<p style="text-align: justify;"><br /> নবীজি (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা ঈমানের অংশ। অন্তরে তাঁর প্রতি ভালোবাসা ধারণ করা ছাড়া কেউ পূর্ণাঙ্গ মুমিন হতে পারবে না। আর রাসুলে আকরাম (সা.)-এর রওজা জিয়ারত করা নিঃসন্দেহে পুণ্য ও মর্যাদাপূর্ণ কাজ। পৃথিবীর কোনো আলেম এ বিষয়ে নিরুৎসাহ করেননি, বরং সবাই উৎসাহিত করেছেন।</p> <p style="text-align: justify;">আলেমরা বলেন, জিয়ারতকারী মদিনায় শুধু রওজা জিয়ারতের নিয়তে যাবে না, বরং মসজিদে নববি জিয়ারতেরও নিয়ত করবে। কেননা বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা মসজিদ-ই-নববীর মর্যাদা প্রমাণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমার এ মসজিদে নামাজ আদায় (মক্কার) মাসজিদুল হারাম ছাড়া অন্য যেকোনো মসজিদে নামাজ আদায় অপেক্ষা এক হাজার গুণ উত্তম। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১১৯০)</p> <p style="text-align: justify;"><strong>রওজা জিয়ারতের শিষ্টাচার</strong></p> <p style="text-align: justify;">প্রাজ্ঞ আলেমরা মহানবী (সা.)-এর রওজা জিয়ারতকারীর জন্য নিম্নোক্ত শিষ্টাচারগুলো উল্লেখ করেছেন,</p> <p style="text-align: justify;">১. জিয়ারতকারী পবিত্র শরীরে পবিত্র কাপড় পরিধান করে যাবে।</p> <p style="text-align: justify;">২. ব্যক্তি জিয়ারতের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পর থেকেই অধিক পরিমাণে দরুদ পাঠ করতে থাকবে। সে আল্লাহর কাছে দোয়া করবে আল্লাহ যেন জিয়ারত দ্বারা তাঁকে উপকৃত করেন এবং জিয়ারত কবুল করেন।</p> <p style="text-align: justify;">৩. জিয়ারতকারী নবীজি (সা.)-এর রওজায় প্রবেশের আগেই মন থেকে জাগতিক সব চিন্তা-ভাবনা দূর করে দেবে এবং তাঁর ভালোবাসায় অন্তর পূর্ণ করে নেবে।</p> <p style="text-align: justify;">৪. নবী (সা.)-এর প্রতি পূর্ণ ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা নিয়ে রওজায় প্রবেশ করবে। ডান পা দিয়ে প্রবেশ করবে। লক্ষ রাখবে, এমন কোনো আচরণ যেন প্রকাশ না পায়, যা নবীজি (সা.)-এর মর্যাদা পরিপন্থী।</p> <p style="text-align: justify;">৫. নবীজি (সা.)-কে অনুচ্চ আওয়াজে সালাম দেবে। কোনোভাবেই আওয়াজ উঁচু করবে না।</p> <p style="text-align: justify;">৬. জিয়ারতকারী নবীজি (সা.)-এর রওজার দিকে ফিরে দাঁড়াবে, তবে সামান্য দূরত্ব বজায় রাখবে। অন্তরকে মহানবী (সা.)-এর চিন্তা ও ভালোবাসায় বিভোর করবে।</p> <p style="text-align: justify;">৭. যে কক্ষে নবীজি (সা.) শুয়ে আছেন সেটি এবং তাঁর মিম্বার ইত্যাদি স্পর্শ করা, তাতে চুমু খাওয়া এবং এগুলো তাওয়াফ করা থেকে বিরত থাকবে।</p> <p style="text-align: justify;">৮. আল্লাহর কাছে যেভাবে কোনো কিছু চাওয়া হয় সেভাবে নবীজি (সা.)-এর কাছে চাইবে না। কোনো চাওয়ার থাকলে মহান আল্লাহর কাছেই চাইবে। দোয়া করার সময় কিবলামুখী হয়ে দোয়া করবে।</p> <p style="text-align: justify;">৯. রওজায়ে আতহারে দীর্ঘ সময় অবস্থান করা, সেখানে ভিড় করে থাকা এবং ধাক্কাধাক্কি করা নবীজি (সা.)