সংস্কৃতির উজ্জ্বল উত্তরাধিকার একুশের বইমেলা

বিশ্বজিৎ ঘোষ
বিশ্বজিৎ ঘোষ
শেয়ার
সংস্কৃতির উজ্জ্বল উত্তরাধিকার একুশের বইমেলা

স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে, ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি, বাংলা একাডেমি চত্বরে মুক্তধারার স্বত্বাধিকারী চিত্তরঞ্জন সাহা চাটাই বিছিয়ে যে বইমেলার সূত্রপাত করেছিলেন, অর্ধশতাব্দীরও অধিককালের ব্যবধানে আজ তা আমাদের জাতীয় সংস্কৃতির অনিবার্য এক উপাদানে পরিণত। বাংলা একাডেমি আয়োজিত একুশের বইমেলা শুধু বই বেচাকেনার মেলা নয়; এই মেলা বাঙালির আবেগ আর সংরাগ, দ্রোহ আর প্রতিবাদ, সংঘচেতনা আর মাতৃভাষাপ্রীতিরও অনন্য এক মেলা। মানুষের সঙ্গে মানুষের সংঘবাসনায় মুখর থাকে একুশের বইমেলা। একুশের বইমেলা আমাদের সংস্কৃতির উজ্জ্বল এক উত্তরাধিকার, বাঙালি জাতিসত্তার আত্মপরিচয়ের উল্লেখযোগ্য এক অনুষঙ্গ।

এই সূত্রেই ফ্রাংকফুর্ট-লন্ডন-কলকাতা বইমেলার সঙ্গে একুশের বইমেলার সাদৃশ্যের চেয়ে অনন্যতাই বেশি। একুশের বইমেলার অন্তরে আছে দ্রোহের আগুন, আছে মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসার আবেগ, আছে বিচ্ছিন্নতা আর খণ্ডতার সীমানা পেরিয়ে অখণ্ড সংঘসত্তায় জেগে ওঠার আহবান। একুশের বইমেলার প্রত্ন আবেদনে আছে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের অবিনাশী চেতনা।

পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থায় বিচ্ছিন্নতা-বিযুক্তি আর নিঃসঙ্গতা-নির্বেদ ক্রমে প্রবল হয়ে উঠছে।

মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক, আন্তর্মানবিক বন্ধন একালে হয়ে গেছে ছিন্ন। সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বা সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সটাই হয়ে উঠেছে একালের প্রধান কুললক্ষণ। একালে সমাজের সঙ্গে ব্যক্তিমানুষের কোনো সম্পর্ক নেই, সম্পর্ক নেই প্রেম-প্রকৃতি-পরিবারের সঙ্গেওএমনকি নিজের সঙ্গেও। সর্বগ্রাসী এক বিচ্ছিন্নতার গ্রাসে ক্রমবিপন্ন সমকালীন মানবসমাজ।
বাংলা একাডেমির বইমেলা সামাজিক এই প্রবণতার বিরুদ্ধে প্রবল এক প্রতিবাদ। শুধু বই কেনার জন্য একুশের বইমেলায় মানুষ আসে না; মানুষ আসে অন্য মানুষের সান্নিধ্য পেতে, আড্ডা জমাতে, চা খেতে, গল্প করতেকখনো বা দল বেঁধে এক দোকান থেকে অন্য দোকানে ঘুরতে। লেখকের সঙ্গে পাঠকের এখানে দেখা হয়, দেখা হয় প্রকাশকের সঙ্গেও। একুশের বইমেলার সঙ্গে লেখক-পাঠক-প্রকাশকদের একটা উন্মাদনা জড়িত থাকেএ কথা অস্বীকার করি কিভাবে? অপশক্তির আঘাত এসেছে বইমেলায়, আক্রান্ত হয়েছেন লেখক কিংবা প্রকাশক, কখনো রুদ্ররূপে ধেয়ে এসেছে প্রকৃতি, লণ্ডভণ্ড হয়েছে সব আয়োজন, তবু বইমেলা দিনে দিনে সমৃদ্ধ হয়েছে, বেড়েছে তার পরিসর, লাভ করেছে জাতীয় পরিচয়। দেশের ভূগোল ছাড়িয়ে একুশের বইমেলার কথা এখন বিশ্বসংস্কৃতিতেই জানান দিচ্ছে তার স্বকীয় অস্তিত্ব।

