ওই গোলটাই খেলোয়াড়ি জীবনের সেরা মুহূর্ত

  • সত্তরের দশকের আর দশটা কিশোরের মতোই বেড়ে ওঠা তাঁর। বিকেলে লুঙ্গি পরেই ছুট বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে, প্রাণের খেলা দেখতে হবে না! তবে কিশোর খোরশেদ আলম বাবুল খেলতেনও। কাছা মেরে মাঠে নেমে পড়ার দিন থেকেই বিখ্যাত সব স্কাউটদের নজর কেড়ে আবাহনী-মোহামেডানের সীমানা ছাড়িয়ে দীর্ঘ সময় খেলেছেন জাতীয় দলেও। মাসুদ পারভেজকে সেসব সোনালি দিনের গল্পই শুনিয়েছেন তিনি, অবধারিতভাবে এসেছে এ সময়ের ফুটবল নিয়ে তাঁর আক্ষেপের কথাও
notdefined
notdefined
শেয়ার
ওই গোলটাই খেলোয়াড়ি জীবনের সেরা মুহূর্ত
ছবি : লুৎফর রহমান

প্রশ্ন : বয়স ৬০ ছুঁয়েছে আপনার। তা পেছন ফিরে তাকালে ফুটবল জীবনের কোন সাফল্যের কথা সবার আগে মনে পড়ে?

খোরশেদ আলম বাবুল : (হাসি...) আমার তো সেই সময়টির কথাই মনে পড়ছে, যখন আমি দ্বিতীয় বিভাগের দল ঢাকা স্পোর্টিংয়ের হয়ে খেলি। ১৯৭৪ সালের কথা সেটি। বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রথম বিদেশি কোচ হয়ে এলেন একজন রাশিয়ান।

তাঁর নামটি অবশ্য এ মুহূর্তে কিছুতেই মনে করতে পারছি না। তবু দেখুন, এত বছর পরও আমার ফুটবল জীবনে তাঁর অবদানকে আমি এক নম্বরেই রাখছি। তিনিই আমাকে স্বপ্নের সিঁড়িতে তুলে দিয়ে গিয়েছিলেন।

প্রশ্ন : কিভাবে?

খোরশেদ বাবুল : হ্যাঁ, সে কথাতেই আসছি।

রাশিয়ান কোচ এসেই ৬০ জন ফুটবলারকে নিয়ে একটি ক্যাম্প করেন কুমিল্লার কোটবাড়ীতে। এর আগে দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগের ফুটবলারদের নিয়েও ঢাকা স্টেডিয়ামে একটি ট্রায়াল হয়। যেখানে ৪০০-৫০০ অংশগ্রহণকারীর মধ্য থেকে মাত্র তিনজন কোটবাড়ীর ক্যাম্পে যাওয়ার জন্য নির্বাচিত হয়। আমি ছিলাম ওই তিনজনের একজন।
তবে ডিসেম্বরে শীতের মধ্যে ক্যাম্পে গিয়ে দেখি ওখানে আমিসহ লিংকম্যানের সংখ্যা ১০ জন। সেখানে যথাসাধ্য ভালো করার চেষ্টাও করেছি। এরপর ট্রেনিং শেষ হওয়ার পর দেখি, ওই রাশিয়ান কোচ আমাকে এক নম্বর লিংকম্যান হিসেবে নির্বাচিত করেছেন। অবশ্য যেকোনো কারণেই হোক, ক্যাম্পের পর তিনি আর বাংলাদেশেই থাকেননি। কিন্তু স্থানীয় কোচরাও আমাকে আর বাদ দেননি।
রাশিয়ান কোচের বিবেচনায় এক নম্বর লিংকম্যান হওয়ায় তাঁরা আমাকে ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে কুয়েতে এশিয়ান ইয়ুথ চ্যাম্পিয়নশিপের দলেও জায়গা দেন, যা পরবর্তীতে আমার জাতীয় দলে জায়গা পাওয়ার সূত্রও হয়ে যায়। কুয়েতে খেলে এসেই আমি প্রথম বিভাগের দল ভিক্টোরিয়াতেও যোগ দেই। ওই সময় রাশিয়ান কোচ না এলে হয়তো আমার ফুটবল জীবনের গল্পটি এরকম হতোই না। তবে অন্যায় হবে যদি আরেকজনের কথাও না বলি।

প্রশ্ন : কে তিনি?

