ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে যাদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি হয়েছে, তাদের গ্রেপ্তার ও তদন্তকাজ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
প্রসিকিউশনকে উদ্দেশ করে আদালত বলেছেন, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) বা ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার, যেই গাফিলতি করবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর সময়মতো তদন্ত প্রতিবেদন দিতে না পারলে তার ব্যাখ্য দিতে হবে তদন্ত সংস্থাকে।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন বেশ কয়েকটি আবেদন করে।
আরো পড়ুন
৭ কলেজের নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হতে পারে ‘জুলাই ৩৬ বিশ্ববিদ্যালয়’
এর মধ্যে একটি আবেদন ছিল, গণ-আন্দোলনে রাজধানীর যাত্রবাড়ী এলকায় সংঘটিত গণহত্যা ও মানবাতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ তদন্তের প্রতিবেদন নিয়ে। প্রতিবেদন দাখিলের পরিবর্তে প্রসিকিউটর বি এম সুলতান মাহমুদ আরো দুই মাস সময় চেয়ে আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল আসামিদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানতে চান।
জবাবে প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘এ মামলায় মোট আসামি ছয়জন। তার মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
’
আরো পড়ুন
ইজতেমার প্রথম পর্বে চলবে ১১ ট্রেন
বাকিদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল অগ্রগতি জানতে চাইলে প্রসিকিউটর বলেন, ‘আসামিদের অবস্থান জানার পরও পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করছে না। এক ভিকটিমের ভাই আমাদের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগও করেছেন।’
তখন ট্রাইব্যুনাল অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রসিকিউটর বলেন, ‘গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর ভিকটিম ইমাম হাসান তাইমের ভাই রবিউল আসামিদের অবস্থান জানিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের বিভিন্ন শাখায় যোগাযোগ করেন। কিন্তু পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারে কোরো পদক্ষেপ নেয়নি।
’
তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে বলেন। যার গাফিলতি থাকবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে বলেন ট্রাইব্যুনাল তামাশা করতে বসে নাই। আইজি-ডিএমপি কমিশনার যেই গাফিলতি করবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। দুই হাজার লোক মারা গেছে।
ট্রাইব্যুনাল থেকে এখন পর্যন্ত শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। কিন্তু গ্রেপ্তারে কোনো অগ্রগতি নেই।
এসময় প্রসিকিউটর মাহমুদ জানান, ৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরপর অভিযোগের তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলে ট্রাইব্যুনাল বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে না পারলে সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে এসে ব্যাখ্যা দিতে হবে। সব তদন্তে তো এত সময় লাগার কথা না। আদেশ যদি ঠিকমতো প্রতিপালন করা না হয় আমরা ব্যবস্থা নেব। এরপর আদালত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে প্রসিকিউশনের আবেদন মঞ্জুর করে দুইমাস সময় দেন।
পরে প্রসিকিউটর বিএম সুলতান মাহমুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যাত্রবাড়ী এলাকায় সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ নিয়ে যে তদন্ত চলছে, সেই তদন্তের প্রতিবেদন তা আগামী ৬ এপ্রিল দাখিলের তারিখ রেখেছেন ট্রাইব্যুনাল।’
এই অভিযোগে গ্রেপ্তার যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হোসেন ও যাত্রাবাড়ী জোনের সাবেক সহকারী পুলিশ কমিশনার তানজিল আহমেদকে এদিন ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
যেকোনো স্থান ও নথি জব্দ করা যাবে
এদিকে প্রসিকিউশনের আরেক আবেদনে ট্রাইব্যুনাল আরও তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। তদন্ত ও আসামিদের গ্রেপ্তারের স্বার্থে আসামিদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করেনি প্রসিকিউশন। এছাড়া আরেক আবেদন করা হয় প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে। এই আবেদনে অভিযোগের তদন্ত ও মামলার বিচারকাজের স্বার্থে যেকোনো জায়গা সার্চ ও নথিপত্র সিজ (জব্দ) করার অনুমতি চাওয়া হয়। একই সঙ্গে কোনো জায়গা সার্চ করে কোনো নথিপত্র জব্দ করা হলে তা যেন যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়, তার অনুমতিও চাওয়া হয় আবেদনে। এই আবেদন দুটি করেন প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম।
তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আদালত আবেদন দুটি মঞ্জুর করে একটিতে তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। তদন্ত ও তাদের গ্রেপ্তারের স্বার্থে তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করছি না। অন্য আবেদনটি ছিল সার্চ ও সিজ সংক্রান্ত। এই আবেদনটিও মঞ্জুর করেছেন ট্রাইব্যুনাল। এর ফলে তদন্ত ও বিচারের স্বার্থে প্রসিকিউশন বা তদন্ত সংস্থা এখন থেকে যোকোনো জায়গা সার্চ করতে পারবে, নথিপত্র জব্দ করতে পারবে এবং নথিপত্র জব্দ করলে যথাযথ কর্তৃপক্ষ দিয়ে জব্দকৃত নথিপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করাতে পারবে।’