<p style="text-align:justify"><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিদায় নিচ্ছে আরো একটি বছর। মানুষ কিংবা অন্যান্য প্রাণীর মতো পৃথিবীরও বয়স বাড়ে কি না জানি না। তবে ক্ষয় নিশ্চয়ই হয়, কোথাও না কোথাও তার চিহ্ন থেকে যায়। অনন্ত মহাবিশ্বের যে চিরায়ত সময়, তার গতিপথ আমরা না চিনলেও মরণশীল জগতে আমরা সময়কে হেঁটে যেতে দেখি ঘড়ির কাঁটা মেপে মেপে, দিন গুনে গুনে। যেতে যেতে বিগত সময় আমাদের স্মৃতি হয়ে রয়ে যায় আরো কতটা কাল</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কোনো স্মৃতি বেদনার, কোনো স্মৃতি আনন্দের; কোনো স্মৃতি সৃষ্টির, কোনো স্মৃতি ক্ষয়ের। এই পরিক্রমায় বিদায়ি এই বছরকে একটু রোমন্থন করতে চাই। মোটাদাগে স্মরণ করতে চাই বিশ্বসাহিত্যে বছরজুড়ে কী ঘটল, কী হারালাম আমরা, আর কী-ই বা পেলাম।</span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">২০২৪ সাল শুরু হয়েছিল বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা দিয়ে। সাহিত্যের ১১টি শাখায় এ বছর বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হয়। মোট ১৬ জন পুরস্কৃত হন। পুরস্কৃতরা হলেন : শামীম আজাদ (কবিতা), ঔপন্যাসিক নুরুদ্দিন জাহাঙ্গীর ও সালমা বাণী (যৌথভাবে কথাসাহিত্যে), জুলফিকার মতিন (প্রবন্ধ/গবেষণা), সালেহা চৌধুরী (অনুবাদ), নাট্যকার মৃত্তিকা চাকমা ও মাসুদ পথিক (যৌথভাবে নাটক), তপঙ্কর চক্রবর্তী (শিশুসাহিত্য), আফরোজা পারভীন ও আসাদুজ্জামান আসাদ (মুক্তিযুদ্ধের ওপর গবেষণা), সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল ও মো. মজিবুর রহমান (বঙ্গবন্ধুর ওপর গবেষণা), পক্ষিবিদ ইনাম আল হক (পরিবেশ/বিজ্ঞানক্ষেত্র), ইসহাক খান (জীবনী) এবং তপন বাগচী ও সুমন কুমার দাস (যৌথভাবে লোককাহিনী)।</span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এই নির্বাচনের মান নিয়ে লেখকমহলে পক্ষে-বিপক্ষে তুমুল তর্কবিতর্ক শুরু হয়। অনেকেই বাংলা একাডেমির সমালোচনা করেন। দু-একজন বাদে বেশির ভাগ পুরস্কৃত লেখক এই পুরস্কারের জন্য যোগ্য নন বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক লেখক অভিমত দেন। এরপর স্বাধীনতা পুরস্কার ও একুশে পদক নিয়েও শিল্প-সাহিত্যজগতে অসন্তোষ দেখা দেয়।</span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিদায়ি বছরে একুশে পদকে ভূষিত হন : ভাষা আন্দোলনে অবদান রাখায় মো. আশরাফুদ্দীন আহমদ (মরণোত্তর) ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হাতেম আলী মিয়া (মরণোত্তর); সংগীতে জালাল উদ্দীন খাঁ (মরণোত্তর), বীর মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণী ঘোষ, বিদিত লাল দাস (মরণোত্তর), এন্ড্রু কিশোর (মরণোত্তর) ও শুভ্র দেব; নৃত্যকলায় শিবলী মহম্মদ, অভিনয়ে ডলি জহুর, এম এ আলমগীর, আবৃত্তিতে শিমুল মুস্তাফা ও রূপা চক্রবর্তী; চিত্রকলায় শাহজাহান আহমেদ বিকাশ এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ ও আর্কাইভিংয়ে কাওসার চৌধুরী; সমাজসেবায় মো. জিয়াউল হক ও রফিক আহমদ, ভাষা ও সাহিত্যে মুহাম্মদ সামাদ, লুৎফর রহমান রিটন ও মিনার মনসুর, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ (মরণোত্তর) এবং শিক্ষায় অধ্যাপক ড. জিনবোধি ভিক্ষু।</span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন : কাজী আব্দুস সাত্তার বীরপ্রতীক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফ্লাইট সার্জেন্ট মো. ফজলুল হক (মরণোত্তর) ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আবু নঈম মো. নজিব উদ্দীন খান (খুররম) (মরণোত্তর), ড. মোবারক আহমদ খান, ডা. হরিশংকর দাশ, মোহাম্মদ রফিক উজ্জামান, ফিরোজা খাতুন, অরণ্য চিরান, অধ্যাপক ডা. মোল্লা ওবায়েদুল্লাহ বাকী ও এস এম আব্রাহাম লিংকন।