ঢাকা, বুধবার ১৯ মার্চ ২০২৫
৫ চৈত্র ১৪৩১, ১৮ রমজান ১৪৪৬

ঢাকা, বুধবার ১৯ মার্চ ২০২৫
৫ চৈত্র ১৪৩১, ১৮ রমজান ১৪৪৬
সাক্ষাৎকার

সিএমএসএমই ঋণ ৫০% করার লক্ষ্য

  • গণমানুষের ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশের সবার পছন্দের শীর্ষে থাকতে চায় দি প্রিমিয়ার ব্যাংক পিএলসি। আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ানো, পণ্যবৈচিত্র্য আনাসহ আরো নানা লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কালের কণ্ঠকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন অভিপ্রায় জানান ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও মোহাম্মদ আবু জাফর। তুলে ধরেন ব্যাংকের অর্জন, সম্ভাবনা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা।
শেয়ার
সিএমএসএমই ঋণ ৫০% করার লক্ষ্য

২৫ বছরের যাত্রায় প্রিমিয়ার ব্যাংকের অর্জন কী?

দি প্রিমিয়ার ব্যাংক পিএলসি ১৯৯৯ সালের ২৬ অক্টোবর ডা. এইচ বি এম ইকবালের নেতৃত্বে যাত্রা শুরু করে। গত ২৫ বছরে রিয়েল টাইম অনলাইন ব্যাংকিং, ইসলামী ব্যাংকিং সেবা, প্রিমিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিং ও স্মার্ট ব্যাংকিং অ্যাপ পিমানি চালুর মতো অসাধারণ মাইলফলক অর্জন করেছি। বিগত ২৫ বছরে আমরা অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সর্বস্তরের গ্রাহককে পাশে নিয়েই একটি গ্রহণযোগ্য ব্র্যান্ড প্রিমিয়ার ব্যাংক গড়ে তুলেছি, যা বিশ্বস্ততার প্রতীক।

প্রতিযোগিতামূলক বাজারে আপনাদের ব্যাবসায়িক কৌশল কী?

আর্থিক স্থিতিশীলতা, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং গ্রাহককেন্দ্রিক সমাধানগুলোর ওপর ভিত্তি করেই আমরা আমাদের ব্যাবসায়িক কৌশল নির্ধারণ করি।

আমাদের মূল শক্তি হলো শক্তিশালী ব্র্যান্ড ভ্যালু, অভিজ্ঞ পরিচালনা পর্ষদ ও দক্ষ জনবল। আমাদের বিস্তৃত শাখা, উপশাখা, এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট, অল্টারনেটিভ ডেলিভারি চ্যানেল এবং প্রতিযোগিতামূলক পণ্য পোর্টফোলিওর মাধ্যমে আমরা বাজারে খুব ভালো অবস্থানে আছি। এ ছাড়া আমরা ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন, পরিচালন দক্ষতা এবং গ্রাহকসেবার উৎকর্ষের ওপর জোর দিচ্ছি। আমাদের পরিকল্পনা আগামী কয়েক বছরে আমাদের ব্যবসা ও বাজার শেয়ার দ্বিগুণ করা, যা আমাদের শক্তিশালী ব্যাংকিং কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠবে।

প্রিমিয়ার ব্যাংক কতগুলো শাখা পরিচালনা করছে, গ্রাহকসংখ্যা কত?

প্রিমিয়ার ব্যাংক পিএলসি বর্তমানে ১৩৬টি শাখা, ৬৭টি উপশাখা ও ১৯৫টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট এবং দেশজুড়ে বিস্তৃত এটিএম বুথের মাধ্যমে ব্যাংকিং পরিচালনা করছে। শাখাগুলোর বণ্টন শহর ও গ্রামের মধ্যে ৬০ঃ৪০ অনুপাতে রয়েছে। বর্তমানে আমরা ২০ লাখ গ্রাহক ও উদ্যোক্তাকে সেবা প্রদান করছি। আমাদের গ্রাহকদের সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিতকরণে সারা দেশে ৩৫০টিরও বেশি সার্ভিস টাচপয়েন্ট রয়েছে।

ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ে আপনাদের অবস্থান এবং পরিকল্পনা সম্পর্কে বলুন?