লেখক-পাঠক-প্রকাশকের আনন্দ-আবেগ-আকাঙ্ক্ষা আর সাংবৎসরিক উন্মাদনাই সব প্রতিকূলতা অতিক্রম করে একুশের বইমেলাকে নিয়ে গেছে সামনের দিকে। আমাদের সম্মিলিত জাতীয় চেতনাই এ ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে চলেছে। একুশের বইমেলা সদর্থক জীবনের কথা বলে, সম্প্রীতিঋদ্ধ মানবসম্পর্কের কথা বলে, প্রগতির কথা বলে। সব কিছুই আমাদের সম্মিলিত জাতীয় চেতনার বহিঃপ্রকাশ। বইমেলায় সেইসব বইই পাঠকের জন্য আনা হয়, কোনো না কোনো সূত্রে তা ওই সম্মিলিত জাতীয় চেতনাকেই প্রতিনিধিত্ব করে। পৃথিবীর অন্য কোনো বইমেলায় এমন বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাওয়া যাবে না। বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠার পেছনে বায়ান্নর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের চেতনা ছিল ক্রিয়াশীল। বলা যেতে পারে, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনেরই প্রত্যক্ষ ফল একাডেমি। তাই বাংলা একাডেমি আয়োজিত একুশের বইমেলা মাতৃভাষা বাংলার প্রতি আমাদের ভালোবাসা জাগ্রত করে, জাগ্রত করে অন্যদের মাতৃভাষার প্রতিও আমাদের শ্রদ্ধাবোধ। আর লক্ষ করার বিষয় যে বইমেলার নাম একুশের বইমেলা। পৃথিবীর প্রধান প্রধান বইমেলা স্থানের নামেই পরিচিত, কিন্তু আমাদের বইমেলা একেবারে ভিন্ন। বইমেলার আগে একুশের শব্দ আমাদের বইমেলার শরীরে ও সত্তায় জড়িয়ে দেয় অনন্য এক সাংস্কৃতিক সত্তা, জড়িয়ে দেয় জাতিগত এক প্রতিরোধের অগ্নিপতাকা।

বর্তমান যুগ পণ্যায়নের যুগএ যুগে সব কিছুই পণ্যে পর্যবসিত। বইমেলায় আসা বইও কি পণ্যায়নের বাইরে আছে? এ প্রশ্নেই একুশের বইমেলা ভিন্ন এক দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে পারে। পণ্যায়নের প্রভাব তো এড়ানো যাবে না, তবু লক্ষণীয়একুশের বইমেলায় জ্ঞান কিংবা সৃজনশীল, যে ধারারই বই হোক না কেন, সেখানে প্রাধান্য পায় সদর্থক জীবনচেতনা, ঋদ্ধ মননশীলতা। এ প্রসঙ্গে আমাদের আরো কিছু কথা থেকে যায়। শুধু পণ্য নয়, একুশের বইমেলায় বই প্রকাশিত হোক মনন বিকাশের জন্য, বই প্রকাশিত হোক নতুন জ্ঞান সৃষ্টির জন্য, বই প্রকাশিত হোক পাঠকচিত্তে সৃষ্টিশীল ভাবনার খোরাক হয়ে। এ ক্ষেত্রে আমাদের লেখক ও প্রকাশকদের ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে। এ কথা সবাই স্বীকার করবেন যে বাংলাদেশে এখন বেশির ভাগ বই প্রকাশিত হয় একুশের বইমেলাকে উপলক্ষ করে। মেলাকেন্দ্রিক বই প্রকাশের কারণে অনেক সময়ই প্রকাশের শুদ্ধতা ও সৌকর্যের দিকে প্রত্যাশিত যত্ন নেওয়া যায় না। বইকে পণ্য বানানোর কারণে মেলায় বইয়ের সংখ্যাও কম হয় না। বেশির ভাগ বইয়েই সম্পাদনার কোনো নামগন্ধ থাকে না। এদিকে একাডেমি কর্তৃপক্ষকে যেমন নজর দেওয়া দরকার, তেমনি সতর্ক হওয়া দরকার লেখক ও প্রকাশককে। লেখাই বাহুল্য যে রুচিশীল ও মানসম্পন্ন বই আমাদের বইমেলাকে আরো বিকশিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

আরেকটা উৎপাতের কথা এখানে না বললেই নয়। একুশের বইমেলা উপলক্ষে কিছুসংখ্যক মৌসুমি লেখকের দেখা পাওয়া যায়। তাঁরা থাকেন প্রবাসে, অর্থ উপার্জন করেন দুহাতে। তাই একটা কিছু লিখে যাচ্ছেতাইভাবে প্রকাশ করার জন্য পাণ্ডুলিপি আর টাকার প্যাকেট দেন কোনো কোনো প্রকাশককে। ব্যস, বেরিয়ে গেল বই। কোথায় ভাষিক শুদ্ধতা, কোথায় সম্পাদনা, কোথায় গ্রন্থনকশা? বলতে গেলে কিছুই নেই, শুধু আছে নতুন একখানা বই। এসব বই আমাদের মেলার উত্তরাধিকারকে বিনষ্ট করে। প্রবাসী লেখকরা যত্ন করে বই লিখবেন, প্রকাশের মানের সঙ্গে আপস করবেন নাএমনটা তো আমরা আশা করতেই পারি।

