<p>দুই দশক আগে ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা মামলার বিচারিক আদালতের রায় অবৈধ ঘোষণা করে তা বাতিল করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ রায়ের ফলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ বিচারিক আদালত যাদের সাজা দিয়েছিলেন, তাদের সবাই খালাস পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।</p> <p>বিচারিক রায়ের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের আবেদন) ও দণ্ডিত কয়েক জনের আপিলে শুনানির পর বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ রবিবার (১ ডিসেম্বর) এই রায় দেন।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করতে লন্ডনে মির্জা ফখরুল" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/30/1732986752-b9f97555e11ab248a6ee5863a1fc1f3e.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করতে লন্ডনে মির্জা ফখরুল</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2024/12/01/1452423" target="_blank"> </a></div> </div> <p>রায়ে বলা হয়েছে, আইনের ভিত্তিতে মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়নি। ফলে বিচারিক আদালতের বিচার অবৈধ। তাই বিচারিক আদালতের ডেথ রেফারেন্স নাকচ এবং আসামিদের আপিল মঞ্জুর করা হলো।</p> <p>রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, ‘অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুফতি আবদুল হান্নানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও ২৫ জন শ্রুতসাক্ষীর জবানবন্দির ভিত্তি করে বিচারিক আদালত এই রায় দিয়েছেন। এই ২৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দির একটি আরেকটিকে সমর্থন করেনি। কোনো চাক্ষুস সাক্ষী ছিল না। মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির কোনো প্রমাণযোগ্য বা আইনগত মূল্য নেই। কারণ জীবদ্দশায় তিনি তাঁর স্বীকারোক্তি প্রত্যাহার করে গেছেন। এই স্বীকারোক্তি জোর করে নেওয়া হয়েছিল দাবি করা হয়েছে। তা ছাড়া মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তিটি সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা যাথাযথ পরীক্ষা এবং গ্রহণ করা হয়নি।’</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="প্রধান উপদেষ্টার কাছে অর্থনীতির শ্বেতপত্র" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2024/12/01/1733042707-d2dfc3a985ddd2aee28e2b3ad9dc8560.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>প্রধান উপদেষ্টার কাছে অর্থনীতির শ্বেতপত্র</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/12/01/1452641" target="_blank"> </a></div> </div> <p><strong>তারেক রহমান ন্যায়বিচার পেয়েছেন : কায়সার কামাল</strong></p> <p>রায়ের পর লুৎফুজ্জামান বাবরে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, ‘মামলার ডেথ রেফারেন্স খারিজ ও বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে দণ্ডিতদের আপিল মঞ্জুর এবং বিচারিক আদালতের রায় বাতিল প্রশ্নে রুল যথাযথ ঘোষণা করে রায় দেওয়া হয়েছে। রায়ে সব আসামি খালাস পেয়েছেন।’</p> <p>বিচারিক আদালতের রায়ের আগে থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে এই মামলায় পলাতক দেখানো হয়। ফলে হাইকোর্টে তাঁর পক্ষে আপিল করার সুযোগ ছিল না। কিন্তু ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="‘আলহামদুলিল্লাহ’, স্বামীর রায় শুনে তাহমিনা জামান" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2024/12/01/1733044737-d6d55a82f7452d28747769bddd786a39.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>‘আলহামদুলিল্লাহ’, স্বামীর রায় শুনে তাহমিনা জামান</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/12/01/1452647" target="_blank"> </a></div> </div> <p>হাইকোর্টের এই রায়ের পর সাংবাদিকদের প্রতিক্রিয়া দেন বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদি আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব কায়সার কামাল। রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এই রায়ের মাধ্যমে জনাব তারেক রহমান ন্যায় বিচার পেয়েছেন। প্রমাণ হয়েছে যে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য তাঁকে এই মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছিল, সেই মামলায় আইগতভাবে মোকাবেলার মাধ্যমে তিনি বেকসুর খালাস পেয়েছেন।’</p> <p>তিনি বলেন, ‘গত দুই দশক এই মামলা দেশের রাজনীতিতে প্রভাব রেখেছে। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের পাগান্ডার শিকার হয়েছেন তারেক রহমান। আমরা ও দেশবাসী মনে করে তিনি ন্যায়বিচার পেয়েছেন।’