গ্রাহকদের সুবিধা ও নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য আমরা আমাদের ডিজিটাল অবকাঠামোতে ক্রমাগত বিনিয়োগ করছি। ২৪/৭ ব্যাংকিং সেবা প্রদানে পিমানি মোবাইল অ্যাপ চালু করা হয়েছে। আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো আরো উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করা, যেমনউন্নত এআই-চালিত গ্রাহকসেবা, উন্নত ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থা এবং মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সেবার পরিসর আরো বিস্তৃত করা। সম্প্রতি আমরা প্রিমিয়ার ব্যাংক কুইক অ্যাকাউন্ট চালু করেছি, যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা আই ব্যাংকিং (ডেস্কটপের জন্য) এবং পিমানি (ব্যাংকিং অ্যাপ) ব্যবহার করে যেকোনো জায়গা থেকেই নিরাপদে ডিজিটাল স্বাক্ষরের মাধ্যমে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। এর পাশাপাশি আমরা গ্রিন পিন সেবাও চালু করেছি, যা গ্রাহকদের তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের ডেবিট, ক্রেডিট বা প্রি-পেইড কার্ড অ্যাক্টিভেট করতে বা কার্ডের জন্য নতুন পিন জেনারেট করতে সাহায্য করবে।

আপনাদের ঋণ পোর্টফোলিও কতটা বৈচিত্র্যময়, আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?

প্রিমিয়ার ব্যাংকের ঋণ পোর্টফোলিও বৈচিত্র্যময়, যা বিভিন্ন খাতের সমন্বয়ে তৈরি। আমরা তৈরি পোশাক, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, কৃষি এবং আবাসন খাতে ঋণ দিই। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবসা শীর্ষ ঋণদাতা হিসেবে অন্যদের থেকে আলাদা করে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে আমরা এজেন্ট ব্যাংকিং এবং উপশাখার মাধ্যমে গ্রামের ও কম সেবাযুক্ত এলাকায় নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করেছি, যা আরো বেশি মানুষকে আনুষ্ঠানিক আর্থিক ব্যবস্থার আওতায় আনতে সহায়তা করছে।

ব্যাংক কিভাবে খারাপ ঋণের প্রবাহ রোধ করতে পারে, এ ক্ষেত্রে আপনাদের অগ্রাধিকার কী?

খারাপ ঋণ রোধ করতে হলে ব্যাংকগুলোকে নিম্নলিখিত তিনটি ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে হবেঋণের পূর্ববর্তী যাচাই ও বাস্তবায়নযোগ্যতা অধ্যয়নসহ ব্যাংকের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করা। আগাম সতর্কতামূলক সংকেতগুলো চিহ্নিত করতে এবং সঠিক সময়ে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ঋণ পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার উন্নতি করা। সংকটপূর্ণ কিন্তু কার্যকর ব্যবসার জন্য পুনর্গঠন ও পুনঃতফসিলীকরণ উৎসাহিত করা, যাতে কঠিন সময়ে তাদের সহায়তা করা যায় এবং সর্বোপরি ব্যাংকের স্বার্থ রক্ষা করা যায়।

ব্যাংকের উন্নয়নের জন্য বিশেষ কোনো পরিকল্পনা আছে কি?

গত কয়েক বছরে আমরা শাখা নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ, নতুন ব্যাংকিং সেবা চালু এবং ডিজিটাল সেবা উন্নয়নের মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণে সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে চলেছি। ভবিষ্যতে আমরা উপশাখা ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কম সেবাযুক্ত অঞ্চলে আমাদের উপস্থিতি বাড়াতে চাই এবং ঋণ পোর্টফোলিও ও আমানত দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে কাজ করছি। পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিতকরণ এবং ডিজিটাল সক্ষমতা জোরদার করাই আমাদের প্রবৃদ্ধির মূলমন্ত্র।

কতটি পণ্যের মাধ্যমে গ্রাহকদের সেবা দিচ্ছেন, কোন ক্ষেত্রগুলোতে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন?