একুশের বইমেলা উপলক্ষে প্রতিবছর অনেক নতুন লেখকের সৃষ্টির সঙ্গে আমাদের পরিচয় হয়। তরুণ ও নবীন লেখকরা আমাদের সংস্কৃতির আগামী দিনের সৈনিক। বইমেলা যে তাঁদের সামনে নিয়ে এলোএও বইমেলার একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক। দেখা গেছে, অনেক নতুন লেখকই এভাবে জাতীয়ভাবে মূলধারায় আসন পেয়েছেন। বইমেলা উপলক্ষে নতুন লেখকের আবেগ-উচ্ছ্বাস-উন্মাদনা বিশেষভাবে লক্ষণীয় হয়ে ওঠে। এই লক্ষণ একটি সৃষ্টিশীল ও মননঋদ্ধ জাতি গঠনে ইতিবাচক ও দূরসঞ্চারী ভূমিকা পালন করতে পারে বলে আমি মনে করি। সৃজনশীল সংস্কৃতি বিকাশের অন্যতম এক শক্তি উৎস। তাদের হাত ধরেই ক্রমিক বছরে আমরা প্রত্যক্ষ করি নতুন নতুন লেখকের আবির্ভাব।

পাঠক সৃষ্টিতে একুশের বইমেলা অর্ধশতাব্দীরও অধিককাল ধরে পালন করে চলছে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা। তরুণসমাজকে গ্রন্থমুখী করতে এই মেলার অবদান অপরিসীম। জ্ঞান ও সংস্কৃতিঋদ্ধ সমাজ প্রতিষ্ঠায় এভাবেও একুশের বইমেলার রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। শুধু লেখক-পাঠক-প্রকাশকই নন, প্রকাশনাশিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত বইয়ের প্রচ্ছদশিল্পী। দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদও তো একটা দেশের সাংস্কৃতিক মানের পরিচায়ক। সেই সূত্রেও মেলার রয়েছে স্বতন্ত্র এক চারিত্র্য। কেননা প্রতিবছর মেলা উপলক্ষে হাজার হাজার বই প্রকাশিত হয়, প্রকাশিত হয় হাজার হাজার প্রচ্ছদ। এইসব প্রচ্ছদ আমাদের চিত্রশিল্পেও সংস্কৃতির ভিন্ন এক মাত্রা। বই প্রকাশ, বই বাঁধাই, বই বিপণনসব মিলে একুশের বইমেলা বিরাট এক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। অর্থের সচলতাও এই মেলার সংস্কৃতিগত উত্তরাধিকারের স্বতন্ত্র এক মাত্রা।

একুশের বইমেলা বাংলাদেশের অহংকারবাঙালির অহংকার। এই অহংকার আরো ব্যাপকতা লাভ করে মেলা উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন আলোচনা অনুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে। সেমিনার হয়, লেখকরা কথা বলেন, পাঠক বিতর্কে মেতে ওঠেনসব কিছু মিলে গোটা একটা মাস কী ঘোরে যে কেটে যায়! একুশের বইমেলা দিনে দিনে বিস্তৃত হোক, হোক আমাদের জাতিসত্তার গৌরবদীপ্ত উত্তরাধিকারএই আমাদের আন্তরিক কামনা।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

মেলার নতুন বই

শেয়ার
মেলার নতুন বই

আত্মজীবনী

দহসি জীবনআনোয়ারা সৈয়দ হক, ঐতিহ্য

শিল্পীসত্তার ব্যবচ্ছেদপুতুল সাজিয়া সুলতানা, অনন্যা

স্মৃতির আলপনাহোসেন আরা দিলু, কারুকাজ প্রকাশনী

রসিক শরত্চন্দ্রতাপস রায়, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

 

প্রবন্ধ/গবেষণা

শুদ্ধতম কবিআবদুল মান্নান সৈয়দ, ঐতিহ্য

টিকিটাকাওয়াসি আহমেদ, কথাপ্রকাশ

লেখালেখিআলেয়া রেহমান, ঐতিহ্য

পূর্ব বাঙলার ভাষাএবাদুর রহমান, ঐতিহ্য

আপনজনদের স্মৃতিতে জহির রায়হানআফরোজা পারভীন, ঐতিহ্য

নির্বাচিত যাত্রাপালামিলন কান্তি দে, বাংলা একাডেমি

লোকায়ত জীবনে ডাকড. মিজান রহমান, ভাষা প্রকাশ

ফ্যাসিবাদ অতীত ও বর্তমান : ভারত বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট সিরাজ উদ্দিন সাথী, অ্যাডর্ন পাবলিকেশন

গদ্যের ম্যাজিকড. মাহবুব হাসান, বাংলাপ্রকাশ

আদিবাসী জীবনকথাসালেক খোকন, কথাপ্রকাশ

নজরুল ও বিবিধ প্রসঙ্গড. সাহেদ মন্তাজ, স্বরলিপি পাব.

