<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">গ্রামের বাড়ি এসেছি আজ প্রায় এক সপ্তাহ। এখনো বাড়ির বাইরে যাইনি। বাড়িতে তেমন কেউ নেই, যাকে নিয়ে ঘুরে দেখব নিজের গ্রাম। তিন বছর পর গ্রামে এসেছি। আমাদের পরিবার ঢাকায় আর জেঠামশাই পরিবার নিয়ে কলকাতায় থাকেন প্রায় ১৫ বছর। দুই বছর পর পর ঠাম্মিকে দেখতে আসেন। গ্রামের বাড়িতে আছে পুরনো ঘরগুলো। ঠাম্মি, দূরসম্পর্কের এক পিসি আর গুটিকয়েক কাজের লোক থাকে এই বাড়িতে। আমি এসে এক রুম দখল নিয়েছি। শোবার ঘরের চেয়ে পারিবারিক যে গ্রন্থাগার রয়েছে সেখানেই বেশির ভাগ সময় কাটাই। ঠাম্মি আজ জোর করেই একা একা একটু হেঁটে আসতে বলল বাইরে থেকে। ক্যামেরা সঙ্গে নিয়ে বিকেলে একটু বের হয়ে বাড়ির পাশের মাঠে এক কোণে বসে বসে রবীন্দ্র সংগীত শুনছি। এমন সময় পাঠশালা ছুটি শেষে দল বেঁধে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা বাড়ি ফিরছে। কিঞ্চিৎ পরিচিত কয়েকজন এসে আমায় ঘিরে ধরল। হাতে ক্যামেরা দেখে ছবি তোলার আবদার করে দুই-একটা ছেলেমেয়ে বলছে</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">- মেঘ পিসি, আমাদের ছবি তুলে দাও না!</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আমি বেশ খুশি হয়েই রাজি হয়ে যাই। হাতের ক্লিকে একেকটা হাসিমুখ ফ্রেমবন্দি করছি। ছবি তোলা শেষে আনন্দচিত্তে নাচতে নাচতে বাড়ি ফিরল সবাই। আমি একা একাই বসে রইলাম। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">মৃদু বাতাসে আমার চুলগুলো উড়ছে। নীলু, রানু, জাফি, টুকু</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">যাদের ছবি তুলেছি, তা ক্যামেরার পর্দায় দেখে নিজের শৈশব স্মৃতিতে হারিয়ে গেলাম। কত দুরন্ত ছিলাম আমি। মাসতুতো, পিসতুতো সব ভাই-বোনেরা মিলে দল বেঁধে কত হৈ-হুল্লোড় করেছি! ভাবনার মোহনায় হারিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে বাইসাইকেলের টুংটাং শব্দ পেলাম। তাকিয়ে দেখি আমার দিকেই আসছে। ঠিক চিনতে পারছি না। সামনে এসে সাইকেল থেকে নেমে জিজ্ঞাসা করল</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">: আরে, মেঘ! কত দিন পর দেখা! কেমন আছ?</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">: জ্বি, ভালো আছি।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">: মনে হয় আমাকে চিনতে পারোনি।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">: হুম, ঠিক মনে করতে পারছি না।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">: আমি শরৎ। একসঙ্গে পাঠশালায় যেতাম।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">: ও হ্যাঁ, মনে পড়েছে। কিন্তু চালচলনে তো বুঝাই যাচ্ছে না।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">: একটু পরিবর্তন এসেছে আর কী।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">: একটু না, অনেক পরিবর্তন। যে ছেলেটা সারা দিন ব্যাট হাতে ক্রিকেট প্র্যাকটিস করত আর বলত, বড় হয়ে দাদা হবে, সে আজ সাদা পাঞ্জাবি পরে কাঁধে পাটের ব্যাগ ঝুলিয়ে ঘুরছে। আমি কিন্তু অবাক হয়েছি।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">শরৎ আমার ছোটবেলার পাঠশালার সহপাঠী। অনেক দিন পর আজ আমাদের দেখা। ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে ওঠা শরৎ আজ কবি কবি ভাব নিয়ে আছে। জানতে পারলাম ছেলেবেলার সেই পাঠশালার বাংলার শিক্ষক শরৎ। কবিতা লেখে অবসরে। গত বইমেলায় নাকি দুটি বই বের হয়েছে। দুজনে একসঙ্গে গোধূলিলগ্ন পর্যন্ত গল্প করলাম মাঠের কোণায় বসে। পুরনো বন্ধুকে অনেক দিন পর সামনে পেয়ে ফ্রেমবন্দি করে নিলাম। আমার হাতে ক্যামেরা, কিন্তু আমার ছবি নেই গ্যালারিতে। তা দেখে পরদিন ছবি তুলে দেওয়ার প্রত্যাশায় গ্রামের পাশে কাশফুলে বিস্তৃত মাঠে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে বাড়ি গেল শরৎ। আমিও সন্ধ্যার সময় বাড়ি ফিরে গেলাম। রাতে খাওয়ার সময় ঠাম্মি জিজ্ঞাসা করল, কেমন কাটল বিকেল? বিকেলের পুরো বর্ণনা দিতে আমার খাওয়ার পর্ব শেষ। আমার ঘরে যাওয়ার আগে ঠাম্মিকে বলে রাখলাম, কাল শরতের সঙ্গে কাশবনে যাব। ঘরে গিয়ে আজকের সব ছবি দেখলাম। এরপর রবিঠাকুরের রহস্যগল্প পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়লাম।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">দিনের আলো ফুটতেই বাড়ির পিসি এসে আমায় ডেকে তুলল। আজ পঞ্চমী। সন্ধ্যায় দেবীর বোধন। দিনের বেলায় বেশ কাজের চাপ দেখলাম। সবার সঙ্গে হাত লাগিয়ে কাজ করতে পারিনি। কিছুক্ষণ বই পড়ে স্নান করে এলাম। ইচ্ছা আজ কাশবনে গিয়ে সময় কাটানোর। একটা নীল শাড়ি পরে বসে রইলাম ঘড়ির কাটার দিকে তাকিয়ে। সাড়ে ৩টা নাগাদ ক্যামেরা হাতে বেরিয়ে পড়লাম। গিয়ে দেখি নীল পাঞ্জাবি পরিহিত কেউ দাঁড়িয়ে আছে। এগিয়ে যেতেই শরতের পিছু ডাক। তাকিয়ে দেখি নীল পাঞ্জাবিওয়ালাই শরৎ। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">: দুজনের পোশাকের রং যে মিলে গেল!</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">: দৈব ঘটনা।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">: হুম, তাই হবে। চল এগিয়ে যাই।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">: তোমার সাইকেল কোথায়?</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">: নিয়ে আসিনি।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এমন ছোট ছোট কথা বলতে বলতে গ্রামের শেষ মাথায় গিয়ে কাশবন দেখে নিষ্পলক তাকিয়ে রইলাম। সব সাদা মেঘ যেন মিশে আছে কাশফুলে। শরতের হাতে ক্যামেরা দিয়ে মনখোলা হাসিতে কাশবনের বাতাস ভারী করে তুললাম। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">: দিনের বেলায় ভূত এলো নাকি?</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">: মানে?</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">: এত হাসি কোথা থেকে আসে?</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">: মেঘ হাসে হা হা হা। জীমুতেন্দ্রভীতু শরৎ কি মেঘের হাসিতে ভয় পেয়ে গেল?</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">: ধুর!</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কথার ফাঁকে ফাঁকে ইচ্ছামতো ছবি তুলে ক্যামেরা ভর্তি করে সন্ধ্যার আগেই বাড়ি ফিরেছি ঠাম্মির কথামতো। এসে মন্দিরে সবার ভিড়ে আমিও প্রার্থনা করলাম। রাত নেমে এলো। গভীর হতে লাগল নীরবতা। চোখে ভাসছে শরতের হাসিমুখ আর কানে ভাসছে শরতের কণ্ঠে আবৃত্তি করা কবিতা। মুগ্ধ হয়ে ভাসছি কল্পলোকে। ভাবতে ভাবতে দুই চোখ বুজে এলো ঘুমের ছায়ায়।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">শরৎ কি আমার জন্য এত দিন অপেক্ষা করেছে? আজ যদি বলি তবে কি শরৎ রাজি হবে আমাকে নিজের করে নিতে, যেমন চেয়েছিল এক যুগ আগে। আমি তো তখন পাত্তা দিইনি। শরত কি আজ আমায় পাত্তা দেবে? নবমীর দিন সকালে এসব ভাবতে ভাবতে মনে হলো, আজ মা-বাবা বাড়ি আসবে রাতে জানিয়েছিল। তাড়াতাড়ি উঠে গুছিয়ে নিলাম সব। মাকে বিষয়টা জানাব বলেই স্থির করলাম। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">মা-বাবাকে স্টেশনে আনতে যাওয়ার কথা কাজের লোকটির। কোনো এক কাজে আটকে স্টেশনে যেতে পারছে না সে। এ সময় শরৎ আমাদের বাড়িতে এসে হাজির। আজ সারা দিন আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আসতে বলেছি। স্টেশনে যাওয়ার কেউ না থাকায় নিজেই যাওয়ার জন্য রাজি হয়ে গেল। কেউ মানা করল না। