<p style="text-align: center;"><span style="color:#d35400;"><strong>২০১৯ বিশ্বকাপে নতুন ব্র্যান্ডের ক্রিকেট দিয়ে বাজিমাত করেছে ইংল্যান্ড। এই নতুন ব্র্যান্ডটাই বাংলাদেশ দলের জন্য চূড়ান্ত বাধা। নতুন ব্র্যান্ডের ছুটন্ত এই ট্রেনকে সময়-সুযোগমতো চেইন টেনে থামাতে পারার ওপর অনেকটাই নির্ভর করছে বাংলাদেশের এবারের বিশ্বকাপ সম্ভাবনা</strong></span></p> <p>১৯ নভেম্বর মধ্যরাতে আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে আতশবাজি নিশ্চিতভাবেই পুড়বে। শুধু আগাম বলা যাচ্ছে না, সেই আলোয় উদ্ভাসিত দল কোনটি। তারও আগে, ১১ নভেম্বর পুনের ম্যাচের কি কোনো তাৎপর্য থাকবে? সেদিন সকালে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ দল। ওটা পুল পর্বে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচ। তার আগেই শেষ হয়ে যাবে ২০২৩ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সম্ভাবনা? নাকি তত দিনে নিশ্চিত হয়ে যাবে বাংলাদেশের প্রথম ‘মিশন সেমিফাইনাল’? অথবা ম্যাচটি পরিণত হয়ে যাবে স্রেফ আনুষ্ঠানিকতা?</p> <p><img alt="h" height="293" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2023/10.October/03-10-2023/RIF/05-10-2023-P4-2 (1).jpg" style="float:left" width="180" />৫ অক্টোবর বিশ্বকাপ শুরুর আগে জনতার জরিপে সুনির্দিষ্ট কোনো উত্তর মেলেনি। কালের কণ্ঠ’র বিশেষ এই বিশ্বকাপ আয়োজনে বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি ক্রীড়াঙ্গনের অন্যদের লেখার সারমর্মে বাংলাদেশ দলকে ঘিরে প্রত্যাশার উত্তাল হাওয়া নেই। সেমিফাইনাল খেলতে পারলেই সাকিব আল হাসানদের অর্জনকে মহাসমারোহে বরণ করে নেবে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের স্বাদই অজানা যে! আর সেমির ভারী দরজা ঠেলে ঢুকে পড়ার পর ফাইনালের অপার সম্ভাবনা। ফাইনাল তো একটা মাত্র ম্যাচ, যেকোনো কিছুই ঘটতে পারে!</p> <p>না, সাকিবদের হার্ডকোর ভক্তকুল ছাড়া আহমেদাবাদের আতশবাজির সম্ভাব্য দর্শকসারিতে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের কাউকে দেখিনি। স্বয়ং চন্দিকা হাতুরাসিংহে সেমিফাইনালকে গন্তব্য ঠিক করে রেখেছেন। অথচ আইসিসির ওয়ানডে সুপার লিগের পয়েন্ট তালিকায় এখনো ৩ নম্বরে দেখাচ্ছে বাংলাদেশকে। তাহলে তো সেমির দাবি অতি সামান্য। প্রধান কোচের তো বটেই, পুরো দলেরই সমস্বরে বিশ্বকাপ জয়ের দাবি তোলা উচিত।