খোরশেদ বাবুল : তিনি আব্দুর রহিম ভাই। কলকাতায়ও মাঠ মাতিয়ে আসা উনি ছিলেন ভিক্টোরিয়ার কোচ। ১৯৭৪ সালে জার্মানি থেকেও কোচিংয়ের উচ্চতর ট্রেনিং নিয়ে আসেন তিনি। ১৯৭২ সালের শেষ দিকে ওনার চোখে পড়ে যাই আমি। তখন আমাদের বাসা ওয়ারীতে। সেখান থেকে লুঙ্গি পরেই আউটার স্টেডিয়ামে খেলতে চলে যেতাম। লুঙ্গি কাছা দিয়েই খেলতে নেমে যেতাম। ওখানেই আমাকে একদিন ডেকে রহিম ভাই জানতে চাইলেন খেলতে চাই কি না। ক্রিকেটার মুস্তাফিজের মধ্যে যেমন ঈশ্বরপ্রদত্ত কিছু ব্যাপার আছে, সম্ভবত রহিম ভাইও আমার মধ্যে তেমন কিছু দেখতে পেয়েছিলেন। কিন্তু আমি বলে দিলাম যে আগে আম্মার কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। কারণ সামনেই তখন আমার ম্যাট্রিক পরীক্ষা। তার ওপর ক্লাস এইটে থাকতে বাবা মোহাম্মদ শামসুল আলমকে হারানোর পর মা-ই তখন আমাদের সাত ভাই আর এক বোনের সংসারের প্রাণ। ওনার অনুমতি ছাড়া আমি কিছু করি কী করে! তা আম্মা শুধু অনুমতিই দেননি, বুটও কিনে দেন।

প্রশ্ন : আব্দুর রহিমেরও চোখে পড়ার আগে ফুটবলে মজে যাওয়াটা কিভাবে?

খোরশেদ বাবুল : ওই যে বললাম, স্টেডিয়ামের কাছাকাছি বাসা হওয়ার কারণে ছোটবেলা থেকেই খেলার প্রতি অনুরক্ত। স্বাধীনতার আগে তো বিনা পয়সায় খেলা দেখার একটি ফন্দিও বের করে ফেলেছিলাম। ৮-১০ বছর বয়সে খেলোয়াড়দের হাত ধরে মাঠে ঢুকে গেলে কেউ আর কিছু বলত না। তাও আবার কাদের হাত ধরতাম? আলী নওয়াজ, কালা গফুর ও জুনিয়র ইউসুফদের মতো ফুটবলারদের। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে সালাউদ্দিন ভাই যেমন, তেমনি পাকিস্তান আমলে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফুটবলার ছিলেন নওয়াজ। এ স্ট্রাইকারকে আদর্শ মেনেই ফুটবল খেলতে শুরু করেছিলাম। সৌভাগ্য যে বহুদিন পরে হলেও তাঁকে সে কথাটি জানাতে পেরেছিলাম।

প্রশ্ন : কবে সেটি?

খোরশেদ বাবুল : ১৯৮৫ সালে আবাহনীর হয়ে কলম্বোতে এশিয়ান ক্লাব কাপ খেলতে যাই। গিয়ে দেখি আমাদের প্রতিপক্ষ পিআইএ-র কোচ আলী নওয়াজ। তা পিআইএ-কে আমরা ৩-০ গোলে হারানোর পর যখন উনি আমাদের অভিনন্দন জানাতে আসেন, তখনই তাঁকে ‘আইডল’ মেনে বড় হওয়ার কথা জানানোর সুযোগ নষ্ট করিনি। তাঁর মুখে নিজের খেলার প্রশংসা শোনাও কম বড় ব্যাপার ছিল না আমার জন্য। 

প্রশ্ন : আর আবাহনীতেও তত দিনে প্রায় এক দশক পার করে দিয়েছেন আপনি।

খোরশেদ বাবুল : (হাসি...) অথচ এই আবাহনীতে খেলার স্বপ্নের কথা বলে বন্ধুদের কত কটূক্তির শিকার যে আমি হয়েছি! ১৯৭৪ সালের আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচটি হয়েছিল জার্মানি-নেদারল্যান্ডস বিশ্বকাপ ফাইনালের দুদিন পর। বন্ধুবান্ধব মিলে খেলা দেখতে গিয়ে মনে হলো আবাহনী নয়, জার্মানিই যেন খেলছে! ম্যাচ শেষে বন্ধুদের একদিন আবাহনীতে খেলার স্বপ্নের কথা বলেই ফেঁসে যাই। অবশ্য ওরাই-বা হাসবে না কেন? আমি তো স্কুল দলেও সুযোগ পাইনি কোনো দিন। তাই বলে আমিও তো ভাবিনি যে আবাহনীতে খেলার স্বপ্ন এত দ্রুত সত্যি হয়ে যাবে!

