<p>জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আবেদনে (লিভ টু আপিলে) শুনানি শেষ হয়েছে। আগামীকাল (সোমবার) জানা যাবে, তিনি আপিল করার অনুমতি পাচ্ছেন কিনা।</p> <p>আজ রবিবার আবেদনটিতে শুনানির পর জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ আদেশের জন্য রাখেন।</p> <p>জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিচারিক আদালত খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। এরপর আপিলের রায়ে হাইকোর্টে সাজা বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আপিল আপিল বিভাগে বিচারাধীন। আর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিচারিক আদালত খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আপিলটি হাইকোর্টে বিচারাধীন।</p> <p>জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার আপিল দ্রুত শুনানি করতে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা আপিলের পেপারবুক তৈরির অনুমতি চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। গত ৩ নভেম্বর দুটি আবেদনই মঞ্জুর করেন আদালত। সেই ধারাবাহিকতায় আজ রবিবার আপিল বিভাগে শুনানিতে ওঠে খালেদা জিয়ার লিভ টু আপিলটি।</p> <p>আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আসিফ হাসান। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বরাবরই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন। তারা বলে আসছিলেন, ট্রাস্টের এক টাকাও তছরুপ হয়নি। নির্ধারিত অ্যাকাউন্ডে টাকা জমা আছে।</p> <p>লিভ টু আপিলের শুনানিতে সেই একই কথা বললেন দুদকের আইনজীবী মো. আসিফ হাসান। তিনি আদালতকে বলেন, ‘এই ট্রাস্টের টাকা কিন্তু আত্মসাৎ হয়নি। জাস্ট ফান্ডটা (তহবিল) মুভ (স্থানান্তর) হয়েছে। তবে সুদে আসলে অ্যাকাউন্টেই টাকাটা জমা আছে। কোনো টাকা ব্যায় হয়নি।’</p> <p>আদালত থেকে বেরিয়ে আইনজীবী কায়সার কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুদকের আইনে নেই বিচারিক আদালতের দেওয়া ৫ বছরের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করা যাবে। তারপরও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এক তরফা শুনানি করে হাইকোর্ট দুঃখজনকভাবে খালেদা জিয়াকে ১০ বছরের সাজা দিয়েছেন। আমরা মনে করি, রাষ্ট্রীয়ভাবে আদালতের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার প্রতি অবিচার করা হয়েছে, অন্যায় করা হয়েছে। আশা করছি, সর্বোচ্চ আদালতে খালেদা জিয়া ন্যায়বিচার পাবেন।’</p> <p>অনাথ শিশুদের জন্য অনুদান হিসেবে আসা দুই কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ আরো চার জনের বিরুদ্ধে রাজধানীর রমনা থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন।</p> <p>২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আখতারুজ্জামান এ মামলার রায় দেন। রায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। </p> <p>রায়ে খালেদা জিয়াসহ ছয় আসামির সবাইকে মোট ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা ৮০ পয়সা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া, কাজী সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আহমেদ হাইকোর্টে পৃথক আপিল করেন। বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর রায় দেন। রায়ে সাজা বাড়িয়ে খালেদা জিয়াকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।</p> <p>গত ৫ আগস্ট শেক হাসিনা সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তবর্তী সরকারের পদক্ষেপে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা মওকুফ করেন রাষ্ট্রপতি। কিন্তু খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জানিয়েছেন, দুটি মামলাই তিনি আইনিভাবে মোকাবেলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।</p>