<p>মধ্য ত্রিশে থাকা পুরুষের জীবনকে অর্থবহ করে তুলতে পারে এমন ১০টি কাজের তালিকা—</p> <p>১। পরিবারসংশ্লিষ্টতা : কৈশোরে কিংবা তারুণ্যে, বয়সের জোশে ছেলেরা দিনমান বাইরেই টো টো করে সময় কাটায়। আর জীবনে একটু স্থিরতা এলে পুরুষ মানুষ সময় কাটাতে ভালোবাসে তার পরিবারের সঙ্গে। বয়স যদি ৩০ বছরের মাঝামাঝি হয়, আর মা-বাবাসহ পরিবারের বাকি সদস্যরা যদি এখনো সুস্থ থাকে, তবে এটাকে স্রষ্টার বিশেষ নিয়ামত মনে করে তাদের সান্নিধ্যে সময় কাটানো উচিত। তাদের যত্ন নেওয়া উচিত।</p> <p>২। প্রকৃতির সংস্পর্শ : মানুষ প্রকৃতির সন্তান, যদিও নগরজীবনের ব্যস্ততায় সে তা ভুলতে বসেছে। সময়-সুযোগ হলেই প্রকৃতির সান্নিধ্যে চলে যেতে হবে। নিজেকে রিচার্জ করতে হবে প্রকৃতির শক্তিতে।</p> <p>৩। এক্সারসাইজ করা : এক্সারসাইজ করলে শরীরে হ্যাপি হরমোন নিঃসৃত হয়। ইয়াং এজে আমরা অনেকে এক্সারসাইজ করলেও বয়স ও ব্যস্ততা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এক্সারসাইজ করা বন্ধ করে দিই। মধ্য ত্রিশে এসে জিমে জয়েন করা একটা ভালো সিদ্ধান্ত হতে পারে। এতে এক্সারসাইজের পাশাপাশি সুস্বাস্থ্যকে প্রায়োরিটি দেয় এমন মানুষের সঙ্গে ভালো বন্ডিং হবে। জিমে জয়েন করতে না পারলেও নিয়মিত হাঁটা বা জগিং করা যায়।</p> <p>৪। প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট : পেশাগত জীবন গুরুত্বপূর্ণ। যে যেই পেশায় আছি, সেখানে এমন একটা উচ্চতায় ওঠার চেষ্টা করা যেতে পারে, যাতে সেই পেশার থ্রু কমিউনিটিকে আক্ষরিক অর্থেই ভালো কিছু সার্ভিস দিয়ে যেতে পারি। কর্মক্ষেত্রে ভ্যালু অ্যাড করতে পারি, একটা লিগ্যাসি তৈরি করতে পারি।</p> <p>৫। পুরনো বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে যোগাযোগ : পেশাগত জীবনে উন্নতির ইঁদুরদৌড়ে অংশ নিতে গিয়ে প্রায়ই আমরা আমাদের শিকড়কে ভুলে যাই। শৈশবের দিনগুলোতে যখন আমরা পেশাগতভাবে কিংবা ব্যক্তিজীবনে ততটা সফল হয়ে উঠিনি, তখন যে বন্ধুবান্ধব নিঃস্বার্থ ভালোবাসায় আমাকে ঘিরে রাখত সব সময়, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি, সম্পর্কের উন্নয়ন আমাকে মানসিক প্রশান্তি এনে দেবে।</p> <p>৬। পুরনো কোনো শখ পুনরুদ্ধার : একই সঙ্গে কর্মজীবনের ব্যস্ততায় হারিয়ে যাওয়া সুর ও রংগুলো পুনরুদ্ধার করাও জীবনকে সুরেলা ও রঙিন করে তুলতে পারে। গান গাওয়া, গিটারে টুংটাং সুর তোলা, নাটকপাড়ায় গিয়ে নাটক কিংবা হলে গিয়ে সিনেমা দেখা, আর্ট এক্সিবিশনে ঘোরা—এ রকম যত স্বাদ-আহ্লাদ ছিল একসময়ে, এদের পুনরুজ্জীবিত করে তোলা জীবনকে নতুন করে অর্থবহ করে তুলবে।