প্রশ্ন : সেই স্বপ্ন সত্যি হওয়ার গল্পটিও বিস্তারিত বলুন।

খোরশেদ বাবুল : আবারও সেই রাশিয়ান কোচ এসে যাচ্ছেন। কোটবাড়ীতে উনি যে ক্যাম্পটি করেছিলেন, সেটি দেখতে শেখ কামালও গিয়েছিলেন। এরপর তো ১৯৭৫-র জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে কুয়েতে এশিয়ান ইয়ুথ খেলে এসে যোগ দেই ভিক্টোরিয়ায়। ওই বছরই শেখ কামাল আমাকে আবাহনীতে যোগ দেওয়ার আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়ে রাখেন। কিন্তু তখনকার দিনে আবার প্রথম বিভাগের নতুন খেলোয়াড়দের জন্য একটি নিয়ম মানার বাধ্যবাধকতাও ছিল। নিয়মটি এমন ছিল যে তাঁর প্রথম দলে দুই বছর খেলতেই হবে। সে জন্য আমাকে ১৯৭৫ ও ’৭৬ সালে ভিক্টোরিয়াতেই খেলতে হয়। দুঃখ এটাই, শেখ কামাল জীবিত থাকা অবস্থায় আবাহনীতে খেলতে পারিনি। তবে ওনাকে কথা দেওয়ার কারণেই ১৯৭৭ সালে আবাহনীর প্রস্তাব পেয়ে লুফে নেই।

প্রশ্ন : কিন্তু ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমন বিরূপ ছিল যে তখন লম্বা সময় আবাহনীতে খেলাও খুব সহজ ব্যাপার ছিল না। অথচ আপনি, আশরাফউদ্দিন চুন্নু, অমলেশ সেন ও কাজী সালাউদ্দিনরা আবাহনীর ‘ঘরের ছেলে’ই হয়ে উঠেছিলেন।

খোরশেদ বাবুল : রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে অবশ্যই পরিস্থিতি তখন সুবিধাজনক ছিল না। তবে অন্য দিক থেকে কিছু কিছু ব্যাপার আবাহনীর অনুকূলেও কাজ করছিল। ১৯৭৫-র আগে কিন্তু আবাহনীর তেমন কোনো সমর্থকই ছিল না। তখন শেখ কামাল তাঁর কিছু লোকজন নিয়ে আবাহনীর খেলা দেখতে যেতেন। ১৯৭৪ সালে তারা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর তেমন কোনো হইচইও হয়নি তাই। যেটি হয়েছে ১৯৭৭ সালে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর। কারণ আবাহনীর বিশাল সমর্থকগোষ্ঠী তৈরি হতে থাকে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই। সমর্থকদের কারণেই আমাদের ভয়ডর বলে কিছু ছিল না। এতে করে বাড়তি মনোবলও পেতাম আমরা। 

প্রশ্ন : অর্থাৎ আবাহনীতে যোগ দিয়েই শিরোপার স্বাদ পেয়েছিলেন আপনি।

খোরশেদ বাবুল : শুধু তা-ই নয়, জয়সূচক গোলটিও ছিল আমারই করা। সেবার লিগভিত্তিক খেলার পর সুপার লিগ নকআউটের। সেটির ফাইনালে রহমতগঞ্জ আমাদের প্রতিপক্ষ। তখন তো স্টেডিয়ামে ফ্লাডলাইট ছিল না। ম্যাচ ড্র হওয়ার পর অন্ধকার হয়ে যাওয়ায় টাইব্রেকার করার উপায় ছিল না। তাই ফাইনাল গড়ায় দ্বিতীয় দিনে। সেদিন প্রথমার্ধে আমরা ০-১ গোলে পিছিয়ে। দ্বিতীয়ার্ধে সালাউদ্দিন ভাই সমতা আনেন। কিন্তু আমি তো কিছুতেই সুবিধা করে উঠতে পারছি না। কারণ প্রতিপক্ষ কোচ আমার পেছনে লেলিয়ে দিয়েছেন কালা ভাইকে। ওনাকে চিনেছেন তো? ওই যে ফুটবলে ম্যাচ পাতানো নিয়ে কিছুদিন খবরের শিরোনামে ছিলেন প্রয়াত এই কর্মকর্তা। তা তিনি আমাকে পেলেই গুঁতো দেন। দ্বিতীয়ার্ধে আমি বল নিয়ে যাওয়ার সময় উনি আমাকে এমন ল্যাং মারেন যে পড়ে গিয়ে আমার জার্সিও ছিঁড়ে যায়। রেফারি কাছেই থাকায় কালা ভাইকে লাল কার্ড দেখতে হয়। ওভাবে ‘ফ্রি’ হয়ে যেতেই আমি দু-তিনজনকে কাটিয়ে বক্সের বাইরে থেকে শটে জয়সূচক গোলটি করি। 

প্রশ্ন : আপনার একটি বিশেষত্বের দিকও ফুটবলে তুমুল আলোচিত ছিল। বলা হতো আপনার অফুরন্ত দম। তা ওই দমের রহস্য কী ছিল?