বাংলা খেয়ালআজাদ রহমান, বাংলা একাডেমি

রাজনীতির অগ্নিপুরুষ ভাসানীগাজীউল হাসান খান, আবিষ্কার

বাংলা উপন্যাসের নায়কেরাআকিমুন রহমান, কথাপ্রকাশ

বাংলাদেশের সভ্যতা : সহজপাঠএ কে এম শাহনাওয়াজ, তাম্রলিপি

সেলিম আল দীনের নাটক : আধার ও আধেয়সাইফুল ইসলাম, বাংলা একাডেমি

সমরে সংস্কৃতিতে মুক্তিযুদ্ধশিমুল সালাহ্উদ্দিন, আগামী প্রকাশনী

 

উপন্যাস

পরাধীনতাইমদাদুল হক মিলন, অন্যপ্রকাশ

জুলাই ক্যালাইডোস্কোপহাসনাত আবদুল হাই, আগামী প্রকাশনী

কারিনআফজাল হোসেন, জাগৃতি প্রকাশনী

আমি আবু বকরআসিফ নজরুল, প্রথমা প্রকাশন

কেউ তাকে খুন করেছেজাহিদ হায়দার, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স

নীল মাকখির চোখফরিদ কবির, অন্যপ্রকাশ

শেষ দৃশ্যের আগেতপন বাগচী, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

উঠল্লুসাদিয়া সুলতানা, ঐতিহ্য

হৃদয়মোহাম্মদ আলমগীর, মিজান পাবলিশার্স

দ্বিচারী মনআফতাব হোসেন, ঐতিহ্য

৩ নম্বর প্লাটফর্মমাহতাব হোসেন, অনিন্দ্য প্রকাশ

গৌরী দাশখুরশীদ শাম্মী, বিদ্যাপ্রকাশ

তুমি সন্ধ্যা আলকানন্দাসাদাত হোসাইন, অন্যধারা

কলমি লাইকামোজাফ্ফর হোসেন, ক্রিয়েটিভ ঢাকা

খুনি ও শঙ্খিনীআহমেদ বাসার, অন্যপ্রকাশ

সেই এক ভূতুড়ে ক্লাবরফিকুর রশীদ, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স

আনবাড়িলুনা রুশদী, কথাপ্রকাশ

উষ্ণতাদীপু মাহমুদ, সময় প্রকাশন

মানুষযাকির সাইদ, ভাষা প্রকাশ

অপরাজিতাআফিফা পারভীন, ছাপাখানা প্রকাশনী

নীহারিকার নীহার বানুশফিকুর রহমান, বিদ্যাপ্রকাশ

অধরা স্বপ্নজহিরুল ইসলাম, টাঙ্গন প্রকাশনী

ফাঁদনিশাত ইসলাম, অনন্যা

কমলা রঙের রোদসোমা দেব, শব্দশৈলী

যখন প্রপাতসিরাজুল ইসলাম মুনির, আগামী প্রকাশনী

বিষাদ বসুধামোস্তফা কামাল, সময় প্রকাশন

কেউ কথা কয়সাগরিকা নাসরিন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

 

গল্প

একাধীক অব্যয়জাহিদ হায়দার, র‌্যামন পাবলিশার্স

বখতিয়ারের বানরগুলিনাসরীন জাহান, বিদ্যাপ্রকাশ

কবি এসেছিলেনশাহাবুদ্দীন নাগরী, বাংলা প্রকাশ

অন্য কাহনআফতাব হোসেন, ঐতিহ্য

মাথাহীন মানুষের দেশেজোবায়ের মিলন, বিদ্যাপ্রকাশ

নির্বাচিত গল্পস্বকৃত নোমান, অনন্যা

নিকষ যাত্রাসেঁজুতি মাসুদ, বলাকা প্রকাশন

পিঁপড়া বাহিনী ও ঘাসফড়িংহাসান হাফিজ, ময়ূরপঙ্খি

শেষ অধ্যায়আশরাফ আহমেদ, অন্যধারা

নির্ভার-স্বমৃত্তিকা গুণ, বিভাস

প্রিজন ডিলাক্স ট্যুরশাহনাজ মুন্নী, কথাপ্রকাশ

মুক্তিযুদ্ধ ও অন্যান্য গল্পআলী ইদরীস, এবং মানুষ প্রকাশনী

হেমন্তের দিনেপাপড়ি রহমান, ঐতিহ্য

অপেক্ষার ট্রেনআজহার শাহিন, ঐতিহ্য

জুলাইয়ের অশেষ পাখিরামঈন শেখ, ঐতিহ্য

গল্পগুলো এত মজারসুজন বড়ুয়া, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

কুকুর-কাহিনিদিলওয়ার হাসান, কথাপ্রকাশ

বুড়োর লম্বা দাড়ির কাহিনীধ্রুব এষ, ময়ূরপঙ্খি

উল্লাসকনিকা রশীদ, অন্যপ্রকাশ

ত্রিভঙ্গজায়েদ ফরিদ, বিদ্যাপ্রকাশ

শাপে বরকমলেশ রায়, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

প্রিয় ১৫ গল্পএবাদুর রহমান, ঐতিহ্য

গোলক ধাঁধার গল্পসুমন সাজ্জাদ, কথাপ্রকাশ

সীসার পালকমাহফুজা অনন্যা, শব্দশিল্প

ইতিহাসের গল্পসাইফুর রহমান, সৃজন প্রকাশন

 

