মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলাম

আতাউর রহমান খসরু
আতাউর রহমান খসরু
শেয়ার
মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলাম

বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে একাত্তরের স্বাধীনতা একটি মহান অর্জন। স্বাধীনতার জন্য তারা কালে কালে যুদ্ধ ও সংগ্রাম করলেও ১৯৭১ সালের আগে স্বদেশ শাসনের উল্লেখযোগ্য কোনো সুযোগ বাঙালির হয়ে ওঠেনি। আর বাঙালি মুসলমানের জন্য একাত্তরের স্বাধীনতা ছিল আরো বেশি তাৎপর্যময়। কেননা ১৯৪৭ সালের আগে এক দল ‘তথাকথিত’ বাঙালি ‘ইসলাম ও বাঙালিত্ব’কে যেমন মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছিল, তেমনি পাকিস্তান আমলে শাসকগোষ্ঠী একই কাজ করেছিল।

প্রথম শ্রেণি মুসলিম হওয়ার কারণে ‘বাঙালি মুসলমানে’র বাঙালিত্ব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করত আর দ্বিতীয় শ্রেণি বাঙালি হওয়ার দরুন তাদের মুসলমানিত্ব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করত। পাকিস্তানি বাহিনী বাংলাদেশে সংঘটিত নৃশংস গণহত্যাকে বৈধ করার জন্য ধর্মের নানা অপব্যবহার করে একাত্তরের আগে ও পরে। ‘এটি স্বাধিকার নয়, ইসলামের বিরুদ্ধে কাফিরের যুদ্ধ’ বলে তারা দেশ-বিদেশে ব্যাপক প্রপাগান্ডা চালায়। সাংবাদিক অ্যান্থনি মাসকারেনহাস লিখেছেন, ‘কুমিল্লার নবম ডিভিশন হেডকোয়ার্টারে আমার সফরকালে আমি দেখেছি, পাঞ্জাবি অফিসাররা বাঙালিদের ইসলামের আনুগত্যের প্রতি সব সময়ই সন্দেহ পোষণ করত।
তারা বাঙালি মুসলমানদের কাফির ও হিন্দু বলত।’ (দ্য রেইপ অব বাংলাদেশ, পৃষ্ঠা ২৪)

দুঃখজনক ব্যাপার হলো, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে একশ্রেণির রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবী পাকিস্তানি শাসকদের সুরে বলতে থাকে ‘এটি ধর্মের বিরুদ্ধে ধর্মহীনতা’র লড়াই, যা দেশের সাধারণ মানুষকে বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানুষের ‘সংশয়’ দূর করে দেন। ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ দেশে ফিরেই তিনি বলেন, ‘আমি মুসলমান; আমার বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র।

’ (আবুল মনসুর আহমদ, আমার-দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর, খোশরোজ কিতাব মহল, ২০১০, পৃষ্ঠা ৬০৪)

ইতিহাস বলে, বাঙালি জাতির দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামে ইসলাম কখনো অন্তরায় ছিল না; বরং সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্ম হিসেবে তা অনুপ্রেরণা হিসেবেই কাজ করেছে। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন, নির্বাচন-পরবর্তী আন্দোলন সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধ; সর্বত্র বাঙালি মুসলিম তার ধর্ম থেকে অনুপ্রেরণা লাভের চেষ্টা করেছে। বিপরীতে পাকিস্তানি শাসকরা তাদের ধর্মপরায়ণতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং ধর্মের মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাদের প্রতিবাদে বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে, আমরা ইসলামে বিশ্বাসী নই। এ কথার জবাবে আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য, লেবেলসর্বস্ব ইসলামে আমরা বিশ্বাসী নই।

আমরা বিশ্বাসী ইনসাফের ইসলামে। আমাদের ইসলাম হজরত রসুলে করিম (সা.)-এর ইসলাম; যে ইসলাম জগদ্বাসীকে শিক্ষা দিয়েছে ন্যায় ও সুবিচারের অমোঘ মন্ত্র।’ (বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, নভেল পাবলিকেশন্স, ঢাকা, ১৯৮৮, পৃষ্ঠা ২১)