খোরশেদ বাবুল : (হাসি...) আসলে পর্যা প্ত ট্রেনিং ও নিয়মানুবর্তিতার মাধ্যমে যে কারো পক্ষেই দম বাড়ানো সম্ভব। সে জন্য পরিশ্রম করার মানসিকতা না থাকলে হবে না। ছোটবেলায় নদীর ওপারে আমাদের গরুর খামার ছিল। প্রচুর দুধ পেতাম সেখান থেকে। তখন দিনে তিন লিটার দুধও খেয়ে ফেলতাম। ফিটনেসের সঙ্গে পুষ্টিকর খাবারেরও যোগসূত্র আছে। নিজেকে ফিট রাখার দিকেও কম ঝোঁক ছিল না আমার। শুনলে অবাক হতে পারেন। তখন নিজেকে ফিট রাখার জন্য যে পরিশ্রম করতাম, এখনো তা করার চেষ্টা করি। অফিস থেকে প্রতিদিন লাঞ্চের সময় বাসায় চলে যাই। গিয়ে কিছুটা বিশ্রাম নিয়েই বিকেলবেলা আমি জিমে। ৬০ বছর বয়সেও এই কষ্ট করায় ক্লান্তি নেই আমার। আমার খেলোয়াড়ি জীবনের আরেকটি লক্ষণীয় দিকও কিন্তু ছিল।

প্রশ্ন : কী সেটি?

খোরশেদ বাবুল : এই যে পত্র-পত্রিকায় প্রায়ই দেখি ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে লেখা হয়। ও নাকি দলের সবার চেয়ে বেশি পরিশ্রম করে। সবাই চলে যাওয়ার পর ও বাড়তি শ্রম দেয়। আমিও এরকমই ছিলাম। ধরুন, দলে ২০ জন খেলোয়াড় আছে। ওদের নিয়ে রুটিন যে অনুশীলন হতো, আমি এর বাইরেও সবার অগোচরে আরো ঘণ্টাখানেক সময় বেশি খাটতাম। আমি বিশ্বাস করি বাড়তি খাটুনির জন্যই আমি অনেক ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিতে পেরেছি।

প্রশ্ন : এরকম কোনো একটি ম্যাচের কথা যদি বলতে বলি?

খোরশেদ বাবুল : ১৯৮৭-র লিগের আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচটির কথাই বলি। সেবার আমি আবাহনীর সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে মোহামেডানে যোগ দেই। তখনকার আবাহনী খেলছে ওদের সর্বকালের সেরা দল নিয়ে। সামির শাকির ও করিম মোহাম্মদরা ইরাকের হয়ে মাত্রই বিশ্বকাপ খেলে এসেছে। প্রেমলাল-পাকির আলীরাও আছে। তত দিনে ঢাকার সর্বোচ্চ লিগে আমি ১২ বছর পার করে দিয়েছি। ত্রয়োদশ বছরে মোহামেডানে যোগ দিয়েই আমার মাথায় কাজ করছিল আবাহনীর বিপক্ষে বিশেষ কিছু করার চিন্তা। তাই আমি প্রতিদিন বাড়তি কিছু করতে থাকি।

প্রশ্ন : কী করতেন?

খোরশেদ বাবুল : মোহামেডানের অনুশীলনের পর চলে যেতাম সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সেখানে একা একা আলাদা অনুশীলন করতাম। কিভাবে আবাহনীকে হারাব, সেই চিন্তাই কেবল মাথায় কাজ করত। সেটি সম্ভবও হয়েছিল। অথচ মুখোমুখি হওয়ার দিন ওরাই ছিল সুবিধাজনক অবস্থানে। ওরা ড্র করলেই যেখানে চ্যাম্পিয়ন হয়ে যায়, সেখানে ২-০ গোলে এগিয়েও যায়। আমাদের নালজেগার একটি শোধ করার পর দ্বিতীয়ার্ধে সমতা আনে এমেকা। খেলা শেষ হতে যখন পাঁচ মিনিট বাকি, তখন একটি আক্রমণ থেকে ওদের প্রায় জয়সূচক গোল দিয়ে ফেলার মতো অবস্থা। মোহামেডানের বক্সে বল, ওখান থেকেই বল নিয়ে দৌড় দেই আমি। এবং জয়সূচক গোলও করি। ওটা ছিল যাকে বলে আমার ‘সলো এফোর্ট’। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাড়তি অনুশীলনেই ওই মুহূর্তটি জন্ম নিয়েছিল। বেশি কিছু পেতে হলে বেশি কিছু করতেই হয়। আমি নিজেকে সব সময় সেভাবেই তৈরি করে এসেছি। 