</p> <p>৭। ডায়েরি লেখা : মনে, মাথায় যেসব চিন্তা ঘোরে, তার সবই গুরুত্বপূর্ণ, অন্তত আমার নিজের কাছে। কাজেই সেগুলোকে হারাতে না দেওয়া, মাথায় আসার সঙ্গে সঙ্গে লিপিবদ্ধ করে ফেলা ডায়েরির পাতায়—এটাও মনের ভার কমিয়ে মনকে হালকা করতে সহায়তা করবে। </p> <p>৮। ধর্মচর্চা করা : ধর্মচর্চা মানুষকে অন্তর্মুখী করে তোলে। আরো গভীরে ঢুকে, আরো তলিয়ে জীবন নিয়ে ভাবতে সহায়তা করে। জীবনের সংকীর্ণতাগুলোকে আরো বড় পারস্পেক্টিভ থেকে দেখতে ও ডিল করতে শেখায়। জীবনকে একটা রুটিনের মধ্যে আনে।</p> <p>৯। শুয়ে শুয়ে মেঘ দেখা : এ ছাড়া অবসর সময়ে ছেলেবেলার মতো বারান্দায় টান হয়ে শুয়ে কিংবা জানালার ধারে বসে আকাশের মেঘ দেখা যেতে পারে। শৈশবে আকাশে ভাসমান মেঘগুলোকে দেখে যেমন হাতি, ঘোড়া কিংবা ডাইনোসরের শেপের মনে হতো, এখন হয়তো অমন মনে হবে না। কিন্তু এ কাজের লক্ষ্য হচ্ছে নিজের শৈশবের কাছে ফিরে যাওয়া। মনের শিশুসত্তাকে বাঁচিয়ে রাখা।</p> <p>১০। ...</p> <p> </p> <p>‘১০ নম্বর পয়েন্টটা অনেক ভেবেও বের করতে পারলাম না ডক্টর সাহেব,’</p> <p>পেশেন্টের ডায়েরি বন্ধ করে সামনের টি টেবিলে রাখা মাত্রই তিনি বোকা বোকা একটা হাসি দিয়ে তাকালেন আমার দিকে। </p> <p>‘একবসায় লিখেছি তো, শেষ দিকে এসে মাথা তেমন কাজ করছিল না। ভালোমতো ব্রেনস্টর্ম করতে পারিনি।’</p> <p>‘তবু এখন কিন্তু অনেক গুছিয়ে ভাবতে পারছেন আপনি। আপনার চিন্তার ধোঁয়াশাচ্ছন্ন ভাব কেটে গেছে অনেকটাই’, ক্লায়েন্ট লগবুকে আজকের সেশনের ডিটেইলসগুলো তুলে রাখতে রাখতে বলি আমি। ‘আর ১০টা পয়েন্টই হতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। মানুষ রাউন্ড ফিগার পছন্দ করে, তাই আমি আপনার জীবনকে অর্থবহ করে তোলে এমন ১০টা পয়েন্ট ভেবে বের করতে বলেছি। তবে এখন আপনার কাজ হবে এই নোট করা পয়েন্টগুলো ফলো করা। একে একে এদের ওপর কাজ শুরু করা। মনে রাখবেন, মনের সদিচ্ছা কিন্তু খুব সেনসিটিভ গেস্ট। একটু অবহেলা দেখলেই রাগ করে। উধাও হয়ে যায়।’</p> <p>ভদ্রলোক মুখে কিছু বলেন না। ঠোঁটের কোণে এত নরম এক হাসি ঝুলিয়ে বসে থাকেন, মনে হয় যেন আমিই উনার ক্লায়েন্ট, উনিই আমাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন।</p> <p>‘রাতে ঘুম হচ্ছে ঠিকঠাক?’ আমি প্রশ্ন করি।</p> <p>‘বাচ্চা যদি একটা জামা সারা দিন গায়ে দিয়ে রাখে, তাহলে সেটা খোলার পর ওই জামায় ওর গায়ের গন্ধ লেগে থাকে সর্বোচ্চ দেড় দিনের মতো, ডক্টর সাহেব’, লোকটা কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর হঠাৎ কিছু মনে পড়েছে এমন ভঙ্গিতে কথা বলা শুরু করেন। ‘তারপর সে গন্ধ আস্তে আস্তে হালকা হতে থাকে’,</p> <p>তাঁর ঠোঁটের কোণে এখনো হাসি ঝুলে আছে। দৃষ্টি কামরার জানালা দিয়ে বাইরে, দূরে কোথাও নিবদ্ধ।