা তুলে ধরে মার্শা বার্নিকাট আরো বলেন, ‘গত তিন বছর তিন হাজার ছয় শরও বেশি কারখানার নিরাপত্তাব্যবস্থা পরিদর্শন করা হয়েছে এবং ৩৯টি ঝুঁকিপূর্ণ কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় দুই শরও বেশি পরিদর্শক নিয়োগ দিয়েছে এবং তাঁদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া হেল্পলাইন চালু, কর্মস্থলের নিরাপত্তার উন্নয়নে বহু পদক্ষেপ নিয়েছে। এ ছাড়া ৩১টি কারখানা সম্পূর্ণভাবে পুনর্গঠন করা হয়েছে। এসব কিছুই চমত্কার অর্জন, যা জীবন রক্ষা করতে পারে।’

দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হয়েছে : গতকাল বিবিসি বাংলার সঙ্গে এক সাক্ষাত্কারে ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক দপ্তরের উন্নয়নমন্ত্রী ডেসমন্ড সোয়েন বলেন, রানা প্লাজার দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্প খাতে ব্রিটিশ সরকার যে সহায়তা দেয় তার ফলে গার্মেন্ট কারখানাগুলোর অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। খুশির কথা হচ্ছে, দুর্ঘটনা থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শ্রমিক আইনে পরিবর্তন আনা হয়েছে, যাতে শ্রমিকদের আরো বেশি অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া যায়। প্রায় ১০ লাখ শ্রমিককে কারখানা নিরাপত্তার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ৫৮৫টি পরিদর্শকের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে, এর মধ্যে ২৭৫টি পদের মধ্যে নিয়োগও দেওয়া হয়েছে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলওর এ দেশীয় পরিচালক শ্রীনিবাস রেড্ডি বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক এখন নিরাপদ কর্মপরিবেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। রানা প্লাজার দুর্ঘটনার পর এ খাতের আমূল পরিবর্তন হয়েছে। তবে আরো অনেক পথ বাকি আছে। তিনি বলেন, রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানার ভবন, অগ্নি এবং বৈদ্যুতিক নিরাপত্তায় তিন হাজার ৬০২টি কারখানা পরিদর্শন করা হয়েছে। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মাত্র ৩৯টি কারখানা বন্ধ করা হয়েছে।

শুধু বিদেশি সমালোচকরাই নন, এবার দেশি সমালোচনাকারীরাও দিয়েছেন ইতিবাচক স্বীকৃতি। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি এবং টিআইবি জানিয়েছে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত ইতিবাচক দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান গত বৃস্পতিবার বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর তৈরি পোশাক খাতের উন্নয়নে যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে সেসব খাতের সন্তোষজনক অগ্রগতি হয়েছে। তবে রানা প্লাজার ঘটনার হোতাদের বিচার না হলে এই অগ্রগতি হবে অর্থহীন।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

বৈশ্বিক পণ্যবাজার (ডলারে)

শেয়ার

মুদ্রাবাজার

শেয়ার

সব গাড়ির দাম বাড়বে যুক্তরাষ্ট্রে

    খরচ বৃদ্ধির প্রায় পুরোটাই চাপবে সাধারণ মার্কিন ক্রেতাদের ওপর আগামী ৩ মে থেকে গাড়ির যন্ত্রাংশ আমদানিতেও শুল্ক দিতে হবে
বাণিজ্য ডেস্ক
বাণিজ্য ডেস্ক
শেয়ার
সব গাড়ির দাম বাড়বে যুক্তরাষ্ট্রে

সারা বিশ্ব থেকে যত গাড়ি যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা হয় তার ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গাড়ির ওপর ধার্য করা শুল্ক গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হচ্ছে। শুল্ক বসানোর ফলে দেশটিতে আমদানি করা গাড়ির দাম বেড়ে যাবে। আরো অনেক পণ্যের ওপরই শুল্কারোপ করেছেন ট্রাম্প।

তবে গাড়ির ওপর যে পরিমাণ শুল্ক বসবে তাতে মার্কিনদের ব্যয় অনেকটা বেড়ে যাবে। আগামী ৩ মে থেকে গাড়ির যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রেও ২৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে মার্কিনদের। যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত প্রতিটি গাড়িতে আমদানীকৃত যন্ত্রাংশ ব্যবহৃত হয়। ফলে গাড়ির যন্ত্রাংশের ওপর শুল্ক বসলে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত গাড়ির দামও বেড়ে যাবে।
একই সঙ্গে পুরনো গাড়ি মেরামত করাও ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়াবে। যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি নির্মাতা কম্পানি ফোর্ডের সাবেক সিইও মার্ক ফিল্ডসের মতে, কোনো গাড়ি নির্মাতা শুল্কের প্রভাব এড়াতে পারবেন না। সব গাড়ির দাম বাড়বে। এটা একটা সরল অঙ্ক।

গাড়ির ব্যবহার বেশি হলেও যুক্তরাষ্ট্র উৎপাদনের ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে আছে। আগের তুলনায় তারা কম পরিমাণে গাড়ি উৎপাদন করছে। কর্মক্ষেত্র, কেনাকাটা, ভ্রমণ সব কিছুর জন্যই মার্কিনরা গাড়ির ওপর নির্ভরশীল। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দামে গাড়ি বিক্রি হচ্ছে। নতুন একটি গাড়ির দাম গড়ে ৫০ হাজার ডলার।

এবার শুল্ক কার্যকর হওয়ায় বাড়তি ব্যয় যোগ হবে। শুল্ক বসানোর ফলে ৪০ হাজার ডলারের সাশ্রয়ী দামের গাড়ি কিনতে গেলেও কর দিতে হবে ১০ হাজার ডলার।