প্রশ্ন : বোঝাই যাচ্ছে, আবাহনীর সঙ্গে আপনার সম্পর্ক শেষ হয়েছিল তিক্ততায়।

খোরশেদ বাবুল : তিক্ততা বলব না। আবার আবাহনীর হয়ে ১০ বছর খেলাও কম বড় কথা নয়। অত দিন তো সালাউদ্দিন ভাইও আবাহনীতে খেলেননি। তবে আবাহনীর সঙ্গে আমার সম্পর্ক চুকে যাওয়ার পেছনে দুটি জিনিস কাজ করেছে। এটা ঠিক যে ওদের ‘ঘরের ছেলে’ই হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু ভালো জিনিস বেশি খেতে খেতে যেমন অরুচি ধরে যায়, আমার ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছিল। একই অবস্থা আবাহনীরও। আমার প্রতি ওদেরও অনীহা চলে এসেছিল। এ জন্য আমার গুরুত্বও কমে গিয়েছিল। এতে করে আমার উপকারই হয়েছে। আমি নিজেকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পেরেছি। তাই আরো তিনটি বছর দুর্দান্ত ফুটবল খেলতে পেরেছি। নতুন দল মোহামেডানে যাওয়ায় ওরা গুরুত্ব দিচ্ছিল। যা নিজেকে নতুনভাবে মেলে ধরার ক্ষেত্রে ভীষণ অনুপ্রাণিতও করেছিল। 

প্রশ্ন : আপনি লিংকম্যান ছিলেন। এখনকার জমানায় যে ভূমিকাটি অনেকটা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের মতোই। তা আবাহনীতে মাঝমাঠে আপনার আর আশীষ ভদ্রের জুটি খুব বিখ্যাতও ছিল। আপনাদের সেই সাফল্যের রহস্য কী?

খোরশেদ বাবুল : আশীষকে পেয়েছি আরো অনেক পরে। প্রথমে ছিল অমলেশ সেন। ১৯৭৬ সালে আবাহনীর ফর্মেশনে মিডফিল্ডে ছিল নান্নু ও অমলেশ। ১৯৭৭ সালে আমি যোগ দেওয়ার পর যেকোনো কারণেই হোক নান্নু ভাই ডিফেন্সে চলে যান। তিনি ও আশরাফ ভাই ডিফেন্সে আর মিডফিল্ডে আমি অমলেশের সঙ্গে জুটি বাঁধি। এই জুটি খেলে পাঁচ বছর। এরপর ১৯৮২তে মোহামেডান থেকে আসে আশীষ। ওই বছর আমরা চ্যাম্পিয়ন হইনি যদিও, তবে আবাহনীর হ্যাটট্রিক শিরোপায় (১৯৮৩, ৮৪ ও ৮৫) আমাদের দারুণ সমঝোতার বেশ বড় ভূমিকাই ছিল। ও একটু অ্যাটাকিং খেলত আর আমি ডিফেন্সিভ। পরিশ্রম বেশি করতে পারতাম বলে আমি ডিফেন্সে বাড়তি মনোযোগ দিতাম। দুজনেই ডিফেন্সিভ বা অ্যাটাকিং হয়ে গেলে যে সমস্যা, সেটি আমরা বুঝতাম। বুঝতাম বলেই দুজন দুই ধরনের খেলতাম। এ কারণেই আমরা সফল ছিলাম। তাতে করে দল দুজনের কাছ থেকে দুই ধরনের সার্ভিস পেত।

প্রশ্ন : দেখা যাচ্ছে আপনার ক্যারিয়ারে রাশিয়ান কোচের মতো নান্নু ভাইয়ের অবদানও কম নয়। আবাহনীতে যোগ দিয়েই প্রতিষ্ঠা পাওয়ার ক্ষেত্রে তো দেখছি তাঁরও ভূমিকা আছে।

খোরশেদ বাবুল : ঠিকই বলেছেন। আপনি না তুললেও আমি প্রসঙ্গটি তুলতামই। শুরুতে রহিম ভাইয়ের কথা বলছিলাম। উনি সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা ভাবনার জন্যও বিখ্যাত ছিলেন। আমি ভিক্টোরিয়ায় যোগ দেওয়ার পর দেখি তিনি মাসিক বেতন চালু করেছেন। ২০ জনের সঙ্গে চুক্তি, মাসে বেতন আড়াই শ টাকা। আবাহনী থেকে প্রস্তাবের কথা শুনে ভিক্টোরিয়ার সতীর্থরা বলল, গিয়ে তো বসে থাকবে! কারণ আবাহনীর মাঝমাঠ যে তখন নান্নু ও অমলেশের দখলে। সতীর্থদের বুঝিয়ে বললাম, গিয়ে সুযোগ না পেলে পরেরবার আবার ভিক্টোরিয়ায় ফেরত আসব। কিন্তু গিয়ে দেখি নান্নু ভাই আমার জন্য পজিশন ছেড়ে দিয়েছেন। ওটা আমার খেলোয়াড়ি জীবনের আরেকটি টার্নিং পয়েন্ট। সেবার ঝুঁকি নিয়ে আবাহনীতে না গেলে হয়তো ফুটবলার হিসেবে এই পর্যা য়ে আমি নাও আসতে পারতাম। আড়াই শ টাকার বেতন থেকে আবাহনীতে যোগ দেই ২০ হাজার টাকার চুক্তিতে। আবাহনীতে শেষের দিকে বছরে গড়ে পাঁচ লাখ পেতাম। মোহামেডানে যাই আরো দুই লাখ টাকা বেশিতে। সেখানে যাওয়াটা ‘ভাইস-ভার্সা’। ওদের অফার ছিল, আমারও যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। 

