<p>এক বুড়ো হাট থেকে বাড়ি ফিরছিল। জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে পথ। সেদিন হাট থেকে ফিরতে তার একটু দেরিই হয়ে গিয়েছিল। তাই ফেরার সময় একজন সঙ্গীও জোটেনি তার। একদম একা একাই হাঁটছিল। এদিকে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। বনের হিংস্র পশুরা এক্ষুনি শিকার করতে বেরিয়ে পড়বে। তাই গা-টা ছমছম করতে লাগল। বুনো জন্তুর ভয় তো আছেই। রাতের আঁধার নামলে ভূত-পেতনি, দৈত্য-দানোরাও বেরিয়ে পড়বে। আছে সেই ভয়ও। তাই বুড়ো তাড়াতাড়ি পা চালাতে লাগল।</p> <p>কিন্তু বুড়োটার কপাল সত্যি সত্যি খুব মন্দ ছিল। যেতে যেতে সে পড়ে গেল একটা বিরাট বাঘের মুখোমুখি। সামনেই জলজ্যান্ত এমন একটা খাবার পেয়ে বাঘ বাবাজি তো বেজায় খুশি। সে বুড়োটাকে খাওয়ার জন্য এগিয়ে এলো। বলল, অ্যাই বুড়ো, এবার তোকে খাব।</p> <p>বুড়ো বলল, হেই বাঘ বাবা, আমাকে খেয়ো না। তুমি যদি আমাকে খেয়ে ফেলো, তাহলে আমি তো আর ঘটকের কাজ করতে পারব না।</p> <p>—ঘটকের কাজ! সেটা আবার কী? বাঘ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল।</p> <p>—এটা আর পাঁচটা মামুলি কাজের মতো নয়। একটু অন্য রকম। তোমাকে তো আগেই বললাম, আমি একজন ঘটক। ঘটক মানে আমি ইচ্ছা করলেই একজনকে জাদু বলে দুজন করে দিতে পারি।</p> <p>—বাহ! এ তো বেশ মজার কাজ। আচ্ছা, আমি তো একজন। তুমি আমাকে দুজন করে দাও দেখি।</p> <p>—দুজন হবে? বেশ, করে দিচ্ছি। তুমি তাহলে আমার এই থলির মধ্যে ঢোকো।</p> <p>—আচ্ছা ঢুকছি। বলেই বাঘ বাবাজি ঢুকে পড়ল বুড়োর থলির মধ্যে। আর বাঘ ঢোকামাত্রই বুড়ো সঙ্গে সঙ্গে থলির মুখটা দড়ি দিয়ে শক্ত করে বেঁধে ফেলল। তারপর লাঠি দিয়ে সে কী দমাদম মার। বাঘ প্রাণপণে চিত্কার করতে লাগল। বুড়ো মজা করে বলল, অত সহজে কি আর একজন থেকে চট করে দুজন হওয়া যায়? একটু কষ্ট সইতে হয়। কষ্ট না করলে কি কেষ্ট মেলে?</p> <p>মার খেতে খেতে বাঘটা তো প্রায় আধমরা। তারপর বাঘসুদ্ধ থলিটাকে বুড়ো নদীর জলে ফেলে দিল। জলে হাবুডুবু খেতে খেতে বাঘটার প্রাণ যায় যায় অবস্থা।</p> <p>সে অবস্থায়ই থলিটা ভাসতে ভাসতে চলে গেল একদম নদীর ধারে। সেখানে তখন এক বাঘিনী জল খেতে এসেছিল। থলির মধ্যে কী একটা ছটফট করছে দেখে সেই বাঘিনী থলিটাকে টেনে পারে এনে দাঁত দিয়ে ছিঁড়ে ফেলল। আধমরা বাঘটা তখন কোনো রকমে টলতে টলতে বেরিয়ে এলো থলি থেকে। সামনে বাঘিনীকে দেখে বাঘ বাবাজি তো বেজায় খুশি। সে ভাবল, ঘটক বুড়ো তো তাহলে তাকে মোটেও মিথ্যা বলেনি। সে থলির মধ্যে ঢোকার আগে ছিল একা, এখন যে-ই থলি থেকে বেরোল, অমনি হয়ে গেল দোকা। মানে দুজন। এর থেকে ভালো জাদু আর কী হতে পারে! না, আর বেশি কিছু ভাবল না সে। বরং সামনে যাকে পেল, সেই বাঘিনীকে ঘটক বুড়োর সব কথা খুলে বলল সে। বাঘের কথা শুনে বাঘিনী একেবারে হতবাক।</p> <p>দুজনই দুজনকে পেয়ে মহাখুশি। অগত্যা বাঘিনীকে বিয়ে করে মনের সুখে ঘরকন্না করতে লাগল বাঘ। আর সেই বুড়ো? তার পর থেকে হাটে গেলেও এত বেলা সে আর কখনোই করেনি, যাতে ফেরার সময় সে একদম একা হয়ে যায়, জঙ্গলের পথ পেরোতে পেরোতে সন্ধ্যা নেমে আসে, ফের তাকে পড়তে হয় ওরকম কোনো বাঘের মুখোমুখি।</p> <p> </p>