আমাদের কনজিউমার ব্যাংকিং গ্রাহকদের জন্য বর্তমানে ১৬টি সেভিংস ডিপোজিট, ১৪টি স্কিম ডিপোজিট এবং ছয়টি রিটেইল ঋণ পণ্য আছে। এসব পণ্য গ্রাহকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়, তবে প্রিমিয়ার সুপ্রিম সেভিংস অ্যাকাউন্ট, ডাবল বেনিফিট স্কিম, মান্থলি বেনিফিট স্কিম ও প্রিমিয়ার স্টুডেন্ট জিনিয়াস লোন পণ্যগুলোও বিশেষভাবে জনপ্রিয়। আমাদের ১০০ দিনের এফডিআর স্বল্প সময়ের মধ্যে আকর্ষণীয় রিটার্ন প্রদান করে। গ্রাহকের বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন সহজ করতে আমাদের আছে অফশোর ব্যাংকিং এবং আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট।

সিএমএসএমই খাতের উন্নয়নে আপনাদের ব্যাংক কিভাবে ভূমিকা রাখছে?

আমাদের ব্যাংক দেশের সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের ব্যাবসায়িক প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন সেবা ও ঋণ প্রদান করে আসছে। আমাদের মোট ঋণের ২৫ শতাংশের বেশি ঋণ এই খাতে বিতরণকৃত, যা দিন দিন বাড়ছে। আগামী তিনি থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে ব্যাংকের সিএমএসএমই ঋণের পরিমাণ মোট ঋণের ৫০ শতাংশ করার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

আপনাদের শরিয়াভিত্তিক ইসলামী ব্যাংকিং সেবা নিয়ে বলুন?

প্রিমিয়ার ব্যাংক ২০০৩ সাল থেকে ইসলামী ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে আসছে, যার মাধ্যমে দুটি শাখা পরিচালিত হয়; একটি ঢাকার মহাখালীতে এবং অন্যটি সিলেটের লালদীঘির পাড় এলাকায় অবস্থিত। এ ছাড়া ব্যাংকের ২৫টি শাখায় ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডো রয়েছে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ভারতের চাল রপ্তানি দুই বছরে সর্বনিম্ন

বাণিজ্য ডেস্ক
বাণিজ্য ডেস্ক
শেয়ার
ভারতের চাল রপ্তানি দুই বছরে সর্বনিম্ন

চাল রপ্তানিতে ভারতের আয়ের পরিমাণ দুই বছরে সর্বনিম্ন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে। চাহিদার চেয়ে জোগান বেশি হওয়ায় রপ্তানিতে ভাটা পড়েছে। ভারতের সিদ্ধ চালের (৫ শতাংশ ভাঙা) প্রতি টনের দাম এখন ৪০৯ থেকে ৪১৫ ডলার। ২০২৩ সালের জুনের পর এটিই সর্বনিম্ন দাম।

গত সপ্তাহেও প্রতি টনের দাম ছিল ৪১৩ থেকে ৪২০ ডলার।

অন্যদিকে সাদা চালের (৫ শতাংশ ভাঙা) দাম এখন প্রতি টন ৩৯০ থেকে ৪০০ ডলার। শুধু বিশ্ববাজারে চাহিদা কমে যাওয়া নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেও চাল উৎপাদন নিয়ে সমস্যায় পড়তে পারে ভারত। দেশটির আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, গত ১২৪ বছরের মধ্যে ফেব্রুয়ারির তাপমাত্রা ছিল সর্বোচ্চ।

