ঢাকা, বুধবার ০২ এপ্রিল ২০২৫
১৯ চৈত্র ১৪৩১, ০২ শাওয়াল ১৪৪৬

ঢাকা, বুধবার ০২ এপ্রিল ২০২৫
১৯ চৈত্র ১৪৩১, ০২ শাওয়াল ১৪৪৬
প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপন

খাগড়াছড়িতে ফানুস ওড়ানোসহ সন্ধ্যার সব কর্মসূচি বর্জন

দ্বিতীয় রাজধানী ডেস্ক
দ্বিতীয় রাজধানী ডেস্ক
শেয়ার
খাগড়াছড়িতে ফানুস ওড়ানোসহ সন্ধ্যার সব কর্মসূচি বর্জন

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা গতকাল বুধবার বিভিন্ন স্থানে যথাযথ মর্যাদায় নানা কর্মসূচিতে উদযাপিত হয়েছে। তবে গুইমারায় নির্মাণাধীন মন্দির ও বুদ্ধমূর্তি ভাঙচুরের প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে সান্ধ্যকালীন সব কর্মসূচি বর্জন করেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা। বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে :

খাগড়াছড়ি : বিভিন্ন ধর্মীয় আচার আনুষ্ঠানিকতা পালিত হয়। চাকমা ও মারমাদের পাশাপাশি বড়ুয়া সমপ্রদায়ের মানুষ দিবসটি ব্যাপক ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে উদযাপন করেছেন।

তবে গুইমারায় নির্মাণাধীন মন্দির ও বৌদ্ধ মূর্তি ভাঙচুরের প্রতিবাদ জানিয়ে সান্ধ্যকালীন সব কর্মসূচি বর্জন করেছেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা।

জেলার বিভিন্ন মন্দির ও কেয়াং এ নানা পূজা অর্চনার আয়োজন করা হয়। সকালে বুদ্ধপূজা, ভিক্ষুদের ছোয়াইং দেওয়া হয়। সকালে জেলা শহরের শতবর্ষী য়ংড বৌদ্ধবিহার, পেরাছড়া ধর্মপুর আর্য বনবিহারসহ সব কটি বৌদ্ধ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ছিল অনুষ্ঠানমালা।

দায়ক-দায়িকাদের উদ্দেশ্যে ভান্তেরা ধর্মীয় দেশনা দিয়েছেন। তাতে বিশ্ব শান্তি ও মঙ্গল কামনায় বিশেষ প্রার্থনাও করা হয়।

তবে একই ধর্মাবলম্বী হলেও অনেকটা ব্যতিক্রমীভাবে মারমারা ওয়া বা ওয়াগ্গা পোয়ে উৎসব পালন করেছেন। তাঁরা ধর্মীয় রীতিনীতির বাইরেও সামাজিক উৎসব পালন করে থাকেন।

বিশেষত হাজার ফুল দিয়ে বুদ্ধপূজা ও সাধ্যমতো ভান্তেকে ছোয়াইং (খাদ্য) দেওয়া মারমাদের ঐতিহ্য।

গৌতম বুদ্ধের আদর্শ মতে, ভিক্ষুসংঘ আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত তিন মাস বর্ষাব্রত পালন করেন। বর্ষাব্রত শেষে প্রবারণা পূর্ণিমার তিথি থেকে একমাস ধর্ম প্রচারে বিভিন্ন বিহারে বিহারে ছুটে বেড়ান বৌদ্ধ ভিক্ষুরা। যেটিকে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা দানোত্তম কঠিন চীবর দানোৎসব হিসেবে পালন করেন। এরমধ্য দিয়ে মাসব্যাপী কঠিন চীবর দান উৎসব শুরু হল।

এদিকে সন্ধ্যায় চেঙ্গী নদী তীরে সমবেত হয়ে বুদ্ধের উদ্দেশ্যে নৌকা ভাসিয়ে বুদ্ধপূজায় অংশ নেওয়া, ফানুস বাতি ওড়ানো ও প্রদীপ প্রজ্বলনের সব কর্মসূচি বর্জন করেছেন য়ংড বৌদ্ধ বিহার পরিচালনা কমিটি।

