একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ১২ জেলার ২৫টি সংসদীয় আসনের সীমানায় পরিবর্তন এনে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল সোমবার কমিশন সভায় এই তালিকা অনুমোদন এবং তা বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। মোট ৩০০ আসনের বাকি ২৭৫টির সীমানা অপরিবর্তিত রয়েছে। ঢাকার কোনো আসনে পরিবর্তন আসেনি।
২৫ সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ
বিশেষ প্রতিনিধি

কমিশনের সভা শেষে নির্বাচন ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। তিনি বলেন, আগামী অক্টোবরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে।
সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা আসনগুলো হচ্ছে—নীলফামারী-৩ ও ৪, রংপুর-১ ও ৩, কুড়িগ্রাম-৩ ও ৪, সিরাজগঞ্জ-১ ও ২, খুলনা-৩ ও ৪, জামালপুর-৪ ও ৫, নারায়ণগঞ্জ-৪ ও ৫, সিলেট-২ ও ৩, মৌলভীবাজার-২ ও ৪, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ ও ৬, কুমিল্লা-৬, ৯ ও ১০ এবং নোয়াখালী-৪ ও ৫।
পুনর্নির্ধারিত আসন সীমানার গেজেট গতকালই প্রকাশের কথা জানান ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ।
এদিকে বর্তমান নির্বাচন কমিশন তাদের কর্মপরিকল্পনা বা রোডম্যাপে এবার ভোটার সংখ্যার ভিত্তিতে সংসদীয় আসনগুলোর সীমানা পুনর্নির্ধারণ এবং সে লক্ষ্যে নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়ার কথা বললেও শেষ পর্যন্ত তা হলো না।
ইসি সচিবালয় সূত্র জানায়, সংসদীয় আসনের সীমানা আংশিক পরিবর্তন হলেও ভোটার বৈষম্য থেকেই যাচ্ছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো আসনে ভোটার থাকছে সাড়ে সাত লাখের কাছাকাছি, আবার কোনো আসনে দুই লাখেরও কম।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয় দেশের ৩০০ সংসদীয় আসন এলাকার মধ্যে ৬০টির কাছাকাছি আসনের সীমানা পরিবর্তন করে প্রাথমিক তালিকা প্রস্তুত করলেও নানামুখী তদবিরে সেই সংখ্যা কমে আসে। গত ১৪ মার্চ ৪০টি সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হয়। এরপর ২১ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত এই তালিকার ওপর আপত্তি ও দাবির শুনানি চলে। আপত্তি আসে ৬০টি আসন থেকে। এ বিষয়ে ৪০৭টি আবেদন জমা পড়ে।
এর আগে ইসির সংলাপে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দশম সংসদের সীমানা বহাল রাখার দাবি করে। অন্যদিকে বিএনপি ২০০৮ সালের আগের সীমানায় ফিরে যাওয়ার দাবি করে আসছিল।
যেভাবে পরিবর্তন : আগের সীমানায় নীলফামারী-৩ আসন এলাকা ছিল জলঢাকা ও কিশোরগঞ্জ উপজেলার একটি অংশ। এই আসনের সীমানা শুধু জলঢাকা উপজেলা নিয়ে করা হয়েছে। নীলফামারী-৪ আসনের সীমানা ছিল সদরপুর ও কিশোরগঞ্জ উপজেলার আংশিক এলাকা নিয়ে। এবার তা সদরপুর ও কিশোরগঞ্জ উপজেলার সবটা নিয়ে করা হয়েছে।
রংপুর-১ আসনের সীমানা ছিল শুধু গঙ্গাচড়া উপজেলা। এর সঙ্গে রংপুর সিটি করপোরেশনের ১ থেকে ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুক্ত করা হয়েছে। রংপুর-৩ আসনের সীমানা ছিল সদর উপজেলা। এর সঙ্গে রংপুর সিটি করপোরেশনের ১ থেকে ৮ নম্বর ওয়ার্ড বাদ রেখে বাকি ওয়ার্ডগুলো যুক্ত করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম-৩ আসনের সীমানা ছিল উলিপুর ও চিলমারীর আংশিক এলাকা নিয়ে। এ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে শুধু উলিপুর উপজেলা নিয়ে। কুড়িগ্রাম-৪ আসনের সীমানা ছিল রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলা এবং উলিপুর ও চিলমারী উপজেলার আংশিক এলাকা নিয়ে। এর সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে রৌমারী, রাজীবপুর ও চিলমারী উপজেলার পুরোটা নিয়ে।
সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সীমানা ছিল কাজীপুর এবং সদর উপজেলার মেছড়া, রতনকান্দি, বাগবাটি ও ছোনগাছা ইউনিয়ন নিয়ে। এর সঙ্গে সদর উপজেলার বাহলী ইউনিয়ন যোগ হয়েছে। সিরাজগঞ্জ-২ আসন ছিল কামারখন্দ উপজেলা ও মেছড়া, রতনকান্দি, বাগবাটি ও ছোনগাছা ইউনিয়ন বাদে সদর উপজেলা নিয়ে। এবার সদর উপজেলা থেকে বাহলী ইউনিয়নটিও বাদ দেওয়া হয়েছে।
খুলনা-৩ আসনের সীমানা ছিল খালিশপুর ও দৌলতপুর উপজেলার সম্পূর্ণ এবং খানজাহান আলীর আংশিক নিয়ে। এ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে খুলনা সিটি করপোরেশনের ১ থেকে ১৫ নম্বর ওয়ার্ড এবং দীঘলিয়া উপজেলার আড়ংঘাটা ও যোগীপোল ইউনিয়ন নিয়ে। খুলনা-৪ আসনের সীমানা ছিল দীঘলিয়া, রূপসা ও তেরখাদা উপজেলা নিয়ে। তা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে দীঘলিয়ার আড়ংঘাটা ও যোগীপোল ইউনিয়ন।
সাতক্ষীরা-৩ আসনের সীমানা ছিল আশাশুনি ও দেবহাটা উপজেলার সম্পূর্ণ এবং কালীগঞ্জ উপজেলার আংশিক নিয়ে। তা থেকে বাদ পড়েছে কালীগঞ্জের ওই আংশিক এলাকা।
জামালপুর-৪ আসনের সীমানা ছিল সরিষাবাড়ী উপজেলার সম্পূর্ণ এবং জামালপুর সদরের আংশিক এলাকা নিয়ে। এ আসন থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে জামালপুর সদরের ওই আংশিক এলাকা। জামালপুর-৫ আসনের সীমানা ছিল জামালপুর সদরের আংশিক এলাকা নিয়ে। এ আসনে সদর উপজেলার সবটাই যোগ হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সীমানা ছিল ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা নিয়ে। এ আসনের নতুন সীমানা হয়েছে আলীরটেক ও গোপনগর বাদে সদর উপজেলা এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১ থেকে ১০ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সীমানা ছিল সদর ও বন্দর উপজেলা নিয়ে। সদরের আলীরটেক ও গোপনগর ইউনিয়ন, বন্দর উপজেলা এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১১ থেকে ২৭ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে এ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।
সিলেট-২ আসন ছিল বিশ্বনাথ ও বালাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে। নতুন সীমানা হয়েছে বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর উপজেলা নিয়ে। সিলেট-৩ আসন ছিল দক্ষিণ সুরমা ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা নিয়ে। এর সঙ্গে বালাগঞ্জ উপজেলা যোগ করা হয়েছে।
মৌলভীবাজার-২ আসনের সীমানা ছিল কুলাউড়া উপজেলার সম্পূর্ণ ও কমলগঞ্জ উপজেলার আংশিক নিয়ে। এ আসন থেকে কমলগঞ্জ উপজেলার ওই আংশিক এলাকা বাদ দেওয়া হয়েছে। মৌলভীবাজার-৪ আসনের সীমানা ছিল শ্রীমঙ্গলের সম্পূর্ণ এবং কমলগঞ্জ উপজেলার আংশিক নিয়ে। এবার কমলগঞ্জ উপজেলার বাকি অংশও এ আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।
নোয়াখালী-৪ আসনের সীমানা ছিল সুবর্ণচর ও দুই ইউনিয়ন বাদে নোয়াখালী সদর নিয়ে। এবার হয়েছে সুবর্ণচর ও নোয়াখালী সদর উপজেলার সবটা নিয়ে। নোয়াখালী-৫-এর সীমানা ছিল কোম্পানীগঞ্জ সদরের আংশিক ও কবিরহাট উপজেলা নিয়ে। এ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ হয়েছে কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলার পুরোটা নিয়ে।
কুমিল্লা-৬ আসন ছিল সদর উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে। তা পুনর্নির্ধারণ হয়েছে কুমিল্লা আদর্শ সদর, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন ও কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকা নিয়ে। কুমিল্লা-৯ আসন ছিল লাকসাম উপজেলা নিয়ে। মনোহরগঞ্জ উপজেলা এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। কুমিল্লা-১০ আসনের সীমানা ছিল সদর উপজেলার অংশবিশেষ ও নাঙ্গলকোট উপজেলা নিয়ে। এ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে সদর দক্ষিণ, লালমাই ও নাঙ্গলকোট উপজেলার পুরোটা নিয়ে।
সম্পর্কিত খবর