জলবায়ুর এই অচেনা আচরণ চাল উৎপাদনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। দেশটির ভূ-বিজ্ঞান মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে চালের উৎপাদন কমতে পারে ৬ থেকে ১০ শতাংশ। ভারতের চাল রপ্তানির বাজারে মন্দাভাব দেখা দেওয়ায় বাড়তি সুবিধা ভোগ করে এগিয়ে গেছে ভিয়েতনাম। ভিয়েতনাম চালের দাম কম রাখায় এশিয়ার অন্যান্য চাল রপ্তানিকারক দেশগুলো চাপে পড়েছে।
গত সপ্তাহে ভিয়েতনামের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, বাংলাদেশে এক লাখ টন চাল রপ্তানির চুক্তি হয়েছে। ভিয়েতনাম থেকে চাল আমদানিতে বাংলাদেশ ৫৭৮ কোটি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করবে। এ ছাড়া নতুন ও প্রচলিত বাজারে ভিয়েতনামিজ চালের প্রচারণা চালানো হবে।

ভিয়েতনামের মেকং বদ্বীপের এক চাল ব্যবসায়ী জানান, ভিয়েতনামের বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে। চাহিদা থাকলেও দাম কমছে।

দেশটিতে সিদ্ধ চালের (৫ শতাংশ ভাঙা) প্রতি টনের দাম ৩৮৯ ডলার। গত সপ্তাহে প্রতি টনের দাম ছিল ৩৯৩ ডলার। সূত্র : দ্য ইকোনমিক টাইমস

 

 

মন্তব্য

পানচাষে ভাগ্য বদলাচ্ছে কৃষকের

মনোতোষ হাওলাদার, বামনা
মনোতোষ হাওলাদার, বামনা
শেয়ার
পানচাষে ভাগ্য বদলাচ্ছে কৃষকের

একসময় যে জমিটি ছিল জঙ্গলে ঘেরা পরিত্যক্ত, যে জায়গাটিকে মালিক বছরে একবারও তাকিয়ে দেখতেন না; সেই পরিত্যক্ত জমিতে এখন সবুজের বিপ্লব শুরু হয়েছে। পরিত্যক্ত এসব জমিতে এখন চোখে পড়ে সবুজ পানের বরজ।  

উৎপাদন খরচ কম ও বহুবর্ষজীবী হওয়ায় পান চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। বরগুনার বামনা উপজেলায় ব্যাপক হারে পান চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

উপজেলার বামনা সদর ইউনিয়নসহ ডৌয়াতলা, রামনা ও বুকাবুনিয়া ইউনিয়নে এবার পানের আশানুরূপ ফলন হয়েছে। ফলে ধীরে ধীরে পান চাষে ঝুঁকছেন প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা।

এদিকে পান চাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে পাইকারি পানের বাজার। প্রতি হাটে লাখ লাখ টাকার পান কেনাবেচা হয়।

কোনো কোনো হাট বসে সন্ধ্যার পর, আবার কোনো হাটে কেনাবেচা শুরু হয় ভোরবেলা। এই পাইকারি বাজারগুলো থেকে ক্ষুদ্র পান ব্যবসায়ীরা খুচরা বাজারে বিক্রির জন্য পান কিনে নিয়ে আসেন। আবার পাইকাররা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পান চালান করেন।

পান চাষ একটি দীর্ঘমেয়াদি লাভজনক ফসল।

অনেক কৃষক পান চাষ করে অর্থনৈতিক চাহিদা মিটিয়ে সংসার চালাচ্ছেন বলে জানা যায়। পান চাষে তুলনামূলকভাবে অন্যান্য ফসলের চেয়ে রাসায়নিক সার অনেক কম ব্যবহার হয় ও জৈব সারের ব্যবহার অনেকটাই বেশি।

চাষাবাদ পদ্ধতিতে পান চাষে প্রথমে কাটিং সংগ্রহ করে জমিতে রোপণ করতে হয়। এরপর এক থেকে দুই মাসের মধ্যে ডাল থেকে সবুজ লতা বের হয়ে ছেয়ে যায় পানপাতায়। এরপর শুরু হয় চাষিদের পান সংগ্রহ।