কবিতা

আমাকে তুমি দাঁড় করিয়ে দিয়েছ বিপ্লবের সামনেফরহাদ মজহার, আগামী প্রকাশনী

না ওড়ে না পোড়ে প্রেমহাসান হাফিজ, অমর প্রকাশনী

অচিন উহুঁসাকিরা পারভীন, ঐতিহ্য

গাছ নেই ছায়া পড়ে আছেআশরাফ আহমদ, অন্যপ্রকাশ

নির্বাচিত কবিতামতিন রায়হান, অনন্যা

দেহের মাদলঝর্না রহমান, জাগৃতি প্রকাশনী

জলমাকড়ের নৌকাবাইচনিজাম বিশ্বাস, বৈতরণী

আকাশে ঝুলে আছে মুগ্ধ পিছুটানকুমকুম দত্ত, দ্বিমত পাব.

প্রেমের অণুকাব্য-২দন্ত্যস রওশন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

রূপকথার রাস্তাঘাটপিয়াস মজিদ, বেঙ্গল বুকস

ভেঙ্গেছি রুদ্ধ দুয়ারশাম্মী আক্তার, র‌্যামন পাবলিশার্স

ঝিকটি ফুলের ক্ষমতামাজহার সরকার, জাগৃতি প্রকাশনী

কবিতাসংগ্রহসৈকত হাবিব, ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ

মুকুলিত বৃক্ষের ছায়া নূরুল হক, মিজান পাবলিশার্স

মানবতার ফেরিওয়ালাফারজানা জাহিদ, এবং মানুষ প্রকাশনী

নৈরাজ্যবাদী হাওয়াশাহেদ কায়েস, বৈভব

আড়ালে স্বপ্ন হাসেরূপা বাড়ৈ, প্রতিভা প্রকাশ

মুছে যাওয়া জলছবিদিলরুবা শাহাদৎ, দি রয়েল পাবলিশার্স

মা ও মায়াগাছশারদুল সজল, ঐতিহ্য

তোমাকে ছুঁয়ে থাকে আমার কবিতাইভা ওসমান, জাগৃতি

কবি চলে যায়সাহেদ বিপ্লব, টইটই প্রকাশন

বনের পাশে বৃহন্নলাআতিদ তূর্য, ঐতিহ্য

দেহপসরাআমিনা শেলী, নাগরী

খামবন্দি প্রেমের রসায়নতানজীনা ফেরদৌস, ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ

মাংসাশী ধুতুরার ঘ্রাণউম্মে রায়হানা, ঐতিহ্য

না ফেরার ব্যাকরণরফিকুজ্জামান রণি, জলধি প্রকাশন

হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা ও অন্যান্য অণুগল্পহাবিবুল্লাহ রাসেল, আপন প্রকাশ

নির্বাচিত ৩০০ কবিতারুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ, অক্ষর প্রকাশনী

দায় ও দহনের বর্ণমালামতিন রায়হান, কথাপ্রকাশ

নির্বাচিত কবিতাকামরুল আলম সিদ্দিকী, সৃজন প্রকাশন

 

গণ-অভ্যুত্থান

মেমোরিজ অব ৩৩ জুলাইরুম্মান জান্নাত, ঐতিহ্য

জুলাই বিপ্লবফারজানা মাহবুব, ঐতিহ্য

জুলাই ৩৬-এর বিপ্লবখালিদ হোসেন, খোশরোজ কিতাব মহল

দেশ কাঁপানো ২৩ দিনআহমদ মতিউর রহমান, দি রয়েল পাব.

জুলাই গণঅভ্যুত্থানআফরোজা খাতুন, শোভা প্রকাশ

 

ভ্রমণ

আমার দেখা বাংলাদেশমোঃ আলমগীর হোসেন, এবং মানুষ প্রকাশনী

পৃথিবীর পথে বাংলাদেশ সাইকেলে মাদাগাস্কারমুনতাসীর মামুন, ঐতিহ্য

কখনো পাহাড় কখনো অরণ্যইশতিয়াক হাসান, ঐতিহ্য

মুংকের আর্তনাদমাহফুজুর রহমান, বাংলাপ্রকাশ

 

অনুবাদ

ডেড রেশনিং ১৯৭১-এর-বাংলাদেশ যুদ্ধের স্মৃতিমূল : শর্মিলা বসু, অনু : শাখাওয়াত মজুমদার, শোভা প্রকাশ