</p> <p>‘এখন...ধরেন...ওই গন্ধটা, বুঝলেন...আমার বাচ্চার গায়ের যে ঘ্রাণ ওর কাপড়ে লেগে থাকে, ওটা দরকারি’,</p> <p>আমি কলম পকেটে ঢুকিয়ে রাখি। লগবুকটা টেবিলের ওপর রেখে দিই। তারপর যতটা সম্ভব সহানুভূতি একজন পুরুষ মানুষ অন্য একজন পুরুষ মানুষের জন্য চোখে ধারণ করতে পারে, তা দৃষ্টিতে মিশিয়ে তার দিকে তাকাই। </p> <p>‘এখন...কী বলব আসলে...কষ্ট লাগে, বুঝলেন...দেখা হয় না...ওই দিকের ওরা খামখেয়ালি স্বভাবের...বাচ্চাটাকে দেখতে দেয়...আবার দেয় না...অফিস থেকে ফিরে দেখি বাসাটা কবরের মতো খালি...বাচ্চাকে নিয়ে আইন-আদালত, মামলা-মোকদ্দমা কার সহ্য হয়...’</p> <p>ভদ্রলোক টেনে টেনে শ্বাস নেন কয়েকবার, যেন কামরায় পর্যাপ্ত অক্সিজেন নেই। খুকখুক করে খানিকটা কেশে নিয়ে তিনি আবারও কথা বলা শুরু করেন।</p> <p>‘কী করব ডক্টর সাহেব, বলেন?’ লোকটা ধরা গলায়, কিন্তু হাসিমুখে আমার দিকে তাকান। ‘বাচ্চা তো...আমারই তো বাচ্চা...এভাবে সপ্তাহে একবার, দুবার স্রেফ চোখের দেখা দেখে থাকা তো মুশকিল। তাই...তাই অনেক ভেবে আমি একটা উপায় বের করেছি...’</p> <p>লোকটার টলটলে চোখজোড়া জ্বলজ্বল করতে থাকে উৎসাহে।</p> <p>‘বাজারে ছোট ছোট এয়ারটাইট প্লাস্টিকের ব্যাগ পাওয়া যায়, বুঝলেন। বাচ্চার সঙ্গে যেদিন দেখা হয়, সে সময় ওর গায়ে যে জামাটা থাকে, ওটা নিয়ে এসে যদি ও রকম একটা এয়ারটাইট প্লাস্টিকের ব্যাগের মধ্যে ভরে রাখি, আর প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে ব্যাগের চেইন অল্প একটু খুলে স্রেফ একবার করে যদি ঘ্রাণ নিই ভেতরের, তবে সব মিলিয়ে প্রায় এক সপ্তাহের মতো ওই কাপড়ে আমার বাচ্চার গায়ের ঘ্রাণ ঠিকঠাক লেগে থাকে। এই করছি গত সপ্তাহ থেকে। ভালো আছি এখন বেশ। রাতে ঘুম হয় ভালো। মনে হয় বাচ্চাটা আমার পাশেই ঘুমিয়ে আছে।’  </p> <p>লোকটা একটু ঘুরে জানালার দিকে মুখ ফিরিয়ে বসেন। শেষ বিকেলের আলোতে ঝলসে যায় তাঁর মুখচ্ছবি। সেই উজ্জ্বল আলোকচ্ছটার মাঝেও আমি দেখতে পাই, তাঁর চোখের কোল ঘেঁষে ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরতে থাকা পানি তাঁর শার্টের বুক ভিজিয়ে দিচ্ছে।  </p> <p>‘এখন বেশ ভালো আছি আমি ডক্টর...সত্যি বেশ ভালো আছি, বুঝলেন...মনে হয়, সব সময় বাচ্চাটা আমার সঙ্গেই আছে...আব্বুটা আমার পাশেই আছে...’ ভদ্রলোক ফোঁপাতে থাকেন, ‘সপ্তাহের সাতটা দিনই ওর শরীরের গন্ধ আমার সঙ্গে...ভালো না? বলেন আপনি...আপনিই বলেন?’</p> <p> </p>