<p>বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন বলেছেন, ‘অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করতে ট্যাক্স রেট বেঁধে দেওয়া আমরা কোনোভাবেই সমর্থন করি না। এই রেট অবশ্যই গ্রাহকের সম্পদের পরিমাণের ওপর হওয়া উচিত। ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করে দেওয়া ‘ট্যাক্স ইকুইটির (কর ন্যায্যতা) খেলাপ বলে মনে করি।’</p> <p><img alt="অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করতে কর বেঁধে দেওয়া সমর্থন করি না" height="386" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/06.June/03-06-2024/Rif/09-06-204-p9-5.jpg" style="float:left" width="250" />গতকাল শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিআইডিএসের সেমিনারকক্ষে প্রথমবারের মতো বাজেট পর্যালোচনার আয়োজন করা হয়। এতে আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়।</p> <p>বাজেট প্রস্তাবে আগামী জুলাই মাস থেকে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে বিনা প্রশ্নে এক বছরের জন্য কালো টাকা সাদা বা বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। বিনায়ক সেন বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে গ্রাহকের বৈধ আয়ও অপ্রদর্শিত আয় হতে পারে। এ ক্ষেত্রে অপ্রদর্শিত আয়কে প্রদর্শনের সুযোগ দেওয়া দরকার। তবে অপ্রদর্শিত আয়কে প্রদর্শনের সুযোগে একেবারে ট্যাক্স মওকুফ করা কিংবা একটি নির্দিষ্ট রেট বেঁধে দেওয়ার পক্ষে নই আমরা। আমাদের অবস্থান মধ্যবর্তী।’</p> <p>তিনি বলেন, ‘গ্রাহকের কাছে যে পরিমাণ অপ্রদর্শিত আয়ের অর্থ থাকবে, সেই সম্পদের পরিমাণ অনুযায়ী ট্যাক্স নির্ধারণ করা উচিত। সেটা হতে পারে ১৫ শতাংশ, আবার হতে পারে ২০, ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। ১৫ শতাংশ ট্যাক্স বেঁধে দেওয়া ট্যাক্স ইকুইটির খেলাপ বলে মনে করি।’</p> <p>ঋণখেলাপি নিয়ে তিনি বলেন, ‘ঋণ পুনঃ তফসিলের সুযোগ চারবার দেওয়া উচিত নয়। এটা আগে দুইবার ছিল। চারবারে এটা ১২ বছর হয়ে যায়। এ সময়ে অর্থনীতির অবস্থা বদলে যায়। তাই এই দীর্ঘ সময়ে ঝুঁকি তৈরি হয়। কেন আমরা অযথা এ ঝুঁকি নেব?’</p> <p>বিনায়ক সেন বলেন, ‘বাজেটে একটি বিষয়ে এবার গুরুত্ব দেওয়া দরকার ছিল। এলডিসির পর আর আমাদের শুল্ক সুবিধা থাকবে না। তাই বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমাদের দ্রুত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করা দরকার। সেটা এখন প্রসেসিং করলেও আট থেকে ১০ বছর লেগে যাবে। এখন না করলে পরে সমস্যায় পড়তে হবে।’</p> <p>তিনি বর্তমান ডলার সংকট মোকাবেলায় শুধু আইএমএফের দারস্থ না হয়ে অন্যান্য সংস্থা বা দেশের সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দেন। সংকট কাটাতে দীর্ঘস্থায়ী পলিসি ফ্রেমওয়ার্ক করা দরকার বলে তিনি মনে করেন।</p> <p>সভায় সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে কথা বলেন বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক মনজুর হোসেন। তিনি বলেন, সরকার এবার মুদ্রানীতির সঙ্গে সমন্বয় রেখে একটি ভারসাম্যপূর্ণ বাজেট প্রস্তাব করেছে। এতে যেমন কৃচ্ছ্রসাধন করা হয়েছে, আবার প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রাও রাখা হয়েছে। </p> <p>মনজুর হোসেন বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির বিষয়টি মাথায় রাখা দরকার। তা না হলে জ্বালানির দাম মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিতে পারে। তিনি মূল্যস্ফীতি কমাতে রাশিয়া ও চায়না থেকে কম দামে জ্বালানি আনা যায় কি না, সেটা দেখার আহ্বান জানান। বাজার স্বাভাবিক না হলে ডলারের দাম আরো বাড়বে, যা মূল্যস্ফীতি আরো বাড়িয়ে দেবে বলে তিনি মনে করেন।    </p> <p>বাজেটে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে সামান্য বরাদ্দ বাড়লেও এসব খাতে মানসম্মত সেবা বাড়ানোর কোনো দিকনির্দেশনা নেই—বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ড. এস এম জুলফিকার আলী বলেন, এসব খাতে সেবার মান বাড়ানোর প্রয়োজন আছে। এ ছাড়া তাদের বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা দরকার। শুধু অবকাঠমো নির্মাণ না করে সেবার দিকে জোর দেওয়া দরকার। যে যন্ত্রপাতি আছে, তা দিয়েই সেবা দেওয়া উচিত। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা বাড়ানো দরকার। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ও ল্যাপটপ দেওয়া হয়। সেটা ব্যবহার হয় না, পড়ে থাকে। এ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। </p> <p>বিআইডিএসের সভায় বক্তারা বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থনীতির মধ্যমেয়াদি প্রেক্ষিত হিসেবে মুদ্রার বিনিময় হার সমন্বয়, সুদহারে সীমা তুলে নেওয়া, নিয়ন্ত্রিতভাবে বাজেটের আকার বৃদ্ধি ও সামাজিক সুরক্ষার আওতা বাড়ানোর মতো বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মুদ্রানীতির সঙ্গে সমন্বয় রাখা হয়েছে। তবে মধ্যমেয়াদি এসব নীতির সুফল পেতে সরকারকে সময় দিতে হবে।</p> <p>এ প্রসঙ্গে বিনায়ক সেন বলেন, বাজেটে যেসব মধ্যমেয়াদি প্রস্তাবনার কথা বলা হয়েছে, তা কার্যকর হতে সময় লাগবে। রাতারাতি এটি বাস্তবায়িত হবে না। তবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা অনুকূলে থাকলে এবং সরকার আর্থিক খাতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার আনলে এই বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা সম্ভব।</p> <p> </p> <p> </p>