বন্ধুর বাড়ি কোথায়মূল : সোহরাব সেপেরি, অনু : মিল্লাত হোসেন, নাগরী

দ্য মিথ অব দ্য বার্থ অব দ্য হিরোমূল : অটো র‌্যাঙ্ক, অনু : রিফফাত সামাদ, ঐতিহ্য

দ্য হোয়াইট বুকমূল : হান কাং, অনু : ফজল হাসান, ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ

জীবন বদলে দেওয়া ৭ অভ্যাসমূল : স্টিফেন আর কোভি।

রূপান্তর : আলভী আহমেদ, কথাপ্রকাশ

পৃথিবীতে জীবনের অতি সংক্ষিপ্ত একটি ইতিহাসমূল : হেনরি জি, অনু : কাজী মাহবুব হাসান, দিব্যপ্রকাশ

স্বার্থপর জিনমূল : রিচার্ড ডকিন্স, অনু : কাজী মাহবুব হাসান, দিব্যপ্রকাশ

খাদ্যের ১০ কোটি বছরমূল :  স্টিফেন লে, অনু : ইমরান খান, দিব্যপ্রকাশ

শোপেন হাওয়ারমূল : ক্রিস্টোফার জ্যানওয়ে, অনু : রেমিন রায়হান খান, দিব্যপ্রকাশ

উইংস অব ফায়ারমূল : এ পি জে আবদুল কালাম। অনু : মন্ময় চৌধুরী, ভাষাপ্রকাশ

বিশ্বলোক নিয়ে আমার দৃষ্টিভঙ্গিমূল : আরভিন শ্রোয়েডিঙার ও অনু : আমিনুল ইসলাম ভুইয়া, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

পৈশাচিকমূল : ডেনিস হুইটলি, অনু : খসরু চৌধুরী, ঐতিহ্য

সেভেনটিন মুমেন্টস অভ স্প্রিং মূল : ইউলিয়ান সেমিওনভ, অনু : এনায়েত রসূল, অক্ষর প্রকাশনী

রিহাম হাসান

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য
সাহিত্য সংবাদ

হুমায়ুন কবির সাহিত্য পুরস্কার ২০২৫

শেয়ার
হুমায়ুন কবির সাহিত্য পুরস্কার ২০২৫

কীর্তিমান কথাসাহিত্যিক, কবি, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও ভারতের সাবেক কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী হুমায়ুন কবিরের (১৯০৬-১৯৬৯) নামে তাঁর জন্মস্থান ফরিদপুরে এই প্রথম একটি সাহিত্য পুরস্কার চালু করা হয়েছে। ফরিদপুর শহরের কোমরপুর গ্রামে ১৯০৬ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি হুমায়ুন কবিরের জন্ম। ১৯৩৮ সালে জমিদারপুত্র আবদ্্ আল্লাহ জহির উদ্দিন লালমিয়ার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করেন ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদ। এই সাহিত্য পরিষদের আমন্ত্রণে অমর কথাশিল্পী শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ফরিদপুরে এসেছিলেন সাহিত্য সভায় যোগ দিতে।

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া ছিন্নসূত্র হয়তো ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদ সংগঠনটি ১৯৮৩ সালে পুনরুজ্জীবিত করা হয়। ঐতিহ্য আর উত্তরাধিকারের দায় থেকে ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদ হুমায়ুন কবিরের স্মরণে সাহিত্য পুরস্কার প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমবারের মতো এ বছর জাতীয় পর্যায়ে ইতিহাস-গবেষণায় ড. মোহাম্মদ আলী খান, কথাসাহিত্যে তাপস কুমার দত্ত এবং সাহিত্য-সাংবাদিকতায় সাদিয়া মাহ্্জাবীন ইমাম হুমায়ুন কবির সাহিত্য পুরস্কার ২০২৫ অর্জন করেন।

গত ৭ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে এই পুরস্কার বিতরণ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান ফরিদপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক জালাল আহমেদ। সম্মানিত অতিথির বক্তব্য দেন দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক তাসমিমা হোসেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান মোল্যা ও পুলিশ সুপার আবদুল জলিল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদের সভাপতি আলতাফ হোসেন এবং সঞ্চালনা করেন মফিজ ইমাম মিলন ও মৃধা রেজাউল।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জালাল আহমেদ সাহিত্যিক হুমায়ুন কবিরের বর্ণাঢ্য জীবন সম্পর্কে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, হুমায়ুন কবির ছিলেন একজন ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ। তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন, ইতিহাস ও অর্থনীতিতে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করেন, যা উপমহাদেশে প্রথম ছিল। পাশাপাশি তিনি প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ ছিলেন।

ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেন বলেন, আমাদের বাঙালির ঐতিহ্যের ইতিহাসকে যাঁরা সমৃদ্ধ করেছেন, তাঁদের আমরা জনসমক্ষে, আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনায় দেখি না।

ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদ যেটি করেছে, সেই ধারাকে আবার পুনরুজ্জীবিত করবে। বাংলাদেশ আবার মাথা তুলে দাঁড়াবে। কাজেই আমাদের যার যতটুকু শক্তি আছে, ভালো কাজের সঙ্গে থাকব।