</p> <p>এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করবে কিনা, তা জানা যায়নি। এ বিষয়ে জানতে সংশ্লিষ্ট আদালতে দায়িত্ব পালনকারী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. জসিম সরকারকে ফোন দিলে তিনি ফোন ধরেননি। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় অ্যাটর্নি জোনারেল কার্যালয় থেকেও কোনো ব্রিফ করা হয়নি।  </p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করা হবে : প্রধান উপদেষ্টা" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/28/1732747329-bd58bbecbbfe53bd96df185bb2e37a1f.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করা হবে : প্রধান উপদেষ্টা</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/11/28/1451502" target="_blank"> </a></div> </div> <p><strong>মামলা বৃত্তান্ত</strong></p> <p>২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যা করা হয়। আওয়ামী লীগের দাবি এ হামলা ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। হামলার পরদিন মতিঝিল থানার তৎকালীন এসআই শরীফ ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। থানা পুলিশ, ডিবির হাত ঘুরে সিআইডি এই মামলার তদন্তভার পায়। ঘটনার চার বছর পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৮ সালের ১১ জুন হত্যার অভিযোগ এবং বিস্ফোরক আইনে আলাদা দুটি অভিযোগপত্র দেন সিআইডির জ্যেষ্ঠ এএসপি ফজলুল কবির। জঙ্গি দল হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ ২২ জনকে সেখানে আসামি করা হয়। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ২০০৮ সালের ২৯ অক্টোবর অভিযোগ গঠন করে তাদের বিচারও শুরু হয়।</p> <p>২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটির অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করে। সিআইডির বিশেষ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দ অধিকতর তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ৩ জুলাই আসামির তালিকায় আরও ৩০ জনকে যোগ করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন।</p> <p>সেখানে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ চার দলীয় জোট সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ও বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের নাম আসে। দুই মামলায় মোট ৫২ আসামির বিচার শুরু হলেও অন্য মামলায় তিনজনের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় মোট ৪৯ আসামির বিচার করেন বিচারিক আদালত।</p> <p>২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ওই মামলার রায় হয়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় রায়ে।</p> <p>এছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং বিএনপির চেয়ারপারসনের তৎকাল রাজনৈতিক সচিব প্রয়াত হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। সেই সঙ্গে ১১ পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডও দেওয়া হয়।</p> <p>রায়ের পর ওই বছরের ২৭ নভেম্বর বিচারিক আদালতের রায় প্রয়োজনীয় নথিসহ হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় এসে পৌঁছে। দণ্ডিতরাও রায়ের বিরুদ্ধে আপিল-জেল আপিল করেন।</p> <p><strong>ফের শুনানি</strong></p> <p>ডেথ রেফারেন্স-আপিলের পেপারবুক প্রস্তুত হলে ২০২২ সালের ৪ ডিসেম্বর শুরু হয়। বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি প্রায় শেষ পর‌্যায়ে ছিল। ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। তাঁর ক্ষমতাচ্যুতির পর বিচার বিভাগেও পরিবর্তন আসে। প্রধান বিচারপতির পদ থেকে ওবায়দুল হাসানের পদত্যাগের পর আপিল বিভাগের আরও পাঁচ বিচারপতি পদত্যাগ করেন। নতুন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ গত ১১, ১২ ও ১৫ আগস্ট এখতিয়ার পরিবর্তন করে হাইকোর্টের ৫৪টি হাইকোর্ট বেঞ্চ পুনর্গঠন করেন। বেঞ্চ পুনর্গঠনের পর মামলাটি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চে আসে। গত ৩১ অক্টোবর এই বেঞ্চে নতুন করে শুনানি শুরু হয়। গত ২৮ নভেম্বর চূড়ান্ত শুনানির পর মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য রেখেছিলেন। সে ধারাবহিকতায় মামলার সব আসামিকে খালাস দিয়ে রায় দিলেন উচ্চ আদালত।</p> <p><strong>আদালত আমাদের ন্যায়বিচার দিয়েছেন : বাবরের স্ত্রী</strong></p> <p>এ মামলায় বিচারিক আদালত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন বিচারিক আদালত। পরে খালাস চেয়ে তিনি আপিল করেছিলেন। বাবরের স্ত্রী তাহমিনা জামান শ্রাবণী রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর অবশেষে ন্যায়বিচার পেয়েছি। এ কারণে মহান আল্লাহ তায়ালার প্রতি শুকরিয়া জানাই, আলহামদুলিল্লাহ।’ </p> <p>তিনি বলেন, ‘ন্যায় বিচার পাওয়ার আশায় এতদিন অপেক্ষা করা যে কী কষ্ট, তা একমাত্র ভুক্তভোগীরাই বলতে পারবে। আদালত আমাদের ন্যায়বিচার দিয়েছেন।’<br />  </p> <p> </p>