গাড়িশিল্প নিয়ে তথ্য বিশ্লেষণকারী নিউইয়র্কভিত্তিক কম্পানি এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল মোবিলিটি জানিয়েছে, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে মোট গাড়ি বিক্রির পরিমাণ ছিল এক কোটি ৬০ লাখ। এর মধ্যে আমদানির পরিমাণ ছিল ৮০ লাখ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গাড়ি সরবরাহ করে মেক্সিকো। দেশটি গত বছর ২৫ লাখ গাড়ি পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে।

কানাডা থেকে ১১ লাখ গাড়ি আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্র। এর বাইরে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও জার্মানি থেকে গাড়ি আমদানির পরিমাণ ছিল ৩৭ লাখ। গাড়ির সরবরাহকারী, ডিলার ও ক্রেতার মধ্যে আরোপিত শুল্কের খরচ কিভাবে বণ্টন করা হবে তা নিয়ে বিতর্ক চলছে বলে জানিয়েছেন গাড়ি কম্পানির এক নির্বাহী কর্মকর্তা।

সূত্র : সিএনএন, নিউইয়র্ক টাইমস

মন্তব্য

শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আমদানি সহজ করতে চায় এনবিআর

    উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও সম্ভাব্য অপব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আমদানি সহজ করতে চায় এনবিআর

বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্সবিহীন ক্ষুদ্র রপ্তানিকারকদের করের বিপরীতে ব্যাংক গ্যারান্টি ব্যবহার করে শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আমদানির সুযোগ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতে রপ্তানি বৃদ্ধির পাশাপাশি বৈচিত্র্য ও ব্যবসা পরিচালনা সহজ হবে। প্রাথমিকভাবে বছরে পাঁচ মিলিয়ন ডলারের কম রপ্তানিকারকদের জন্য এ সুবিধার বিষয়টি বিবেচনা করছে এনবিআরের শুল্ক বিভাগ। যা চলতি বছরের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

এনবিআর সূত্র জানায়, সরকারি-বেসরকারি প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে তিন সপ্তাহের মধ্যে সুপারিশ তৈরির জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, অনেক উদ্যোক্তা এ সুবিধার জন্য আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। আমরা বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্সের বিকল্প হিসেবে সব রপ্তানিকারকের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে এটা চালুর বিষয়ে ভাবছি।

তিনি বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী কাঁচামাল আমদানির শুল্কের সমপরিমাণ ব্যাংক গ্যারান্টি নিশ্চিত করে শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় কাঁচামাল ছাড় করা হবে।

সেই কাঁচামাল ব্যবহার করে পণ্য উৎপাদন-রপ্তানি করা হলে ও বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রমাণ দিলে ব্যাংক গ্যারান্টি ছাড় করা হবে। বন্ড লাইসেন্সবিহীন কারখানাগুলোর বার্ষিক রপ্তানি বর্তমানে আট বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।

কাঁচামাল আমদানি সহজ করতে সরকার শর্ত সাপেক্ষে শুল্কমুক্ত আমদানির অনুমতি দিচ্ছে। শর্ত হিসেবে উপকরণ নির্ধারিত গুদামে সংরক্ষণ ও রপ্তানির জন্য ব্যবহার করতে হবে।

এ ব্যবস্থা বন্ডেড ওয়্যারহাউস নামে পরিচিত। তবে বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্স পেতে কঠোর শর্ত পূরণ করতে হওয়ায় অনেক উদ্যোক্তাই এ সুবিধা নিতে আগ্রহী নন। আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বছরে ২০ হাজারের বেশি রপ্তানিকারক ব্যাবসায়িক কার্যক্রম চালান। তবে তৈরি পোশাক, প্লাস্টিক ও অন্যান্য খাতের মাত্র ছয় হাজার কারখানা বন্ড সুবিধার আওতায় শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আমদানি করতে পারে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ প্রায় ৮৭ ধরনের উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি করে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ প্রায় ৪৪.৪৬ বিলিয়ন ডলার মূল্যের উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি করেছে, যার ৮০ শতাংশের বেশি এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে।

রপ্তানিকারকরা এনবিআরের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও এর সম্ভাব্য অপব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, কাস্টমস বর্তমানে বন্ড লাইসেন্সধারী কারখানাগুলোর অনিয়ম পর্যবেক্ষণের সক্ষমতা তৈরি করছে। কিন্তু যদি বিপুলসংখ্যক নতুন কারখানাকে শুল্কমুক্ত আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়, তাহলে কিভাবে নিশ্চিত করা হবে যে আমদানি করা কাঁচামাল রপ্তানির জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে, স্থানীয় বাজারে নয়? এনবিআরের সক্ষমতা শক্তিশালী করার পরই এ সুবিধা চালু করা উচিত।

একই মত প্রকাশ করেছেন এনবিআরের সাবেক সদস্য মো. লুৎফর রহমানও। তিনি সতর্ক করে বলেন, যদি আমদানি-রপ্তানির পুরো প্রক্রিয়া ডিজিটাল না করা হয়, তাহলে কেবল প্রসিড রিয়েলাইজেশন সার্টিফিকেট (পিআরসি) যাচাই করেই রপ্তানির সত্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত না করে এ সুবিধা চালু করলে অপব্যবহারের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকবে।

নাম প্রকাশ করা করার শর্তে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, পিআরসি থাকলেও রপ্তানি করা পণ্য আসলেই শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় আমদানি করা কাঁচামাল ব্যবহার করে তৈরি হয়েছে কি না তা নিশ্চিত করা কঠিন হবে।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এটি ভালো খবর, যদিও আমাদের এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরেই বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্স পেতে অক্ষম রপ্তানিকারকদের জন্য শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আমদানির একটি সহজতর ব্যবস্থা চালুর দাবি জানিয়ে আসছি।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