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণকে বলা হয় স্বাধীনতার পরোক্ষ ঘোষণা। তেজোদীপ্ত সেই ভাষণে তিনি স্বাধীনতার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন ‘ইনশাআল্লাহ’ বলে। তিনি বলেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব; এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ।’ এভাবেই যাত্রা শুরু হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের। ২৬শে মার্চ ১৯৭১ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে কবি আবদুস সালামের কণ্ঠে সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে প্রচারিত ঘোষণাটিও (মুক্তিযুদ্ধের প্রথম বেসামরিক ঘোষণা) শুরু হয়েছিল ইসলামী রীতিতে ‘নাহমাদুহু ওয়ানুসাল্লিয়ালা রাসুলিহীল কারিম’ দিয়ে এবং শেষ হয়েছিল কোরআনের আয়াত ‘নাছরুম মিনাল্লাহি ওয়া ফাতহুন কারিব’-এর মাধ্যমে। একই দিনে কলকাতা বেতার স্টেশন থেকে বঙ্গবন্ধুর একটি বক্তব্য প্রচারিত হয়। যার পরিসমাপ্তি হয় এভাবে,  ‘May Allah bless you and help in your straggle for freedom. JOY BANGLA.’ অর্থাৎ এই মুক্তিসংগ্রামে আল্লাহ তোমাদের ওপর দয়া করুন এবং সাহায্য করুন। জয় বাংলা। (বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিলপত্র, খণ্ড-৩, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, তথ্য মন্ত্রণালয়, হাক্কানী পাবলিশার্স, ২০১০, পৃষ্ঠা ১১ ও ২৩২)

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ১৪ এপ্রিল ১৯৭১ ‘স্বাধীন বাংলার সংগ্রামী জনগণের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশনাবলি’ শিরোনামের একটি প্রচারণা ছিল এমন—“বাঙালির অপরাধ তারা তাদের মা-বাবা, ভাই-বোন, সন্তান-সন্ততিদের জন্য অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসার দাবি জানিয়েছে। বাঙালির অপরাধ আল্লাহর সৃষ্ট পৃথিবীতে, আল্লাহর নির্দেশমতো সম্মানের সাথে শান্তিতে সুখে বাস করতে চেয়েছে। বাঙালির অপরাধ মহান স্রষ্টার নির্দেশমতো অন্যায়, অবিচার, শোষণ, নির্যাতনের অবসান ঘটিয়ে এক সুন্দর ও সুখী সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার সংকল্প ঘোষণা করেছে।... আমাদের সহায় পরম করুণাময় সর্বশক্তিমান আল্লাহর সাহায্য। মনে রাখবেন, আপনার এ সংগ্রাম ন্যায়ের সংগ্রাম, সত্যের সংগ্রাম। পশ্চিম পাকিস্তানি হানাদার দুশমন বাঙালি মুসলমান নারী-পুরুষ, বালক-বালিকা কাউকে হত্যা করতে, বাড়িঘর লুট করতে, জ্বালিয়ে দিতে এতটুকু দ্বিধা করেনি। মসজিদের মিনারে আজান প্রদানকারী মুয়াজ্জিন, মসজিদে-গৃহে নামাজরত মুসল্লি, দরগাহ-মাজারে আশ্রয়প্রার্থী হানাদারের গুলি থেকে বাঁচেনি। এ সংগ্রাম আমাদের বাঁচার সংগ্রাম। সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাআলার ওপর বিশ্বাস রেখে ন্যায়ের সংগ্রামে অবিচল থাকুন। ‘অতীতের চাইতে ভবিষ্যৎ নিশ্চয়ই সুখকর’। বিশ্বাস রাখুন : ‘আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় নিকটবর্তী।’” (প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ১৬-১৮)

এ ছাড়া রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দীপ্ত করতে গায়েবানা জানাজা, কোরআন তিলাওয়াত, শহীদদের জন্য প্রার্থনা, অস্থায়ী মসজিদ স্থাপন ও ইমাম নিয়োগের প্রশাসনিক নির্দেশের প্রমাণও মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক দলিলপত্রে পাওয়া যায়। যেখানে এটাও বলা আছে,  ‘This arrangement is required to boost up the moral of the service-man.’ অর্থাৎ যুদ্ধক্ষেত্রে এসব (ইসলাম ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের) আয়োজন যোদ্ধাদের মনোবল বাড়িয়েছিল। (প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৬১৯)

দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে বিজয়ের যে ঘোষণা দেওয়া হয়, তাতেও ছিল বিশ্বাসের দ্যুতি। ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি তাঁর ঘোষণায় বলেন, ‘আমি মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ দেশবাসীকে আল্লাহর প্রতি শোকরিয়া জ্ঞাপনের জন্য ও একটি সুখী, সমৃদ্ধিশালী সমাজ গঠনে আল্লাহর সাহায্য ও নির্দেশ কামনা করার উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।’ (বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিলপত্র, খণ্ড-৩, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, তথ্য মন্ত্রণালয়, হাক্কানী পাবলিশার্স, ২০১০, পৃষ্ঠা ৩১৪)

মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী বাহাত্তরের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার সংযুক্তি এবং মুক্তিযুদ্ধে ইসলামের অনুপ্রেরণা বিষয়ে সৈয়দ আবুল মকসুদ লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের যে ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শ ঘোষিত হলো তা ইসলামহীন সেক্যুলারিজম নয়। কারণ মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ইসলামসংক্রান্ত অনুষ্ঠান একটু বেশিই যেন প্রচারিত হতো। হিন্দু-বৌদ্ধ ধর্ম নিয়ে বিশেষ কিছুই হতো না। কিন্তু কেন তা হতো? তা হতো এ জন্য যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান শ্রোতার কাছে ইসলামী অনুষ্ঠানের বিশেষ আবেদন ছিল।’ (সলিমুল্লাহ খান সম্পাদিত বেহাত বিপ্লব ১৯৭১, আগামী প্রকাশনী, ডিসেম্বর ২০১৩, পৃষ্ঠা ২২৮)

মন্তব্য

মৃত প্রিয়জনদের জন্য যেসব আমল করবেন

মাইমুনা আক্তার
মাইমুনা আক্তার
শেয়ার
মৃত প্রিয়জনদের জন্য যেসব আমল করবেন

রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস পবিত্র মাহে রমজান। এই মাসে মহান আল্লাহ জান্নাতের দরজা খুলে দেন, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেন। তাই মুমিনের উচিত এই মাসে মৃত প্রিয়জনদের জন্য বেশি বেশি দোয়া করা। তাদের কথা স্মরণ করা, যারা একসময় আমাদের সঙ্গে রমজানের দিনগুলো কাটিয়েছে।

সেই প্রিয় মা, প্রিয় বাবা, প্রিয় ভাই-বোন, কলিজার টুকরা সন্তান-সন্ততি, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজনকে স্মরণ করা, যারা একসময় আমাদের জীবনের অংশ হয়ে ছিল।

তাদের সান্নিধ্য একসময়কে আনন্দময় ও অর্থবহ করত, আমাদের অনুভূতি ও মনকে উজ্জীবিত করত। কিন্তু আল্লাহ তাআলার নির্ধারিত বিধানে তাদের সময় ফুরিয়ে গেছে, তারা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। স্বপ্নের মতো হারিয়ে গেছে, রেখে গেছে অনেক মধুর স্মৃতি, যা এখনো আমাদের মনে কেবল তাদের জন্য ভালোবাসা ও হাহাকার জাগিয়ে তোলে।

মাগফিরাতের এই মাসে তাদের ভুলে গেলে চলবে না, যারা একসময় আমাদের সঙ্গে রমজানের আনন্দ ভাগ করে নিত। সাহরিতে ইফতারে আমাদের পরম যত্নে ইবাদতের তাগিদ দিত। স্মরণ করা উচিত আমাদের সেই পূর্ব পুরুষদের, যাঁদের রক্ত আমাদের শিরা-উপশিরায় বইছে। সেই মহা মনীষীদের, যাঁদের ত্যাগ, চোখের পানি ও রেখে যাওয়া জ্ঞানের আলোয় আমাদের পর্যন্ত ইসলাম পৌঁছেছে।

পূর্ববর্তীদের জন্য দোয়া করা প্রত্যেক মুমিনের দায়িত্ব।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা তাদের পরে এসেছে তারা বলে : হে আমাদের রব, আমাদেরকে ও আমাদের ভাই, যারা ঈমান নিয়ে আমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে, তাদেরকে ক্ষমা করুন।’ (সুরা : হাশর, আয়াত : ১০)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ মারা গেলে তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে তিনটি জিনিস চলতে থাকে : সদকায়ে জারিয়া; এমন জ্ঞান, যা মানুষ উপকৃত হয়; আর নেক সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৪১১৫)

নিম্নে পবিত্র রমজানে মৃতদের জন্য করণীয় কয়েকটি আমল তুলে ধরা হলো—

সদকা : উল্লিখিত হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, মৃতদের ইসালে সওয়াব করার একটি উত্তম পদ্ধতি হতে পারে সদকা। কারো সামর্থ্য থাকলে দান-সদকার মাধ্যমে মৃত আত্মীয়দের ইসালে সওয়াব করা যেতে পারে।

দোয়া : উল্লিখিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) এমন নেক সন্তানের কথা উল্লেখ করেছেন, যে তার জন্য দোয়া করে। তাই পবিত্র রমজানে মৃতদের জন্য আমরা খুব বেশি বেশি দোয়া করতে পারি, বিশেষ করে সাহরি ও ইফতারের সময় তাদের জন্য মহান আল্লাহর কাছে মাগফিরাতের দোয়া করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে ইনশাআল্লাহ মহান আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দেবেন।