অনুষ্ঠানে পুরস্কারপ্রাপ্ত তিনজনকে নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এই তথ্যচিত্র তিনটি পরিচালনা করেছেন মৃধা রেজাউল। পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে সনদ, ক্রেস্ট ও নগদ ৫০ হাজার টাকা তুলে দেন অনুষ্ঠানের অতিথিরা।

মন্তব্য

ছাত্র জনতার চব্বিশের বিপ্লব প্রসঙ্গে

শেয়ার
ছাত্র জনতার চব্বিশের বিপ্লব প্রসঙ্গে

বাংলাদেশের আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাসের এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় চব্বিশের জুলাই-আগস্ট বিপ্লব। যা ছিল জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় একটি ঐতিহাসিক বিপ্লব। যে বিপ্লব আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে কিভাবে পুরো জাতিকে এক হতে হয়! অন্যায়, অপশাসনের বিরুদ্ধে কিভাবে বীরের মতো লড়াই করে, জীবন উৎসর্গ করে বিজয় ছিনিয়ে আনতে হয়! তাই এই বিপ্লব আমাদের জাতীয় জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা, যা যুগ যুগ ধরে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে এক ইতিহাস হয়ে থাকবে।

চব্বিশের এই মহান বিপ্লব নিয়ে লেখক আজাদ খানের ছাত্র জনতার চব্বিশের বিপ্লব নামে একটি প্রবন্ধ বেরিয়েছে, যেখানে বইটির প্রথম ভাগে ছাত্রদের কোটা সংস্কার ইস্যু নিয়ে আন্দোলনের সূত্রপাতসহ তারিখভিত্তিক আন্দোলন-সহিংসতার ঘটনাপ্রবাহ বর্ণিত হয়েছে।

আর দ্বিতীয় ভাগে বর্ণিত হয়েছে পুরো বিপ্লব নিয়ে পর্যালোচনা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণ ও অবদানের কথা, আন্দোলনে বারুদ হয়ে ওঠা স্লোগান, প্ল্যাকার্ড, পোস্টার, গ্রাফিতি ও গানের কথা। আরো রয়েছে আন্দোলনের সময় সরকারের মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধের চিত্র, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার, কয়জন বীর শহীদের অমর বীরত্বগাথা, রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে গুরুতর আহতদের চিত্র, গুলিতে গুরুতর আহত কিছু তরুণের অসহনীয়, হৃদয়বিদারক চিত্র ইত্যাদি। সেই সঙ্গে পুরো বইটিতে সন্নিবেশিত হয়েছে ঘটনাসংশ্লিষ্ট ছবি, যা বর্ণিত ঘটনাগুলোকে আরো জীবন্ত ও প্রাণবন্ত করে তুলেছে।

বইটি প্রকাশিত হয়েছে চারু সাহিত্যাঙ্গন থেকে।

মন্তব্য
বই পরিচিতি

ড্রামা দিয়ে যার শুরু

ড. মাহবুব হাসান
ড. মাহবুব হাসান
শেয়ার
ড্রামা দিয়ে যার শুরু

আমার হাতে যখন প্রথম আশি লক্ষ ভোর আসে তখনই ধরে নিয়েছিলাম, তিনি এক কল্পবাজ। যে কবি তাঁর চিন্তার অ্যারেনায় আশি লক্ষ ভোরকে দেখতে পান, তা যে কল্পনারই রাজনৈতিক ইমেজারিতে পূর্ণ, তা কি আমরা ধরতে পারি না? সামাজিক না বলে রাজনৈতিক বলার পেছনে আছে আমার নিজস্ব অভীপ্সা। তা হলো, তিনি প্রাকৃতিক ভোরের সঙ্গে সংখ্যাতাত্ত্বিক সংকেত ব্যবহার করে কাল্পনিক ইমেজারির নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছেন। কবিতা যে কেবলই বাক্যবন্ধ বা শব্দের চিত্র নয়, সেটা ওই আশি লক্ষ ভোর নাম থেকেই আমি/আমরা বুঝতে পারি।

এখন এই ২০২৫-এর ফেব্রুয়ারিতে আবারও এলো সেই আশি লক্ষ ভোরের কবি আবদুল হাই শিকদারের নতুন কবিতার বই আমরা মানুষ আমরা এসেছি। প্রথম পাঠেই মনে হলো, নামের আমরা শব্দ দুবার আমার কানে লাগছে। যখন মনে মনে পড়লাম একটি আমরা ফেলে দিয়ে, তখন কানে আরো লাগল...কোথায় যেন একটা ফাঁক রয়ে গেল। আমরা মানুষ, এসেছি।