</p> <p>স্বপ্ন হয়তো তাঁরা দেখেন। কিন্তু সেই স্বপ্নপূরণের পথের সমস্যার মাইন পোঁতা আছে, সেটিও তাঁরা ভালো করে জানেন। বিশ্বকাপ তো আর এক-দেড় সপ্তাহের কোনো দ্বিপক্ষীয় সিরিজ নয়। স্রেফ অর্থ উপার্জনের নামে এশিয়া কাপ কিংবা ত্রিদেশীয় সিরিজও নয়। টি-টোয়েন্টির রমরমা বাজারেও এই একটা টুর্নামেন্টের জন্য বিশ্বের শীর্ষ ক্রিকেটার এবং বোর্ডগুলো সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের যুগে এই ঝাঁপাঝাঁপি কত দিন অব্যাহত থাকবে, সেটা সময়ই বলবে। তবে ২০২৩ বিশ্বকাপের প্রস্তুতি পর্বে পুরনো চর্চা দেখা যাচ্ছে। ১০ দলই সম্ভাব্য সেরা দলকে বিশ্বকাপের সেরা মঞ্চে তোলার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে এবং এখনো করছে।</p> <p>তার মানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে সর্বোচ্চ পর্যায়ের। ক্রিকেট সমর্থকদের ব্যান্ড বাজবে সর্বোচ্চ ডেসিম্যালে। এমন পরিস্থিতিতে একের পর এক ৯টি ম্যাচে ফোকাস ধরে রাখা কঠিন, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো দলের জন্য। ২০১৯ সালে পারেনি। তবে ওভালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটা নিজেদের ভুলে হাতছাড়া না হলে নিশ্চিতভাবেই মোমেন্টাম পেয়ে যেত বাংলাদেশ দল। ক্রিকেটে ছন্দটাই শক্তি। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর যে অনুপ্রেরণা, নিউজিল্যান্ডের হাতে ম্যাচ তুলে দেওয়ার পর সেই ছন্দ আর ধরে রাখা যায়নি। একের পর এক ম্যাচের লম্বা জার্নির ধকল নিতে পারেনি মাশরাফি বিন মর্তুজার দল।</p> <p>ভারতে এবারের বিশ্বকাপে এই ভয় আরো বেশি। ভয় বাড়িয়ে দিয়েছে মানচিত্র। ফরম্যাট একই। তবে ইংল্যান্ডে সুবিধা ছিল এক ভেন্যু থেকে আরেক ভেন্যুর দূরত্ব ভারতের মতো নয়। কিন্তু ভারত বিশাল দেশ। এক ভেন্যু থেকে আরেক ভেন্যুতে আকাশপথে যাত্রার বিকল্প ব্যবস্থা খুবই সময়সাপেক্ষ। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে এয়ার টার্বুলেন্স এড়ানোর জন্য তিন নামি ক্রিকেটার নিজেরা ড্রাইভ করে আরেক শহরে গিয়েছিলেন। ভারতে সেটি নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট অনুমোদন করবে না। ক্রিকেটারদের কেউও ঝুঁকি নেবেন না। উড়োজাহাজের ঝাঁকুনি বরং আরো বেশি ভারতে।</p> <p>বিষয়গুলো অক্রিকেটীয় মনে হতে পারে। শহর থেকে শহরে তো অন্য দলগুলোকেও ওড়াউড়ি করতে হবে। এই সমস্যা তাই কোনো অজুহাত হতে পারে না। বরং সত্যিকারের চ্যালেঞ্জ শুরু থেকে ছন্দে থাকার। অথবা সময়মতো ছন্দটা ধরে ফেলার। ২০১৯ সালেও তো একটু দেরিতে ঘুম ভাঙা ইংল্যান্ডই জিতেছিল বিশ্বকাপ। প্রথম দুটি বিশ্বকাপের ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বাদ দিলে প্রায় সব আসরের চ্যাম্পিয়ন দল বাজিমাত করেছে শেষ ল্যাপে এসে।