বান্দরবানের হোটেলগুলোয় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কক্ষ বুকিং সম্পন্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, বান্দরবান

২০২১ সাল থেকে পাহাড়ে অস্থিরতায় প্রতিটি ঈদ ও উৎসব চরম মন্দায় পার করেছে বান্দরবানের পর্যটন ব্যবসা। কিন্তু এবার সরকারি ছুটি, ঈদুল ফিতর আর সাপ্তাহিক ছুটি মিলে লম্বা অবকাশে অগ্রিম হোটেল বুকিংয়ের হিড়িক পড়ে গেছে। এরই মধ্যে বেশির ভাগ হোটেলের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কক্ষ বুকিং নিয়ে রেখেছে ভ্রমণপ্রত্যাশীরা।
গত মঙ্গলবার পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানা যায়।
বান্দরবান হোটেল-মোটেল, কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম জানান, ৩১ মার্চ পবিত্র ঈদুল ফিতরের সম্ভাব্য তারিখ ধরে পাঁচ দিনের ছুটির তারিখ নির্ধারণ করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই হিসাবে কাগজপত্রে ২৯ মার্চ শুরু হচ্ছে ছুটি। কিন্তু এর আগের দিন ২৮ মার্চ শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন। ছুটি শেষে অফিস খোলার কথা ৩ এপ্রিল বৃহস্পতিবার।
হোটেল হিল ভিউর ফ্রন্ট ডেস্ক ম্যানেজার তৌহিদ পারভেজ জানান, ঈদ উপলক্ষে আগামী ২, ৩ ও ৪ এপ্রিল ৬০ শতাংশ কক্ষ আগাম বুকিং নিয়ে নিয়েছে ভ্রমণপ্রত্যাশীরা।
হোটেল হিল্টনের ম্যানেজার আক্কাস উদ্দিন সিদ্দিকি জানান, তাঁর হোটেলে ২ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত বেশির ভাগ কক্ষ আগাম বুকিং হয়ে গেছে।
হোটেল গার্ডেন সিটির মালিক জাফর উল্লাহ জানান, আগামী ২ থেকে ৭ এপ্রিল তাঁর হোটেলের ৩৪টি কক্ষের মধ্যে ২৭টি কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে। আগামী দিনগুলোতে শতভাগই বুকিং হবে বলে আশা করছেন তিনি।
বান্দরবান হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জসীম উদ্দীন জানান, টানা ছুটির কারণে পর্যটকদের ভালো সাড়া পাচ্ছেন। আগত পর্যটকদের সার্বিক সেবা নিশ্চিত করতে হোটেল মালিকদের বলে দেওয়া হয়েছে।
বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল করিম বলেন, ‘পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশের সদস্যরা কাজ করবেন।’

পরিবেশ অনুকূলে পাঁচ বছরের ক্ষতি এবার কাটিয়ে উঠবে সিলেট
নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