কোরআন তিলাওয়াত : মাকিল ইবনে ইয়াসার (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা তোমাদের মৃতদের জন্য সুরা ইয়াসিন পাঠ করো। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩১২১)

অতএব, রমজান যেহেতু কোরআনের মাস, এ মাসে আমরা মৃত আত্মীয়দের ইসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করতে পারি। কিন্তু মৃতদের জন্য অর্থের বিনিময়ে কাউকে দিয়ে কোরআন তিলাওয়াত করানো উচিত নয়।

ওমরাহ : বুরাইদা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এক মহিলা এসে বলল, ‘আমার মা মৃত্যুবরণ করেছেন, কিন্তু তিনি হজ আদায় করেননি। তাঁর পক্ষে কি আমি হজ আদায় করব?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, তাঁর পক্ষে তুমি হজ আদায় করো।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৯২৯)

তাই কারো সামর্থ্য থাকলে পবিত্র রমজানে মৃতদের ইসালে সওয়াবের নিয়তে ওমরাহ পালন করা যেতে পারে।

মন্তব্য
প্রতিদিনের আমল

জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার দোয়া

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার দোয়া

পবিত্র কোরআনের অসংখ্য আয়াতে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির কথা বলা হয়েছে। এ রকম একটি আয়াত হলো- 

رَبَّنَا إِنَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

অর্থ: হে আমাদের রব, আমরা ঈমান এনেছি। সুতরাং আমাদের পাপরাশি ক্ষমা করুন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। (সুরা : আলে ইমরান, ১৬)
 

মন্তব্য
হাদিসের বাণী

জুমা ও রমজানের মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ মাফ

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
জুমা ও রমজানের মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ মাফ

মহান আল্লাহ বিভিন্ন উপলক্ষে তাঁর প্রিয় বান্দাদের গুনাহ মাফ করেন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, এক জুমা ও পরবর্তী জুমা এবং এক রমজান ও পরবর্তী রমজানের মধ্যবর্তী সময়ে মুমিনের গুনাহ মাফ করা হয়। হাদিস শরিফে এসেছে, 

الصَّلَوَاتُ الخَمْسُ، وَالْجُمْعَةُ إلى الجُمْعَةِ، وَرَمَضَانُ إلى رَمَضَانَ، مُكَفِّرَاتٌ ما بيْنَهُنَّ إِذَا اجْتَنَبَ الكَبَائِرَ.

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে আরেক জুমা এবং এক রমজান থেকে আরেক রমজানের মধ্যবর্তী সময়ের সব গুনাহের মাফ করা হয়। যখন ওই বান্দা কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে।

’ (মুসলিম, হাদিস : ২৩৩)

 

মন্তব্য

জুমার দিন যে সময় দোয়া কবুল হয়

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
জুমার দিন যে সময় দোয়া কবুল হয়

ইসলামে জুমার দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে বিবেচিত। পবিত্র কোরআনে জুমার দিন দ্রুত মসজিদে গমনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া হাদিসে গুরুত্বপূর্ণ আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে।

ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! জুমার দিন নামাজের আজান হলে তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং বেচাবিক্রি বন্ধ কোরো, তা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝো।

এরপর নামাজ শেষ হলে ভূপৃষ্ঠে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) অনুসন্ধান করো এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা : জুমা, আয়াত : ৯-১০)

জুমার দিনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো— 

১. জুমার দিনের বিশেষ মর্যাদা

আবু লুবাবা বিন আবদুল মুনজির (রা.) থেকে বর্ণিত, হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) জুমার দিনের পাঁচটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো—এক. আল্লাহ তাআলা এই দিনে আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করেছেন। দুই. আল্লাহ তাআলা এই দিনে আদম (আ.)-কে জমিনে অবতরণ করিয়েছেন।

তিন. এই দিনে আদম (আ.)-কে মৃত্যু দিয়েছেন। চার. এই দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন বান্দা আল্লাহর কাছে যা কিছুই প্রার্থনা করবে তিনি তা দেবেন। যতক্ষণ সে হারাম কিছু প্রার্থনা করবে না। পাঁচ. এই দিনে কিয়ামত সংঘটিত হবে।
’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৮৯৫)