</span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলা একাডেমির মতো ততটা তীব্র না হলেও এই দুটি রাষ্ট্রীয় পুরস্কারের নির্বাচনপ্রক্রিয়া নিয়েও প্রচুর সমালোচনা হয়। দেশে অনেক যোগ্য ব্যক্তিত্ব থাকতে কোনো কোনো বিভাগে অপেক্ষাকৃত গৌণ ব্যক্তিকে পুরস্কৃত করার এই প্রবণতা নিয়ে সুধীসমাজ হতাশা ব্যক্ত করে।</span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">২০২৪ সালে অন্যান্য সাহিত্য পুরস্কারের মধ্যে সমকাল সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেন ভাষাসৈনিক- লেখক আহমদ রফিক (আজীবন সম্মাননা), বেগম আখতার কামাল (প্রবন্ধ), ময়ূখ চৌধুরী (কবিতা) ও মাহরীন ফেরদৌস (তরুণ সাহিত্যিক)। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় বিশেষ অবদানের জন্য </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার ২০২৩</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> প্রদান করা হয় চার তরুণ লেখককে। কথাসাহিত্যে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ভাতের কেচ্ছা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> গ্রন্থের জন্য কামরুন্নাহার দিপা, প্রবন্ধ-গবেষণায় </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জনসংস্কৃতির রূপ ও রূপান্তর</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> গ্রন্থের জন্য শারফিন শাহ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণা ও সাহিত্যে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ফাড়াবাড়ি হাট গণহত্যা-আদর্শ বাজার গণহত্যা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> গ্রন্থের জন্য ফারজানা হক এবং শিশু-কিশোর সাহিত্যে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আলোয় রাঙা ভোর</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> গ্রন্থের জন্য রহমান বর্ণিল এই পুরস্কার অর্জন করেন।</span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ ছাড়া এ বছর দেশের রাজধানী ও রাজধানীর বাইরে থেকে বেশ কিছু নিয়মিত ও অনিয়মিত সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করা হয়। আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে সাহিত্যে সবচেয়ে আলোচিত পুরস্কার হলো সাহিত্যে নোবেল। ২০২৪ সালে বিশ্বের ১২১তম এবং এশিয়ার প্রথম নারী লেখক হিসেবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন দক্ষিণ কোরিয়ার কথাসাহিত্যিক হান কাং। ৫৩ বছর বয়সী হান কাং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন ২০১৬ সালে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দ্য ভেজিটেরিয়ান</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> শীর্ষক উপন্যাসের জন্য দ্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ অর্জনের মধ্য দিয়ে। টাইম ম্যাগাজিন ওই বছর ঘোষিত </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বছরের সেরা বই ২০১৬</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> তালিকায় উপন্যাসটি রাখে। লেখক পরিবারেই হান কাংয়ের জন্ম ও বেড়ে ওঠা। বাবা হান সিয়ং-ওন ঔপন্যাসিক, ভাই হান ডং রিমও লেখক। হান কাং নিজে সাহিত্যের শিক্ষার্থী। ১৯৯৩ সালে প্রথম তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়। পরের বছর প্রকাশিত হয় গল্প। প্রথম বই প্রকাশিত হয় ১৯৯৫ সালে। এ পর্যন্ত তাঁর আটটি উপন্যাস, পাঁচটি উপন্যাসিকা, একটি কাব্যগ্রন্থ ও দুটি