সিলেটের পর্যটনে সেই ২০২০ অতিমারি করোনা নিয়ে এসেছিল দুর্দিন। করোনা বিদায় নিলেও দুর্দশা কাটছিল না। বন্যা, বৈরী আবহাওয়া না হয় রাজনৈতিক অস্থিরতা মিলিয়ে সিলেটের পর্যটনে সবচেয়ে বড় ব্যবসার মৌসুম ঈদে ছিল শুধুই হতাশার গল্প।
দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর পর এবার পরিবেশ অনুকূলে।
আগত দর্শনার্থীদের বরণ করে নিতে এবং বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে এরই মধ্যে ব্যবসায়ী, শ্রমিক, ফটোগ্রাফার ও নৌকার মাঝিরা সভা করে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছেন।
দেশের একমাত্র জলাবন খ্যাত রাতারগুল পর্যটন কেন্দ্র এলাকার রিসোর্ট ‘সোহেল স্কয়ারে’র স্বত্বাধিকারী সোহেল আহমদ বলেন, ‘এবার দেশের পরিস্থিতিও তুলনামূলক স্থিতিশীল। আবহাওয়াও অনুকূল। তাই ঈদ মৌসুমে ভালো ব্যবসা হবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।
গেল বছর ঈদুল ফিতরের সময় পাহাড়ি ঢলের কারণে সাদা পাথর পর্যটন কেন্দ্র তলিয়ে গেলে কেন্দ্রটি বন্ধ ঘোষণা করে প্রশাসন। এবার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, এ ঈদের ছুটিতে আট থেকে ১০ লাখ পর্যটকের সমাগম হবে।
ভোলাগঞ্জ পর্যটন ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ সফাত উল্লাহ বলেন, ‘আশা করছি, ক্ষতি কাটিয়ে উঠে এ বছর বাম্পার ব্যবসা হবে।’
ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের পরিচালক জুয়েল মিয়া বলেন, ‘আসছে ঈদে আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে সিলেটে বন্যার আশঙ্কা না থাকায় আমরা আশা করছি, গত পাঁচ-ছয় বছরের তুলনায় এ বছর বেশি পর্যটকের আগমন ঘটবে।
হোটেল বুকিং শুরু হয়েছে জানিয়ে সিলেট হোটেল-মোটেল রেস্টহাউস মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমিত নূরী জুয়েল বলেন, ‘এবার মানুষ দরদাম করছেন বেশি। তবে বুকিং হচ্ছে।’
সিলেটের সবচেয়ে বেশি পর্যটন কেন্দ্র গোয়াইনঘাট উপজেলায়। সেখানকার উপজেলা প্রশাসন পর্যটনসংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার সভা করে প্রস্তুতি নিয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পর্যটকদের নিরাপত্তা ও তাদের সুবিধা নিশ্চিতে আমরা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, ব্যবসায়ীসহ সব পক্ষ মিলে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।’

ঈদ পর্যটন
পর্যটক বরণে সাজগোজ চলছে কক্সবাজারে
বিশেষ প্রতিনিধি, কক্সবাজার

এবারের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস, ২৮ মার্চ শবেকদর, সেই সঙ্গে ২৯ মার্চ থেকে ঈদের ছুটি শুরু। সব মিলিয়ে ১১ দিনের লম্বা ছুটি। পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ধারণা করছেন, টানা এই ছুটিতে দেশের পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারে নামবে ভ্রমণপিপাসুদের ঢল।
আর এই ছুটিতে পর্যটকদের টানতে শেষ মুহূর্তের সাজগোজ চলছে কক্সবাজারের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউসসহ খাবারের হোটেলগুলোয়।
রমজানের সময় সৈকত থাকে পর্যটকশূন্য। গত মঙ্গলবার কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ঘুরে তেমন পর্যটকের উপস্থিতি চোখে পড়েনি। হোটেল মোটেল জোন এবং মেরিন ট্রাইভ সড়কে ঘুরে দেখা গেছে, হোটেলগুলোতে ঈদকেন্দ্রিক কর্মতৎপরতার দৃশ্য।
শহরের কলাতলীর তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের বিপণন ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজ নুর সোমেল বলেন, পয়লা এপ্রিল থেকে ৫ এপ্রিল কক্সবাজারে পর্যটক সমাগম বাড়বে।
পর্যটন উদ্যোক্তা আবদুর রহমান বলেন, রমজানের আগের কয়েক মাস কক্সবাজার পর্যটকে ভরপুর ছিল। তবে রমজানের শুরু থেকে একেবারে পর্যটকশূন্য। আর এই বিরতিতে অনেকে নতুন করে সাজিয়ে নিয়েছেন নিজেদের প্রতিষ্ঠান। কক্সবাজার ট্যুরিস্ট ক্লাব ও ট্যুরস অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (টুয়াক) সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, নিরাপদ অবকাশ যাপনের সব রকম প্রস্তুতি নিচ্ছে হোটেল-মোটেল-কটেজগুলো।
জেলার অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্র যেমন হিমছড়ি, দরিয়ানগর, ইনানী, মহেশখালী, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কসহ সব পর্যটন স্পট ইজারাদাররা সাজিয়ে তুলছেন নতুন করে।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, ‘পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও অপরাধ দমনে জেলা পুলিশের সহযোগিতায় কয়েকটি ভাগে সাজানো হচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশকে। নিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটালে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

