<div> বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট আমলের মন্ত্রী-এমপিসহ ৫৪ জনের নামে রাজউকের ২০ বিঘা জমির প্লট বরাদ্দ বিধিবহির্ভূত ছিল বলে প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্লট বরাদ্দ পাওয়া ৫৪ জনের মধ্যে ৪৪ জনই তখন ছিলেন মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য (এমপি)। প্লট বরাদ্দ পাওয়া সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের মধ্যে ৪৩ জনই তখনকার ক্ষমতাসীন জোটের। তবে জোটের শরিক দল জামায়াতে ইসলামীর আছেন একজন। আরেকজন তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগের। বাকি সবাই বিএনপির। হলফনামায় তথ্য গোপন করে তাঁরা এসব প্লট বরাদ্দ নেন বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে।</div> <div> সূত্র মতে, প্লট পাওয়া সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের মধ্যে আবদুল্লাহ আল নোমান, তরিকুল ইসলাম, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, আখতার হামিদ সিদ্দিকী, আ ন ম এহছানুল হক মিলন, বরকতউল্লাহ বুলু, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, মিজানুর রহমান মিনু, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, নাজিম উদ্দিন আলম, নাসির উদ্দিন পিন্টু অন্যতম।</div> <div> রাজধানীর বনানীতে প্রায় ২০ বিঘা জমি এই ৫৪ জনকে আলাদাভাবে বরাদ্দ দেয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। প্রাথমিক অনুসন্ধানে দুদক জানতে পেরেছে, ওই ২০ বিঘা জমির পুরোটারই বরাদ্দ ছিল বিধিবহির্ভূত।</div> <div> <a name="RIMG0"></a></div> <div> দুদক সূত্রে জানা যায়, চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ওই বরাদ্দ নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। এমনকি ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেও প্রথম অবস্থায় বিষয়টি আড়ালে ছিল। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। প্লট জালিয়াতির বিষয়টি নিয়ে ২০১২ সালে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। ওই বছরের ডিসেম্বরেই দুদক এ দুর্নীতির বিস্তারিত তথ্য অনুসন্ধানের লক্ষ্যে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয় দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর হোসেনকে। সে বছরের ৯ ডিসেম্বর সংশ্লিষ্ট নথিপত্রের সত্যায়িত অনুলিপি চেয়ে জেলা রেজিস্ট্রারের কাছে চিঠি দেন তিনি। কিন্তু দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও দুদকের চিঠির জবাব দেননি জেলা রেজিস্ট্রার। চলতি বছরের ২৫ আগস্ট আবারও রেজিস্ট্রারের কাছে চিঠি দেন দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা। ওই চিঠিতে ৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রয়োজনীয় নথিপত্র দুদকে জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর জেলা রেজিস্ট্রার অফিস থেকে নথিপত্র পাঠানো হয় দুদকে।</div> <div> দুদকের এক কর্মকর্তা জানান, জেলা রেজিস্ট্রার অফিস থেকে পাঠানো নথিপত্র পর্যালোচনা করে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। বিষয়টির আরো তদন্ত চলছে। যাচাই-বাছাই শেষে এর চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। তবে জেলা রেজিস্ট্রার অফিস থেকে নথিপত্র পেতে সময় বেশি লাগায় তদন্ত দীর্ঘায়িত হয়েছে।</div> <div> দুদকের আরেক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, বনানীতে জালিয়াতি করে প্লট বরাদ্দ নেওয়া বিএনপির প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করার মতো যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে। জেলা রেজিস্ট্রার অফিস থেকে পাওয়া কাগজপত্রেই বিভিন্ন গরমিল দেখা গেছে। এর সূত্র ধরে দুদক অনুসন্ধানের ব্যাপ্তি বাড়িয়েছে। দুদকের অনুসন্ধানও প্রায় শেষ দিকে।</div> <div> নিয়ম বহির্ভূতভাবে প্লট নেন যাঁরা : দুদক সূত্রে জানা যায়, ওই সময় নিয়ম বহির্ভূতভাবে যাঁদের নামে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল তাঁরা হলেন- সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান, তরিকুল ইসলাম, আবদুল মান্নান ভূঁইয়া (প্রয়াত), মীর মো. নাছির উদ্দিন; সাবেক প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলন, বরকতউল্লাহ বুলু, আলমগীর কবির, লুৎফর রহমান আজাদ; সাবেক ডেপুটি স্পিকার আখতার হামিদ সিদ্দিকী, সাবেক উপমন্ত্রী আসাদুল হাবিব দুলু; সাবেক এমপি শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, মো. মিজানুর রহমান মিনু, খায়রুল কবির খোকন, এম. ইলিয়াছ আলী, এ কে এম ফজলুল হক মিলন, মজিবর রহমান সরোয়ার, জহির উদ্দিন স্বপন, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নাসির উদ্দিন পিন্টু, মো. নাদিম মোস্তফা, মো. কবির হোসেন, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, মজিবুর রহমান মঞ্জু, মো. হাফিজ ইব্রাহিম, হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম, মো. আবদুল হাই, আবুল হোসেন খান, মো. মশিউর রহমান, বেগম সেলিমা রহমান, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, সামছুদ্দিন আহমেদ এছাক (প্রয়াত), এম নাসের রহমান, আলমগীর হায়দার খান, শহিদুল ইসলাম, ফজলুর রহমান, নাজিম উদ্দিন আলম, শহিদুল আলম তালুকদার, শাহজাহান চৌধুরী (জামায়াত), হামিদা বানু শোভা (আওয়ামী লীগ); গুলশানের ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান, মতিঝিলের ব্যবসায়ী মাসুদা একরাম, বনানীর ব্যবসায়ী এস এম হাসান রাজা, ব্যবসায়ী মো. সামছুজ্জোহা খান, যশোরের ব্যবসায়ী মফিদুল হাসান (তৃপ্তি), মুন্সীগঞ্জের ব্যবসায়ী ইমতিয়াজ আহম্মেদ ও মহিউদ্দিন খান; শিক্ষাবিদ প্রফেসর মনিরুজ্জামান মিঞা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাবিনা শারমিন; কুমিল্লা সদরের মৃত আবদুল ওয়াহাবের স্ত্রী সুফিয়া খাতুন, বরিশালের সালেহ আহমেদ, ঢাকার বাসিন্দা মো. আলী তারেক এবং ব্যাংকার আসাদুল আশরাফ। এঁদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী আবদুল মান্নান ভূঁইয়া এবং নরসিংদীর সাবেক এমপি সামসুদ্দিন আহমেদ এছাক মারা যওয়ায় অনুসন্ধান প্রক্রিয়া থেকে তাঁদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ইলিয়াছ আলী কয়েক বছর ধরে নিখোঁজ আছেন। তাঁর বিষয়টিও বাদ দেওয়ার চিন্তা করছে দুদক।</div>