এক বিঘা জমিতে পান চাষ করে প্রতিবছর প্রায় চার লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব বলে জানান পান চাষিরা। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, এ বছর উপজেলায় চারটি ইউনিয়নের মধ্যে পানের চাষ করেছেন কৃষকরা।

 

 

মন্তব্য

বগুড়ায় ‘শিল্প পার্ক’ পাল্টে দিতে পারে উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি

টি এম মামুন, বগুড়া
টি এম মামুন, বগুড়া
শেয়ার
বগুড়ায় ‘শিল্প পার্ক’ পাল্টে দিতে পারে উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি

বগুড়ায় শিল্প পার্ক স্থাপন করা গেলে চীন থেকে পণ্য আমদানি কমে যাবে ৫০ শতাংশ। অর্থাৎ বগুড়াতেই ৫০ শতাংশ পণ্য উৎপাদন করা হবে। পাল্টে যাবে বগুড়াসহ গোটা উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতির চিত্র। যদিও এই মুহূর্তে উৎপাদন এবং সরকারকে রাজস্ব প্রদানের ক্ষেত্রে বগুড়ার অবস্থান শীর্ষে এবং বিনিয়োগ ও কারখানাভিত্তিক কর্মসংস্থানে দ্বিতীয়।

স্বল্প পুঁজি ও অল্প জনবল নিয়ে বিগত ১৬ বছর নিজ প্রতিষ্ঠান আঁকড়ে ধরে রেখেছেন এখানকার উদ্যোক্তারা।

বগুড়ায় ‘শিল্প পার্ক’ পাল্টে দিতে পারে উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতিসূত্র দাবি করে, এখানকার শিল্প মালিকরা উৎপাদনব্যবস্থা আধুনিকায়নে বরাবরই মনোযোগী। শত বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও দমে যাননি তাঁরা। স্বল্প পুঁজি নিয়েই বিসিকের অল্প জায়গা কাজে লাগিয়ে চাহিদাসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করেন।

পরিশ্রম ও কষ্ট করে কাজ ধরে রেখেছেন। শেখ হাসিনা সরকারের কাছে চেয়েও মেলেনি শিল্পের জন্য এতটুকু জায়গা। ‘শিল্প পার্ক’ স্থাপনের বিষয়টি শুধুই ছিল ছলনা। তবু মিথ্যা আশ্বাসে থেমে থাকেননি উদ্যোক্তারা।
বাজারে টিকে থাকার কৌশল হিসেবে পণ্যগুলোর উৎপাদনব্যবস্থা আধুনিকায়নে পদক্ষেপ নেন। ফলে বছরভিত্তিক পণ্য উৎপাদন এবং সরকারকে রাজস্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে উত্তরাঞ্চলে সব বিসিক শিল্পনগরীকে পেছনে ফেলতে সক্ষম হয়েছে বগুড়া। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বগুড়ায় বিসিকের শিল্প পার্ক স্থাপন প্রকল্পটি গুরুত্ব পাচ্ছে।    

বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি মিল্টন ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের স্বত্বাধিকারী আজিজুর রহমান মিল্টন জানান, বগুড়ার গুরুত্ব বিবেচনায় দ্রুত এখানে বিসিক শিল্প পার্ক করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জেলা সাধারণ সম্পাদক ও কামাল মেশিনারিজের স্বত্বাধিকারী কামাল পাশা জানান, বগুড়া এত দিন অবহেলিত ছিল।