প্রবন্ধের সংকলন প্রকাশিত হয়েছে। অনুবাদে প্রকাশিত হয়েছে সাকল্যে তাঁর চারটি উপন্যাস : </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ভেজিটেরিয়ান</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (২০১৫), </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হিউম্যান অ্যাক্টস</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (২০১৬), </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দ্য হোয়াইট বুক</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (২০১৭) ও </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গ্রিক লেসনস</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (২০২৩)।</span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নোবেলের পর সাহিত্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার হলো বুকার। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে অবস্থানরত মহাকাশচারীদের প্রেক্ষাপটে রচিত সামান্থা হার্ভের </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অরবিটাল</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> উপন্যাসটি ২০২৪ সালের দ্য বুকার প্রাইজ অর্জন করেছে। দি ইন্টারন্যাশনাল বুকার পেয়েছেন জার্মান লেখিকা জেনি এরপেনবেক। তাঁর আত্মজৈবনিক রাজনৈতিক উপন্যাস </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কায়রোস</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">-এর জন্য তিনি এই পুরস্কার পেয়েছেন। জার্মান ভাষা থেকে উপন্যাসটি ইংরেজিতে অনুবাদ করে জেনির সঙ্গে যৌথভাবে বুকার জিতেছেন আরেক জার্মান মিহাইল হফমান।</span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সাহিত্যের অর্জন ও স্বীকৃতি ছাপিয়ে দেশ ও বিদেশের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ লেখককে হারানোর বেদনাবোধে আক্রান্ত হয়েছে পাঠকসমাজ। ২০২৪ সালে আমরা হারালাম বাংলা ভাষার গুরুত্বপূর্ণ গবেষক-লেখক গোলাম মুরশিদ, গীতিকার আবু জাফর, কথাশিল্পী শহীদ আখন্দ, কবি অসীম সাহা, কবি জাহিদুল হক, কবি অঞ্জনা সাহা, লেখক ফরহাদ খান, কথাসাহিত্যিক-প্রাবন্ধিক হোসেনউদ্দিন হোসেন, কবি মাকিদ হায়দার এবং গবেষক-ভাষাবিজ্ঞানী মাহবুবুল হককে। বছরের একেবারে শেষ দিকে চলে গেলেন সমকালীন বাংলা ভাষার প্রধান কবিদের একজন কবি হেলাল হাফিজ। চলে গেলেন লেখক-অনুবাদক এবং বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ। পাপিয়া সারোয়ার, সাদী মহম্মদ, শাফিন আহমেদের মতো দেশবরেণ্য সংগীতশিল্পী এবং মাসুদ আলী খান, আহমেদ রুবেলের মতো গুণী অভিনেতাকে আমরা হারালাম।</span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ বছর প্রয়াত হলেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অকৃত্রিম বন্ধু কবি-অনুবাদক ও গবেষক উইলিয়াম রাদিচে। তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তপন রায়চৌধুরীর অধীনে মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবন ও সাহিত্য নিয়ে গবেষণা করেন। রবীন্দ্রনাথ ও মাইকেল মধুসূদন দত্তের রচনা ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। বাঙালি লেখক-শিল্পীদের মধ্যে পশ্চিম বাংলা থেকে আমরা হারালাম চিত্রগ্রাহক তারাপদ বন্দ্যোপাধ্যায়, কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদার, নাট্যব্যক্তিত্ব মনোজ মিত্রকে। বছরের শেষ দিকে  কিংবদন্তি তবলাবাদক জাকির হোসেনকে হারিয়ে এই উপমহাদেশের সংগীত ও শিল্পাঙ্গনে নেমে আসে শোকের ছায়া।