প্রশ্ন : এই সময়ে ফুটবল খেললে কি আরো বেশি সফল হতেন বলে মনে করেন?

খোরশেদ বাবুল : এটা ঠিক যে আমাদের সময়ে মিডিয়ার এত রমরমা ছিল না। এখন কত চ্যানেল! আমিই শুধু নই, এখন খেললে আমাদের সময়ের অনেক খেলোয়াড়েরই অর্জন আরো বেশি থাকত। ১৯৭৮ সালে এশিয়ান ইয়ুথ চ্যাম্পিয়নশিপের দলটির কথাই ধরুন। জার্মানির বেকেলহফট তখন কোচ। ওই দলে সাতজন মিডফিল্ডার—আমি, মহসিন, সালাউদ্দিন ভাই, এনায়েত ভাই, বাবলু, অমলেশ সেন ও রামা লুসাই। এই সাতজনের মধ্যে খেলত মোটে দুজন! এঁদের বাইরেও এমন কয়েকজন ছিলেন যাঁরা দলে ঢোকার দাবি জানাচ্ছিলেন। আবাহনীর গোলাম রব্বানী হেলাল, মোহামেডানের ভানু ও শরীফউজ্জামান এবং রহমতগঞ্জের তমিজউদ্দিন। কী প্রতিযোগিতাই না ছিল সেই সময়! এখনকার সময়ে আমরা থাকলে দেশের ফুটবলটা ব্যর্থতার অন্ধকারে তলিয়ে যেত না। বরং অনেক সমৃদ্ধ হতো এবং এগিয়েও যেত।

প্রশ্ন : নিয়মনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবেও বেশ সুনাম ছিল আপনার।

খোরশেদ বাবুল : হ্যাঁ, সব সময় নিয়মের মধ্যেই থেকেছি। যে জন্য ক্যারিয়ারও লম্বা হয়েছে। টুটুলের (দেওয়ান শফিউল আরেফীন) যেমন আমার সঙ্গেই ক্যারিয়ার শুরু। কিন্তু জাতীয় দলে খেলেছে মোটে চার বছর। কিন্তু আমি? ১৯৭৬ সালে জাতীয় দলে শুরু আর শেষ ১৯৮৭ সালে। এত লম্বা সময় কেউ খেলেনি। অনেকে আছে একটা টুর্নামেন্ট খেলে বাদ পড়েছে, আবার ফিরেছে। আমি কখনো বাদ পড়িনি। ফুটবল শুধু মাঠেই হয় না, মাঠের বাইরেও খেলা আছে। মাঠের বাইরে কি? নিয়ম মানা, মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার। টুটুল করত এর উল্টোটা। ১৯৭৭ সালে ও আবাহনীতে। ফাঁকি মারত আর এর ব্যাখ্যাও দাঁড় করাত। আমাকে এসে একবার বলল, ‘আপনি প্র্যাকটিস করে যা খেলছেন, আমি তো না করেই তা খেলছি।’ লম্বা সময় খেলতে হলে এই ছোট ছোট ব্যাপারগুলোই অনেক বড় ফারাক গড়ে দেয়। ১৯৮৫ সালে সে এটার গুরুত্ব বুঝেছে। কিন্তু তত দিনে অনেক দেরি করে ফেলেছে। সাফ গেমসের পাকিস্তান ম্যাচে দুটি মিস করার পর সেই যে কোচ সালাউদ্দিন ভাই ওকে বসিয়ে দেন, আর কোনোদিন ফিরতে পারেনি। কী করবেন সালাউদ্দিন ভাই? দর্শকরা এমন চিৎকার করছিল যে সালাউদ্দিন ভাই ওকে উঠিয়ে নিতে বাধ্যই হন। ভাববেন না যে টুটুলের সঙ্গে আমার কোনো ঝামেলা ছিল। আসলে ও যে মানের খেলোয়াড় ছিল, নিয়ম মানলে জাতিকে আরো ভালো কিছু দিতে পারত। এ কারণেই বারবার ও উদাহরণ হিসেবে এসেছে।

প্রশ্ন : ‘গুড বয়’ সুলভ ইমেজের কারণেই কি বারবার অধিনায়ক হিসেবে আপনাকে বেছে নেওয়া হতো?

