‘গণ্ডি’র প্রচারণায় সব্যসাচী চক্রবর্তী ঢাকায় এসেছেন মঙ্গলবার। এ যাত্রায় অবশ্য তাঁর সঙ্গে কথা হয়নি, ‘গণ্ডি’বদ্ধ আলাপ করে গেছেন আগেই, শেষবার যখন শুটিং করে গেলেন তখন। সঙ্গে ছিলেন সুবর্ণা মুস্তাফাও। পরিচালক ফাখরুল আরেফীন কেন তাঁকে ‘গণ্ডি’র নায়ক ভাবলেন, এটা ভেবেই হয়রান হয়েছিলেন ‘ফেলুদা’।
বলেন, ‘বয়স ছাড়া আর কোনো কিছুর সঙ্গেই বোধ হয় ছবির ‘আজগর’ চরিত্রটির সঙ্গে আমার মিল নেই। হয় গুণ্ডা, নয় পুলিশ, নয় গোয়েন্দা—এ রকম চরিত্রে অভিনয় করেই অভ্যস্ত। অভিনয়জীবনের শুরুতে এ রকম কিছু চরিত্র করেছিলাম। চেহারাগত কারণে পরে আর কেউ এ ধরনের চরিত্র করাতে চাননি। গত বছর জানুয়ারিতে আরেফীন যখন আমার বাসায় গিয়ে গল্প শোনান, তখনই রাজি হই। পরিচালকের চোখে যে চিত্রকল্প দেখেছি, স্বপ্ন দেখেছি—সেটাও একটা কারণ।’
‘গণ্ডি’তে যুক্ত হওয়ার কারণ বললেন সুবর্ণা মুস্তাফাও, ‘ছবির সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো গল্প। পরে যখন শুনলাম, আমার প্রিয় একজন অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তীও আছেন, বিষয়টি তখন সোনায় সোহাগার মতো হয়ে গেল।
সব্যসাচী চক্রবর্তীর মতো সহশিল্পী পেলে অভিনয় এমনি এমনিই ভালো হয়ে যায়।’
ছবিতে সুবর্ণা ও সব্যসাচীকে নেওয়ার পর পরিচালকের রাতের ঘুম হারাম! এই দুই অভিজ্ঞ শিল্পীকে কিভাবে ক্যামেরাবন্দি করলে সবচেয়ে ভালো হবে, সেটা ভেবেই দিন পার করেছেন। গত বছর মার্চে শুরু হয় দৃশ্যধারণ। যুক্তরাজ্য ছাড়াও ঢাকা ও কক্সবাজারে হয়েছে শুটিং।
৫৫ ও ৬৫ বছরের দুজন নারী-পুরুষের বন্ধুত্বের গল্প ‘গণ্ডি’।
স্বামী ও স্ত্রী হারিয়ে দুজনই একা, বিষণ্নতায় দিন কাটাচ্ছেন। ছেলেমেয়েরা থাকে বিদেশে। ডিমেনশিয়ায় ভোগা সব্যসাচী ঘটনাক্রমে ডেন্টিস্ট সুবর্ণার চেম্বারে যান, তাঁদের মধ্যে গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব। তাঁদের ছেলেমেয়েরা কি সেটা মেনে নিতে পারে? এ নিয়েই গল্প।
কেমন ছিল শুটিংয়ের দিনগুলো? সব্যসাচী বলেন, ‘দারুণ। আগেও পাঁচ-ছয়বার এসেছি বাংলাদেশে। ঘুরতে এসেছি, আবার মঞ্চনাটক করতেও এসেছি। এবার অন্য বাংলাদেশ আবিষ্কার করলাম। বিশেষ করে কক্সবাজারের কথা বলব। বেড়ানোর জন্য দারুণ জায়গা! যদিও শুটিংয়ের কারণে সেভাবে ঘোরার সুযোগ হয়নি। আর সুযোগ এসে থাকলেও সেটার সদ্ব্যবহার করিনি। এখানে আমি এতটাই পরিচিত, চারদিকে লোকে ঘিরে ধরছে, ছবি তুলছে, অটোগ্রাফ চাইছে। যেতে হলে কাউকে না কাউকে সঙ্গে নিয়ে যেতে হতো। তবে শুটিংয়ে কয়েকটি বিচে গিয়েছি, সাম্পানে চড়েছি, বিচ বাইক চালিয়েছি। শুধু স্পিডবোট আর প্যারাসাইক্লিং হয়নি। সেগুলো তোলা রইল। যদি কোনো দিন সুযোগ হয় তাহলে হবে।’ সব্যসাচীর কথা শুনে সুবর্ণা মুস্তাফা বলেন, ‘এখন হয়নি তো কী হয়েছে? আবার যখন আসবেন তখন হবে।’
একে অপরের সঙ্গে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? সুবর্ণা বললেন আগে, ‘উনি দারুণ অভিনেতা। প্রায় ৪৪ বছর ধরে নিয়মিত অভিনয় করছেন। ফলে অ্যাকশন আর রিঅ্যাকশন নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হয়নি কারোই। আমাদের কাজের পদ্ধতিটা প্রায় একই রকম। দুজনই জানি আমাদের কী করতে হবে।’
সব্যসাচী বলেন, ‘অভিজ্ঞতায় উনি আমার সিনিয়র। উনার সঙ্গে অভিনয় করে দারুণ লেগেছে। ব্যক্তি সুবর্ণাও ভীষণ ভালো মানুষ, ভীষণ রেসপেক্টেবল লেগেছে। এসেছেনও শিক্ষিত শিল্পী পরিবার থেকে। তিনি শুধু ভালো অভিনেত্রীই নন, একজন রাজনৈতিক নেত্রীও বটে। তিনি বংলাদেশের জাতীয় সংসদ সদস্য, এটা কি চাট্টিখানি কথা!’