</span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিশ্বসাহিত্যে আমরা হারিয়েছি কানাডার নোবেলজয়ী লেখক অ্যালিস মুনরো, আলবেনিয়ীয় ঔপন্যাসিক-কবি-নাট্যকার ইসমাইল কাদেরের মতো লেখকদের। অবশ্য মুনরোর মৃত্যুর পর তাঁকে নিয়ে একটি অপ্রীতিকর ঘটনা এ বছর পশ্চিমের সাহিত্যমহলে ভীষণ চর্চিত হয়। তাঁকে অভিযুক্ত করেন আর কেউ না, তাঁরই মেয়ে স্কিনার। যে মুনরো তাঁর গল্প-উপন্যাসে নারীদের নির্যাতন অবদমনের জন্য পুরুষ চরিত্রকে কখনো ক্ষমা করেননি, বরং প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন, যাঁর সাহিত্য </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নারীবাদ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> ও </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মানবতাবাদ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> স্কুলের পাঠ্য হয়ে উঠেছে, সেই মুনরো তাঁর স্বামীর দ্বারা নিজের মেয়ের যৌন নির্যাতনের বিষয়টি চেপে গেছেন তো বটেই, উল্টো মেয়েকেই দোষারোপ করে গেছেন। মুনরোর মৃত্যুর পর টরন্টো স্টারে একটি প্রবন্ধ লেখেন মুনরোর মেয়ে স্কিনার। তিনি লেখেন, মুনরোর দ্বিতীয় স্বামী (অর্থাৎ স্কিনারের সত্বাবা) ফ্রেমলিন তাঁকে বারবার যৌন নির্যাতন করে গেছেন, লেখক মুনরো তাঁর পাশে না থেকে যৌন নির্যাতনকারী স্বামীর পাশে দাঁড়িয়েছেন। স্কিনার যৌন নিপীড়নের শিকার হন ৯ বছর বয়সে। এরপর সেটা চলতে থাকে। স্কিনার মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সত্বাবা তাঁকে বলেছিলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তুমি যদি এটা তোমার মাকে বলো, তাহলে সে মরে যাবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> ভয়ে মেয়েটি মাকে বলতেও পারেননি। অনেক পরে, ১৯৯২ সালে মাকে (মুনরোকে) এক চিঠিতে লিখেছিলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমি সারা জীবন ভয় পেয়েছি, যা ঘটেছে তার জন্য তুমি আমাকে দোষ দেবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> এবং শেষ পর্যন্ত সেটাই ঘটেছে।</span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এলিস মুনরো বলেছিলেন যে তাঁকে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">খুব দেরি করে বলা হয়েছে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। তিনি তাঁর স্বামীকে খুব ভালোবাসেন। এবং তিনি স্বামীকে দায়ী করার বদলে সমাজ ও পরিবেশকে দায়ী করেন। তিনি মেয়েকে বলেছিলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যা কিছু ঘটেছে তা তোমার এবং তোমার সত্বাবার মধ্যে থাকবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> এ নিয়ে তাঁর কিছু বলার বা করার নেই।</span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এরপর মায়ের সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দেন স্কিনার। ২০০৫ সালে এসেও মুনরো একটি সাক্ষাৎকারে ফ্রেমলিনের প্রতি গভীর ভালোবাসা প্রকাশ করেন। এটা স্কিনারের ক্ষতকে নতুন করে জাগিয়ে তোলে। স্কিনার পুলিশের কাছে যান; ফ্রেমলিনকে অভিযুক্ত করেন। দোষ প্রমাণিত হয়। কিন্তু লেখক মুনরোর দুর্দান্ত খ্যাতির জন্য খবরটি সে সময় পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়নি।</span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ফ্রেমলিন ২০১৩ সালে মারা গেলেন, সে বছরই মুনরো সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন। স্কিনার তাঁর মাকে অভিনন্দন জানাতে যাননি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি তাঁর মায়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন। ২০২৪ সালে বিশ্বসাহিত্যে এটিও একটি আলোচিত ঘটনা।</span></span></span></span></p>