খোরশেদ বাবুল : আবাহনীতে তো একবারই অধিনায়কত্ব করেছি। এর বেশি করার সুযোগও ছিল না। কারণ তখন কাউকে টানা দুই বছর অধিনায়ক রাখা হতো না। একেক বছর একেকজনকে নেতৃত্ব দেওয়া হতো। আমি সেটি পাই ১৯৮১ সালে। সফলও হই কারণ আমরা সেবারের লিগ চ্যাম্পিয়ন। তবে জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়েছি বহুবার। মাশরাফি বিন মর্তুজার মধ্যে যেমন নেতাসুলভ কিছু ব্যাপার আছে, তখন হয়তো আমার মধ্যেও তা ছিল। কোচের অনুপস্থিতিতে জাতীয় দলের অনুশীলনও চালিয়েছি আমি। টিপু ভাই ও সালাউদ্দিন ভাইয়ের মতো কোচরা নিশ্চিন্তে আমার ওপর কিছু সেশন চালানোর দায়িত্ব ছেড়ে দিতেন।

প্রশ্ন : আপনার সমসাময়িক ফুটবলারদের মধ্যে লম্বা চুল রাখার একটি ফ্যাশন চালু ছিল। কিন্তু আপনি কোনো দিনই তা রাখেননি। কেন?

খোরশেদ বাবুল : (হাসি..) আমি মানুষের কাছ থেকেও ধারণা নিতাম যে তারা কোনটা পছন্দ করে বা করে না। আমি কথা বলার চেয়ে শুনতে পছন্দ করি। সামাজিকভাবে মুরুব্বিরা লম্বা চুল রাখা পছন্দ করতেন না, তাই আমিও রাখতাম না! তা ছাড়া আমি যা ছিলাম, সেটাই মানুষ পছন্দ করত। তাই বাড়তি কিছু করার চেষ্টাও করিনি।

প্রশ্ন : আপনার কথায় বারবারই উদাহরণ হিসেবে ক্রিকেটাররা এসে যাচ্ছেন। এটা কি দেশের এখনকার ফুটবল নিয়ে বিতৃষ্ণা থেকেই?

খোরশেদ বাবুল : সত্যি কথা, এসএ গেমসে ভুটানের সঙ্গে ড্র করার পর ফুটবল থেকে মন উঠেই গেছে। এত অধঃপতন মেনে নেওয়া যায় না। জীবদ্দশায় ফুটবলের এ অবস্থা দেখে যাওয়াটা দুর্ভাগ্যজনক। তার পরও এবার ‘বাঁচাও ফুটবল’ পরিষদ থেকে বাফুফের নির্বাচনে সহসভাপতি প্রার্থী হয়েছি। দেখি, নির্বাচিত হলে এই রুগ্ণ ফুটবলকে জাগিয়ে তোলা যায় কিনা। তবে ক্রিকেটারদের উদাহরণ দিয়েছি অন্য কারণে। একসময় আকরাম (খান), নান্নু (মিনহাজুল আবেদীন) ও বুলবুলরা (আমিনুল ইসলাম) দারুণ ফুটবল খেলত, হয়তো ফুটবলারও হতে চাইত। কারণ তখন সেটিই ছিল এক নম্বর খেলা। আর এখন যে অবস্থা তাতে পুনর্জম্ম হলে হয়তো আমি আগে ক্রিকেটের দিকেই যাব।

প্রশ্ন : আপনার খেলোয়াড়ি জীবনের সেরা মুহূর্ত কোনটি?

খোরশেদ বাবুল : ১৯৮৭-র লিগে আবাহনীর বিপক্ষে জয়সূচক গোলের পরের মুহূর্তটি। নিজেদের বক্স থেকে দৌড়ে গোল করে আবাহনীর গ্যালারির সামনে ওদের কর্মকর্তাদের সামনে দিয়ে যে দৌড়টা দেই, সেটা আমার জীবনের সেরা মুহূর্ত। এই দৌড়ের শক্তি যে আমি কোত্থেকে পেয়েছিলাম, নিজেও জানি না! ওরা শেষের দিকে আমাকে গুরুত্ব দিচ্ছিল না। আমি গোল করে সেই গুরুত্বটি বুঝিয়ে দিতে পেরেছিলাম। এমেকা ও নালজেগারের মাঝখানে আমি ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। আমি বল নিয়ে রাইট আউট রঞ্জিতকে থ্রু বাড়াই। ও উঠে গিয়ে মাইনাস করে আর আমি বক্সের ওপর থেকে ফিনিশ করি।

প্রশ্ন : আর জাতীয় দলের সেরা মুহূর্ত?