মসলার বাজার স্থিতিশীল, নাগালের বাইরে এলাচ
সজীব আহমেদ

এবার ঈদ বাজারে কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে জিরা, দারচিনি, লবঙ্গ, তেজপাতা, শুকনা মরিচ, হলুদ, পেঁয়াজ, আদাসহ কয়েকটি মসলাজাতীয় পণ্যের দাম। তবে এলাচের দাম দফায় দফায় বেড়ে এখন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।
খুচরা বাজারে প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে পাঁচ হাজার থেকে ছয় হাজার টাকায়। ৫০ থেকে ১০০ টাকার নিচে খুচরা বিক্রেতারা এখন এলাচ বিক্রি করতে চাচ্ছেন না।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এবং মসলার পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার ঈদ ঘিরে দেশের বাজারে এলাচ ছাড়া অন্য কোনো মসলার দাম নতুন করে বাড়েনি। জিরাসহ কয়েকটি মসলার দাম কিছুটা কমেছে বলেও বিক্রেতারা জানান।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মানভেদে খুচরায় প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হচ্ছে পাঁচ হাজার ৫০০ থেকে ছয় হাজার টাকায়।
পাইকারি মসলা আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, গুয়াতেমালা, ভারতসহ বিশ্বের প্রধান প্রধান এলাচ উৎপাদনকারী দেশগুলোয় ফলন কম হওয়ায় বিশ্ববাজারে এর দাম বেড়েছে। এ ছাড়া শুল্ক প্রায় দ্বিগুণ করা ও ডলারের উচ্চমূল্যের কারণে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় এলাচের আমদানি আশানুরূপ হয়নি।
আমদানির তথ্য থেকে এবং আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পেঁয়াজ, আদা ও রসুন ছাড়া দেশে মসলার বার্ষিক বাজার এখন ১০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
কারওয়ান বাজারের মাসুদ জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা মাসুদ রানা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এবার ঈদ উপলক্ষে এলাচ ছাড়া অন্য সব মসলার বাজার স্থিতিশীল। এলাচের দাম বাড়তে বাড়তে এখন অস্বাভাবিক পর্যায়ে চলে গেছে।
রামপুরা কাঁচাবাজারের মেসার্স মহিউদ্দিন এন্টারপ্রাইজের বিক্রেতা মহিউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এলাচের কেজি ছয় হাজার টাকা শুনে ক্রেতারা অবাক হয়ে যান। বিক্রি অনেকটাই কমে গেছে। যাঁরা আগে ১০০ গ্রাম নিতেন, তাঁরা এখন ৫০ গ্রাম বা ২৫ গ্রাম নিচ্ছেন। তবে রোজার ঈদ উপলক্ষে এলাচ ছাড়া অন্যান্য মসলার দামে কোনো অস্থিরতা নেই।’
রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গত সোমবারের বাজারদরের তালিকানুযায়ী, ছোট আকারের এলাচের খুচরা দাম কেজি চার হাজার ৫০০ থেকে পাঁচ হাজার টাকা। এক বছর আগে এলাচের দাম ছিল তিন হাজার ৫০০ টাকা। বাজারে বড় আকারের এলাচের দাম আরেকটু বেশি। খুচরা বাজারে বড় আকারের প্রতি কেজি এলাচ সর্বোচ্চ ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। টিসিবির বাজারদরের তথ্য বলছে, প্রতি কেজি জিরা বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৭৮০ টাকায়, যা গত বছরের এই সময় ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায় বিক্রি হয়। লবঙ্গর কেজি এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর বিক্রি হয়েছিল এক হাজার ৯০০ টাকা পর্যন্ত। দারচিনি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায়, গত বছর বিক্রি হয়েছিল ৫০০ থেকে ৫২০ টাকায়।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, সর্বশেষ গত ৯ ফেব্রুয়ারি এলাচের শুল্ক প্রায় দ্বিগুণ করে কাস্টম কর্তৃপক্ষ। আগে কেজিপ্রতি শুল্ক ছিল সাড়ে সাত ডলার। বর্তমানে সেটি বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৫ ডলার। যার কারণে গত এক-দেড় মাসের ব্যবধানে দাম আরো বেড়ে এলাচের কেজি মানভেদে পাঁচ হাজার ৫০০ থেকে ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত উঠেছে। তবে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না বাড়লে এলাচের বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।