অতীতে শিল্পোদ্যোক্তাদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ অ্যাগ্রিকালচারাল মেশিনারি মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (বামমা) জেলার সাধারণ সম্পাদক রাজেদুর রহমান রাজু জানান, দেশের অনেক বিসিক শিল্পনগরীতে প্লট ফাঁকা পড়ে আছে। অথচ বগুড়ায় শিল্প স্থাপনের জন্য উদ্যোক্তারা জায়গা পাচ্ছেন না। বিসিক শিল্পনগরীকে সম্প্রসারণ অথবা শিল্প পার্ক স্থাপিত হলে শুধু বগুড়া নয়, সারা দেশে এর প্রভাব পড়বে। ২০৩০ সালের মধ্যে চীন থেকে পণ্য আমদানি ৫০ শতাংশ কমিয়ে দেওয়া হবে। অর্থাৎ বগুড়াতেই ৫০ শতাংশ পণ্য উৎপাদন করা হবে। পাল্টে যাবে বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতির চিত্র।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) কার্যালয় এবং বাংলাদেশ অ্যাগ্রিকালচারাল মেশিনারি মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, ১৯৬০ সালে উত্তরাঞ্চলের সর্বপ্রথম বিসিক শিল্পনগরী গড়ে ওঠে বগুড়ায়। দুই বছর পর ১৯৬২ সালে রাজশাহী, পাবনা ও দিনাজপুরে এবং ১৯৬৭ সালে রংপুরে বিসিক শিল্পনগরী গড়ে ওঠে। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলার মধ্যে ১১টি জেলায় ১৯৮৪ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে বিসিক শিল্পনগরীগুলো গড়ে ওঠে। বিনিয়োগ, পণ্য উৎপাদন, কর্মসংস্থানসহ সরকারকে রাজস্ব প্রদানের ক্ষেত্রে উত্তরাঞ্চলের ১৬টি বিসিক শিল্পনগরীর মধ্যে বগুড়া, রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুর ও রংপুর অন্য ১১টির চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে। বিসিক শিল্পনগরী থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, পণ্য উৎপাদন এবং সরকারকে রাজস্ব প্রদানের ক্ষেত্রে বগুড়ার অবস্থান শীর্ষে। বগুড়ায় শিল্প খাতে বিনিয়োগ হয়েছে ৮৬৫ কোটি টাকা। মাত্র ৩৩.১৭ একর জায়গায় প্রতিষ্ঠিত বগুড়া বিসিক শিল্পনগরীতে সচল ৯০টি প্রতিষ্ঠান থেকে বছরে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার পণ্য উৎপাদন হচ্ছে। বছরে রাজস্ব আসে প্রায় ১৭০ কোটি টাকা। 

এখানকার মানুষ উৎপাদনমুখী হওয়ায় স্থানীয় উদ্যোক্তারা পঞ্চাশের দশকে সাবান, বস্ত্র, লৌহ, কাচ, সিরামিক, দিয়াশলাই এবং ট্যোবাকো খাতে অর্ধশত কলকারখানা গড়ে তোলেন। বিসিক শিল্পনগরী গড়ে ওঠার আগেই বগুড়া ‘শিল্পের শহর’ হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পায়। পরবর্তী সময়ে শহরের ফুলবাড়ী এলাকায় প্রথমে ১৪.৫০ একর জায়গায় বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলা হয়। ব্যাপক চাহিদার কারণে ১৯৮০ সালে আরো ১৮.৬৭ একর জায়গা সম্প্রসারণ করা হয়। কিন্তু বর্ধিত শিল্পনগরীর প্লটগুলো কলকারখানায় ভরে যায়। এর পর থেকেই শিল্প স্থাপনের জন্য উদ্যোক্তারা জায়গা পেতে বিসিকে ধরনা দিতে থাকেন। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার জরুরি এ বিষয়ে কর্ণপাত না করায় বাধ্য হয়েই উদ্যোক্তারা ফসলি জমিতে কলকারখানা স্থাপন করেন। এতে করে একদিকে যেমন ফসলি জমি কমতে থাকে, তেমনি পরিবেশদূষণও বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে ২০১৪ সালে বিসিক কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয় শিল্পনগরী স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। সেটিও মুখ থুবড়ে পড়লে ২০১৮-তে শাজাহানপুর উপজেলায় ৩০০ একর জমিতে ‘উত্তরাঞ্চল কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প পার্ক’ স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এতে জমি অধিগ্রহণসহ ৬৪০টি প্লট নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৯২০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। প্রস্তাবনাটি পরিকল্পনা কমিশনে গেলেও রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় তা আটকে দেওয়া হয়।

