<p>হালাল ট্যুরিজম বা মুসলিমবান্ধব পর্যটন ব্যবস্থার চাহিদা বাড়ছে দিন দিন। মুসলিম পর্যটকের সংখ্যা, আর্থিক সামর্থ্য ও সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় হালাল ট্যুরিজমের প্রতি আগ্রহী হচ্ছে পর্যটন কম্পানিগুলো। ধারণা করা হয়, ২০২০ সালে হালাল ট্যুরিজমের আর্থিক মূল্য দাঁড়াবে কমপক্ষে ২২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর মুসলিম ট্যুরিস্টের সংখ্যা দাঁড়াবে ১৫৬ মিলিয়ন। নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ২০১৬ সালের পর মুসলিম পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে ৩০ শতাংশ এবং আগামী দশকে এর আর্থিক পরিমাণ দাঁড়াবে ৩০০ মিলিয়ন ডলার।</p> <p>পর্যটননির্ভর অর্থনীতির দেশগুলো; যেমন—থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক এরই মধ্যে হালাল ট্যুরিজমে মনোযোগী হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যেসব বৌদ্ধপ্রধান দেশে মুসলিম নাগরিকদের নানাভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়, তারাও হালাল ট্যুরিজমকে গুরুত্ব দিচ্ছে। তারা মুসলিম পর্যটকদের চাহিদা ও প্রয়োজনগুলো সামনে রেখে পর্যটনব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে। পৃথিবীর বেশির ভাগ বিমানবন্দরেই এখন হালাল খাবারের পৃথক আয়োজন রয়েছে। হালাল ট্যুরিজমের আয়োজনের মধ্যে রয়েছে—হালাল খাদ্য সরবরাহ, মুসলিম উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিত করা (যেমন—উলঙ্গপনা ও অশালীন পরিবেশ রোধ), নারী-পুরুষের পৃথক সুইমিংপুলের ব্যবস্থা, নামাজের ব্যবস্থা করা, ট্যুর শিডিউলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের বিরতি রাখা, রমজান মাসে ইফতার-সাহরির আয়োজন করা ইত্যাদি।</p> <p>অনলাইন ট্যুরিজম এজেন্সিগুলোও হালাল ট্যুরিজমে উৎসাহী হচ্ছে। ‘বুকিং ডটকম’ ও ‘ট্রিপঅ্যাডভাইজার’-এর মতো কম্পানিগুলো হালাল ট্যুরিজমের জন্য পৃথক প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করেছে। লন্ডনভিত্তিক ‘হালালবুকিং ডটকম’ ২০২১ সাল পর্যন্ত কমপক্ষে এক বিলিয়ন পাউন্ড উপার্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। ‘বুকহালালহোমস ডটকম’ জনপ্রিয় একটি পোর্টালে পরিণত হয়েছে, যা নির্দিষ্ট শর্ত সাপেক্ষে ট্যুরিস্ট এজেন্সি ও হোটেল কম্পানিকে হালাল ট্যুরিজমের সার্টিফিকেট প্রদান করে থাকে। পোর্টালটি সার্টিফিকেট প্রদানের শর্ত হিসেবে খাবারের তালিকা, প্রার্থনা কক্ষের সুবিধা ও পরিবেশের বিবেচনা করে থাকে। ‘হালাল ট্রাভেল গাইড’, ‘ক্রিসেন্ট রেটিং’ ও ‘হালাল ট্রিপ’-এর মতো হালাল ট্যুরিজম সাইটের ভিজিটরও প্রতিদিন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।</p> <p>দ্য ট্যুরিজম অথরিটি অব থাইল্যান্ড মুসলিম পর্যটকদের সুবিধার্থে একটি অ্যাপ তৈরি করেছে, যার সাহায্যে মুসলিম পর্যটকরা খুব সহজে হালাল পণ্য ও সেবা খুঁজে পায়। পাশাপাশি স্থানীয় নামাজ-রোজার সময়, হালাল খাদ্যের তালিকা, পর্যটন স্পট সম্পর্কে ধারণা দেবে অ্যাপটি। ‘হালালট্রিপ’ নামের আরেকটি অ্যাপ বিশ্বের ৬৫টির বেশি দেশের হালাল পণ্য, খাবার ও নামাজের সময় সম্পর্কে নির্দেশনা দেয় পর্যটকদের। সব মিলিয়ে বলা যায়, হালাল ট্যুরিজমকেন্দ্রিক ই-কমার্সের আয়তনও বাড়ছে প্রতিদিন। ভবিষ্যতে হালাল ট্যুরিজম বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে বলেই ধারণা করছেন অর্থনীতিবিদরা।</p>