<p>এবার আগাম জাতের আলু চাষ করেছেন দেড় বিঘা জমিতে। গতকাল সোমবার এক বিঘা জমির আলু (এক হাজার ৮০০ কেজি) তুলেছেন। বিক্রি করেছেন প্রতি কেজি ১১ টাকা দামে। পেয়েছেন ১৯ হাজার ৮০০ টাকা। অথচ এক বিঘা জমিতে আলু চাষেই খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। ফলে লাভের পরিবর্তে পুঁজি হারিয়েছেন ২০০ টাকা। বলা হচ্ছে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের পোড়াকোট গ্রামের আলু চাষি এমদাদুল হকের কথা।</p> <p>গতকাল হতাশার সুরে এমদাদুল বললেন, ‘লাভের আশাত আলু আবাদ করি এলা লোকসান হইল। দিন দিন আরো দাম কমছে। বাকি আধাবিঘা (এখনো ওঠানোর সময় হয়নি) জমির আলুত আরো যে কত লোকসান হোবে...’।</p> <p>এমদাদুল জানান, গত বছর একই জমিতে গ্রানুলা জাতের আলু আবাদ করে ১৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছিলেন। তাতে এক বিঘা জমির আলু বিক্রি করে পেয়েছিলেন ৩২ হাজার টাকা। গতবার লাভ হয়েছিল বিঘাপ্রতি ১০ হাজার টাকা। এ টাকা দিয়ে সেচনির্ভর বোরো ধানের আবাদ করেছিলেন। কিন্তু এবার আর তা সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা তাঁর।</p> <p>একই গ্রামের অন্য চাষি দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘এবার চার বিঘা জমিতে আলু আবাদ করেছি। ফসল ওঠানোর সময় হলেও দাম কমের কারণে ওঠাতে সাহস পাচ্ছি না। বর্তমানে যে বাজার চলছে তাতে লোকসান হবে।’</p> <p>দেলোয়ার জানান, এবার শুরু থেকে আলুর বাজারে মন্দা চলছে। এখনো বাজারে পুরনো আলু থাকায় নতুন আলুর চাহিদা নেই। গত বছর আগাম আবাদ করে ৪০ টাকা পর্যন্ত কেজি দরের বাজার ধরেছিল এলাকার চাষিরা। কিন্তু এবার তারা দাম পাচ্ছে চার ভাগের এক ভাগ। গতকাল পোড়াকোটে আলু কিনতে এসেছিলেন জলঢাকার হরিশ চন্দ্র পাটগ্রামের ব্যবসায়ী কোহিনুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আলু কিনে পাবনায় নিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করব। অন্যবারের তুলনায় এবার বাজার মন্দা, তাই ব্যবসায় তেমন লাভ হচ্ছে না। এবার বাজারে পুরনো আলু পর্যাপ্ত আছে। এ কারণে নতুন আলুর চাহিদা কম।’</p> <p>একাধিক সূত্রে জানা যায়, কিশোরগঞ্জে প্রতিবছর প্রচুর আগাম জাতের আলুর চাষ হয়। এখানকার আলু ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়। দূরদূরান্তের অনেক ব্যবসায়ী এখানে এসে সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে আলু কেনে। এ অঞ্চলে উৎপাদিত আলুর সুনামও আছে। কিন্তু বাজার মন্দার কারণে এবার ব্যবসায়ীরা কম আসছে। আরো জানা যায়, এলাকার বেশির ভাগ চাষি ঋণ করে আলুর আবাদ করে। ফসল তুলে আগে ঋণ পরিশোধ করে। পরে লাভের টাকায় পরিবারের অন্য চাহিদা মেটানোসহ অন্য ফসল ফলানোর প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু এবার ঋণ পরিশোধে বেগ পেতে হবে চাষিদের।</p> <p>এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, ‘এ বছর কিশোরগঞ্জে পাঁচ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত আগাম জাতের এক হাজার ২০০ হেক্টর জমির আলু তোলা হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় সরবরাহ বেড়েছে। পাশাপাশি পুরনো আলু এখনো হিমাগারে মজুদ থাকায় এবার আলুর দাম কিছুটা কমেছে। এতে চাষিদের লাভ কম হলেও বেশি ফলনের কারণে লোকসান হবে না।’</p> <p> </p>