বিসিকের পরিচালক মীর শাহে আলম জানান, প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন পেলেই দ্রুত অনুমোদনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সাইরুল ইসলাম জানান, শেখ হাসিনার শাসনামলসহ দীর্ঘ ১৬ বছর বগুড়া ছিল উপেক্ষিত ও বঞ্চিত। এখানে শিল্প পার্ক স্থাপন করা হলে অর্থনীতিতে বিরাট বিপ্লব ঘটবে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) বগুড়া জেলা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক এ কে এম মাহফুজুর রহমান জানান, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলে অর্থনীতির গতিশীলতা নতুন মোড় পাবে এবং বগুড়া অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

 

মন্তব্য

বিশ্ববাজারে কেন বাড়ছে সোনার দাম

    ♦ ১ মাসে বিশ্ববাজারে সোনার দাম বেড়েছে ৬৩.১৪ ডলার ♦ গত ৯ দিনে বেড়েছে প্রায় ৫৮ ডলার
বাণিজ্য ডেস্ক
বাণিজ্য ডেস্ক
শেয়ার
বিশ্ববাজারে কেন বাড়ছে সোনার দাম

বিশ্ববাজারে সোনার দাম ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। গতকাল শনিবার প্রতি আউন্সের দাম বাড়ে ৬.৮৭ ডলার। এতে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম বেড়ে দাঁড়ায় দুই হাজার ৯৮৬.৫ ডলার। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের শুল্কনীতি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়াই মূল্যবৃদ্ধির মূল কারণ।

গত ৩০ দিনে বিশ্ববাজারে সোনার দাম বেড়েছে ৬৩.১৪ ডলার। এর মধ্যে গত ৯ দিনে বেড়েছে প্রায় ৫৮ ডলার। ফলে বাংলাদেশ, ভারতসহ সব দেশের বাজারে সোনার দাম বেড়েছে। সোনার মূল্যবৃদ্ধির পেছনে আছে ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিভিন্ন দেশের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির চাপ এবং তার জেরে শুল্কযুদ্ধের আশঙ্কা।

ফলে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক জটিলতা তৈরি হচ্ছে। সুরক্ষিত বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে অনেকে সোনার দিকে ঝুঁকছেন। শেয়ারবাজার থেকে পুঁজি প্রত্যাহার করেও অনেকে সোনা কিনছেন। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে মানুষ নিজেদের অর্থ ব্যবস্থাপনার বিষয়ে শঙ্কিত।
মানুষ নিরাপদ বিনিয়োগমাধ্যম হিসেবে সোনার দিকে ঝুঁকছে। এ কারণে সোনার দাম আরো বাড়বে বলে মনে করছেন ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের প্রধান বাজার কৌশলবিদ জো কাভাতোনি।

ট্রাম্প যেভাবে শুল্ক আরোপ করছেন, তাতে যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বেই মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে। এটাই সোনার প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার কারণ বলে মনে করেন জো কাভাতোনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সোনার রিজার্ভ আবার বাড়ছে।

মানুষও সোনার বার ও সোনাভিত্তিক এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ডে (ইটিএফ) বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, গত বছর সারা বিশ্বে সোনা বেচাকেনা হয়েছে চার হাজার ৯৭৪ টন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও সোনার মজুদ বাড়াচ্ছে। গত তিন বছরে বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সম্মিলিতভাবে এক হাজার টনের বেশি সোনা কিনেছে। এর মধ্যে গত বছর সর্বোচ্চ ৯০ টন সোনা কিনেছে পোল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গোল্ড প্রাইস ডট অর্গের তথ্যানুসারে, গত ২০ বছরে সোনার দাম বেড়েছে দুই হাজার ৫৩৮.৪২ ডলার।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