<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">১৮ জুলাইয়ের বিকেল ৩টা। সবে মাত্র হাসপাতাল থেকে বাসায় এসে খেতে বসেছি। এ সময় জরুরি বিভাগ থেকে ফোন; চোখে গুলিবিদ্ধ হয়ে সলিমুল্লাহ মেডিক্যালের এক ছাত্র এসেছে। ভর্তি দেওয়ার নির্দেশনা দিতে দিতেই আবার ফোন। এবার একসঙ্গে কয়েকজন চোখে গুলিবিদ্ধ রোগী এসেছে। দ্রুত খাওয়া শেষ করে হাসপাতালের দিকে ছুটে গেলাম। জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখি ভয়াবহ অবস্থা। একের পর এক চোখে গুলিবিদ্ধ রোগী আসছে। বয়সে প্রায় সবাই কিশোর ও তরুণ। এক পা খোঁড়া এক শারীরিক প্রতিবন্ধী রিকশাওয়ালা পেলাম, যাঁর দুই চোখেই গুলি লেগেছে। এরই মধ্যে ডাক্তার, নার্স আর ওয়ার্ড বয়দের খবর দিলাম। যে যেখানে আছে, সেখান থেকেই যেন জরুরি বিভাগের দিকে রওনা দেয়। জরুরি নয় এমন কিছু রোগী ও রুটিন অপারেশনের অপেক্ষায় থাকা কিছু রোগীকে বুঝিয়ে ছুটি দিয়ে কিছু বিছানা ফাঁকা করলাম, যদিও সন্ধ্যার মধ্যেই ফ্লোর আর বারান্দা রোগীর ভিড়ে পরিপূর্ণ হয়ে উঠল। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">৬টার দিকেই অপারেশন থিয়েটার তৈরি করে ফেললাম। দুই টেবিলেই গুলিবিদ্ধ চোখের অপারেশন শুরু হলো। রাত ১০টার দিকে ডাক্তার, নার্সদের রাতের খাবারের জন্য বাইরে খোঁজ পাঠিয়েও রুটি-কলা ছাড়া কিছু পাওয়া গেল না। অবশ্য রাত ১২টার দিকে হাসপাতালের পরিচালক স্যারের ব্যক্তিগত তত্ত্বাবধানে কয়েক প্যাকেট খাবার পাঠানো হলো, যা ভাগাভাগি করে খাওয়া হলো সবাই মিলে। রাত ৪টার দিকে ওই দিনের ওটি সমাপ্ত করে দুজন মহিলা ডাক্তারকে তাঁদের বাসায় পৌঁছে দিতে গিয়ে মর্গের সামনের দিকে যেতে যেতে এক অভাবনীয় দৃশ্য দেখলাম। অ্যাম্বুল্যান্সের সারি। একের পর এক লাশ নামানো হচ্ছে। নেট সংযোগ না থাকায় আর অপারেশনের ব্যস্ততার কারণে বাইরের খবর খুব একটা নিতে পারিনি। কিন্তু খুব খারাপ কিছু যে ঘটেছে, তা অ্যাম্বুল্যান্সের লাইন দেখেই বুঝতে পারলাম।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পরদিন (১৯ জুলাই) শুক্রবার সকাল থেকেই চোখে গুলিবিদ্ধ রোগীর অপারেশন শুরু হলো। দারুণ কর্মতৎপরতা দেখিয়েছেন চক্ষু বিভাগের ডাক্তার, নার্স আর কর্মচারীরা। এর মধ্যে নতুন রোগী আসছেই। সন্ধ্যা ৬টার দিকে ওই দিনের অপারেশন শেষ করি। এর মধ্যে চোখের অপারেশনের জন্য অত্যাবশ্যকীয় টেন জিরো ভিক্রিলের মজুদ ফুরিয়ে যায়। এত রোগীর চাপ ঢাকা মেডিক্যালের চক্ষু বিভাগ কখনো দেখেনি। রাতেই কমান্ডো স্টাইলে আজিজ সুপার মার্কেট থেকে কিছু টেন জিরো ভিক্রিল সংগ্রহ করি। পরের দিন শনিবারও সকাল দেখেই অপারেশন চলতে থাকে। সব ডাক্তার, নার্সকে ছুটি বাতিল করে জরুরি বিভাগে ন্যস্ত করি রোগীর চাপ সামলাতে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিকেলের দিকে রাইন্ডে গিয়ে এক অবাক করা দৃশ্য দেখি। সকালের পা ফেলার জায়গা না পাওয়া ওয়ার্ড প্রায় ফাঁকা। সকালের সব ভর্তি রোগীসহ আগের দিনের অপারেশনের রোগী সব পালিয়েছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অপারেশনের ক্ষেত্রে যাদের দুই চোখই গুলিবিদ্ধ হয়েছে, তাদের আগে শুরু করি। প্রাথমিকভাবে চোখের ভেতর থেকে গুলি বের করে চোখ রক্ষা করাটাকেই গুরুত্ব দিই। পরবর্তী সময়ে আবারও অপারেশন লাগতে পারে সে ব্যাপারে কাউন্সেলিং করি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কর্তব্যরত ডাক্তার জানালেন, শাহবাগ থানা থেকে সাদা পোশাকের বেশ কয়েকজন পুলিশ এসেছিল ভর্তি রোগীদের নাম-ঠিকানা নিতে। ডিউটি ডাক্তার রোগীদের নাম-ঠিকানা না দেওয়ায় তারা অশালীন আচরণও করেছে আর পুলিশি হয়রানির ভয়ে প্রায় সব রোগীই চলে গেছে।</span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> লেখক : আবাসিক সার্জন (চক্ষু)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল</span></span></span></span></p>