খোরশদ বাবুল : ১৯৮২-র এশিয়ান গেমসে দিল্লিতে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে জয়টি। ওই দিন আমিও ভালো খেলেছিলাম, দলও ২-১ গোলে জিতেছিল। একটি গোলের কথাও বলব। যেটিকে সমসাময়িকরা ‘ম্যারাডোনা গোল’ই বলে। যা ছিল অনেকটা ১৯৮৬-র বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করা ম্যারাডোনার গোলটির মতোই। সেই গোলটির কথা এখনো অনেকে মনে করিয়ে দেয় আমাকে। ১৯৮৭ সালে করা গোলটি নেপালের একটি ক্লাব দলের বিপক্ষে, যে দলে জাতীয় দলের খেলোয়াড়ই বেশি ছিল। ছয়-সাতজনকে কাটিয়ে গোল করি। আবাহনীর বিপক্ষে উইদাউট বলে ফিনিশ করেছিলাম আর এটা উইথ বলে। এমেকা একদিকে ফলস রানিং করেছিল, নেপালি ফুটবলাররা মনে করেছিল আমি হয়তো বল ওকেই দেব। সেই সুযোগে আমিই গোল করে দেই।

প্রশ্ন : বাংলাদেশের ইতিহাস সেরা ফুটবলার সালাউদ্দিন না এনায়েত? এই প্রশ্নে আপনাদের সময়ের ফুটবলারদের বিভক্ত হয়ে যেতে দেখি। তা আপনি কাকে এগিয়ে রাখবেন?

খোরশেদ বাবুল : অ্যাথলেটিকস হলে মেপে বলে দেওয়া যেত। ফুটবলে এটা বলা কঠিন। দুজনের ধরনই তো অন্য রকম। স্ট্রাইকার যে সে গোল করবে। সে তো ডিফেন্সে আসবে না। তাই বলে কি ডিফেন্ডারের দাম নেই? এনায়েত ভাই মিডফিল্ড থেকে স্ট্রাইকিংয়ে যেতেন। আর সালাউদ্দিন ভাই স্ট্রাইকিংয়ে থাকতেন। কে জনপ্রিয়, সেটা বললে হয়তো একজনকে এগিয়ে রাখা যায়। তবে যদি রেজাল্টের কথা বলেন, তাহলে আসলামকে এঁদের দুজনের চেয়ে এগিয়ে রাখব। সে দেশের পক্ষে অনেক গোল করেছে। যেটা সালাউদ্দিন বা এনায়েত ভাই করেননি। তাঁরা অবশ্য জাতীয় দলে খেলেছেনও কম। এনায়েত ভাই তো সালাউদ্দিন ভাইয়ের চেয়েও কম। অনেকে বলে শান্টু বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা গোলকিপার। কিন্তু আমার দৃষ্টিতে মহসিন। মহসিন রেজাল্ট দিয়েছে। মালয়েশিয়াকে হারানোর ম্যাচে ভালো খেলেছে। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ভালো খেলেছে।

প্রশ্ন : কোনো অতৃপ্তি আছে আপনার?

খোরশেদ বাবুল : বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আমি পুরোপুরি সন্তুষ্ট। হাতে না পেলেও ২০১২ সালের জাতীয় পুরস্কারের জন্য আমার নাম ঘোষিত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্লু পেয়েছি। আর আমার চাওয়া-পাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধতাও আছে। আল্লাহ তায়ালা যা দিয়েছেন, তাতেই খুশি। টাকা বানিয়েছি, তাই বলে আরো বানানোর জন্য রাতের ঘুম হারাম করে দেইনি।

প্রশ্ন : সবশেষে আপনার বর্তমান পেশা ও পারিবারিক জীবন নিয়ে একটু ধারণা চাই।

খোরশেদ বাবুল : ব্যবসা করছি। বন্ধুর সঙ্গে অংশীদারিত্বে কে এম নির্মাতা নামের ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান আছে আমার। এ ছাড়া আভ্যন্তরীণ রুটে মালামাল পরিবহনের শিপিং ব্যবসাও আছে। ১৯৮৪ সালে বিয়ে করেছি ফাতেমা আলম শিল্পীকে। ওর আর আমার ঘরে তিন মেয়ে। বড় মেয়ে সানজিনা আলম লন্ডনে থাকে, ওর স্বামী ইয়াসির খান চৌধুরী বিবিসির আইটি ডিপার্টমেন্টের হেড। মেজ মেয়ে তানজিনা আলম পড়াশোনা করছে লন্ডনের কিংস্টন ইউনিভার্সিটিতে। আর ছোট মেয়ে আফসানা আলম ‘এ’ লেভেল দেবে। ক্লাস ওয়ানে পড়া নাতনিও আছে আমার। এই তো!

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