<p style="text-align:justify">আমাদের সামনে যদি কোনো ভয়ানক অগ্নিকাণ্ড ঘটে, যা সব কিছু গ্রাস করে নেবে, তা দেখেও কি আমাদের নিশ্চিন্তে বসে আক্ষেপ করা এবং নিশ্চল বসে থাকা উচিত হবে? বোকা থেকে বোকা ব্যক্তিও এমন পরিস্থিতিতে আগুনের সবিস্তার বিবরণ দেওয়ার আগে অগ্নিনির্বাপক বাহিনীকে খবর দেবে এবং নিজেও তা থেকে বাঁচার সর্বাত্মক চেষ্টা করবে।</p> <p style="text-align:justify">আগুন ছড়িয়ে পড়লে অন্তত নিজে নিরাপদ জায়গায় দিয়ে দাঁড়াবে। কেমন নির্বোধ হলে এটা করা সম্ভব যে অন্যদের আগুন নেভাতে বলবে এবং নিজে তাতে জ্বালানি ফেলবে। যেসব সামাজিক পাপাচারের আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে সেগুলোর ব্যাপারে আমাদের কর্মপদ্ধতি হলো আমরা প্রকাশ্যে তার সমালোচনা করি, আবার নিজেও তাতে লিপ্ত হই।</p> <p style="text-align:justify">সুদ, ঘুষ, মিথ্যা, খিয়ানত ও অশ্লীলতার নিন্দা করি আবার সুযোগ পেলে তা নিজেরাই করি। এটা তো ছড়িয়ে পড়া আগুনে জ্বালানি দেওয়ার মতোই হলো। কোনো সমাজে পাপাচার ব্যাপকতা লাভ করলে কোরআনের একটি মৌলিক নির্দেশনা হলো ‘হে মুমিনরা! তোমাদের দায়িত্ব তোমাদের ওপর। তোমরা যদি সৎপথে পরিচালিত হও তবে যে পথভ্রষ্ট হয়েছে সে তোমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ১০৫)</p> <p style="text-align:justify">এই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় অন্যের পাপাচার কোনো পাপ কাজের অনুমোদন দিতে পারে না এবং অন্যের অন্যায় কাজের আলোচনা মানুষের কোনো উপকারে আসে না। মুমিনের দায়িত্ব হলো নিজেকে রক্ষা করা এবং সমাজ ও রাষ্ট্রকে অন্যায় থেকে বিরত রাখার সুযোগ না থাকে অন্তত নিজে তা পরিহার করা। নিজের সবটুকু সামর্থ্য দিয়ে নিজেকে সংশোধন করবে। যে পাপ তাৎক্ষণিকভাবে পরিহার করা যায় তা সঙ্গে সঙ্গে পরিহার করবে এবং যা ছেড়ে দিতে সময়ের প্রয়োজন হয় তা ছাড়ার চেষ্টা শুরু করবে।</p> <p style="text-align:justify">অন্যকে কোনো পাপ কাজ করতে দেখলে নিজে তা থেকে বিরত থাকার অঙ্গীকার করবে। কাউকে ঘুষ নিতে দেখলে নিজে ঘুষ না নেওয়ার, কাউকে খিয়ানত করতে দেখলে নিজে খিয়ানত না করার এবং কাউকে হারাম উপার্জন করতে দেখলে নিজে হারাম স্পর্শ না করার শপথ করবে। এক হাদিসে মহানবী (সা.) অনুরূপ নির্দেশনা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন দেখবে মানুষ কৃপণতা করছে, প্রবৃত্তির পেছনে ছুটছে, পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে এবং প্রত্যেকে নিজের মতামতে মুগ্ধ এমন পরিস্থিতিতে সংশোধনে বিশেষ মনোযোগ দাও। সাধারণ মানুষের পথ পরিহার করো।’ (আবু দাউদ : ৪৩৪১)</p> <p style="text-align:justify">এই হাদিসের উদ্দেশ্য হলো এমন পরিস্থিতিতে মানুষের সমালোচনা করা কোনো সমাধান নয়; বরং সমাধান হলো প্রত্যেকে নিজেকে সংশোধন করার চেষ্টা করবে এবং ছড়িয়ে পড়া পাপাচার থেকে নিজে রক্ষার সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। অন্য হাদিসে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বলল, মানুষ ধ্বংস হয়ে গেছে সে বেশি ধ্বংসপ্রাপ্ত।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪৭৫৫)</p> <p style="text-align:justify">অর্থাত্ যে ব্যক্তি সব সময় অন্যের দোষ চর্চা করে এবং নিজের দোষ-ত্রুটির প্রতি ভ্রুক্ষেপ করে না, তার অবস্থায় সবচেয়ে শোচনীয়। বিপরীতে সে যদি অন্যকে দেখে শিক্ষা নেয় এবং নিজেকে সংশোধন করে, তবে সমাজ থেকে অন্তত একজন পাপীর সংখ্যা কমল। আর অভিজ্ঞতা বলে, সামাজিক জীবনে একটি প্রদীপ থেকে অন্য প্রদীপ প্রজ্বলিত হয় এবং এক ব্যক্তির সুপথে চলার কারণে অন্যরা অনুপ্রাণিত হয়। আর সমাজ যেহেতু ব্যক্তির সমষ্টি, তাই ব্যক্তি সংশোধনের চিন্তা প্রবল হলে ধীরে ধীরে সমাজ বদলে যাবে।</p> <p style="text-align:justify"><em>ভাষান্তর : মো. আবদুল মজিদ মোল্লা</em></p>
