<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2025/1. january/03-12-2025/2/kalerkantho-sl-1a.jpg" height="302" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2025/1. january/03-12-2025/2/kalerkantho-sl-6a.jpg" style="float:left" width="300" />কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের উপন্যাস </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হাঙর নদী গ্রেনেড</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। তিনটি প্রতীকী শব্দের মহাকাব্যিক ব্যঞ্জনার মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আবেগময় ও আত্মত্যাগের অপূর্ব মহিমাসমৃদ্ধ উপন্যাস। ১৯৭৬ সালে প্রকাশিত উপন্যাসটি বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় যশোরের কালীগঞ্জ গ্রামের এক মায়ের সত্য ঘটনা অবলম্বনে রচিত।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হলদি গ্রামের বুড়ি নামের এক দুরন্ত কিশোরীর বেড়ে ওঠার মধ্য দিয়ে যে উপন্যাসের আনন্দময় সূচনা, স্বাধীনতার আত্মত্যাগে মাতৃত্বের প্রকৃত স্বাদ ও শোকের মধ্য দিয়ে তার আবেগময় সমাপ্তি। দুই ছেলের পিতা গফুরের সঙ্গে বুড়ির বিয়ে হওয়ার মধ্য দিয়ে যেন উপন্যাসের মূল গতিপথ নির্মিত হতে শুরু করে। দুই ছেলে ছলিম ও কলিমকে নিয়ে গফুরের সঙ্গে সুখেই কাটছিল বুড়ির সংসার। অনেক অপেক্ষা আর কষ্টের পর তার কোল আলো করে আসে রইস। কিন্তু সেই খুশি যেন কেড়ে নিতে চায় শিশু রইসের বাকপ্রতিবন্ধী হওয়ার নির্মম সত্য। সেই আর্তনাদ যেন শুনতে পাই বুড়ির চোখের জলমিশ্রিত বিলাপে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রইসরে ও রইস</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গফুরের মারা যাওয়ার পর লোলুপ রমজানদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে অক্লান্ত পরিশ্রমে বুড়ি তার তিন ছেলেকে নিয়ে জীবননদী পাড়ি দিতে থাকে। দেখতে দেখতে কেমন যেন পাল্টে যেতে থাকে দেশটা, বদলে যেতে থাকে হলদি গাঁয়ের চেনা সুরগুলো; কেমন যেন অচেনা হয়ে ওঠে বুড়ির ছেলে ছলিম, কলিম। বুড়ি ভাবে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নতুন বউ ঘরে আনলাম, তাও ছাওয়ালের মন ঘরে টিকে না কেন। সে বুঝতে পারে না যে দেশে কী শুরু হয়েছে। বিস্ময়ে সে শুধু দেখে, দোকানে সবাই যেন কিসের খবর শোনে, বাজারে কিসের মিটিং-মিছিল হয়, আর উত্সুক চোখে তাকিয়ে থাকে মুক্তিপাগল ছেলেগুলোর রক্তিম চোখের দিকে। তার দুই ছেলেও যুদ্ধে যায়। চারদিকে শুধু যুদ্ধ আর স্বাধীনতার কথা! মনে মনে সে আফসোস করে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সবাই যুদ্ধে যায়, তার রইসও যদি সবার মতো যুদ্ধে যেতে পারত! অথচ তার রইস প্রবাদের মতোই সত্য, কানা হলেও পদ্মলোচন, যাদের আত্মত্যাগের রক্তনদী পার হয়ে স্বাধীন বাংলার বিলে-ঝিলে ফোটে অসংখ্য শাপলা, শালুক আর পদ্ম।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেওয়া, খাওয়ানো, লুকিয়ে রাখার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে নারীদের যে অবদান তাকেও মহিমাময় করে তোলা হয়েছে উপন্যাসে। কিন্তু তার চেয়েও বড় মহিমায় ভাস্বর হয়ে উঠেছে মুক্তিযোদ্ধাদের বাঁচাতে, দেশের স্বাধীনতা অর্জন করতে একজন মায়ের আত্মত্যাগের বাকহীন নির্মম অথচ আবেগময় চিত্র। বুড়ির ঘরে আশ্রয় নেওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের পাকিস্তানি হায়েনাদের আঁচড় থেকে রক্ষা করতে নিজের প্রতিবন্ধী ছেলের হাতে বন্দুক দিয়ে পাঠায় বর্বর পাকিস্তান হানাদারদের রাইফেলের সম্মুখে। মায়ের চোখের সামনে হায়েনাদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় রইসের বুক। শহীদ ছেলের নিথর দেহ বুকে আঁকড়ে ধরেই বুড়ি যেন পেল মাতৃত্বের প্রকৃত স্বাদ। হলদি গাঁয়ের একজন সাধারণ অথচ অসাধারণ এই মায়ের আত্মত্যাগের হৃদয়বিদারক মহিমান্বিত চিত্র হাজারো মায়ের আত্মত্যাগের চিত্র। স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে আনতে এভাবে যুগে যুগে বুক পেতে দাঁড়াতে হয় গ্রেনেডের মুখে, পার হতে হয় রক্তের নদী আর পরাজিত করতে হয় মানুষখেকো হাঙরদের। এই উপন্যাসকে কেন্দ্র করে চাষী নজরুল ইসলামের নির্মিত চলচ্চিত্র যেন আজকের সময়েরও ফ্ল্যাশব্যাক।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গ্রন্থনা : পিন্টু রঞ্জন অর্ক</span></span></span></span></p>