<p>শরিয়তের দ্বিতীয় প্রধান উৎস সুন্নাহ বা হাদিস। হাদিস পবিত্র কোরআনের ব্যাখ্যাস্বরূপ। কোরআনের বিধি-বিধানগুলোর রূপরেখাও তুল ধরা হয়েছে হাদিসের মাধ্যমে। তাই হাদিস ছাড়া পরিপূর্ণভাবে দ্বিন পালন করা সম্ভব নয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘রাসুল তোমাদের যা কিছু দেন, তা গ্রহণ করো এবং যা থেকে নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাকো, আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।’ (সুরা : হাশর, আয়াত : ৭)</p> <p><strong>হাদিস আল্লাহর অনুগ্রহ </strong></p> <p>পবিত্র কোরআনের মতো হাদিসও সমগ্র মানবজাতির জন্য মহান আল্লাহর অনুগ্রহ। আল্লাহ তাআলা এই অনুগ্রহের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ‘তিনিই উম্মিদের (নিরক্ষরদের) মধ্যে একজন রাসুল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্যে থেকে, যে তাদের কাছে আবৃত্তি করে তার আয়াতগুলো, তাদেরকে পবিত্র করে এবং শিক্ষা দেয় কিতাব ও হিকমত; ইতিপূর্বে তারা ছিল ঘোর বিভ্রান্তিতে। তাদের অন্যদের জন্যও যারা এখনো তাদের সঙ্গে মিলিত হয়নি। আল্লাহ পরাক্রশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা : জুমা, আয়াত : ২-৩)</p> <p><strong>হাদিস কেন মুখস্থ করবে?</strong> </p> <p>সুন্নাহ বা হাদিস মুসলিম উম্মাহর প্রতি মহানবী (সা.)-এর পবিত্র আমানত। মুসলমান হাদিস মুখস্থ করবে তা সংরক্ষণের জন্য এবং পরবর্তী উম্মতের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। এ জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) আবদুল কায়েস গোত্রের প্রতিনিধিদলকে ঈমান ও ইসলামের শিক্ষা দানের পর বলেন, ‘তোমরা এগুলো মনোযোগসহ স্মরণ রেখো এবং তোমাদের পেছনে যারা আছে তাদের কাছে পৌঁছে দিয়ো।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৭)</p> <p>অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো স্পষ্ট করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা ভালোভাবে জ্ঞানের কথা শুনে রেখো। কেননা লোকেরা তোমাদের কাছ থেকে তা শুনবে। অতঃপর তোমাদের কাছ থেকে যারা শুনবে, তাদের কাছ থেকেও পরবর্তীরা শুনবে।’ (সুনানু আবি দাউদ, হাদিস : ৩৬৫৯)</p> <p><strong>হাদিস মুখস্থ করার পুরস্কার </strong></p> <p>মহানবী (সা.) হাদিস মুখস্থ করার একাধিক পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। যার কয়েকটি হলো—</p> <p><strong>১. চেহারা উজ্জ্বল হবে : </strong>যে ব্যক্তি হাদিস মুখস্থ করবে এবং তা অন্যের কাছে পৌঁছে দেবে, আল্লাহ তাঁর চেহারা উজ্জ্বল করবেন। জায়েদ বিন সাবিত (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আমার কাছ থেকে হাদিস শুনে তা মুখস্থ রাখল এবং অন্যের নিকটও তা পৌঁছে দিল, আল্লাহ তাকে চির উজ্জ্বল করে রাখবেন। জ্ঞানের অনেক বাহক তার চেয়ে অধিক সমঝদার লোকের কাছে তা বহন করে নিয়ে যায়; যদিও জ্ঞানের বহু বাহক নিজেরা জ্ঞানী নয়।’ (সুনানু আবি দাউদ, হাদিস : ৩৬৬০)</p> <p><strong>২. শাফায়াত লাভ : </strong>যে ব্যক্তি হাদিস মুখস্থ করবে, তা চর্চা করবে এবং সে অনুযায়ী আমল করবে, কিয়ামতের দিন রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর জন্য সুপারিশ করবেন। তিনি বলেন, ‘আমার উম্মতের ভেতর যে দ্বিনি বিষয়ে ৪০টি হাদিস মুখস্থ করবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে ফকিহ হিসেবে ওঠাবেন। আমি কিয়ামতের দিন তার জন্য সুপারিশকারী ও সাক্ষী হবো।’ (শুআবুল ঈসান : ২/৭৪২)</p> <p><strong>৩. আলেমের মর্যাদা লাভ : </strong>হাদিস মুখস্থকারী পরকালে আলেম ও ফকিহের মর্যাদা লাভ করবে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘আমার উম্মতের যে ব্যক্তি দ্বিনি বিষয়ে ৪০টি হাদিস মুখস্থ করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে ফকিহ আলেম হিসেবে ওঠাবেন।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান : ১/১৬২)</p> <p><strong>৪. মৌলিক জ্ঞান লাভ : </strong>রাসুলুল্লাহ (সা.) হাদিসকে ইসলামের মৌলিক জ্ঞান হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেন, ‘(মৌলিক ইসলামী) জ্ঞান তিন প্রকার। এগুলো ছাড়া যা আছে তা অতিরিক্ত। ক. মুহকাম আয়াতগুলো, ২. প্রতিষ্ঠিত হাদিস, ৩ ন্যায্যভাবে সম্পত্তি বণ্টনের জ্ঞান।’ (সুনানু আবি দাউদ, হাদিস : ২৮৮৫)</p> <p><strong>সাহাবিরা হাদিস মুখস্থ করতেন : </strong>মহানবী (সা.)-এর সাহাবিরা হাদিস মুখস্থ করতেন। তাঁরা লিখে রাখার চেয়ে তা মুখস্থ করতেই বেশি পছন্দ করতেন। আবু বুরদা (রহ.) বলেন, ‘আবু মুসা আশআরি (রা.) আমাদের কাছে হাদিস বর্ণনা করতেন। আমরা তা লিখে রাখতে চাইলাম। তিনি বললেন, তোমরা আমার কাছ থেকে যা শুনেছ তা কি লেখো? আমরা বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আমাদের কাছে তা নিয়ে এসো। এরপর তিনি আনতে বললেন এবং তা ধুয়ে ফেললেন। তিনি বললেন, আমাদের থেকে মুখস্থ করো যেমন আমরা মুখস্থ করেছি।’ (হুজ্জিয়াতুল হাদিস, পৃষ্ঠা-৩৯৭)</p> <p>আল্লাহ সবাইকে হাদিসের মর্যাদা ও গুরুত্ব অনুধাবন করার তাওফিক দিন। আমিন।</p> <p><br />  </p>