<p>ইদানীং মানুষের মধ্যে একটা এমন ধারণা জন্মেছে যে শর্টকাটে মোটা অঙ্কের অর্থ উপার্জনের একটা সহজ মাধ্যম হলো, ভিডিও কনটেন্ট তৈরি। তাই কেউ কেউ এই অঙ্গনে জনপ্রিয় হওয়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। এই অঙ্গনে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে হলে খ্যাতি লাগবে, সেটা কুখ্যাতি হোক আর সুখ্যাতি। একবার কিছু একটা করে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা গেলে এবং একবার পরিচিতি পেয়ে গেলে পরে পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না।</p> <p>এরপর বিভিন্ন কৃত্রিম ঘটনা ও দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ভিডিও প্ল্যাটফরমগুলোতে নিজের ভিডিও ব্যাপক হারে প্রচার করা যাবে। আর অ্যাকাউন্টে ঢুকতে থাকবে অজস্র ডলার। এই আকাশকুসুম কল্পনা ও আকাঙ্ক্ষা থেকেই বহু মানুষ নীতি-নৈতিকতা, এমনকি ধর্মীয় অনুশাসনের বাইরে গিয়েই ভিডিও তৈরিতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে অনেকে বেছে নেয় ব্যঙ্গাত্মক ভিডিও তৈরির পথ। যেখানে তারা বিভিন্ন পরিচিত ব্যক্তিদের বক্তব্য, অঙ্গভঙ্গি ইত্যাদি ব্যঙ্গ করে মানুষকে আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করে। অনেক সময় নিজেদের মধ্যে অন্তঃকোন্দলের কারণেও তারা এমনটি করে থাকে। </p> <p>অথচ পবিত্র কোরআনে এ ধরনের অনর্থক কাজ থেকে বিরত থাকার আদেশ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের মধ্যে কেউ কেউ অজ্ঞতাবশত আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করার জন্য অসার বাক্য ক্রয় করে এবং আল্লাহর প্রদর্শিত পথ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে, তাদের জন্য আছে অবমাননাকর শাস্তি।’ (সুরা : লুকমান, আয়াত : ৬)</p> <p>অনেকে আবার না বুঝে দুষ্টমির ছলে বিভিন্ন ওয়াজ-মাহফিল কিংবা কোরআন-হাদিসের কথাকেও বিদ্রুপ করে বসে, যা জঘন্য পাপ। নবীজি (সা.)-এর যুগে এ ধরনের কাজ কাফির, মুশরিক বা মুনাফিকরা করত। যেমন—মদিনায় বসবাসকারী ইহুদিদের একটি দল ছিল অতিশয় দুষ্ট। তারা যখন নবী (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করত, তখন তাকে লক্ষ্য করে বলত ‘রাইনা’। আরবিতে এর অর্থ ‘আমাদের প্রতি লক্ষ রাখুন’।</p> <p>এ হিসেবে শব্দটিতে কোনো দোষ নেই এবং এর মধ্যে বেয়াদবিরও কিছু নেই। কিন্তু ইহুদিদের ধর্মীয় ভাষা হিব্রুতে এরই কাছাকাছি একটি শব্দ অভিশাপ ও গালি অর্থে ব্যবহৃত হতো। তা ছাড়া এ শব্দটিকেই যদি আরবি অক্ষর ‘আইন’-এর দীর্ঘ উচ্চারণে পড়া হয়, তবে ‘রাঈনা’ হয়ে যায়, যার অর্থ ‘আমাদের রাখাল’। মোটকথা ইহুদিদের আসল উদ্দেশ্য ছিল শব্দটিকে মন্দ অর্থে ব্যবহার করা। কিন্তু আরবিতে যেহেতু বাহ্যিকভাবে শব্দটিতে কোনো দোষ ছিল না, তাই কতিপয় সরলপ্রাণ মুসলিমও শব্দটি ব্যবহার করতে শুরু করে দেয়। এতে ইহুদিরা বড় খুশি হতো এবং ভেতরে ভেতরে মুসলিমদের নিয়ে মজা করত; যার প্রতিবাদে মহান আল্লাহ আয়াত নাজিল করেন, হে ঈমানদারা! (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লক্ষ্য করে) ‘রাইনা’ বোলো না, বরং ‘উনজুরনা’ বলো এবং শ্রবণ করো। আর কাফিরদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাময় শাস্তি।” (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১০৪)</p> <p>অনেকে আবার ইসলামিক কোনো বিষয় নিয়ে বিদ্রুপ না করলেও অন্য মানুষদের নিয়ে বিদ্রুপ করে। নবীজি (সা.) এই কাজটিরও কঠোর বিরোধিতা করেছেন। আয়েশা (রা.) বলেন, কোনো একসময় মহানবী (সা.)-কে আমি জনৈক ব্যক্তির চালচলন নকল করে দেখালাম। তিনি বলেন, আমাকে এই পরিমাণ সম্পদ প্রদান করা হলেও কারো চালচলন নকল করা আমাকে আনন্দ দেয় না। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! সাফিয়্যা তো বামন নারী লোক, এই বলে তিনি তা হাতের ইশারায় দেখালেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তুমি এমন একটি কথার দ্বারা বিদ্রুপ করেছ, তা সাগরের পানির সঙ্গে মেশালেও ওই পানিকে দূষিত করে ফেলত। (তিরমিজি, হাদিস : ২৫০২)</p> <p>তাই প্রত্যেকের উচিত এ ধরনের নিকৃষ্ট কাজ থেকে বিরত থাকা। শুধু মজা করার জন্য এমন কোনো পথ অবলম্বন করা উচিত নয়, যা আমাদের নেক আমল ধ্বংস করে দেবে। মহান আল্লাহ সবাইকে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।</p> <p> </p>