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আমাদের বাড়ি থেকে একটু দূরেই রেললাইন। রেললাইন পেরিয়ে মিনিট পাঁচেক গেলেই বাসস্টেশন। ১১টায় বাস এসে থামল। স্টেশনে কাউকে না দেখে রিকশা করে এগিয়ে আসতেই থাকে মা-বাবা। রেললাইনের ধারে এসেই থমকে যায়। রাস্তার মাঝে একটা সাইকেল পড়ে আছে। নিস্তব্ধ চারপাশ। আরেকটু দূরে মুখ বিকৃত নিথর দেহ পড়ে আছে। ট্রেনে কাটা নয়, তবে হয়তো জোরে আঘাতে ছিটকে পড়ে আছে। প্রাণের স্পন্দন আছে কি না বুঝতে কাছে যান বাবা। অনুধাবন করে ঝকঝক ছুটে চলে যাওয়া ট্রেনটি কেড়ে নিয়েছে অন্য কারো বেঁচে থাকার অবলম্বন।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">রিকশাওয়ালা গ্রামের লোকদের ডেকে আনল। সেখানে আমিও ছিলাম। মুখ বিকৃত হলেও পাঞ্জাবি দেখে চিনে নিলাম। আমি </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">শরৎ</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> বলে একটা চিৎকার দিয়েই সংজ্ঞা হারিয়েছি। পরদিন যখন আমার জ্ঞান ফিরল তখন দেখলাম শরতের শবযাত্রা প্রস্তুত। ঠাম্মির অনুরোধে আমার জ্ঞান ফেরার অপেক্ষায় ছিল। শরতের সৎকার শেষে সবাই প্রতিমা বিসর্জন দিতে গেল। মা এসে আমাকে জিজ্ঞাসা করল</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">: প্রতিমা বিসর্জন দেখতে যাবি?</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">: জীবনের সেরা বিসর্জন তো মা দিয়ে এলাম চিতায়। আর কী দেখব?</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">মা নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থেকে চলে গেল। আমার কপাল গড়িয়ে পড়া অশ্রুস্রোত চলছিল অবিরাম।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সপ্তাহখানেক পর মা-বাবা ঢাকায় ফিরতে বললে আমি আর রাজি হতে পারিনি। আমার পরনের শুভ্র শাড়ি দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল মা-বাবা। ঠাম্মি সব বুঝিয়ে বলেছিল তাদের। তাই আমাকে এ নিয়ে কিছুই বলেনি। শুধু বলেছিল, মন ভালো হলে যেন ঢাকায় ফিরে যাই। কাজের ব্যস্ততায় সেদিনই ফিরে গিয়েছিলেন তাঁরা। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সেদিন বিকেলে সাদা শাড়ি পরে শুভ্র কাশফুলের মাঝে দাঁড়িয়ে আরো একবার হেসেছিলাম আকাশের মেঘের দিকে তাকিয়ে। কিন্তু কেউ ভূতুড়ে হাসির প্রতিবাদ করেনি। আমি কাশফুলের ভিড়ে শরেক খুঁজতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছি বারবার। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বাড়ি ফিরলে ঠাম্মি আমার হাতে একটা ডায়েরি দিয়ে বলল</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ডায়েরিটি শরতের। শরতের মা পাঠিয়েছে। আমি পরম যত্নে নিজের কাছে রাখলাম। রাতভর অশ্রুসিক্ত নয়নে পড়লাম পুরোটা। বেশির ভাগ কবিতা আমাকে উৎসর্গ করে লেখা। অপ্রেরিত কিছু চিঠি আমাকে বাকরুদ্ধ করেছে। অবাক হয়ে পড়েছি কিছু কাল্পনিক আলাপন।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">শরৎ মেঘ যেন একে অন্যের পরিপূরক। সব স্মৃতি নিয়ে আর ফিরে যাইনি ব্যস্ত রাজধানীতে। শরতের কর্মস্থল আমার স্মৃতিময় পাঠশালায় যোগ দিলাম। স্মৃতি নিয়ে পড়ে আছি গ্রামে। মাঝেমাঝেই খুঁজে ফিরি শরতের ছায়া। কিছু অসমাপ্ত আলাপন ছিল। শরৎ-মেঘের আলাপন রয়ে গেল অগোচরে। শরৎ হাসে অন্তরীক্ষের শুভ্র মেঘে কিংবা কাশফুলে। আমার ক্রন্দন হেরে যায় শরৎ-মেঘের আলাপন পড়ে।</span></span></span></span></span></p> <p> </p>