-এর মর্যাদা পরিপন্থী। যতক্ষণ অবস্থান করবে প্রশান্তির সঙ্গে অবস্থান করবে। ফেরার সময়ও দরুদ পাঠ করতে থাকবে।</p> <p style="text-align: justify;">১০. সম্ভব হলে রিয়াজুল জান্নাতে দুই রাকাত (কমপক্ষে) নামাজ আদায় করবে। (আল-ইজাহ ফি মানাসিকিল হাজ্জি ওয়াল ওমরাহ, পৃষ্ঠা ৪৪৬-৪৫০)</p> <p style="text-align: justify;"><strong>রওজা জিয়ারতের সময় যা পাঠ করবে</strong></p> <p style="text-align: justify;">অভিজ্ঞ আলেমরা বলেন, রওজা জিয়ারতকারী পূর্ণ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিয়ে মহানবী (সা.)-এর রওজার সামনে দাঁড়াবে। প্রথমে সে দরুদে ইবরাহিম পাঠ করবে। অতঃপর বলবে, ‘আশহাদু আন্নাকা রাসুলিল্লাহি হাক্কান, ওয়া আন্নাকা কদ বাল্লাগতার রিসালাতা, ওয়া আদ্দায়তাল আমানাতা, ওয়া নাসিহতাল উম্মাতা, ওয়া জাহাদতা ফিল্লাহি হাক্কা জিহাদিহ, ফাজাঝাকাল্লাহু আন উম্মাতিকা আফদালু মা জাঝা নাবিইয়ান আন উম্মাতিহি।’</p> <p style="text-align: justify;">অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর সত্য রাসুল, আপনি আল্লাহর বাণী যথাযথভাবে পৌঁছে দিয়েছেন, আল্লাহপ্রদত্ত আমানত আদায় করেছেন, উম্মতের কল্যাণ কামনা করেছেন, আল্লাহ পথে যথার্থ চেষ্টা-সংগ্রাম করেছেন, সুতরাং উম্মতের পক্ষ থেকে যে প্রতিদান নবীকে দেওয়া হয় আল্লাহ আপনার উম্মতের পক্ষ থেকে আপনাকে সর্বোত্তম প্রতিদান দিন।</p> <p style="text-align: justify;">অতঃপর জিয়ারতকারী ডান দিকে এগিয়ে আবু বকর (রা.)-এর কবরের সামনে দাঁড়াবে এবং বলবে, আস-সালামু আলাইকা ইয়া আবা বাকরিন, আস-সালামু আলাইকা ইয়া খালিফাতা রাসুলিল্লাহ (সা.) ফি উম্মাতিহি, রাদিয়াল্লাহু আনকা, জাঝাকাল্লাহু আন উম্মাতি মুহাম্মাদিন খাইরান।’</p> <p style="text-align: justify;">অর্থ : হে আবু বকর! আপনার প্রতি সালাম, উম্মতের জন্য আল্লাহর রাসুলের খলিফা আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক, আল্লাহ আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান, তিনি আপনাকে উম্মতে মুহাম্মদির পক্ষ থেকে উত্তম প্রতিদান দিন।</p> <p style="text-align: justify;">এরপর জিয়ারতকারী আরেকটু ডানে এগিয়ে যাবে এবং বলবে, ‘আস-সালামু আলাইকা ইয়া ওমর, আস-সালামু আলাইকা ইয়া আমিরাল মুমিনিন, রাদিয়াল্লাহু আনকা, জাঝাকাল্লাহু আন উম্মাতি মুহাম্মাদিন খাইরান।’</p> <p style="text-align: justify;">অর্থ : হে ওমর, আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক, হে আমিরুল মুমিনিন আপনার প্রতি সালাম। আল্লাহ আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান, তিনি আপনাকে উম্মতে মুহাম্মদির পক্ষ থেকে উত্তম প্রতিদান দিন।</p> <p style="text-align: justify;">এ ক্ষেত্রে আলেমরা আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.)-এর আমল দ্বারা দলিল পেশ করেন। তিনি সফর থেকে ফিরে মসজিদ-ই-নববীতে আগমন করতেন এবং রওজায় প্রবেশ করে রাসুলুল্লাহ (সা.), আবু বকর ও ওমর (রা.)-এর প্রতি সালাম পেশ করতেন। (ফাতহুর রব্বানি : ১/৬২; সুনানে বাইহাকি, হাদিস : ৯৬৫৮)</p>