<p>মহানবী (সা.) ছিলেন মানবজাতির মহান শিক্ষক। তিনি মানুষকে জীবনের সব প্রয়োজনীয় শিক্ষা দান করেছেন। তাঁর শিক্ষা দান কেবল বাহ্যিক উপায়-উপকরণের ওপর নির্ভরশীল ছিল না, বরং তিনি মানুষের চিন্তাগত সংশোধনও করেছেন। এমনকি চরম আবেগের সময়ও যদি মানুষ কোনো ভুল করে থাকে, তবু তিনি মায়া ও ভালোবাসা নিয়ে তা সংশোধন করে দিয়েছেন। সন্তানের প্রতি মা-বাবার স্নেহ-মায়া অতুলনীয়। তবে কখনোই তা আল্লাহর ভালোবাসার চেয়ে বেশি নয়। পরম আবেগের এই জায়গায় এসে মানুষ যেন সত্য-বিচ্যুত না হয়, সে জন্য মহানবী (সা.) তাদের নানাভাবে সতর্ক করেছেন। </p> <p>নিম্নে এমন কয়েকটি হাদিস তুলে ধরা হলো—</p> <p>১. ওমর ইবনু খাত্তাব (রা.) বলেন, একবার নবী (সা.)-এর কাছে কতকগুলো বন্দি আসে। বন্দিদের মধ্যে একজন স্ত্রীলোক ছিল। তার স্তন ছিল দুধে পূর্ণ। সে বন্দিদের মধ্যে কোনো শিশু পেলে তাকে কোলে তুলে নিত এবং দুধ পান করাত। নবী (সা.) আমাদের বলেন, তোমরা কি মনে করো এই স্ত্রীলোকটি তার সন্তানকে আগুনে ফেলে দিতে পারে? আমরা বললাম, ফেলার ক্ষমতা রাখলেও সে কখনো ফেলবে না। তারপর তিনি বললেন, এ স্ত্রীলোকটি তার সন্তানের ওপর যতটা দয়ালু, আল্লাহ তাঁর বান্দার ওপর তার চেয়েও বেশি দয়ালু। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৯৯৯)</p> <p>২. আনাস বিন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) একদল সাহাবিকে নিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। রাস্তায় একটি শিশু ছিল। তার মা একদল মানুষ দেখে ভয় পেল—না জানি লোকজন তার সন্তানকে পদদলিত করে। ফলে দৌঁড়ে এলো এবং বলতে থাকল, আমার ছেলে! আমার ছেলে!! সাহাবিরা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! এই নারীর পক্ষে কি তার সন্তানকে আগুনে নিক্ষেপ করা সম্ভব। নবীজি (সা.) তাদের দিকে ফিরে বললেন, না। আল্লাহও তাঁর প্রিয় বান্দাদের আগুনে নিক্ষেপ করবেন না। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৩৪৬৭)</p> <p>৩. আবদুর রহমান বিন জুবায়ের (রা.) থেকে বর্ণিত, একজন অতিশয় বৃদ্ধ মানুষ নবীজি (সা.)-এর কাছে আসে। তার দুই চোখে পর্দা পড়ে গিয়েছিল। সে লাঠির ওপর ভর করে চলত। সে নবীজি (সা.)-এর সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করল : সেই ব্যক্তি সম্পর্কে আপনার মতামত কী, যে সব ধরনের পাপ কাজ করেছে, প্রবৃত্তির তাড়নায় ছোট-বড় কোনো পাপই ত্যাগ করেনি, যদি তার পাপাচার পৃথিবীবাসীকে বণ্টন করে দেওয়া হয়, তবে তারা ধ্বংস হয়ে যাবে, এমন ব্যক্তির তাওবা কি কবুল হবে?</p> <p>রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তুমি কি মুসলিম হয়েছ? লোকটি বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই এবং আপনি আল্লাহর রাসুল। নবীজি (সা.) বললেন, তুমি ভালো কাজ করো এবং পাপ ছেড়ে দাও। আল্লাহ তোমার সব কিছু পুণ্যে পরিণত করবেন। লোকটি বলল, আমার পাপ-পঙ্কিলতাও হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বললেন, তোমার পাপ-পঙ্কিলতা। লোকটি বলল, আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান। অতঃপর লাঠিতে ভর দিয়ে ফিরে গেল এবং চোখের আড়াল হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান বলতে থাকল। (তাবারানি, হাদিস : ৭২৮৫)</p> <p>মুমিনের দায়িত্ব হলো, আল্লাহর এই ভালোবাসা ও অনুগ্রহের পুরোপুরি মূল্যায়ন করা এবং তাঁর আনুগত্যে জীবন অতিবাহিত করা। আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দিন। আমিন।</p> <p> </p>