কমিটির সভাপতি থৈহ্লাপ্রু চৌধুরী বলেন, ‘গুইমারায় বৌদ্ধমন্দির ও বুদ্ধমূর্তি ভাঙচুর করার প্রতিবাদে বর্জনের এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রতিবছর শত শত বৌদ্ধ ধর্মপ্রাণ মানুষ ওই কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে থাকেন।’

এছাড়া পানখাইয়াপাড়া ধর্মরাজিক বৌদ্ধ বিহারসহ জেলার প্রায় সব বিহারে সান্ধ্যকালীন অনুষ্ঠানসূচি বাতিল করা হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় : উপাচার্য ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী মহামতি গৌতম বুদ্ধের অহিংস নীতি ধারণ, লালন, চর্চার মাধ্যমে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠার আহ্বান জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চত্বরে  পবিত্র প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে চবি বৌদ্ধ ছাত্র পরিষদের শান্তি শোভাযাত্রা উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন।

শোভাযাত্রায় অন্যান্যের মধ্যে চবি বৌদ্ধ ছাত্র পরিষদের সভাপতি পালি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অরূপ বড়ুয়া ও সাধারণ সম্পাদক অলি চাকমা, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের প্রভাষক বাসবী বড়ুয়া, ডেপুটি রেজিস্ট্রার (তথ্য শাখা) দিবাকর বড়ুয়া, পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক সৌরজিৎ বড়ুয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পটিয়া (চট্টগ্রাম) : বুধবার সকালে উপজেলার বিভিন্ন মন্দিরে বুদ্ধপূজা, শীল গ্রহণ, ধর্মদেশনা, প্রদীপ প্রজ্বলন ও ফানুস উত্তোলনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। বিকেলে পটিয়া কেন্দ্রীয় বৌদ্ধবিহারে আলোচনাসভায় সভাপতিত্ব করেন অধ্যক্ষ সংঘপ্রিয় মহাথের। প্রধান অতিথি ছিলেন পটিয়া পৌরসভার মেয়র অধ্যাপক হারুনুর রশিদ। বক্তব্য দেন কাউন্সিলর ইঞ্জিনিয়ার রূপক কুমার সেন, বৌদ্ধ সেবক ভিক্ষু প্রমুখ। এছাড়া ঊনাইনপুরা লঙ্কারামে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ বৌদ্ধদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় গুরু সংঘ রাজ ড. ধর্মসেন মহাস্থবির। আরো বক্তব্য দেন বাংলাদেশ বৌদ্ধ সেবা সদনের পরিচালক বিশ্ব মিত্র। এদিকে পটিয়ার সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে গতকাল দিনব্যাপী কর্ণফুলীর ৩য় সেতু থেকে মুজাফ্ফরাবাদ পর্যন্ত এ বছরও বিনা ভাড়ায় বাস সার্ভিস দিয়েছেন।

লংগদু (রাঙমাটি) : উপজেলার সব বৌদ্ধ বিহারে প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপন করেছেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা ।

উপজেলার প্রাচীন তিনটিলা বনবিহার, দুলুছড়ি জেতবন বিহার, প্রশান্ত অরণ্য কুটির বৌদ্ধবিহার ও আর্যগিরি বনবিহারে শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে সংঘদান,অষ্ট পরিষ্কার দান, বৌদ্ধমূর্তি দান ও হাজার প্রদীপ দানসহ নানা অনুষ্ঠান হয়েছে। বুধবার সকালে উপজেলার সোনাই এলাকার প্রশান্তি অরণ্য কুটিরে প্রবারণা পূর্ণিমার অনুষ্ঠানে বিহার অধ্যক্ষ বলেন, ‘বুদ্ধের নীতি ও আদর্শ মেনে চললে মানুষের মাঝে শান্তি ফিরে আসবে’।

এ অনুুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার। বিহার কমিটির অন্যতম সদস্য স্কুলশিক্ষক কল্যাণমিত্র চাকমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন জেলা পরিষদ সদস্য জানে আলম, ইউপি চেয়ারম্যান মঙ্গল কান্তি চাকমা প্রমুখ। আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদ সদস্য অমিত চাকমা রাজু, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক সরকার, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রঞ্জন কুমার সামন্ত প্রমুখ।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