<p>আল ইনশিরাহ পবিত্র কোরআনের ৯৪ নম্বর সুরা। এটি মক্কায় সুরা আদ-দুহার পরে অবতীর্ণ হয়েছে। এর মোট আয়াত আটটি। এ সুরার মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে সান্ত্বনা দেওয়া হয়েছে। কষ্টের পরে সুখ-শান্তি আসার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। নিত্যনৈমিত্তিক ব্যস্ততা থেকে অবসর হয়ে ইবাদত-বন্দেগি ও আধ্যাত্মিক সাধনায় আত্মনিমগ্ন হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।‌ এ ছাড়া এই সুরায় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বক্ষ বিদারণের বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।</p> <p><strong>বক্ষ বিদারণ স্বতন্ত্র মুজিজা</strong></p> <p>বক্ষ বিদারণ আর বক্ষ উন্মুক্তকরণের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। বক্ষ উন্মুক্তকরণ যেকোনো ব্যক্তির উদ্দেশ্যে হতে পারে। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘অতএব আল্লাহ যাকে হিদায়াত করতে চান ইসলামের জন্য তার অন্তঃকরণ উন্মুক্ত করে দেন, আর যাকে পথভ্রষ্ট করার ইচ্ছা করেন, তিনি তার অন্তঃকরণ সংকুচিত করে দেন।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১২৫)</p> <p>আর বক্ষ বিদারণ শুধু রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এটা তাঁর স্বতন্ত্র একটি মুজিজা। তাঁর গোটা জীবনে চারবার বক্ষ বিদারণের ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল। প্রথমবার চার অথবা পাঁচ বছর বয়সে। দ্বিতীয়বার ১০ বা ২০ বছর বয়সে। তৃতীয়বার নবুয়ত লাভের সময়ে। চতুর্থবার মিরাজে গমনের সময়ে। (সীরাতুল মুস্তফা : ১/৭৫)</p> <p><strong>প্রথমবার বক্ষ বিদারণ</strong></p> <p>রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রথমবার বক্ষ বিদারণের সময় হালিমা সাদিয়ার তত্ত্বাবধানে ছিলেন। একবার তিনি দুধ ভাইয়ের সঙ্গে জঙ্গলে যান। তখন এটি সংঘটিত হয়। আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে জিবরাইল (আ.) এলেন, তখন তিনি শিশুদের সঙ্গে খেলছিলেন। তিনি তাঁকে ধরে শোয়ালেন এবং বক্ষ বিদীর্ণ করে তাঁর হৃৎপিণ্ড বের করে আনলেন। তারপর তিনি তাঁর বক্ষ থেকে একটি রক্তপিণ্ড বের করলেন এবং বলেন, এ অংশ শয়তানের। এরপর হৃৎপিণ্ড একটি স্বর্ণের পাত্রে রেখে জমজমের পানি দিয়ে ধৌত করলেন এবং তাঁর অংশগুলো জড়ো করে আবার তা যথাস্থানে পুনঃস্থাপন করলেন। তখন ওই শিশুরা দৌড়ে তাঁর দুধ মায়ের কাছে গেল এবং বলল, মুহাম্মদ (সা.)-কে হত্যা করা হয়েছে। কথাটি শুনে সবাই সেদিকে এগিয়ে গিয়ে দেখল তিনি ভয়ে বিবর্ণ হয়ে আছেন! আনাস (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বক্ষে সে সেলাইয়ের চিহ্ন দেখেছি। (মুসলিম, হাদিস : ৩১০)</p> <p>এই বক্ষ বিদারণের রহস্য ছিল তাঁর কলবকে পবিত্র ও অন্যায় প্রবণতা থেকে মুক্ত করে দেওয়া, যাতে পাপ প্রবণতার শেষ চিহ্ন পবিত্র কলবে অবশিষ্ট না থাকে।</p> <p><strong>দ্বিতীয়বার বক্ষ বিদারণ</strong></p> <p>দ্বিতীয়বার ১০ বা ২০ বছর বয়সে এক ময়দানে জিবরাইল (আ.) ও মিকাইল (আ.) তাঁকে শোয়ায়ে বক্ষ বিদারণ করেন। এতে কোনো রক্ত বের হয়নি। কোনো কষ্টও অনুভব করেননি। তখন একজন পানি আনয়ন করেন, দ্বিতীয়জন কলব ধৌত করেন। এটা দ্বারা হিংসা-বিদ্বেষকে একটি রক্তপিণ্ডের মতো বের করে ফেলে দেন। আর স্নেহ-মমতাকে রৌপ্যের টুকরার মতো একটি পিণ্ড আকারে অন্তরে প্রবিষ্ট করিয়ে দেন। অতঃপর বক্ষ বন্ধ করে তাতে একটি জিনিস ওষুধের মতো লাগিয়ে দেন। এরপর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অন্তরে স্নেহ-মমতা, দয়া ও অনুগ্রহ প্রবল হয়ে ওঠে। আর যৌবনের সর্বপ্রকার কু-বাসনা দূর হয়ে যায়। (তাফসিরে জালালাইন : ৭/৫০৬)</p> <p><strong>তৃতীয়বার বক্ষ বিদারণ</strong></p> <p>তৃতীয়বার যখন তিনি হেরা গুহায় ছিলেন তখন বক্ষ বিদারণ করা হয়। তা এ জন্য যে পবিত্র কলব ওহির রহস্য ও আল্লাহর ইলম গ্রহণ এবং বহনে যেন সক্ষম হয়। (সীরাতে মুস্তফা : ১/৮০)</p> <p><strong>চতুর্থবার বক্ষ বিদারণ</strong></p> <p>চতুর্থবার মিরাজে গমনের সময় বক্ষ বিদারণ করা হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল যে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পবিত্র কলব যাতে ফেরেশতাজগতে ভ্রমণ, আল্লাহর নিদর্শন পর্যবেক্ষণ ও আল্লাহর সরাসরি নির্দেশ হৃদয়ঙ্গম করার ক্ষমতার অধিকারী হয়। আনাস ইবনে মালেক (রা.) বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমার কাছে ফেরেশতা আসলেন এবং তাঁরা আমাকে নিয়ে জমজমে গেলেন। আমার বক্ষ বিদীর্ণ করা হলো। তারপর জমজমের পানি দিয়ে ধুয়ে আমাকে নির্ধারিত স্থানে ফিরিয়ে আনা হলো। (বুখারি, হাদিস : ৩৬০৮)</p> <p>এভাবে বারবার বক্ষ বিদারণ করে আল্লাহ তাআলা দৈহিক ও আত্মিকভাবে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বক্ষ উন্মুক্ত ও সম্প্রসারিত করেছেন। ফলে তাঁর শরীর ও হৃদয় এমন জ্যোতির্ময় হয়েছিল যে প্রখর সূর্য কিরণের মধ্যেও তাঁর শরীরের ছায়া প্রতিবিম্বিত হতো না।<br />  </p>