</p> <p>বাংলাদেশ দলের কয়েকজন আবার নিজেদের ক্যারিয়ারেরই শেষ ধাপে। এঁরা কারা? অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, সদ্যই অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো তামিম ইকবাল, সাবেক অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদ উল্লাহ। এই নামগুলো টাইপ করার সময় দেশের ক্রিকেটীয় গৌরবের বেশির ভাগই চোখের সামনে ভেসে উঠছে। মাশরাফি এবারের ফ্রেমে নেই। দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের উজ্জ্বলতম ফ্রেম থেকে তাঁরাও অতীত হয়ে যাবেন পরের ওয়ানডে বিশ্বকাপে! ক্রিকেট রোমান্টিসিজমের নতুন গল্প নিশ্চয়ই কেউ কেউ লিখবেন অনাগত দিনে। কিন্তু পঞ্চপাণ্ডব থেকে ‘ফ্যাবুলাস ফোর’ কিংবা ‘থ্রিলিং থ্রি’র পর টুকরা টুকরা স্মৃতির মাইলফলক হয়ে থাকবেন তাঁরা।</p> <p>এঁরা অনেক বড় স্বপ্ন নিয়ে ২০১৯ বিশ্বকাপে গিয়েছিলেন। এবারও এর ব্যত্যয় ঘটার কথা নয়। তবে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ তাঁদের বুঝিয়েছে স্বপ্নের সেই গন্তব্য অনেক দূরের পথ। টি-টোয়েন্টির স্রোতে ভেসে যাওয়া ক্রিকেটের সঙ্গে তাল মেলানো সেদিনই সম্ভব, যেদিন দলের সবাই সামর্থ্যের শিখর ছুঁতে পারবেন।</p> <p>বাংলাদেশের বিশ্বকাপ সম্ভাবনায় এটা একটা অন্তরায়। দলীয়ভাবে ম্যাচ বের করে নিতে হয়। প্রতি ম্যাচে দলের প্রায় সবার কাছ থেকে সবটুকু পাওয়া খুব কঠিন। অথচ বিশ্বের নামিদামি দলগুলোয় একাধিক ম্যাচ উইনার থাকেন, যাঁরা একা হাতে ম্যাচ বের করে নিতে পারেন। একজন ব্যর্থ হলে অন্যজন সাফল্যের ব্যাটন ধরে ফেলেন। তাই বিশেষজ্ঞ মহলে খুব উচ্চাশা নেই। তবে দলীয় সংগীত গেয়ে যদি সাকিবরা সেমিতে পৌঁছে যান, তখন শিরোপা যেকোনো দলের হাতে উঠতে পারে। নক আউট পর্বে ফেভারিট-তত্ত্ব সব সময় মেলে না। কে ভেবেছিল, ১৯৮৩ বিশ্বকাপে মাত্র ১৮৩ রানের পুঁজি নিয়ে সে সময়কার ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে দেবে ভারত? পরেরবার ভারত থেকে ট্রফি নিয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়া। ১৯৯২ কিংবা ১৯৯৬ বিশ্বকাপেও পূর্বাভাস মেলেনি। পরের তিনটি আসর অস্ট্রেলিয়া জিতেছে প্রশ্নাতীতভাবে। ভারতের ২০১১ বিশ্বকাপ জয়ও অভাবিত কোনো কাণ্ড নয়। আবার ২০১৯ বিশ্বকাপে নতুন ব্র্যান্ডের ক্রিকেট দিয়ে বাজিমাত করেছে ইংল্যান্ড।</p> <p>এই নতুন ব্র্যান্ডটাই বাংলাদেশ দলের জন্য চূড়ান্ত বাধা। নতুন ব্র্যান্ডের ছুটন্ত এই ট্রেনকে সময়-সুযোগমতো চেইন টেনে থামাতে পারার ওপর অনেকটাই নির্ভর করছে বাংলাদেশের এবারের বিশ্বকাপ সম্ভাবনা। নির্ভর করছে অনাগত দিনে নাতি-নাতনিদের সঙ্গে অবসরে সাকিব-তামিম-মুশফিকরা বিশ্বকাপ নিয়ে কী গল্প করবেন, সেসবও।</p> <p>সেসব সময়ের হাতে তোলা থাক। আপাতত সিটবেল্ট ঠিকঠাক বেঁধে নিন। বিশ্বকাপের উড়ান রোমাঞ্চের ঝাঁকুনি দেবেই!</p> <p> </p> <p> </p> <p> </p>