এভাবে নাম রাখা হলে যেন সংহত হতো নামটি। এটা এক ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তার ফল। কিন্তু তাতে ছন্দটা যেন পড়ে যায়। আমরা মানুষ আমরা এসেছি, আমাদের ছন্দের কানে ঠিকঠাক পরম্পরার মতো সেঁটে যায়।
এখন দেখা যাক, আবদুল হাই শিকদার কী লিখেছেন কবিতায়।

বইয়ের প্রথম কবিতা স্বাধীনতা ও মুক্তি। বোঝাই যায় অবরোধ ভেঙে মুক্ত হতে চান কবি। আমরা আমাদের জনগণের জন্য/উপস্থাপন করি মেঘমুক্ত আকাশ/এবং আমাদের জাতির জন্য/সৃষ্টি করি স্বাধীনতা ও মুক্তি।

কথাগুলো পরিষ্কার, পরিপূর্ণভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

তিনি কবি এবং তিনি চান তাঁর দেশের মানুষের জন্য মেঘমুক্ত আকাশ নির্মাণ করতে। কিন্তু তিনি তা নির্মাণ করেন না, সৃষ্টি করেন। এখানেই চিন্তক আর কবির মধ্যে পার্থক্য। কবি সৃষ্টি করেন। কেননা তাঁর রয়েছে দিগন্তব্যাপী কল্পনার আকাশ। জনগণ তাঁর কবিতার উপাত্ত।

রক্তপিপাসু দানব আপনি, আপনি মানুষ নন,/আপনার হাতে মরেছে মানুষ, এদেশের জনগণ।/আপনাকে ঘৃণা করে সারাদেশ, মানুষের ঘরবাড়ি/আপনি ঘাতক, আপনি ইতর দেশ ছাড়ো তাড়াতাড়ি।

২০২৪-এর ২ আগস্ট এই কবিতা লিখেছেন আবদুল হাই শিকদার। এর তিন দিন পর স্বৈরাচারী হাসিনা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পরাজিত হয়ে পালিয়ে যান পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। কবি হাসিনাকে দেশ ছাড়তে বলেছেন। তিনি পালিয়ে গেছেন, প্রাণে বেঁচেছেন। তাঁর এই বাঁচাকে বাঁচা বলা যায় না, তাঁকে মৃতবৎ বলা উচিত। শেখ হাসিনা যে নির্যাতন চালিয়েছেন দেশের প্রতিবাদী মানুষর ওপর, গুম করে, হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন, সেই দানবীয় পরিস্থিতিকে জলাঞ্জলি দিয়েছে দেশের আপামর জনগণ। তাঁর পতনই কেবল হয়নি, একটি নির্মম শাসকের হাত থেকেই কেবল রক্ষা পায়নি দেশের মানুষ, রক্ষা পেয়েছে মানুষের রাজনৈতিক পরিবেশ-প্রতিবেশ। সাংবিধানিক অধিকার পেয়েছে ফিরে। ৩ আগস্ট ২০২৪-এ শিকদার লিখেছেন ঘাতক তোমার দিন আজ শেষ হবে/জেগেছে মানুষ গাছপালা পাখি কোটি কোটি কলরবে

আবদুল হাই শিকদারের কবিতার পঙক্তিগুলো আমাদের চিনিয়ে দিয়েছে জুলাই বিপ্লবের রাজনৈতিক পুলিশি নির্মমতার রূপারূপ। এই কবিতাগুলো বক্তব্যপ্রধান। এখানে কবিতার উপাদানের সূক্ষ্মতার চেয়ে সরাসরি মানবজীবনের দুঃখ-বেদনার কথা উঠে এসেছে। কারণ তিনি তো এই সমাজেরই মানুষ। সেই আকাঙ্ক্ষারই পরিপূরক হিসেবে রচিত হয়েছে প্রতিবাদের পঙক্তিগুলো। এ বইয়ের দ্বিতীয় অংশের নাম সান্দ্রাংশ। এই অংশে আবদুল হাই শিকদার যোগ করেছেন তাঁর রাজনৈতিক ভাষ্যের কিছু রচনা, যা মূলত ও মুখ্যত গণ-অভ্যুত্থানকেন্দ্রিক। অর্থাৎ কবিতা ও গদ্য মিলেই এ বই। তাই আমরা মানুষ আমরা এসেছিতে দুই ধরনের রচনা জায়গা পেয়েছে। শিকদারকে ধন্যবাদ যে তিনি সময়সচেতন কবি ও গদ্যকার বলেই আত্মাহুতির রক্তের লাল রং থাকতে থাকতেই ইতিহাসের ওই নির্মমতা তুলে ধরেছেন আগামীর পাঠকদের সামনে। এ কারণেই কি তিনি আশি লক্ষ ভোরের মতো মানবিক বোধের শাসনকে একটু পাশ কাটিয়ে নেমে এসেছেন রক্তাক্ত মাটির পৃথিবীতে?

প্রকাশক মনিরুল হককে ধন্যবাদ জানাই যে তিনি সময়ক্ষেপণ না করে বইটি প্রকাশ করেছেন।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