২৫ বছরের যাত্রায় প্রিমিয়ার ব্যাংকের অর্জন কী?
দি প্রিমিয়ার ব্যাংক পিএলসি ১৯৯৯ সালের ২৬ অক্টোবর ডা. এইচ বি এম ইকবালের নেতৃত্বে যাত্রা শুরু করে। গত ২৫ বছরে রিয়েল টাইম অনলাইন ব্যাংকিং, ইসলামী ব্যাংকিং সেবা, প্রিমিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিং ও স্মার্ট ব্যাংকিং অ্যাপ ‘পিমানি’ চালুর মতো অসাধারণ মাইলফলক অর্জন করেছি। বিগত ২৫ বছরে আমরা অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সর্বস্তরের গ্রাহককে পাশে নিয়েই একটি গ্রহণযোগ্য ব্র্যান্ড ‘প্রিমিয়ার ব্যাংক’ গড়ে তুলেছি, যা বিশ্বস্ততার প্রতীক।
প্রতিযোগিতামূলক বাজারে আপনাদের ব্যাবসায়িক কৌশল কী?
আর্থিক স্থিতিশীলতা, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং গ্রাহককেন্দ্রিক সমাধানগুলোর ওপর ভিত্তি করেই আমরা আমাদের ব্যাবসায়িক কৌশল নির্ধারণ করি।
আমাদের মূল শক্তি হলো শক্তিশালী ব্র্যান্ড ভ্যালু, অভিজ্ঞ পরিচালনা পর্ষদ ও দক্ষ জনবল। আমাদের বিস্তৃত শাখা, উপশাখা, এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট, অল্টারনেটিভ ডেলিভারি চ্যানেল এবং প্রতিযোগিতামূলক পণ্য পোর্টফোলিওর মাধ্যমে আমরা বাজারে খুব ভালো অবস্থানে আছি। এ ছাড়া আমরা ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন, পরিচালন দক্ষতা এবং গ্রাহকসেবার উৎকর্ষের ওপর জোর দিচ্ছি। আমাদের পরিকল্পনা আগামী কয়েক বছরে আমাদের ব্যবসা ও বাজার শেয়ার দ্বিগুণ করা, যা আমাদের শক্তিশালী ব্যাংকিং কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠবে।
প্রিমিয়ার ব্যাংক কতগুলো শাখা পরিচালনা করছে, গ্রাহকসংখ্যা কত?
প্রিমিয়ার ব্যাংক পিএলসি বর্তমানে ১৩৬টি শাখা, ৬৭টি উপশাখা ও ১৯৫টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট এবং দেশজুড়ে বিস্তৃত এটিএম বুথের মাধ্যমে ব্যাংকিং পরিচালনা করছে। শাখাগুলোর বণ্টন শহর ও গ্রামের মধ্যে ৬০ঃ৪০ অনুপাতে রয়েছে। বর্তমানে আমরা ২০ লাখ গ্রাহক ও উদ্যোক্তাকে সেবা প্রদান করছি। আমাদের গ্রাহকদের সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিতকরণে সারা দেশে ৩৫০টিরও বেশি সার্ভিস টাচপয়েন্ট রয়েছে।
ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ে আপনাদের অবস্থান এবং পরিকল্পনা সম্পর্কে বলুন?
গ্রাহকদের সুবিধা ও নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য আমরা আমাদের ডিজিটাল অবকাঠামোতে ক্রমাগত বিনিয়োগ করছি। ২৪/৭ ব্যাংকিং সেবা প্রদানে পিমানি মোবাইল অ্যাপ চালু করা হয়েছে। আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো আরো উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করা, যেমন—উন্নত এআই-চালিত গ্রাহকসেবা, উন্নত ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থা এবং মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সেবার পরিসর আরো বিস্তৃত করা। সম্প্রতি আমরা ‘প্রিমিয়ার ব্যাংক কুইক অ্যাকাউন্ট’ চালু করেছি, যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা আই ব্যাংকিং (ডেস্কটপের জন্য) এবং পিমানি (ব্যাংকিং অ্যাপ) ব্যবহার করে যেকোনো জায়গা থেকেই নিরাপদে ডিজিটাল স্বাক্ষরের মাধ্যমে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। এর পাশাপাশি আমরা ‘গ্রিন পিন’ সেবাও চালু করেছি, যা গ্রাহকদের তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের ডেবিট, ক্রেডিট বা প্রি-পেইড কার্ড অ্যাক্টিভেট করতে বা কার্ডের জন্য নতুন পিন জেনারেট করতে সাহায্য করবে।
আপনাদের ঋণ পোর্টফোলিও কতটা বৈচিত্র্যময়, আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?
