<p>ইসলাম একটি প্রচারমুখী ধর্ম। ইসলামের বাণী প্রচার করা প্রত্যেক মুসলমানের দ্বিনি দায়িত্ব। মুমিন তার জ্ঞান ও অবকাশ অনুযায়ী দ্বিন প্রচারে আত্মনিয়োগ করবে। এ ক্ষেত্রে আলেম ও সাধারণ মানুষের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। তবে দ্বিন শেখানো আলেমদের দায়িত্ব।</p> <p><strong>দ্বিন শেখানো আলেমের দায়িত্ব</strong></p> <p>মানুষকে দ্বিন শেখানো আলেমদের দায়িত্ব। এই দায়িত্ব আল্লাহ আলেমদের ওপরই ন্যস্ত করেছেন। সাধারণ মানুষ আলেমদের কাছ থেকে দ্বিন শিখে তা মানুষের মধ্যে প্রচার করবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিনদের সবাই একসঙ্গে অভিযানে বের হওয়া সংগত নয়, তাদের প্রত্যেক দলের এক অংশ বের হয় না কেন, যাতে তারা দ্বিন সম্পর্কে জ্ঞানানুশীলন করতে পারে এবং তাদের সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে পারে, যখন তারা তাদের কাছে ফিরে আসবে যাতে তারা সতর্ক হয়।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১২২)</p> <p>অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা জ্ঞানীদের জিজ্ঞাসা করো, যদি তোমরা না জানে  া।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৪৩)</p> <p><strong>দ্বিন প্রচারের দায়িত্ব সবার</strong></p> <p>অনেকের ধারণা, দ্বিন প্রচারের দায়িত্ব কেবল আলেম ও ধর্মপ্রাণ মানুষের। অথচ রাসুলুল্লাহ (সা.) সর্বসাধারণের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আমার পক্ষ থেকে একটি আয়াত হলেও পৌঁছে দাও।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৪৬১)</p> <p>প্রাজ্ঞ আলেমরা বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ‘একটি আয়াত হলেও’ বলেছেন যেন মানুষ বিশুদ্ধ সূত্রে কোরআন-হাদিস থেকে যা লাভ করেছে তা অন্যের কাছে পৌঁছে দেয়। যদিও  তার জ্ঞানের পরিমাণ সামান্য হয়। একইভাবে পবিত্র কোরআনে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে বারণ করা উম্মতে মুহাম্মদির সাধারণ বৈশিষ্ট্য হিসেবে ঘোষণা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানবজাতির জন্য তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে; তোমরা সৎ কাজের নির্দেশ দাও, অসৎ কাজ থেকে বারণ করো এবং আল্লাহতে বিশ্বাস করো।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১১০)</p> <p><strong>দ্বিনের দাওয়াত চাই সর্বত্র</strong></p> <p>দ্বিনি দাওয়াতের ক্ষেত্র শুধু দূর-দূরান্তের মানুষ নয়, বরং নিজ ঘর, কর্মস্থল ও সমাজে দ্বিনের প্রচার ও প্রসার আবশ্যক। তাদের প্রতিও মুমিনের গুরুদায়িত্ব রয়েছে। দাওয়াতি কাজে পারদর্শী আলেমরা বলেন, চার স্তরে দ্বিনি দাওয়াত পৌঁছে দেওয়া আবশ্যক। তাহলো—</p> <p>১. পরিবারে : নিজ পরিবার থেকে ব্যক্তি দ্বিন প্রচারের কাজ শুরু করবে। এটাই মহানবী (সা.)-এর অনুসৃত পদ্ধতি। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা করো আগুন থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর।’ (সুরা : তাহরিম, আয়াত : ৬)</p> <p>রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সন্তান সাত বছর বয়সে উপনীত হলে তাদের নামাজ আদায়ের আদেশ দাও। আর ১০ বছরে উপনীত হলে নামাজ পরিত্যাগ করলে তাদের প্রহার কোরো।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৯৫)</p> <p>২. অধীন ব্যক্তিদের মধ্যে : কর্মস্থলে, বিশেষত অধীন ব্যক্তিদের মধ্যে দ্বিনের দাওয়া পৌঁছে দেওয়া মুমিনের দায়িত্ব। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৫৩)</p> <p>৩. যে সমাজে বসবাস করে : মানুষ যে সমাজে বসবাস করে সেখানে দ্বিনের প্রচার-প্রসার আবশ্যক। মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যদি কোনো গর্হিত কাজ সংঘটিত হতে দেখে তবে হাত দ্বারা পরিবর্তন করে (প্রতিরোধ করে)। এতে সক্ষম না হলে যেন মুখ দ্বারা পরিবর্তন করে (প্রতিবাদ করে)। এতেও সক্ষম না হলে অন্তর দ্বারা পরিবর্তন করে (পরিকল্পনা করে)।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪৯)</p> <p>৪. দেশে ও দেশের বাইরে : এরপর সামর্থ্য অনুসারে ব্যক্তি দেশ ও দেশের বাইরে সমগ্র মানবজাতির মধ্যে দ্বিনের আলো ছড়িয়ে দেবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানবজাতির জন্য তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে; তোমরা সৎ কাজের নির্দেশ দাও, অসৎ কাজ থেকে বারণ করো এবং আল্লাহতে বিশ্বাস করো।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১১০)</p> <p>আল্লাহ সবাইকে সঠিক জ্ঞান দান করুন। আমিন।</p> <p> </p>