২. জুমার নামাজ আদায়

সালমান ফারসি থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, সাধ্যমতো পবিত্রতা অর্জন করল, তেল ব্যবহার করল, ঘর থেকে সুগন্ধি ব্যবহার করল, অতঃপর মসজিদে এলো, সেখানে দুজন মুসল্লির মধ্যে ফাঁক করে সামনে এগিয়ে না যায়, নির্দিষ্ট পরিমাণ নামাজ পড়ল, অতঃপর ইমাম কথা শুরু করলে চুপ থাকল; তাহলে আল্লাহ তাআলা তাঁর দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ মাফ করবেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৮৩)

অন্য হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা, এক রমজান থেকে পরবর্তী রমজান মধ্যবর্তী সময়ের পাপ মোচন করে; যদি সেই ব্যক্তি সব ধরনের কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৩৩)

৩. জুমার দিন গোসল করা

জুমার দিন গোসল করা ও আগে আগে মসজিদে যাওয়া অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। আউস বিন আউস সাকাফি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন ভালো করে গোসল করল, দ্রুততর সময়ে মসজিদে গেল ও (ইমামের) কাছাকাছি বসে মনোযোগসহ (খুতবা) শুনল, তাঁর জন্য প্রতি কদমের বদলে এক বছরের রোজা ও নামাজের সওয়াব থাকবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৪৫)

৪. মসজিদে প্রথমে প্রবেশ করা

জুমার দিন মসজিদে আগে প্রবেশ করা ও মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনার বিশেষ গুরুত্ব আছে।

রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, অতঃপর প্রথমে মসজিদে গেল সে যেন একটি উট কোরবানি করল। যে এরপর মসজিদে গেল, সে যেন একটি গরু কোরবানি করল। আর যে এরপর ঢুকল, সে যেন ছাগল কোরবানি করল, এরপর যে ঢুকল সে যেন মুরগি কোরবানি করল, আর যে এরপর ঢুকল সে ডিম সদকা করল। অতঃপর ইমাম খুতবার জন্য এলে ফেরেশতারা আলোচনা শোনা শুরু করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৪১)

৫. জুমার দিন দোয়া কবুল হয়

জুমার দিন একটি সময় আছে, যখন মানুষ আল্লাহর কাছে কোনো দোয়া করলে আল্লাহ তা কবুল করেন। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘জুমার দিন কোনো মুসলিম আল্লাহর কাছে ভালো কিছুর দোয়া করলে আল্লাহ তাকে তা দেন। তোমরা সময়টি আসরের পর অনুসন্ধান কোরো।’ (আবু দাউদ, হাদিস নম্বর : ১০৪৮)

জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জুমার দিনের বারো ঘণ্টার মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে যদি কোনো মুসলিম এ সময় আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করে, তাহলে মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাকে দান করেন। এই মুহূর্তটি তোমরা আছরের শেষ সময়ে অনুসন্ধান কোরো। (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৮)

৬. সুরা কাহাফ পাঠ

জুমার অন্যতম আমল সুরা কাহাফ পাঠ করা। আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ পড়বে তা দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার জন্য আলোকিত হয়ে থাকবে। আর যে ব্যক্তি এই সুরার শেষ ১০ আয়াত পাঠ করবে অতঃপর দাজ্জাল বের হলে তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’ (সহিহ তারগিব, হাদিস : ১৪৭৩, আল মুসতাদরাক : ২/৩৯৯)

৭. গুনাহ মাফ হয়

সালমান ফারসি থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, সাধ্যমতো পবিত্র হলো, তেল ব্যবহার করল, ঘর থেকে সুগন্ধি ব্যবহার করল, অতঃপর মসজিদে এলো, সেখানে দুজন মুসল্লির মধ্যে ফাঁক করে সামনে এগিয়ে যায় না, নির্দিষ্ট পরিমাণ নামাজ পড়ল, অতঃপর ইমাম কথা শুরু করলে চুপ থাকল; তাহলে আল্লাহ তাআলা তাঁর দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ মাফ করেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৮৩)

৮. দরুদ পাঠ

জুমার দিন নবীজি (সা.)-এর ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা কর্তব্য। আউস বিন আবি আউস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এই দিনে আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। এই দিনে শিঙায় ফুঁ দেওয়া হবে এবং এই দিনে সবাইকে বেহুঁশ করা হবে। অতএব, তোমরা এই দিনে আমার ওপর বেশি পরিমাণ দরুদ পড়ো। কারণ জুমার দিনে তোমাদের দরুদ আমার কাছে পেশ করা হয়।’ সাহাবারা বললেন, আমাদের দরুদ আপনার কাছে কিভাবে পেশ করা হবে, অথচ আপনার দেহ একসময় নিঃশেষ হয়ে যাবে? তিনি বলেন, ‘আল্লাহ জমিনের জন্য আমার দেহের ভক্ষণ নিষিদ্ধ করেছেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৭)

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