প্রিমিয়ার ব্যাংকের ঋণ পোর্টফোলিও বৈচিত্র্যময়, যা বিভিন্ন খাতের সমন্বয়ে তৈরি। আমরা তৈরি পোশাক, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, কৃষি এবং আবাসন খাতে ঋণ দিই। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবসা শীর্ষ ঋণদাতা হিসেবে অন্যদের থেকে আলাদা করে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে আমরা এজেন্ট ব্যাংকিং এবং উপশাখার মাধ্যমে গ্রামের ও কম সেবাযুক্ত এলাকায় নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করেছি, যা আরো বেশি মানুষকে আনুষ্ঠানিক আর্থিক ব্যবস্থার আওতায় আনতে সহায়তা করছে।
ব্যাংক কিভাবে খারাপ ঋণের প্রবাহ রোধ করতে পারে, এ ক্ষেত্রে আপনাদের অগ্রাধিকার কী?
খারাপ ঋণ রোধ করতে হলে ব্যাংকগুলোকে নিম্নলিখিত তিনটি ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে হবে—ঋণের পূর্ববর্তী যাচাই ও বাস্তবায়নযোগ্যতা অধ্যয়নসহ ব্যাংকের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করা। আগাম সতর্কতামূলক সংকেতগুলো চিহ্নিত করতে এবং সঠিক সময়ে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ঋণ পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার উন্নতি করা। সংকটপূর্ণ কিন্তু কার্যকর ব্যবসার জন্য পুনর্গঠন ও পুনঃতফসিলীকরণ উৎসাহিত করা, যাতে কঠিন সময়ে তাদের সহায়তা করা যায় এবং সর্বোপরি ব্যাংকের স্বার্থ রক্ষা করা যায়।
ব্যাংকের উন্নয়নের জন্য বিশেষ কোনো পরিকল্পনা আছে কি?
গত কয়েক বছরে আমরা শাখা নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ, নতুন ব্যাংকিং সেবা চালু এবং ডিজিটাল সেবা উন্নয়নের মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণে সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে চলেছি। ভবিষ্যতে আমরা উপশাখা ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কম সেবাযুক্ত অঞ্চলে আমাদের উপস্থিতি বাড়াতে চাই এবং ঋণ পোর্টফোলিও ও আমানত দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে কাজ করছি। পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিতকরণ এবং ডিজিটাল সক্ষমতা জোরদার করাই আমাদের প্রবৃদ্ধির মূলমন্ত্র।
কতটি পণ্যের মাধ্যমে গ্রাহকদের সেবা দিচ্ছেন, কোন ক্ষেত্রগুলোতে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন?
আমাদের কনজিউমার ব্যাংকিং গ্রাহকদের জন্য বর্তমানে ১৬টি সেভিংস ডিপোজিট, ১৪টি স্কিম ডিপোজিট এবং ছয়টি রিটেইল ঋণ পণ্য আছে। এসব পণ্য গ্রাহকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়, তবে প্রিমিয়ার সুপ্রিম সেভিংস অ্যাকাউন্ট, ডাবল বেনিফিট স্কিম, মান্থলি বেনিফিট স্কিম ও প্রিমিয়ার স্টুডেন্ট জিনিয়াস লোন পণ্যগুলোও বিশেষভাবে জনপ্রিয়। আমাদের ১০০ দিনের এফডিআর স্বল্প সময়ের মধ্যে আকর্ষণীয় রিটার্ন প্রদান করে। গ্রাহকের বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন সহজ করতে আমাদের আছে অফশোর ব্যাংকিং এবং আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট।
সিএমএসএমই খাতের উন্নয়নে আপনাদের ব্যাংক কিভাবে ভূমিকা রাখছে?
আমাদের ব্যাংক দেশের সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের ব্যাবসায়িক প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন সেবা ও ঋণ প্রদান করে আসছে। আমাদের মোট ঋণের ২৫ শতাংশের বেশি ঋণ এই খাতে বিতরণকৃত, যা দিন দিন বাড়ছে। আগামী তিনি থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে ব্যাংকের সিএমএসএমই ঋণের পরিমাণ মোট ঋণের ৫০ শতাংশ করার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
আপনাদের শরিয়াভিত্তিক ইসলামী ব্যাংকিং সেবা নিয়ে বলুন?
প্রিমিয়ার ব্যাংক ২০০৩ সাল থেকে ইসলামী ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে আসছে, যার মাধ্যমে দুটি শাখা পরিচালিত হয়; একটি ঢাকার মহাখালীতে এবং অন্যটি সিলেটের লালদীঘির পাড় এলাকায় অবস্থিত। এ ছাড়া ব্যাংকের ২৫টি শাখায় ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডো রয়েছে।